ঢাকা ০৩:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫

শুভ বড়দিন আজ, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব

  • আপডেট সময় : ০১:১৭:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ৩৪ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ ২৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’ । এই ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট এই সময়ে বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা এ দিনটিকে ‘শুভ বড়দিন’ হিসেবে উদযাপন করে থাকেন। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচারের মাধ্যমে মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতেই প্রভু যিশুর পৃথিবীতে আগমন ঘটেছিল।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিষ্টান ধর্মানুসারীরাও এদিন যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আচারাদি, আনন্দ-উৎসব এবং প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ‘শুভ বড়দিন’ উদযাপন করবেন। এ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গির্জাগুলোকে সাজানো হয়েছে নতুন-আঙ্গিকে।

এছাড়া বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা থেকে বিভিন্ন গির্জা এবং তারকা-হোটেলগুলোতে ব্যবস্থা করা হয়েছে আলোকসজ্জার। পাশাপাশি এদিন রাত ৭টা থেকে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা।

বড়দিন উপলক্ষে দেশের সব গির্জায় অনুষ্ঠিত হবে প্রার্থনা। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ৭টায় প্রথম প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে তেজগাঁও তেজগাঁও জপমালা রানির গির্জায়।

তেজগাঁও ধর্মপল্লির পাল পুরোহিত ফাদার জয়ন্ত এস গোমেজ বলেন, এবারে বড়দিন উৎসব আমাদের জন্যে একটু ভিন্ন হতে পারে। দেশের পরিবর্তিত অবস্থায়ও আমরা চাই শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের বড়দিন উৎসব পালন করতে। আমরা ঈশ্বরের দয়ায়, ঈশ্বরের সেই অনুগ্রহে চাই আমাদের এই সমস্ত ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি অনুসারে বড়দিনকে উদযাপন করতে। কারণ বড়দিন উৎসব, যিনি আমাদের মধ্যে আসছেন স্বয়ং প্রভু যিশুখ্রিষ্ট, যিনি ঈশ্বরপুত্র তিনি আমাদের শান্তি দিতে চান। তিনি এসেছেন আমাদের মধ্যকার বিরোধ মিটিয়ে দিতে, আমাদের মধ্যকার নানা প্রকার যে বিবাদ বিচ্ছিন্নতা, হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি, সংঘর্ষ এই সমস্ত অপশক্তিকে নাশ করতেই তিনি এই জগতে আবির্ভাব হচ্ছেন এবং তিনি এসে এই জগৎকে শান্তি দেবেন।

তিনি আরো বলেন, সবার মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা, প্রেম, দয়া, শান্তি, আনন্দ তিনি দেবেন। আর তার আগমনে এই পৃথিবী একটা নতুন সৃষ্টিতে পরিণত হবে। তাই বাংলাদেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়া আমাদের বাঙালি এবং আদিবাসী সব খ্রিষ্টান বিশ্বাসী ভাই বোনেরা—যারা বাংলা ভাষাভাষী, আমরা সবার প্রতি বড়দিনের শুভেচ্ছা জানাই। আসুন, আমরা বড়দিনকে একসঙ্গে যার যার অবস্থান থেকে আমরা পালন করি।

তিনি বলেন, আসুন আমরা আমাদের দেশের জন্য প্রার্থনা করি। আমাদের দেশে যে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে যেন এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমাদের বাংলাদেশের জন্য একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এই সরকার যেন আমাদের দেশের এই স্থিতিশীল অবস্থা, সুশাসন, ন্যায্যতা, শান্তি সবার জন্য নিরাপত্তা, সব ধর্ম পালনে যেন আমরা স্বাধীনভাবে আমাদের এই বিশ্বাসের চর্চা করতে পারি, সেই প্রার্থনা আমরা জানাচ্ছি। তাই এই বড়দিন হোক আমাদের সবার জন্যে শান্তির, বড়দিন হোক আমাদের সবার জন্য মিলনের, এই বড়দিন হোক আমাদের সেই ঈশ্বরের প্রতি আমাদের আনুগত্য এবং অপরদিকে প্রতিশ্রুতি অঙ্গীকার—যেন আমরা একজন খ্রিষ্টান হিসেবে একজন মানুষ হিসেবে আমরা সুন্দর পবিত্র জীবনযাপন করতে পারি। আমরা যেন দেশ এবং জাতিকে ভালোবাসতে পারি এবং এইভাবে প্রতিদিন যেন আমাদের এই বড়দিনের চেতনা এবং শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে আমরা প্রত্যেক দিনটাকে আমরা বড়দিন হিসেবে উদযাপন করতে পারি।

বড়দিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীসহ সবার শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে পৃথক বাণী দিয়েছেন ।

বাণীতে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘সব ধর্মের মূল মর্মবাণীই মানুষের সেবা ও কল্যাণ। যিশুখ্রিষ্টের আদর্শ ও দীক্ষা থেকে শিক্ষা নিয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে দেশ ও জনগণের কল্যাণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এখানে সকল ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম ও আচার-অনুষ্ঠান পালন করে আসছে। আজকের এই শুভদিনে বিদ্যমান এই সাম্প্রদায়িক সৌহার্দকে আরও সুদৃঢ় করে সবাইকে আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার অগ্রযাত্রায় শামিল হওয়ার জন্য আমি আহ্বান জানাই।

বাণীতে ড. মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আবহমানকাল ধরে এ দেশের মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি ও আচার-অনু্ষ্ঠানকে সম্মান করে সৌহার্দপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রেখে চলেছে। যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বড়দিন উদ্‌যাপন আমাদের এ সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করবে- এমনটাই প্রত্যাশা করি।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবার জন্য একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে কাজ করে যাচ্ছে। আমি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশপ্রেম ও মানবতার মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।

বড়দিন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সরকারি ছুটি। অপরদিকে দিনটি উপলক্ষে অনেক খ্রিষ্টান পরিবারে কেক তৈরি করা হবে, থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। এছাড়াও দেশের অনেক অঞ্চলে আয়োজন করা হয়েছে কীর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয় গানের। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অনেকেই আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বড়দিনকে বেছে নেন। পরিবারের সদস্যদের সাথে আনন্দ ভাগ করে নিতে অনেকেই রাজধানী ছেড়ে গিয়েছেন গ্রামের বাড়িতে।

রাজধানীর তারকা হোটেলগুলোতে আলোকসজ্জার পাশাপাশি হোটেলের ভিতরে কৃত্রিমভাবে স্থাপন করা হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি ও শান্তাক্লজ। বড়দিন উদযাপনে রয়েছে নানা আয়োজন।

খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবার কাছে একটি পুণ্যময় দিন হিসেবে পরিচিত বড়দিন। যিশুখ্রিষ্টের জন্ম কবে হয়েছিল, এ নিয়ে স্পষ্ট করে উল্লেখ নেই পবিত্র বাইবেলে। খ্রিষ্টান ধর্মের প্রবর্তকের জন্ম হয়েছিল অলৌকিকভাবে। আর তাকে স্মরণ করতে গির্জায় প্রার্থনার আহ্বান করার জন্য বাজানো হয় ঘণ্টাধ্বনি। যিশুখ্রিষ্টের অনুসারীরা মনে করেন এই ঘণ্টাধ্বনি শুভ সংবাদের বার্তা পৌঁছায়।

খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, যিশুখ্রিষ্ট পৃথিবীতে মানুষের রূপ গ্রহণ করে জন্মগ্রহণ করেন। পৃথিবীর সব পাপ থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে আরও সুসংহত করতেই যিশুর আগমন। যিশুর আগমনের এই ক্ষণ স্মরণ করতেই তার অনুসারীরা বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন পালন করে থাকে। তাদের বিশ্বাস ডিসেম্বরেরই কোনও এক সময় যিশুর জন্ম।

সানা/আপ্র/২৫/১২/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

শুভ বড়দিন আজ, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব

আপডেট সময় : ০১:১৭:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ ২৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’ । এই ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট এই সময়ে বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা এ দিনটিকে ‘শুভ বড়দিন’ হিসেবে উদযাপন করে থাকেন। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচারের মাধ্যমে মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতেই প্রভু যিশুর পৃথিবীতে আগমন ঘটেছিল।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিষ্টান ধর্মানুসারীরাও এদিন যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আচারাদি, আনন্দ-উৎসব এবং প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ‘শুভ বড়দিন’ উদযাপন করবেন। এ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গির্জাগুলোকে সাজানো হয়েছে নতুন-আঙ্গিকে।

এছাড়া বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা থেকে বিভিন্ন গির্জা এবং তারকা-হোটেলগুলোতে ব্যবস্থা করা হয়েছে আলোকসজ্জার। পাশাপাশি এদিন রাত ৭টা থেকে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা।

বড়দিন উপলক্ষে দেশের সব গির্জায় অনুষ্ঠিত হবে প্রার্থনা। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ৭টায় প্রথম প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে তেজগাঁও তেজগাঁও জপমালা রানির গির্জায়।

তেজগাঁও ধর্মপল্লির পাল পুরোহিত ফাদার জয়ন্ত এস গোমেজ বলেন, এবারে বড়দিন উৎসব আমাদের জন্যে একটু ভিন্ন হতে পারে। দেশের পরিবর্তিত অবস্থায়ও আমরা চাই শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের বড়দিন উৎসব পালন করতে। আমরা ঈশ্বরের দয়ায়, ঈশ্বরের সেই অনুগ্রহে চাই আমাদের এই সমস্ত ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি অনুসারে বড়দিনকে উদযাপন করতে। কারণ বড়দিন উৎসব, যিনি আমাদের মধ্যে আসছেন স্বয়ং প্রভু যিশুখ্রিষ্ট, যিনি ঈশ্বরপুত্র তিনি আমাদের শান্তি দিতে চান। তিনি এসেছেন আমাদের মধ্যকার বিরোধ মিটিয়ে দিতে, আমাদের মধ্যকার নানা প্রকার যে বিবাদ বিচ্ছিন্নতা, হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি, সংঘর্ষ এই সমস্ত অপশক্তিকে নাশ করতেই তিনি এই জগতে আবির্ভাব হচ্ছেন এবং তিনি এসে এই জগৎকে শান্তি দেবেন।

তিনি আরো বলেন, সবার মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা, প্রেম, দয়া, শান্তি, আনন্দ তিনি দেবেন। আর তার আগমনে এই পৃথিবী একটা নতুন সৃষ্টিতে পরিণত হবে। তাই বাংলাদেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়া আমাদের বাঙালি এবং আদিবাসী সব খ্রিষ্টান বিশ্বাসী ভাই বোনেরা—যারা বাংলা ভাষাভাষী, আমরা সবার প্রতি বড়দিনের শুভেচ্ছা জানাই। আসুন, আমরা বড়দিনকে একসঙ্গে যার যার অবস্থান থেকে আমরা পালন করি।

তিনি বলেন, আসুন আমরা আমাদের দেশের জন্য প্রার্থনা করি। আমাদের দেশে যে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে যেন এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমাদের বাংলাদেশের জন্য একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এই সরকার যেন আমাদের দেশের এই স্থিতিশীল অবস্থা, সুশাসন, ন্যায্যতা, শান্তি সবার জন্য নিরাপত্তা, সব ধর্ম পালনে যেন আমরা স্বাধীনভাবে আমাদের এই বিশ্বাসের চর্চা করতে পারি, সেই প্রার্থনা আমরা জানাচ্ছি। তাই এই বড়দিন হোক আমাদের সবার জন্যে শান্তির, বড়দিন হোক আমাদের সবার জন্য মিলনের, এই বড়দিন হোক আমাদের সেই ঈশ্বরের প্রতি আমাদের আনুগত্য এবং অপরদিকে প্রতিশ্রুতি অঙ্গীকার—যেন আমরা একজন খ্রিষ্টান হিসেবে একজন মানুষ হিসেবে আমরা সুন্দর পবিত্র জীবনযাপন করতে পারি। আমরা যেন দেশ এবং জাতিকে ভালোবাসতে পারি এবং এইভাবে প্রতিদিন যেন আমাদের এই বড়দিনের চেতনা এবং শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে আমরা প্রত্যেক দিনটাকে আমরা বড়দিন হিসেবে উদযাপন করতে পারি।

বড়দিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীসহ সবার শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে পৃথক বাণী দিয়েছেন ।

বাণীতে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘সব ধর্মের মূল মর্মবাণীই মানুষের সেবা ও কল্যাণ। যিশুখ্রিষ্টের আদর্শ ও দীক্ষা থেকে শিক্ষা নিয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে দেশ ও জনগণের কল্যাণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এখানে সকল ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম ও আচার-অনুষ্ঠান পালন করে আসছে। আজকের এই শুভদিনে বিদ্যমান এই সাম্প্রদায়িক সৌহার্দকে আরও সুদৃঢ় করে সবাইকে আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার অগ্রযাত্রায় শামিল হওয়ার জন্য আমি আহ্বান জানাই।

বাণীতে ড. মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আবহমানকাল ধরে এ দেশের মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি ও আচার-অনু্ষ্ঠানকে সম্মান করে সৌহার্দপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রেখে চলেছে। যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বড়দিন উদ্‌যাপন আমাদের এ সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করবে- এমনটাই প্রত্যাশা করি।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবার জন্য একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে কাজ করে যাচ্ছে। আমি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশপ্রেম ও মানবতার মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।

বড়দিন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সরকারি ছুটি। অপরদিকে দিনটি উপলক্ষে অনেক খ্রিষ্টান পরিবারে কেক তৈরি করা হবে, থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। এছাড়াও দেশের অনেক অঞ্চলে আয়োজন করা হয়েছে কীর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয় গানের। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অনেকেই আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বড়দিনকে বেছে নেন। পরিবারের সদস্যদের সাথে আনন্দ ভাগ করে নিতে অনেকেই রাজধানী ছেড়ে গিয়েছেন গ্রামের বাড়িতে।

রাজধানীর তারকা হোটেলগুলোতে আলোকসজ্জার পাশাপাশি হোটেলের ভিতরে কৃত্রিমভাবে স্থাপন করা হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি ও শান্তাক্লজ। বড়দিন উদযাপনে রয়েছে নানা আয়োজন।

খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবার কাছে একটি পুণ্যময় দিন হিসেবে পরিচিত বড়দিন। যিশুখ্রিষ্টের জন্ম কবে হয়েছিল, এ নিয়ে স্পষ্ট করে উল্লেখ নেই পবিত্র বাইবেলে। খ্রিষ্টান ধর্মের প্রবর্তকের জন্ম হয়েছিল অলৌকিকভাবে। আর তাকে স্মরণ করতে গির্জায় প্রার্থনার আহ্বান করার জন্য বাজানো হয় ঘণ্টাধ্বনি। যিশুখ্রিষ্টের অনুসারীরা মনে করেন এই ঘণ্টাধ্বনি শুভ সংবাদের বার্তা পৌঁছায়।

খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, যিশুখ্রিষ্ট পৃথিবীতে মানুষের রূপ গ্রহণ করে জন্মগ্রহণ করেন। পৃথিবীর সব পাপ থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে আরও সুসংহত করতেই যিশুর আগমন। যিশুর আগমনের এই ক্ষণ স্মরণ করতেই তার অনুসারীরা বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন পালন করে থাকে। তাদের বিশ্বাস ডিসেম্বরেরই কোনও এক সময় যিশুর জন্ম।

সানা/আপ্র/২৫/১২/২০২৫