ঢাকা ০১:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫

শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা প্রকল্পের নতুন সম্ভাবনা- চাষাবাদ, মাটি ও পানি রপ্তানি

  • আপডেট সময় : ০৬:৫৪:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

ড. মোখলেসুর রহমান

তিস্তা নদী- উত্তর বাংলার প্রাণ। এই নদী শুধু একটি জলধারা নয়, এটি হাজার হাজার কৃষকের জীবিকা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক অর্থনীতির মূল ভিত্তি। কিন্তু প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে এই নদীর জলপ্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প পুরোপুরি কাজে লাগানো যায় না। আর কৃষিজমি শুকিয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র সেচ নয়, বরং এই নদী ঘিরে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে হবে। যেমন- উর্বর মাটি ও বিশুদ্ধ পানি রপ্তানির উদ্যোগ।

তিস্তা প্রকল্প ও বর্তমান বাস্তবতা: বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদীর বিস্তৃতি ২,০০৪ বর্গকিলোমিটার; যা মোট ১২ হাজার ১৫৯ বর্গকিলোমিটারের নদীবিধৌত এলাকায় পড়ে।

দেশের অন্যতম বৃহৎ সেচ প্রকল্প, তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প (ঞইওচ), প্রায় ৭.৫ লাখ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়ে গড়ে উঠেছে। কিন্তু বাস্তবে পর্যাপ্ত পানির অভাবে প্রতি বছর গড়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। অর্থাৎ প্রকল্পের সক্ষমতার মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার হচ্ছে। এর মানে, কোটি কোটি ঘনমিটার পানি প্রয়োজন শুষ্ক মৌসুমে; যা আমরা সংরক্ষণ করতে পারছি না। ফলে তিস্তা অববাহিকার কৃষকরা শস্য উৎপাদনে ব্যর্থ হচ্ছেন, জীবিকা হারাচ্ছেন ও অভ্যন্তরীণ অভিবাসনে বাধ্য হচ্ছেন।

সমস্যা থেকে সম্ভাবনার দিকে: এই সংকটকে শুধু ‘সমস্যা’ হিসেবে না দেখে ‘সম্ভাবনা’ হিসেবে দেখাই সময়ের দাবি। আমরা যদি এই পানি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারি, শুধু কৃষক নয়, বরং দেশের অর্থনীতিও লাভবান হতে পারে।

তিস্তা নদীর আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে উর্বর পলি মাটি রয়েছে, যেটা বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। তেমনি বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি যদি আমরা রিজার্ভার, বড় গর্ত বা ভূগর্ভে সংরক্ষণ করতে পারি, তাহলে সেই পানি শুষ্ক মৌসুমে কৃষিকাজে ব্যবহারের পাশাপাশি রপ্তানিরও সুযোগ রয়েছে।

নতুন দিগন্ত: মাটি ও পানি রপ্তানির সম্ভাবনা-
উর্বর মাটি রপ্তানি: সিঙ্গাপুর, কাতার, দুবাই সহ অনেক দেশ নিজেরা কৃষিকাজ বা নগরায়নের জন্য বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে উর্বর মাটি বা বালি আমদানি করে।

তিস্তা অঞ্চলের নদী তীরবর্তী পলি মাটি কৃষির জন্য যেমন উপযোগী, তেমনি রপ্তানির ক্ষেত্রেও বাজারযোগ্য।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই একটি ‘মাটি ও বালি রপ্তানি নীতিমালা’ প্রণয়নের পথে আছে (সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন)। এই নীতিমালার আলোকে তিস্তার অতিরিক্ত মাটি, পরিবেশসম্মতভাবে উত্তোলন করে রপ্তানি করা সম্ভব।

পানির রপ্তানি: বিশুদ্ধ, প্রাকৃতিক পানির আন্তর্জাতিক চাহিদা বাড়ছে। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ বিশুদ্ধ খাবার পানি বা বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য পানি আমদানি করে।

যদি তিস্তা অঞ্চলে সাশ্রয়ী মূল্যে পানি সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতি (যেমন- ভূগর্ভস্থ পানি রিচার্জ, রিজার্ভার, বড় গর্ত তৈরি) অবলম্বন করা যায়, তাহলে অতিরিক্ত পানি বোতলজাত বা ট্যাঙ্কারে রপ্তানি করা সম্ভব। এতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের নতুন দিগন্ত খুলবে, তবে শর্ত হচ্ছে—রপ্তানির আগে দেশীয় কৃষি ও জনগণের প্রয়োজন আগে পূরণ করতে হবে।

পানির সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার প্রস্তাবিত পদ্ধতি-
১. ভূগর্ভস্থ পানি সংরক্ষণ: বর্ষাকালে তিস্তা নদীর অতিরিক্ত পানি ভূগর্ভে সংরক্ষণের জন্য পেরকোলেশন পিট, চেকড্যাম, ইনফিল্ট্রেশন ওয়েল তৈরি করতে হবে।

বড় গর্ত বা কৃত্রিম রিজার্ভার: নদীর বিভিন্ন অংশে (উজান থেকে ভাটির দিকে) বড় গর্ত বা জলাধার তৈরি করে বর্ষাকালের পানি সঞ্চয় করতে হবে।

নদী পুনর্খনন ও শাখা নদী পরিষ্কার: তিস্তা নদীর প্রধান চ্যানেল ও শাখা নদীগুলোয় আবার খনন করে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।

বিজ্ঞানভিত্তিক হিসাব ও মানচিত্রায়ণ: প্রতি হেক্টরে কত কিউবিক মিটার পানি প্রয়োজন। বর্ষাকালে কত পানি জমা হয়। ভূগর্ভে কতটা পানি প্রবেশ করেছে- এসব পরিমাপ ও মানচিত্রে তুলে ধরতে হবে।

অর্থনৈতিক সুবিধা ও কর্মসংস্থান: এই প্রকল্পগুলোয় কাজ করার মাধ্যমে স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থান হবে। মাটি ও পানি রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। কৃষিজ উৎপাদন বাড়বে, ফলে খাদ্য নিরাপত্তা ও গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। দীর্ঘমেয়াদে এই প্রকল্প জলবায়ু সহনশীলতা ও টেকসই কৃষির ভিত্তি তৈরি করবে।

ঝুঁকি ও করণীয়: পানি ও মাটি রপ্তানির আগে পরিবেশগত প্রভাব বিচার করতে হবে। স্থানীয় কৃষক ও জনগণের প্রয়োজন আগে নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক। রপ্তানি কার্যক্রমে সরকারকে সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে পরীক্ষাগার ও সার্টিফিকেশন সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে।

উপসংহার- তিস্তা শুধু কৃষির জন্য নয়, রপ্তানিরও সম্ভাবনা: তিস্তা নদী বরাবরই কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু এখন সময় এসেছে এই নদীর সম্পদকে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করার। সঠিক পরিকল্পনা, বিজ্ঞানভিত্তিক পানি সংরক্ষণ ও পরিবেশবান্ধব মাটি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তিস্তা প্রকল্পকে শুধুই শুষ্ক মৌসুমের সেচ প্রকল্প না বানিয়ে বাংলাদেশের একটি আন্তর্জাতিক রপ্তানি কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে তোলা সম্ভব।

সরকার, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন অংশীদার এবং স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তিস্তা হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের পানি ও মাটি ভিত্তিক নতুন অর্থনীতির চালিকাশক্তি।

প্রস্তাবিত পদক্ষেপ: তিস্তা অববাহিকার ভূগোলভিত্তিক মানচিত্র ও ডেটা সংগ্রহ। পাইলট প্রকল্প হিসেবে কয়েকটি অঞ্চলে রিজার্ভার ও গর্ত নির্মাণ। তিস্তা নদী ও শাখা নদীগুলো পুনর্খনন। নতুন নীতিমালা—পানি ও মাটি রপ্তানির জন্য। আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি সম্ভাবনার গবেষণা। তহবিল ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা প্রস্তুত।

লেখক: Professor Dr Mokhlesur Rahman, Nuclear Science and Engineering, MIST, Dhaka

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

অনেক বছর পর সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ভোট হবে: প্রধান উপদেষ্টা

শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা প্রকল্পের নতুন সম্ভাবনা- চাষাবাদ, মাটি ও পানি রপ্তানি

আপডেট সময় : ০৬:৫৪:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫

ড. মোখলেসুর রহমান

তিস্তা নদী- উত্তর বাংলার প্রাণ। এই নদী শুধু একটি জলধারা নয়, এটি হাজার হাজার কৃষকের জীবিকা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক অর্থনীতির মূল ভিত্তি। কিন্তু প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে এই নদীর জলপ্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প পুরোপুরি কাজে লাগানো যায় না। আর কৃষিজমি শুকিয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র সেচ নয়, বরং এই নদী ঘিরে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে হবে। যেমন- উর্বর মাটি ও বিশুদ্ধ পানি রপ্তানির উদ্যোগ।

তিস্তা প্রকল্প ও বর্তমান বাস্তবতা: বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদীর বিস্তৃতি ২,০০৪ বর্গকিলোমিটার; যা মোট ১২ হাজার ১৫৯ বর্গকিলোমিটারের নদীবিধৌত এলাকায় পড়ে।

দেশের অন্যতম বৃহৎ সেচ প্রকল্প, তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প (ঞইওচ), প্রায় ৭.৫ লাখ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়ে গড়ে উঠেছে। কিন্তু বাস্তবে পর্যাপ্ত পানির অভাবে প্রতি বছর গড়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। অর্থাৎ প্রকল্পের সক্ষমতার মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার হচ্ছে। এর মানে, কোটি কোটি ঘনমিটার পানি প্রয়োজন শুষ্ক মৌসুমে; যা আমরা সংরক্ষণ করতে পারছি না। ফলে তিস্তা অববাহিকার কৃষকরা শস্য উৎপাদনে ব্যর্থ হচ্ছেন, জীবিকা হারাচ্ছেন ও অভ্যন্তরীণ অভিবাসনে বাধ্য হচ্ছেন।

সমস্যা থেকে সম্ভাবনার দিকে: এই সংকটকে শুধু ‘সমস্যা’ হিসেবে না দেখে ‘সম্ভাবনা’ হিসেবে দেখাই সময়ের দাবি। আমরা যদি এই পানি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারি, শুধু কৃষক নয়, বরং দেশের অর্থনীতিও লাভবান হতে পারে।

তিস্তা নদীর আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে উর্বর পলি মাটি রয়েছে, যেটা বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। তেমনি বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি যদি আমরা রিজার্ভার, বড় গর্ত বা ভূগর্ভে সংরক্ষণ করতে পারি, তাহলে সেই পানি শুষ্ক মৌসুমে কৃষিকাজে ব্যবহারের পাশাপাশি রপ্তানিরও সুযোগ রয়েছে।

নতুন দিগন্ত: মাটি ও পানি রপ্তানির সম্ভাবনা-
উর্বর মাটি রপ্তানি: সিঙ্গাপুর, কাতার, দুবাই সহ অনেক দেশ নিজেরা কৃষিকাজ বা নগরায়নের জন্য বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে উর্বর মাটি বা বালি আমদানি করে।

তিস্তা অঞ্চলের নদী তীরবর্তী পলি মাটি কৃষির জন্য যেমন উপযোগী, তেমনি রপ্তানির ক্ষেত্রেও বাজারযোগ্য।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই একটি ‘মাটি ও বালি রপ্তানি নীতিমালা’ প্রণয়নের পথে আছে (সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন)। এই নীতিমালার আলোকে তিস্তার অতিরিক্ত মাটি, পরিবেশসম্মতভাবে উত্তোলন করে রপ্তানি করা সম্ভব।

পানির রপ্তানি: বিশুদ্ধ, প্রাকৃতিক পানির আন্তর্জাতিক চাহিদা বাড়ছে। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ বিশুদ্ধ খাবার পানি বা বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য পানি আমদানি করে।

যদি তিস্তা অঞ্চলে সাশ্রয়ী মূল্যে পানি সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতি (যেমন- ভূগর্ভস্থ পানি রিচার্জ, রিজার্ভার, বড় গর্ত তৈরি) অবলম্বন করা যায়, তাহলে অতিরিক্ত পানি বোতলজাত বা ট্যাঙ্কারে রপ্তানি করা সম্ভব। এতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের নতুন দিগন্ত খুলবে, তবে শর্ত হচ্ছে—রপ্তানির আগে দেশীয় কৃষি ও জনগণের প্রয়োজন আগে পূরণ করতে হবে।

পানির সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার প্রস্তাবিত পদ্ধতি-
১. ভূগর্ভস্থ পানি সংরক্ষণ: বর্ষাকালে তিস্তা নদীর অতিরিক্ত পানি ভূগর্ভে সংরক্ষণের জন্য পেরকোলেশন পিট, চেকড্যাম, ইনফিল্ট্রেশন ওয়েল তৈরি করতে হবে।

বড় গর্ত বা কৃত্রিম রিজার্ভার: নদীর বিভিন্ন অংশে (উজান থেকে ভাটির দিকে) বড় গর্ত বা জলাধার তৈরি করে বর্ষাকালের পানি সঞ্চয় করতে হবে।

নদী পুনর্খনন ও শাখা নদী পরিষ্কার: তিস্তা নদীর প্রধান চ্যানেল ও শাখা নদীগুলোয় আবার খনন করে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।

বিজ্ঞানভিত্তিক হিসাব ও মানচিত্রায়ণ: প্রতি হেক্টরে কত কিউবিক মিটার পানি প্রয়োজন। বর্ষাকালে কত পানি জমা হয়। ভূগর্ভে কতটা পানি প্রবেশ করেছে- এসব পরিমাপ ও মানচিত্রে তুলে ধরতে হবে।

অর্থনৈতিক সুবিধা ও কর্মসংস্থান: এই প্রকল্পগুলোয় কাজ করার মাধ্যমে স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থান হবে। মাটি ও পানি রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। কৃষিজ উৎপাদন বাড়বে, ফলে খাদ্য নিরাপত্তা ও গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। দীর্ঘমেয়াদে এই প্রকল্প জলবায়ু সহনশীলতা ও টেকসই কৃষির ভিত্তি তৈরি করবে।

ঝুঁকি ও করণীয়: পানি ও মাটি রপ্তানির আগে পরিবেশগত প্রভাব বিচার করতে হবে। স্থানীয় কৃষক ও জনগণের প্রয়োজন আগে নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক। রপ্তানি কার্যক্রমে সরকারকে সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে পরীক্ষাগার ও সার্টিফিকেশন সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে।

উপসংহার- তিস্তা শুধু কৃষির জন্য নয়, রপ্তানিরও সম্ভাবনা: তিস্তা নদী বরাবরই কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু এখন সময় এসেছে এই নদীর সম্পদকে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করার। সঠিক পরিকল্পনা, বিজ্ঞানভিত্তিক পানি সংরক্ষণ ও পরিবেশবান্ধব মাটি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তিস্তা প্রকল্পকে শুধুই শুষ্ক মৌসুমের সেচ প্রকল্প না বানিয়ে বাংলাদেশের একটি আন্তর্জাতিক রপ্তানি কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে তোলা সম্ভব।

সরকার, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন অংশীদার এবং স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তিস্তা হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের পানি ও মাটি ভিত্তিক নতুন অর্থনীতির চালিকাশক্তি।

প্রস্তাবিত পদক্ষেপ: তিস্তা অববাহিকার ভূগোলভিত্তিক মানচিত্র ও ডেটা সংগ্রহ। পাইলট প্রকল্প হিসেবে কয়েকটি অঞ্চলে রিজার্ভার ও গর্ত নির্মাণ। তিস্তা নদী ও শাখা নদীগুলো পুনর্খনন। নতুন নীতিমালা—পানি ও মাটি রপ্তানির জন্য। আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি সম্ভাবনার গবেষণা। তহবিল ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা প্রস্তুত।

লেখক: Professor Dr Mokhlesur Rahman, Nuclear Science and Engineering, MIST, Dhaka

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ