ঢাকা ০৫:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

শেখ হাসিনা দেখতে গেলে সাতকরার তরকারি খাওয়াবেন বীরাঙ্গনা শিলা

  • আপডেট সময় : ০১:১২:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুন ২০২১
  • ১০৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক ; বর্বর নির্যাতন চালিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাকে মৃত ভেবে ধানক্ষেতে ফেলে দিয়েছিল; যাত্রাদলের সঙ্গে ভাসতে ভাসতে বাগেরহাটের মেয়ে শিলা গুহের এক সময় ঠাঁই হয়েছিল শ্রীমঙ্গলে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে তিনি পেয়েছেন নতুন ঘর।
গতকাল রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় ধাপে সাড়ে ৫৩ হাজার পরিবারকে দুই শতক জমিসহ সেমি পাকা ঘর প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই অনুষ্ঠানে নিজের অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন মৌলভীবাজারের বীরাঙ্গনা শিলা গুহ। তিনি বলেন, “নমস্কার, আমি ঘর পেয়ে খুবই খুশি। আমি আগে ছিলাম রাস্তার ভিখারি। এখন আমি লক্ষপতি। শুধুমাত্র মুজিবকন্যার জন্যই এই পথে আমি আসতে পেরেছি। তাই ভগবান তাকে দীর্ঘজীবী করুক, আমি এই কামনা করি।”
নতুন পাওয়া ঘরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিমন্ত্রণ জানিয়ে শিলা বলেছেন, শেখ মুজিবের মেয়ে তার বাড়ি গেলে সাতকরা দিয়ে তরকারি রেঁধে খাওয়াবেন। শিলা যাত্রাদলের সঙ্গে মুক্তিযদ্ধের শুরুর দিকে ছিলেন কুড়িগ্রামে। সেখানে অলিপুর বালিকা বিদ্যালয়ে থাকাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে নির্যাতিতা হন।
দিনের পর দিন শিলা ও আরও কয়েকজন কিশোরীকে স্কুলের কক্ষে আটকে রেখে ধর্ষণ করে পাকিস্তানি সেনারা। একদিন জ্ঞান না ফেরায় শিলাকে মৃত ভেবে পাশে একটি ধান ক্ষেতে ফেলে দেয় তারা। স্থানীয় দুই ভাই শিলাকে উদ্ধার করে ডাক্তার দেখিয়ে সুস্থ করে তোলেন। পরে পাকিস্তানি সেনাদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অন্যত্র পাঠিয়ে দেন। আরেক পরিবারের সঙ্গে শিলাকে ভারতে চলে যান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাগেরহাটের পেয়াজহাটির কচুর হাঠখোলায় নিজের বাড়িতে ফিরলেও সেখানে জায়গা হয়নি শিলার। তখন আবার যোগ দেন যাত্রাদলে। সেই দলের গাড়ি চালক যতীন গুহের সঙ্গে শিলার বিয়ে হয়। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের খবর জেনে শিলাকে ছেড়ে চলে যান তার স্বামী যতীন। এরপর থেকে শিলা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় থাকছেন। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তাদের একজন স্বামীর বাড়ি থাকলেও আরেকজন ফিরে এসেছেন এক মেয়েসহ। আশ্রয়ন প্রকল্পে বাড়ি পাওয়ার আনন্দের কথা বলতে গিয়ে শিলা সেসব দিনের কথাও স্মরণ করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা যে এই বৃদ্ধ বয়সেও তাকে দেখে রাখবেন, তা তিনি ভাবতে পারেননি।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শিলা গুহপরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শিলা গুহজাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিবের আত্মার শান্তি কামনা করে শিলা বলেন, “তারা যেন স্বর্গ থেকে দেখতে পায়, আমরা সুখী হয়েছি। আরো একটি কথাৃ আমি এখনো আপনার জন্য প্রতিদিন দু’টাকা করে বাতি জ্বালাই। কারণ আমার বোন যাতে সুখী থাকে, আমার বোনকে যেন করোনাভাইরাস আক্রান্ত না পারে, আমার বোন যাতে হাজার বছর বাঁচে, সেই কামনা করি।”
শিলা তার বক্তব্যের শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শ্রীমঙ্গলে তার পাওয়া ঘর দেখতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। প্রধানমন্ত্রী গেলে তিনি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী সাতকরা দিয়ে তরকারি রেঁধে করে খাওয়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
কথা বলতে বলতে ভিজে আসে শ্রীমঙ্গল উপজেলার মাইজদীঘি গ্রামের বীরঙ্গনা শিলা গুহের চোখ। তার কথা শুনতে শুনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চোখও অশ্রুসজল হয়, ভারী হয়ে আসে কণ্ঠ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনি খুব ভালো বক্তব্য রেখেছেন। আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা নেবেন। বোন, আমি যদি সুযোগ পাই, নিশ্চয় আমি আসার চেষ্টা করব।”
স্বাধীনতা যুদ্ধে সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনাদের যে অবদান, আপনাদের যে আত্মত্যাগ, এই আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই তো আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। কাজেই আত্মত্যাগ কিন্তু কখনো বৃথা যায় না। হ্যাঁ, হয়ত অনেক বছর আমরা পারিনি, তবে এখন আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।” শিলা গুহসহ যারা নতুন ঘর পেয়েছেন, তাদের সবার সুস্থতা কামনা করে নতুন পাওয়া ঘরগুলোর প্রতি যতœবান হওয়ার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শেখ হাসিনা দেখতে গেলে সাতকরার তরকারি খাওয়াবেন বীরাঙ্গনা শিলা

আপডেট সময় : ০১:১২:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুন ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক ; বর্বর নির্যাতন চালিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাকে মৃত ভেবে ধানক্ষেতে ফেলে দিয়েছিল; যাত্রাদলের সঙ্গে ভাসতে ভাসতে বাগেরহাটের মেয়ে শিলা গুহের এক সময় ঠাঁই হয়েছিল শ্রীমঙ্গলে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে তিনি পেয়েছেন নতুন ঘর।
গতকাল রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় ধাপে সাড়ে ৫৩ হাজার পরিবারকে দুই শতক জমিসহ সেমি পাকা ঘর প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই অনুষ্ঠানে নিজের অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন মৌলভীবাজারের বীরাঙ্গনা শিলা গুহ। তিনি বলেন, “নমস্কার, আমি ঘর পেয়ে খুবই খুশি। আমি আগে ছিলাম রাস্তার ভিখারি। এখন আমি লক্ষপতি। শুধুমাত্র মুজিবকন্যার জন্যই এই পথে আমি আসতে পেরেছি। তাই ভগবান তাকে দীর্ঘজীবী করুক, আমি এই কামনা করি।”
নতুন পাওয়া ঘরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিমন্ত্রণ জানিয়ে শিলা বলেছেন, শেখ মুজিবের মেয়ে তার বাড়ি গেলে সাতকরা দিয়ে তরকারি রেঁধে খাওয়াবেন। শিলা যাত্রাদলের সঙ্গে মুক্তিযদ্ধের শুরুর দিকে ছিলেন কুড়িগ্রামে। সেখানে অলিপুর বালিকা বিদ্যালয়ে থাকাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে নির্যাতিতা হন।
দিনের পর দিন শিলা ও আরও কয়েকজন কিশোরীকে স্কুলের কক্ষে আটকে রেখে ধর্ষণ করে পাকিস্তানি সেনারা। একদিন জ্ঞান না ফেরায় শিলাকে মৃত ভেবে পাশে একটি ধান ক্ষেতে ফেলে দেয় তারা। স্থানীয় দুই ভাই শিলাকে উদ্ধার করে ডাক্তার দেখিয়ে সুস্থ করে তোলেন। পরে পাকিস্তানি সেনাদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অন্যত্র পাঠিয়ে দেন। আরেক পরিবারের সঙ্গে শিলাকে ভারতে চলে যান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাগেরহাটের পেয়াজহাটির কচুর হাঠখোলায় নিজের বাড়িতে ফিরলেও সেখানে জায়গা হয়নি শিলার। তখন আবার যোগ দেন যাত্রাদলে। সেই দলের গাড়ি চালক যতীন গুহের সঙ্গে শিলার বিয়ে হয়। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের খবর জেনে শিলাকে ছেড়ে চলে যান তার স্বামী যতীন। এরপর থেকে শিলা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় থাকছেন। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তাদের একজন স্বামীর বাড়ি থাকলেও আরেকজন ফিরে এসেছেন এক মেয়েসহ। আশ্রয়ন প্রকল্পে বাড়ি পাওয়ার আনন্দের কথা বলতে গিয়ে শিলা সেসব দিনের কথাও স্মরণ করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা যে এই বৃদ্ধ বয়সেও তাকে দেখে রাখবেন, তা তিনি ভাবতে পারেননি।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শিলা গুহপরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শিলা গুহজাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিবের আত্মার শান্তি কামনা করে শিলা বলেন, “তারা যেন স্বর্গ থেকে দেখতে পায়, আমরা সুখী হয়েছি। আরো একটি কথাৃ আমি এখনো আপনার জন্য প্রতিদিন দু’টাকা করে বাতি জ্বালাই। কারণ আমার বোন যাতে সুখী থাকে, আমার বোনকে যেন করোনাভাইরাস আক্রান্ত না পারে, আমার বোন যাতে হাজার বছর বাঁচে, সেই কামনা করি।”
শিলা তার বক্তব্যের শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শ্রীমঙ্গলে তার পাওয়া ঘর দেখতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। প্রধানমন্ত্রী গেলে তিনি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী সাতকরা দিয়ে তরকারি রেঁধে করে খাওয়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
কথা বলতে বলতে ভিজে আসে শ্রীমঙ্গল উপজেলার মাইজদীঘি গ্রামের বীরঙ্গনা শিলা গুহের চোখ। তার কথা শুনতে শুনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চোখও অশ্রুসজল হয়, ভারী হয়ে আসে কণ্ঠ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনি খুব ভালো বক্তব্য রেখেছেন। আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা নেবেন। বোন, আমি যদি সুযোগ পাই, নিশ্চয় আমি আসার চেষ্টা করব।”
স্বাধীনতা যুদ্ধে সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনাদের যে অবদান, আপনাদের যে আত্মত্যাগ, এই আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই তো আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। কাজেই আত্মত্যাগ কিন্তু কখনো বৃথা যায় না। হ্যাঁ, হয়ত অনেক বছর আমরা পারিনি, তবে এখন আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।” শিলা গুহসহ যারা নতুন ঘর পেয়েছেন, তাদের সবার সুস্থতা কামনা করে নতুন পাওয়া ঘরগুলোর প্রতি যতœবান হওয়ার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।