ক্রীড়া ডেস্ক: ম্যাচের ৮৫ মিনিট পর্যন্ত ২-১ গোলে পিছিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ। অনেক সুযোগ হারিয়ে পরাজয় চোখ রাঙাচ্ছিল তাদের সামনে। কিন্তু শেষের কয়েক মিনিটে নাটকীয়ভাবে পাল্টে গেল চিত্র। ছয় মিনিটের মধ্যে দুইবার ম্যানচেস্টার সিটির জালে বল পাঠিয়ে রোমাঞ্চকর জয় তুলে নিল কার্লো আনচেলত্তির দল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোয় যাওয়ার লড়াইয়ে কিছুটা এগিয়ে রইল গতবারের চ্যাম্পিয়নরা। ইতিহাদ স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার রাতে প্লে-অফের প্রথম লেগে ৩-২ গোলে জিতেছে রিয়াল।
শুরুতে আর্লিং হলান্ড সিটিকে এগিয়ে নেওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে সমতা ফেরান কিলিয়ান এমবাপে। পেনাল্টি থেকে হলান্ডের দ্বিতীয় গোলে ফের লিড নেয় স্বাগতিকরা। শেষ দিকে বদলি নামার পরপরই ব্রাহিম দিয়াস সমতা টানার পর যোগ করা সময়ে ব্যবধান গড়ে দেন জুড বেলিংহ্যাম। গোটা ম্যাচে বল দখলে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও, আক্রমণে এগিয়ে ছিল রিয়ালই। গোলের জন্য সিটি যেখানে ১১ শট নিয়ে ৪টি লক্ষ্যে রাখতে পারে, সেখানে ২০টি শট নিয়ে ৮টি লক্ষ্যে রাখে রিয়াল। কিন্তু ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতায় হারের শঙ্কায় পড়ে যায় তারা।
শেষ পর্যন্ত তারা এই ম্যাচ জিতে যাবে, অনেকে হয়তো কল্পনাও করেনি! এই মৌসুমে ভীষণ বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া সিটির সুযোগ ছিল ম্যাচটি জিতে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নেওয়ার। কিন্তু পারল না তারা। নতুন আঙ্গিকের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কোনোমতে প্রথম পর্বে টিকে গেলেও, এই হারে বিদায়ের দুয়ারে চলে গেল পেপ গুয়ার্দিওলার দল। ফিরতি লেগ যে সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে!
চোটের কারণে চার মূল ডিফেন্ডার দানি কারভাহাল, ডাভিড আলাবা, এদের মিলিতাও ও আন্টোনিও রুডিগারকে ছাড়া খেলতে নেমে রক্ষণে ভুগতে দেখা যায় রিয়ালকে। তবে শুরুটা ভালোই করে তারা। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে এগিয়ে চলা লড়াইয়ে নবম মিনিটে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন ভিনিসিউস জুনিয়র। গোলরক্ষক এদেরসনের চ্যালেঞ্জে পড়ে যান ব্রাজিলিয়ান তারকা। যদিও বিল্ডআপের সময় অফসাইডে ছিলেন তিনি। পরের চার মিনিটে তিনটি ভালো সুযোগ তৈরি করে রিয়াল। ভিনিসিউসের পাস ধরে বক্সে ঢুকে এমবাপের নেওয়া শট ঠেকান এদেরসন। কাছ থেকে ডিফেন্ডার ফেরলদ মঁদির প্রচেষ্টা ফিরিয়ে দেন সিটির ডিফেন্ডার নাথান আকে।
আরেকটিতে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি ভিনিসিউস।
উল্টো ১৯তম মিনিটে প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগ পেয়েই রেয়ালের জালে বল পাঠায় সিটি। জ্যাক গ্রিলিশকে পাস দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন হলান্ড। গ্রিলিশের ক্রসে বুক দিয়ে বল নামিয়ে দেন ইয়োশকো ভার্দিওল, আর ছয় গজ বক্সের কোণা থেকে ভলিতে ঠিকানা খুঁজে নেন হলান্ড। প্রায় চার মিনিট ধরে ভিএআরে পরীক্ষার পর গোলের বাঁশি বাজান রেফারি। আরেকবার উল্লাসে ফেটে পড়ে ইতিহাদ। রেয়ালের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচে ১৪তম শটে প্রথম গোলের দেখা পেলেন হলান্ড। ২৫তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে ভিনিসিউসের শট ক্রসবারে বাধা পায়। পাঁচ মিনিট পর চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন গ্রিলিশ, তার বদলি নামেন ফিল ফোডেন। ৩৫তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে ফোডেনের জোরাল শট ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া। পরের মিনিটে কাছ থেকে হলান্ডের প্রচেষ্টা রুখে দেন রেয়ালের দুই ডিফেন্ডার মিলে। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আরেকটি সুযোগ পান এমবাপে, কিন্তু বক্সের ভেতর থেকে উড়িয়ে মেরে হতাশ করেন বিশ্বকাপ জয়ী ফরোয়ার্ড।
দ্বিতীয়ার্ধে শুরুতে দ্বিতীয় গোল পেতে পারত সিটি, বক্সে দারুণ নৈপুণ্যে হলান্ডের শট ক্রসবারে লাগে। ৫৩তম মিনিটে ভিনিসিউসের ক্রসে জুড বেলিংহ্যামের হেড লক্ষ্যে থাকেনি। দুই মিনিট পর ছয় গজ বক্সের বাইরে থেকে এমবাপের শট ঠেকান এদেরসন। ৬০তম মিনিটে এমবাপের অদ্ভুতুড়ে গোলে সমতায় ফেরে রিয়াল। তাদের ফ্রি-কিক রক্ষণে প্রতিহত হওয়ার পর দানি সেবাইয়োসের ক্রসে ঠিকমতো ভলি করতে পারেননি এমবাপে, তবে বল ঠিকই খুঁজে পায় জাল।
এই মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে এমবাপের গোল হলো ২৪টি। ইউরোপ সেরার মঞ্চে তার মোট গোল এখন ৫২টি। ৬৬তম মিনিটে বেলিংহ্যামের ভলি ফিরিয়ে সিটিকে পিছিয়ে পড়তে দেননি এদেরসন। ৮০তম মিনিটে হলান্ডের সফল স্পট-কিকে আবার এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। ফোডেনকে বক্সে সেবাইয়োস ফাউল করায় পেনাল্টি দিয়েছিলেন রেফারি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ৪৮ ম্যাচে নরওয়ের তারকা হলান্ডের গোল হলো ৪৯টি। ৮৪তম মিনিটে রদ্রিগোর বদলি নামেন ব্রাহিম। দুই মিনিটের মধ্যে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান তিনি। ভিনিসিউসের শট এদেরসন ঠেকানোর পর জালে পাঠান ব্রাহিম। আর তিন মিনিট যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে রিয়ালকে জয়ের উল্লাসে ভাসান বেলিংহ্যাম। সিটির একটি ভুল পাস থেকে আক্রমণে ওঠে রিয়াল। ভিনিসিউস বক্সের বাইরে থেকে এগিয়ে আসা এদেরসনকে ফাঁকি দিয়ে বল দেন দূরের পোস্টে, ছুটে গিয়ে স্লাইডে জালে পাঠান ইংলিশ মিডফিল্ডার।
আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি হবে ফিরতি লেগ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টানা চার মৌসুমে মুখোমুখি দল দুটির আরেকটি শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ের অপেক্ষা।