ঢাকা ০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

শুধু করোনা নয়, জনস্বাস্থ্যকে সংকটে ফেলছে জলবায়ু পরিবর্তনও: ল্যানসেট

  • আপডেট সময় : ১২:১১:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অক্টোবর ২০২১
  • ৭০ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনা মহামারির ধাক্কায় জর্জরিত বিশ্ব। এর মধ্যেই আবার প্রকট আকার ধারণ করেছে জলবায়ু সংকট। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্ব–অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। একইভাবে এটি জনস্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আজ বৃহস্পতিবার গবেষণা সাময়িকী ল্যানসেটে এমন সতর্কতার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, জনস্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে বছরমেয়াদি গবেষণাটি চালিয়েছে ‘ল্যানসেট কাউন্টডাউন’। দেখা গেছে, ২০২০ সালে বিশ্বের ১৯ শতাংশ এলাকা তীব্র খরার সম্মুখীন হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জলবায়ু সংকট বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষণা বলছে, এর ফলে বিশ্বের ২০০ কোটির বেশি মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দিন দিন বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। প্রচ- দাবদাহে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বেড়েছে দাবানলের ঘটনা। ল্যানসেট জানিয়েছে, আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বিশ্বের ১৩৪টি দেশের বাসিন্দারা দাবানলের বড় হুমকিতে রয়েছে। তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে কৃষি ও নির্মাণকাজে জড়িত লাখ লাখ মানুষের রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিরূপ আবহাওয়া যেমন আর্থিক ক্ষতি করছে, তেমনই তা নানা সংক্রামক রোগ বিস্তারের ক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে বলে জানানো হয়েছে গবেষণায়। দেখা গেছে, গত কয়েক দশকের তুলনায় ডেঙ্গু জ্বর, জিকা ভাইরাস, কলেরা ও ম্যালেরিয়ার মতো রোগ ব্যাপকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে বাদ পড়ছে না ইউরোপের উন্নত দেশগুলোও।
এ বিষয়ে ল্যানসেট কাউন্টডাউনের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি কস্তেলো বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি এখন দৃশ্যমান। আমরা এরই মধ্যে দেখতে পাচ্ছি, এটা বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। করোনা সংকটের পাশাপাশি প্রতিটি দেশকে জলবায়ু সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।’
কমছে খাদ্যের উৎপাদন
ল্যানসেটের গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৫ সালের পর থেকে গত ৫ বছরে সবচেয়ে বেশি অঞ্চল তীব্র খরার সম্মুখীন হয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে পানিচক্রেও পরিবর্তন এসেছে। এতে সময়ের আগেই পরিপক্বতা পাচ্ছে ফসল, আশানুরূপ উৎপাদন পাচ্ছেন না কৃষকেরা। ফলে খাদ্য উৎপাদনের ওপর বড় ধরনের চাপ আসছে।
জলবায়ু সংকটের ফলে খাদ্য উৎপাদন যে তুলনামূলক হারে কমে আসছে, তার প্রমাণও মিলেছে। ল্যানসেটের গবেষণায় উঠে এসেছে, ১৯৮১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ৩০ বছরের তুলনায় বর্তমান সময়ে ভুট্টার উৎপাদন ৬ শতাংশ কমেছে। একইভাবে গমের উৎপাদন ৩ শতাংশ এবং ধানের উৎপাদন ১ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে।
গবেষণার আওতায় আনা হয়েছে জলভাগের তাপমাত্রার পরিবর্তন ও এর ফলাফলও। দেখা গেছে, ১৫ বছর আগের তুলনায় সাম্প্রতিক সময়ে সাগরের প্রায় ৭০ শতাংশ অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে ৩৩০ কোটি মানুষ। এসব মানুষ সাগর থেকে আহরণ করা খাদ্যের ওপর কোনো না কোনোভাবে নির্ভরশীল।
এ বিষয়ে গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মারিয়া রোমানেলো বলেন, চলতি বছরে তীব্র দাবদাহ, ভয়াবহ বন্যা ও দাবানলের শিকার হয়েছে মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ব্যবস্থা নিতে যত দেরি হবে, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে। জলবায়ু পরিবর্তনের থাবা থেকে যে কেউই নিরাপদ নন, বিষয়টি এখন সবাইকে বিবেচনা করতে হবে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বজ্রপাতে একদিনে ১০ জনের মৃত্যু

শুধু করোনা নয়, জনস্বাস্থ্যকে সংকটে ফেলছে জলবায়ু পরিবর্তনও: ল্যানসেট

আপডেট সময় : ১২:১১:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অক্টোবর ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনা মহামারির ধাক্কায় জর্জরিত বিশ্ব। এর মধ্যেই আবার প্রকট আকার ধারণ করেছে জলবায়ু সংকট। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্ব–অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। একইভাবে এটি জনস্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আজ বৃহস্পতিবার গবেষণা সাময়িকী ল্যানসেটে এমন সতর্কতার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, জনস্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে বছরমেয়াদি গবেষণাটি চালিয়েছে ‘ল্যানসেট কাউন্টডাউন’। দেখা গেছে, ২০২০ সালে বিশ্বের ১৯ শতাংশ এলাকা তীব্র খরার সম্মুখীন হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জলবায়ু সংকট বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষণা বলছে, এর ফলে বিশ্বের ২০০ কোটির বেশি মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দিন দিন বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। প্রচ- দাবদাহে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বেড়েছে দাবানলের ঘটনা। ল্যানসেট জানিয়েছে, আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বিশ্বের ১৩৪টি দেশের বাসিন্দারা দাবানলের বড় হুমকিতে রয়েছে। তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে কৃষি ও নির্মাণকাজে জড়িত লাখ লাখ মানুষের রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিরূপ আবহাওয়া যেমন আর্থিক ক্ষতি করছে, তেমনই তা নানা সংক্রামক রোগ বিস্তারের ক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে বলে জানানো হয়েছে গবেষণায়। দেখা গেছে, গত কয়েক দশকের তুলনায় ডেঙ্গু জ্বর, জিকা ভাইরাস, কলেরা ও ম্যালেরিয়ার মতো রোগ ব্যাপকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে বাদ পড়ছে না ইউরোপের উন্নত দেশগুলোও।
এ বিষয়ে ল্যানসেট কাউন্টডাউনের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি কস্তেলো বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি এখন দৃশ্যমান। আমরা এরই মধ্যে দেখতে পাচ্ছি, এটা বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। করোনা সংকটের পাশাপাশি প্রতিটি দেশকে জলবায়ু সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।’
কমছে খাদ্যের উৎপাদন
ল্যানসেটের গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৫ সালের পর থেকে গত ৫ বছরে সবচেয়ে বেশি অঞ্চল তীব্র খরার সম্মুখীন হয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে পানিচক্রেও পরিবর্তন এসেছে। এতে সময়ের আগেই পরিপক্বতা পাচ্ছে ফসল, আশানুরূপ উৎপাদন পাচ্ছেন না কৃষকেরা। ফলে খাদ্য উৎপাদনের ওপর বড় ধরনের চাপ আসছে।
জলবায়ু সংকটের ফলে খাদ্য উৎপাদন যে তুলনামূলক হারে কমে আসছে, তার প্রমাণও মিলেছে। ল্যানসেটের গবেষণায় উঠে এসেছে, ১৯৮১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ৩০ বছরের তুলনায় বর্তমান সময়ে ভুট্টার উৎপাদন ৬ শতাংশ কমেছে। একইভাবে গমের উৎপাদন ৩ শতাংশ এবং ধানের উৎপাদন ১ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে।
গবেষণার আওতায় আনা হয়েছে জলভাগের তাপমাত্রার পরিবর্তন ও এর ফলাফলও। দেখা গেছে, ১৫ বছর আগের তুলনায় সাম্প্রতিক সময়ে সাগরের প্রায় ৭০ শতাংশ অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে ৩৩০ কোটি মানুষ। এসব মানুষ সাগর থেকে আহরণ করা খাদ্যের ওপর কোনো না কোনোভাবে নির্ভরশীল।
এ বিষয়ে গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মারিয়া রোমানেলো বলেন, চলতি বছরে তীব্র দাবদাহ, ভয়াবহ বন্যা ও দাবানলের শিকার হয়েছে মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ব্যবস্থা নিতে যত দেরি হবে, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে। জলবায়ু পরিবর্তনের থাবা থেকে যে কেউই নিরাপদ নন, বিষয়টি এখন সবাইকে বিবেচনা করতে হবে।