নিজস্ব প্রতিবেদক : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আশুলিয়ায় গুলি করে হত্যার পর থানা এলাকায় গাড়িতে মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী, পুলিশ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় নিহত সবুরের ভাই এবং সজলের মায়ের পক্ষে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) আইনজীবী হুজ্জাতুল ইসলাম খান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় এ অভিযোগ দাখিল করেন। আইনজীবী জানান, আন্দোলনের সময় সাভারের আশুলিয়ায় আগুনে পুড়িয়ে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৬৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ এর খ ধারা অনুসারে আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ এর ৩(২) ও ৪(১)/৪(২) ধারা অনুযায়ী গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ নিয়ে ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৪টি গণহত্যার অভিযোগ দেওয়া হলো। অপরাধের ধরনে বলা হয়েছে, ১ থেকে ৭ নম্বর আসামিদের নির্দেশে ও পরিকল্পনায় অন্য আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র জনতাকে হত্যা করে তাদের লাশ আগুনে পুড়িয়ে তাদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করিবার উদ্দেশ্যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অপরাধ। আবেদনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা জেলার তৎকালীন এসপি মারুফ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ হিল কাফীসহ ৬৯ জনের কথা বলা হয়েছে।
দুই হত্যা মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৭১ জন আসামি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পৃথক দুই ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরীর আদালতে অটোরিকশাচালক সালাম বাবুকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন নিহতের বাবা তোফাজ্জল হোসেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে উত্তরা পূর্ব থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে নেওয়ার নির্দেশ দেন। মামলার অপর আসামিরা হলেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক পুলিশপ্রধান আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি বিপ্লব কুমার সরকার, শাহীনা বেগম, ইসমাইল হোসেন বাবুল তালুকদার, মো. হুমায়ুন কবির সবুজ, ইলিয়াস আলী, সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক, মোহাম্মদ মোসাদ্দেকুর রহমান প্রমানিক, মো. নজরুল ইসলাম (লিচু), রাউফুল আলম খান, জহিরুল ইসলাম রিপন, মাহমুদুল আলম বাবু, ফয়সাল সরকার, নুরনবী, জুবায়ের ইসলাম জুয়েল, মো. মিজান, মহিন উদ্দিন, আবু মিয়া, মিজানুর রহমান বিপ্লব, মো. মেহেদী, মো. ওয়াজেদ, শফি আলম, সেলিম প্রামাণিক, মো. ফারুক, আব্দুল আজিজ ঝাড়ু, মনিজ মিয়া, জিয়াউল, আনোয়ার, ফিরোজ প্রামাণিক, আমীর হোসেন, মো. শিমুল, রিফাত উল্লাহ নিরব, আনারুল, মনির হোসেন, ইউসুফ, আবু রায়হান, কাজী রাশেদুল ইসলাম দিপু, সহিজল, সাইদুর রহমান বাবুল, লিটন হোসেন ফুটা মিয়া। এই মামলার অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ২২ জুলাই রাত সাড়ে ১১টার দিকে উত্তরার হাউজ বিল্ডিংয়ের সামনে হাজার হাজার ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সালাম। আরেক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে সেলিম আলী সেক নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিজেকে সচেতন নাগরিক দাবি করে মামলাটি করেন মামুন নামে এক ব্যক্তি। মামলার অপর আসামিরা হলেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পুলিশপ্রধান মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি বিপ্লব কুমার সরকার, রাউফুল আলম খান, কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক, ফকরুল ইসলাম শামীম, আলম, জহির আহমেদ জহির, নাদিম, রাব্বী, মাজেদুল ইসলাম, আবু তাহের, জহিরুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান ফরহাদ, সাদাকাত খান ফাক্কু, শাহদাত শিফাত, দাউদুল ইসলাম ও শেখ মোহাম্মদ আলী আড্ডু। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মিরপুর-১০ নম্বরে সেলিম আলী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।