ঢাকা ০৭:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫

শুধু সাহায্যের আবেদন নয়, বেঁচে থাকার আহবান

  • আপডেট সময় : ১১:১৭:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২১
  • ১২৪ বার পড়া হয়েছে

ফারজানা কাশেমী : প্রতিদিন ঝরে পড়া ফুলের সংখ্যা নেহাত কম নয়। আবার আতœপ্রত্যয়ী উজ্জ্বল নক্ষত্র ও স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়। এ যেন জীবন বাঁকে হাসি আর কান্নার দোলাচল।
পার্থ বাঁচতে চায়। (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী) তার জন্য সাহায্যের আবেদন পুনঃ পুনঃ চোখে পরে। আবার মন খারাপ করা রাত্রি দিনে তাও আবলোকন হয় কিডনী প্রতিস্থাপনের আগেই পার্থ চলে গেছে না ফেরার দেশে।
ছোয়া নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী। দিনশেষে ছোয়া এক পরাজিত জীবন যোদ্ধার নাম। দুরারোগ্য ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে হারিয়ে যাওয়া এক মেয়ের নাম। ছোয়া বেঁচে থাকার আকুলতায় সবার সাহায্য চেয়েছিল। জীবনকে উপভোগ করার বিন্দুমাত্র অবকাশ ছোয়া পায়নি। ছোয়া অন্যের সুন্দর জীবন দেখে যাওয়া দর্শক মাত্র। শত কষ্টে হারিয়ে যাওয়া পথহারা মানুষের ভিড় থেকে ফিরে আসার গল্প হতে চেয়েছিল কিশোরী ছোয়া।
অয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অয়নের জীবন বাঁচানোর জন্য কন্সার্ট হয়। অয়ন বাঁচতে চায়। অয়নের চোখের নোনা জল ঈশ্বর মুছে দেবে কিনা তা হয়তো শুধু কিছু সময়ের জন্য প্রশ্নসাপেক্ষ।
প্রতিদিন এরকম কিছু শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পরা গল্পের স্বাক্ষী হয় সহায় সম্বলহীন কিছু প্রাণ, সম্পর্ক।
সময়ের নিয়মে, যান্ত্রিক জটিলতায়, অনিয়ম, চিকিৎসা সেবায় ত্রুটি, আর্থিক অস্বচ্ছলতা প্রতিদিন হাজারো মেধাবী মুখ হারিয়ে যায়।
যে ফুল সৌরভ ছড়াবে, সে ফুল বিকশিত হবার আগেই ঝরে যায়। চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতার, পেশাগত আচরণের বেহাল দশা, মান নিয়ন্ত্রণহীন সেবা আর হাজারো অনিয়মে জর্জরিত আমাদের স্বাস্থ্য সেবা। আর বরাদ্দ সংকট তো বিদ্যমান জটিলতা। প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাব, মানহীন যন্ত্রপাতি, অকেজো, বিকল যেন পুরো স্বাস্থ্যসেবা। স্বাস্থ্যসেবার যেন এক কঙ্কাল চিত্র। গোটা বিধিব্যবস্থা যেন অপুষ্টিতে জর্জরিত।
চিকিৎসা ব্যয় আকাশচুম্বী। সিন্ডিকেট বাণিজ্যের মেলা। ঔষধ বিক্রি হয় স্বেচ্ছাচারি দামে। মানুষের জীবন নয়, এ যেন গিনিপিকের জীবন। ঔষ্ঠাগত হয় মানুষের জীবন।
পরিবর্তন আর সুদিন যেন ধোঁয়াশা। এই বেহাল দশা উত্তরণে উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম আর হামজা কোথাও যেন গা ঢাকা দিয়েছে। রোদে পুড়ে, ক্লান্ত শরীরে বাঁচতে চাওয়া মানুষগুলো জিম্মি হয় এই অকেজো, র্দুবল চিকিৎসা সেবায় ত্রুটির বিচ্যুতির কাছে।
অমূল্য জীবন খুব সহজে চড়া মূল্য দেয়। নিঃস্ব হয় পরিবার। অনিশ্চিত হয় বৃদ্ধ মায়ের আশ্রয়। গন্তব্যহীন হয় আপনহারা কাছের মানুষ। যথাযথ ব্যবস্থা আর পদক্ষেপের অভাবে হাজারো প্রাণকণা বিলীন হয়। পাপড়ির বলি জ্যোতি হারায় প্রায়শই দিন।
আর আমাদের গল্প হয় হারমানা অমলদের গল্প। জীবনের অর্ধেক পথ সীমায় যার পরিসমাপ্তি। করুণ আহাজারিতে স্রষ্টা কষ্ট পায় কিনা-তা যেমন অজানা, আর জবাবদিহিবিহীন চিকিৎসা, গাফিলতির বিচারহীনতা আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক আহরণ। তাই হয়তো আমাদের মনে প্রাণে ধ্বনিত হয় –
যে জীবন দোয়েলের, ফড়িঙের
মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা….
জীবনের আয়োজন, অনুভূতিতে হোক বেঁচে থাকা। স্বাভাবিক জীবন ধারণ করুক প্রতিটি প্রাণ। অসম্পূর্ণ জীবনের গল্প রুদ্ধ হোক। জীবনের আহবানে বেঁচে থাকা আর মৃত্যুর অমোঘ নিয়মে আত্মসমর্পণ হোক প্রতিদিনের চিত্র। অন্যের দায়হীন, স্বেচ্ছাচারী আচরণ প্রদর্শনে মৃত্যুর মিছিল স্তব্ধ হোক। পূর্ণাঙ্গ জীবনবীণা উচ্ছ্বসিত হোক।
লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

শুধু সাহায্যের আবেদন নয়, বেঁচে থাকার আহবান

আপডেট সময় : ১১:১৭:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২১

ফারজানা কাশেমী : প্রতিদিন ঝরে পড়া ফুলের সংখ্যা নেহাত কম নয়। আবার আতœপ্রত্যয়ী উজ্জ্বল নক্ষত্র ও স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়। এ যেন জীবন বাঁকে হাসি আর কান্নার দোলাচল।
পার্থ বাঁচতে চায়। (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী) তার জন্য সাহায্যের আবেদন পুনঃ পুনঃ চোখে পরে। আবার মন খারাপ করা রাত্রি দিনে তাও আবলোকন হয় কিডনী প্রতিস্থাপনের আগেই পার্থ চলে গেছে না ফেরার দেশে।
ছোয়া নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী। দিনশেষে ছোয়া এক পরাজিত জীবন যোদ্ধার নাম। দুরারোগ্য ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে হারিয়ে যাওয়া এক মেয়ের নাম। ছোয়া বেঁচে থাকার আকুলতায় সবার সাহায্য চেয়েছিল। জীবনকে উপভোগ করার বিন্দুমাত্র অবকাশ ছোয়া পায়নি। ছোয়া অন্যের সুন্দর জীবন দেখে যাওয়া দর্শক মাত্র। শত কষ্টে হারিয়ে যাওয়া পথহারা মানুষের ভিড় থেকে ফিরে আসার গল্প হতে চেয়েছিল কিশোরী ছোয়া।
অয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অয়নের জীবন বাঁচানোর জন্য কন্সার্ট হয়। অয়ন বাঁচতে চায়। অয়নের চোখের নোনা জল ঈশ্বর মুছে দেবে কিনা তা হয়তো শুধু কিছু সময়ের জন্য প্রশ্নসাপেক্ষ।
প্রতিদিন এরকম কিছু শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পরা গল্পের স্বাক্ষী হয় সহায় সম্বলহীন কিছু প্রাণ, সম্পর্ক।
সময়ের নিয়মে, যান্ত্রিক জটিলতায়, অনিয়ম, চিকিৎসা সেবায় ত্রুটি, আর্থিক অস্বচ্ছলতা প্রতিদিন হাজারো মেধাবী মুখ হারিয়ে যায়।
যে ফুল সৌরভ ছড়াবে, সে ফুল বিকশিত হবার আগেই ঝরে যায়। চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতার, পেশাগত আচরণের বেহাল দশা, মান নিয়ন্ত্রণহীন সেবা আর হাজারো অনিয়মে জর্জরিত আমাদের স্বাস্থ্য সেবা। আর বরাদ্দ সংকট তো বিদ্যমান জটিলতা। প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাব, মানহীন যন্ত্রপাতি, অকেজো, বিকল যেন পুরো স্বাস্থ্যসেবা। স্বাস্থ্যসেবার যেন এক কঙ্কাল চিত্র। গোটা বিধিব্যবস্থা যেন অপুষ্টিতে জর্জরিত।
চিকিৎসা ব্যয় আকাশচুম্বী। সিন্ডিকেট বাণিজ্যের মেলা। ঔষধ বিক্রি হয় স্বেচ্ছাচারি দামে। মানুষের জীবন নয়, এ যেন গিনিপিকের জীবন। ঔষ্ঠাগত হয় মানুষের জীবন।
পরিবর্তন আর সুদিন যেন ধোঁয়াশা। এই বেহাল দশা উত্তরণে উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম আর হামজা কোথাও যেন গা ঢাকা দিয়েছে। রোদে পুড়ে, ক্লান্ত শরীরে বাঁচতে চাওয়া মানুষগুলো জিম্মি হয় এই অকেজো, র্দুবল চিকিৎসা সেবায় ত্রুটির বিচ্যুতির কাছে।
অমূল্য জীবন খুব সহজে চড়া মূল্য দেয়। নিঃস্ব হয় পরিবার। অনিশ্চিত হয় বৃদ্ধ মায়ের আশ্রয়। গন্তব্যহীন হয় আপনহারা কাছের মানুষ। যথাযথ ব্যবস্থা আর পদক্ষেপের অভাবে হাজারো প্রাণকণা বিলীন হয়। পাপড়ির বলি জ্যোতি হারায় প্রায়শই দিন।
আর আমাদের গল্প হয় হারমানা অমলদের গল্প। জীবনের অর্ধেক পথ সীমায় যার পরিসমাপ্তি। করুণ আহাজারিতে স্রষ্টা কষ্ট পায় কিনা-তা যেমন অজানা, আর জবাবদিহিবিহীন চিকিৎসা, গাফিলতির বিচারহীনতা আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক আহরণ। তাই হয়তো আমাদের মনে প্রাণে ধ্বনিত হয় –
যে জীবন দোয়েলের, ফড়িঙের
মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা….
জীবনের আয়োজন, অনুভূতিতে হোক বেঁচে থাকা। স্বাভাবিক জীবন ধারণ করুক প্রতিটি প্রাণ। অসম্পূর্ণ জীবনের গল্প রুদ্ধ হোক। জীবনের আহবানে বেঁচে থাকা আর মৃত্যুর অমোঘ নিয়মে আত্মসমর্পণ হোক প্রতিদিনের চিত্র। অন্যের দায়হীন, স্বেচ্ছাচারী আচরণ প্রদর্শনে মৃত্যুর মিছিল স্তব্ধ হোক। পূর্ণাঙ্গ জীবনবীণা উচ্ছ্বসিত হোক।
লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।