নিজস্ব প্রতিবেদক: জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ অন্য আসামিদের শাস্তি দিতে না পারলে শহীদ ও আহতদের প্রতি অবিচার করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে যুক্তি উপস্থাপনকালে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জুলাই হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। শেখ হাসিনাসহ অন্য আসামিদের শাস্তি দিতে না পারলে শহীদ ও আহতদের প্রতি অবিচার করা হবে।
এর আগে বুধবার (২২ অক্টোবর) এ মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১-এ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
যুক্তিতর্কে আইনজীবী মো. আমির হোসেন বলেন, এই মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটর যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সঠিক নয়। হাসিনা ও কামাল কোনো ষড়যন্ত্র করেননি। তাদের শাস্তি দেওয়ার সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের রাজাকার আখ্যায়িত করে হামলার উসকানির যে অভিযোগ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, এটা সঠিক নয়। শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের রাজাকার বা রাজাকারের বাচ্চা বলেননি। এটা বুঝতে শিক্ষার্থীরা ভুল বুঝেছে।
তিনি বলেন, প্রসিকিউশনের অভিযোগে আছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্ররোচনায় পুলিশ গুলি করেছে। অথচ কোনো সাক্ষীর বর্ণনায় এমন কোনো বক্তব্য আসেনি। ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনার যে অভিযোগ প্রসিকিউশন করেছে, তা সঠিক নয়।
ড্রোন ও হেলিকপ্টার ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, একটি চলমান আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে ড্রোন ব্যবহার কোনো অপরাধ নয়। ড্রোন ব্যবহার মানে এই নয় যে, ড্রোন থেকে গুলি করা হচ্ছে। কোন জায়গায় বেশি আন্দোলনকারী একত্র হয়ে জানমালের ক্ষতি করতে পারে, সেই জায়গাটা ড্রোনের মাধ্যমে চিহ্নিত করে আন্দোলনকারীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আর হেলিকপ্টার থেকে যদি গুলি করা হতো তাহলে হাজার হাজার মানুষ মারা যেতো, প্রকৃত তথ্য হচ্ছে তা হয়নি। কিছু কিছু জায়গায় হেলিকপ্টার থেকে গুলির দৃশ্য আমরা ভিডিওতে দেখেছি, তবে সেই গুলির নির্দেশ হাসিনা দেননি।
প্রসিকিউশনের দাখিল করা কল রেকর্ডের বিষয়ে আইনজীবী বলেন, কল রেকর্ডের যে অডিওগুলো এখানে শোনানো হয়েছে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। শুধু একটি সরকারি সংস্থার ফরেনসিক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই এগুলোকে সঠিক দাবি করা হচ্ছে।
প্রতিটি অডিও রেকর্ডের প্রতিবেদন ক্রসম্যাচিং হওয়ার দরকার ছিল ভিন্ন একটি স্বতন্ত্র সংস্থা থেকে। এর আগে ১৬ অক্টোবর এ মামলায় প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়।
প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম মামলার দুই আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করেন। সেই সঙ্গে আসামিদের অবৈধ সম্পত্তি ক্রোক করে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান। একই সঙ্গে রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের শাস্তির বিষয়ে আদালতের ওপর ছেড়ে দেন তিনি।
গত ৮ অক্টোবর প্রসিকিউশনের পক্ষে সর্বশেষ ও ৫৪তম সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে আসামিপক্ষের জেরা শেষ হয়। আসামিরা পলাতক থাকায় আইন অনুযায়ী তাদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণের সুযোগ নেই। ফলে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়েই এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
গত ১২ অক্টোবর থেকে টানা পাঁচদিন প্রসিকিউশন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। এরপর ২০ অক্টোবর থেকে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়।
এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজন আসামি। অন্য দুইজন হলেন—সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তবে মামুন পরে রাজসাক্ষী হিসেবে হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তার সাক্ষ্য মামলায় অভিযোগ প্রমাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে প্রসিকিউশন সূত্র।
এসি/আপ্র/২৩/১০/২০২৫