ক্যাম্পাস ক্যারিয়ার ডেস্ক : বিসিএস প্রস্তুতি যদি যুতসই ভাবে নেওয়া যায়, তাহলে হাজার হাজার প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিজেকে এগিয়ে রাখা সম্ভব। সাধারণত বিসিএসে দুই ধরনের পরীক্ষার্থী থাকে। তাহলে দুই ধরনের পরীক্ষার্থীর প্রস্তুতি দুই ধরনের হওয়া উচিত। যেমন, সব রোগের জন্য শুধু নাপা খেলে কাজ হবে না। ঠিক একইভাবে সবার প্রস্তুতির ধরন একই রকম হলে কাজ নাও হতে পারে।
১। বিসিএসে এই ধরনের পরীক্ষার্থীর একটি হলো- একেবারে নতুন ( যারা প্রথমবারের মতো ৪৪তম বিসিএস দিবেন)।
২। আরেক ধরনের পরীক্ষার্থী আছে, যারা এর আগেও বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছে। মানে, অভিজ্ঞ বা কিছুটা অভিজ্ঞ।
প্রথমে আসি যারা একেবারে নতুন, তাদের প্রসঙ্গে। মানে যাদের ৪৪তম বিসিএস হবে প্রথম বিসিএস। তারা কিভাবে প্রস্তুতি শুরু করবেন। এইবার যারা প্রথম বিসিএস দিবেন, তারা হয়তো বুঝে উঠতে পারছেন না- ঠিক কোথায় থেকে এবং কীভাবে প্রস্তুতি শুরু করবেন। হয়তো ভাবছেন আগে তো তেমন কিছু পড়িনি, এখন কি ভালো করা সম্ভব? ইত্যাদি ইত্যাদি…।
প্রকৃতপক্ষে, হাতে এখনো যে পরিমাণ সময় আছে, পরিকল্পনা মতো পড়াশোনা করলে, ভালো করা সম্ভব। তো আসুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে শূন্য থেকে প্রস্তুতি শুরু করবেন-
ধাপ-১ : প্রথমে আপনি বিসিএস প্রিলির সিলেবাসটা ভালো করে দেখুন এবং বিগত সালের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে দেখুন। বিসিএসে কি ধরনের প্রশ্ন হয় ধারণা পেয়ে যাবেন। বিগত সালের প্রশ্ন থেকে অনেক কমন পাবেন যদি প্রশ্ন রিপিট হলে।
ধাপ-২: এরপর আপনি “ইঈঝ চৎবষরসরহধৎু অহধষুংরং” বইটির এটুজেড ভালোভাবে বুঝে বুঝে শেষ করুন। কমপক্ষে দুইবার শেষ করবেন। এই বইটি শেষ করলে বিসিএস প্রিলি সম্পর্কে আপনি একেবারে পরিষ্কার ধারণা পাবেন। বিসিএস প্রিলি নিয়ে আপনার যে ভয় আছে তা কেটে যাবে। পাশাপাশি নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসটাও অনেক বেড়ে যাবে।
ধাপ-৩: এরপর বাজার থেকে যেকোনো ভালো সিরিজের বিসিএস প্রিলির আলাদা বিষয়ের প্রিলির সিলেবাসের সঙ্গে মিল রেখে টপিকগুলো পড়ে ফেলুন। গুরুত্বপূর্ণ টপিক/অধ্যায়ের উপর বেশি জোর দিন। বিশেষত যে টপিক/অধ্যায় থেকে প্রায় প্রতিবার প্রশ্ন আসে, সে টপিক/অধ্যায়গুলো। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি বিসিএস প্রিলিতে কিন্তু প্রিলির সিলেবাসের সব টপিক/অধ্যায় থেকে প্রশ্ন আসে না।
ধাপ-৪: তারপর আপনি বাজার থেকে বিসিএসের ভালো মানের একটি/দুটি মডেল টেস্ট (“ইঈঝ জবধষ গড়ফবষ ঞবংঃ” বইটি ও সঙ্গে অন্য যেকোনো ভালো মানের আরেকটি মডেল টেস্ট বইয়ের সাহায্য নিতে পারেন) নিয়ে সময় ধরে পরীক্ষা দিন। তারপর দেখুন কোন বিষয়ে কত পান। যে বিষয়ে কম পাবেন, সে বিষয়টি ভালোভাবে শেষ করুন। এক কথায় বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে পড়ুন।
আরও কিছু পরামর্শ
বিসিএস প্রিলির যেকোনো ভালো সিরিজের ভালো বইগুলো পড়ুন এবং “ইঈঝ চৎবষরসরহধৎু অহধষুংরং” বইটি ভালোভাবে শেষ করে ফেলুন। (কারণ “ইঈঝ চৎবষরসরহধৎু অহধষুংরং” বইটি কেবল ইঈঝ এর ওসঢ়ড়ৎঃধহঃ টপিকগুলো দিয়ে সাজানো। পরীক্ষায় তাই অনেক বেশি কমন পাবেন। যেমন, ৪১তম বিসিএস পরীক্ষায় ইঈঝ চৎবষরসরহধৎু অহধষুংরং বইয়ে থেকে উরৎবপঃষু এবং ওহফরৎবপঃষু ১১২টি প্রশ্ন কমন এসেছে এতো কঠিন প্রশ্নের মাঝেও! এবং ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় ১২৯টি) এছাড়া যে কাজটি করবেন, ক্লাস ৪-১০ এর ম্যাথগুলো শেষ করুন এবং ৯-১০ শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ এবং বাংলা ব্যাকরণ বইটি সঙ্গে রাখবেন। দৈনিক একটি জাতীয় পত্রিকা পড়ুন। যাদের পত্রিকা পড়ার অভ্যাস নেই বা পড়ার সুযোগ নেই তারা মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়ুন। আর পরীক্ষার আগ মুহূর্তে সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞানের জন্য একটি বই পড়তে পারেন।
এবার আসি অভিজ্ঞদের প্রস্তুতির প্রসঙ্গে। আপনারা যেহেতু এই পর্যন্ত এক বা একবারের বেশি পরীক্ষার দিয়েছেন, আপনারদের বলার তেমন কিছু নেই। ধরেই নিলাম আপনারা অনেক কিছু জানেন। তারপরেও কিছু কথা না বললেই নয়।
আরও পড়ুন : পরিবার পাশে না থাকলে কখনো ম্যাজিস্ট্রেট হতে পারতাম না যেহেতু ৪৪তম বিসিএস স্পেশাল বিসিএস নয়; সাধারণ বিসিএসে গঈছ+ডৎরঃঃবহ+ঠরাধ হয়, সেখানে গঈছ নাম্বার যোগ হয় না, কেবল পাশ করলেই হয়। এই ক্ষেত্রে সাধারণত ১২০ নাম্বার “সেইফ জোন” ধরা হয় প্রিলিতে।
আপনি গঈছ বেশি নম্বর পেলেও তা যোগ হবে না। তাই দুনিয়ায় সব পড়ার আছে বলে আমি মনে করি না। আপনার প্রস্তুতি যখন শেষ দিকে আসবে, আমি বলবো আপনাদের যেহেতু আগের কিছু প্রস্তুতি আছেই আপনারা বেশি বেশি গঈছ পড়ুন। বাজার থেকে ভালো মানের ২-৩টি মডেল টেস্ট বই কিনে গঈছ গুলো পড়ে ফেলুন।
কারণ ভালো মানের মডেল টেস্টগুলোতে কেবল গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো থাকে, যেখান থেকে পরীক্ষায় অনেক কমন পাওয়া যায়। সেজন্য আপনি ‘ইঈঝ জবধষ গড়ফবষ ঞবংঃ”, ‘প্রফেসর’স মডেল টেস্ট’ বা ভালো মানের অন্য যেকোনো মডেল টেস্ট পড়তে পারেন।
তারপর দেখুন কোন বিষয়ে কত পান। যে বিষয়ে কম পাবেন, সেই বিষয়টি ভালোভাবে শেষ করুন, সেই বিষয়টিতে জোর দিন। বিসিএস প্রিলির যে কোনও ভালো সিরিজের বইগুলো পড়ুন এবং “ইঈঝ চৎবষরসরহধৎু অহধষুংরং” বইটি ভালোভাবে শেষ করে ফেলুন।
এছাড়া যে কাজটি করবেন, ক্লাস ৪-১০ এর ম্যাথগুলো শেষ করুন এবং ৯-১০ শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ এবং বাংলা ব্যাকরণ বইটি সঙ্গে রাখবেন। দৈনিক একটি জাতীয় পত্রিকা পড়ুন। যাদের পত্রিকা পড়ার অভ্যাস নেই বা পড়ার সুযোগ নেই। তারা মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়ুন।
আর পরীক্ষার কিছুদিন আগে সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞানের জন্য একটি বই পড়তে পারেন। এখন সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান পড়লে, পরে আবার পড়া লাগতে পারে। কারণ, সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল।
আপনাকে মাথায় রাখতে হবে, এখন বিসিএস পরীক্ষায় প্রতিযোগী ও প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। তাই আগের মতো গতানুগতিক বই পড়ে কিংবা গতানুগতিক টেকনিক অবলম্ব করে খুব একটা ভালো সাফল্য আশা করা যায় না।
আরেকটি কথা মনে রাখবেন, এই পৃথিবীতে কেউ কাউকে সুযোগ করে দেয় না, নিজের সুযোগ নিজেকে তৈরি করে নিতে হয় যোগ্যতা ও পরিশ্রম দিয়ে। আপনি ১ ঘণ্টা বেশি পড়া মানে ১ ঘণ্টার পথ এগিয়ে গেলেন সাফল্যের পথে। সকল পরিশ্রমী, সৎ সাহসীর জন্য শুভ কামনা ও দোয়া রইল।
শূন্য থেকে কিভাবে ৪৪তম বিসিএস প্রস্তুতি নিবেন?
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ