ঢাকা ১০:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শুধু আইনে খাদ্য নিরাপদ হবে না, বিবেকও চান মন্ত্রী সাধন

  • আপডেট সময় : ০২:০৭:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ১১৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : নিজেরা ‘বিবেকবান না হলে’ কেবল আইন দিয়ে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেছেন, “আমরা যে খাদ্যটাকে অনিরাপদ করে তুলছি, সেটাই আবার আমি খাচ্ছি, আমার কোনো ভাই খাচ্ছে অথবা আমাদের কোনো শিশু খাচ্ছে। তাই আমাদের নিজেদের মধ্যে আগে সদিচ্ছা তৈরি করতে হবে যে আমরা নিরাপদ খাদ্য খেতে চাই।”
জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে গতকাল বুধবার ঢাকার বিয়াম মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে কথা বলেছিলেন খাদ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা নিজেদের বিবেককে নিরাপদ খাদ্যের জন্য প্রস্তুত করতে না পারি ততক্ষণ পর্যন্ত কেবল আইন দিয়ে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।”
শস্যক্ষেত থেকে কারখানা ঘুরে খাবার টেবিল পর্যন্ত সর্বত্র খাবার যেন নিরাপদ থাকে, তা নিশ্চিত করতে দায়িত্বশীল সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেন, “উৎপাদক থেকে ভোক্তা সবাইকে নিরাপদ ও পুষ্টিমান সম্পন্ন খাবার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। মাঠে উৎপাদিত ফসল কিংবা পুকুরের তাজা মাছ কিনে আনলেও ভোক্তার টেবিলে যেতে যে কোনো পর্যায়ে সেটা অনিরাপদ হয়ে যেতে পারে। সে কারণে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে প্রয়োজন সবার সচেতনতা ও সদিচ্ছা।”
পরিবারের মধ্যে উৎপাদিত খাবারও যে নিরাপদ রাখা দরকার, সে বিষয়ে সতর্ক করে মন্ত্রী বলেন, “সচেতন না হলে নিজের পরিবারের মধ্যে উৎপাদিত খাদ্য নিজের হাতেই অনিরাপদ হয়ে উঠতে পারে। নিরাপদ খাদ্যের জন্য প্রতিটি ব্যক্তি ও পরিবারের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে সচেতনতা। ব্যবসায়ীদের ভেজাল মিশিয়ে লাভ করার চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”
দেশে বর্তমানে খাদ্যের মজুদ সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নি¤œ আয়ের মানুষের কষ্ট দূর করতে জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে ওএমএস এর মাধ্যমে চাল বিক্রি হচ্ছে। “করোনা মহামারীকালেও দেশে খাদ্যের অভাব হয়নি, একজন মানুষও না খেয়ে মারা যায়নি,” বলেন খাদ্যমন্ত্রী।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আয়োজিত এই আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকারও উপস্থিত ছিলেন। মাছ, মাংস ও দুধ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন উদ্বৃত্ত দেশের পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এই পণ্যগুলোর বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভোক্তার কাছে মান সম্পন্ন মাছ, মাংস ও দুধ পৌঁছানো নিশ্চিতে ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে ‘নৈতিকতার দিকে’ জোর দেওয়ার আহ্বান জানান রেজাউল করিম। তিনি বলেন, “নিরাপদ খাবারের জন্য সততাকে অনুসরণ করুন। মানুষকে মৃত্যুর মুখে পাঠিয়ে দেওয়ার মতো অনৈতিক কাজ করবেন না। পচা, বিষাক্ত, মেয়াদোত্তীর্ণ, ভেজাল মিশ্রিত খাবার খাওয়াবেন না। “৪১টি কোম্পানির মালিক যমুনা গ্রুপের নুরুল ইসলাম বাবুল সঙ্গে করে কিছুই নিতে পারেননি। এস আলম গ্রুপের একজন চলে গেছেন, কিছুই নিতেই পারেননি । মন্ত্রী, এমপি, সচিব, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার চলে যাচ্ছেন, কেউ কিছুই নিতে পারেননি।”

খাদ্য সচিব বলেন, ফুড চেইনের যে কোনো পর্যায়ে খাবার অনিরাপদ হয়ে পড়তে পারে। এমন কী খাবার টেবিলের কাছে এসেও খাবার অনিরাপদ হয়ে উঠতে পারে। তাই সবদিক মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে।
“ইতোমধ্যে আইনের আওতায় আরও ১২টি বিধি-প্রবিধি প্রণয়ন করেছি। অনেকে খেয়ালের ভুলে অপরাধ করে ফেলে। আমরা প্রাথমিকভাবে তাদের সতর্ক করতে চাই। তাতে কাজ না হলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।”
তিনি বলেন, খাদ্য খাতের যেসব স্তরে সমস্যা আছে বলে মনে হচ্ছে, সেখানে ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউশনকে দিয়ে গবেষণা চালানো হচ্ছে। আরও আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে গবেষণা চলছে। সেগুলোর তথ্য উপাত্ত থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। ‘সুস্বাস্থ্যের মূলনীতি, নিরাপদ খাদ্য ও স্বাস্থ্যবিধি’ প্রতিপাদ্যে পঞ্চমবারের মত দেশে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস পালিত হচ্ছে।
২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইনের পর ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ চালু হয়। দেশের প্রতিটি জেলায় রয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যালয়।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শুধু আইনে খাদ্য নিরাপদ হবে না, বিবেকও চান মন্ত্রী সাধন

আপডেট সময় : ০২:০৭:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : নিজেরা ‘বিবেকবান না হলে’ কেবল আইন দিয়ে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেছেন, “আমরা যে খাদ্যটাকে অনিরাপদ করে তুলছি, সেটাই আবার আমি খাচ্ছি, আমার কোনো ভাই খাচ্ছে অথবা আমাদের কোনো শিশু খাচ্ছে। তাই আমাদের নিজেদের মধ্যে আগে সদিচ্ছা তৈরি করতে হবে যে আমরা নিরাপদ খাদ্য খেতে চাই।”
জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে গতকাল বুধবার ঢাকার বিয়াম মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে কথা বলেছিলেন খাদ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা নিজেদের বিবেককে নিরাপদ খাদ্যের জন্য প্রস্তুত করতে না পারি ততক্ষণ পর্যন্ত কেবল আইন দিয়ে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।”
শস্যক্ষেত থেকে কারখানা ঘুরে খাবার টেবিল পর্যন্ত সর্বত্র খাবার যেন নিরাপদ থাকে, তা নিশ্চিত করতে দায়িত্বশীল সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেন, “উৎপাদক থেকে ভোক্তা সবাইকে নিরাপদ ও পুষ্টিমান সম্পন্ন খাবার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। মাঠে উৎপাদিত ফসল কিংবা পুকুরের তাজা মাছ কিনে আনলেও ভোক্তার টেবিলে যেতে যে কোনো পর্যায়ে সেটা অনিরাপদ হয়ে যেতে পারে। সে কারণে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে প্রয়োজন সবার সচেতনতা ও সদিচ্ছা।”
পরিবারের মধ্যে উৎপাদিত খাবারও যে নিরাপদ রাখা দরকার, সে বিষয়ে সতর্ক করে মন্ত্রী বলেন, “সচেতন না হলে নিজের পরিবারের মধ্যে উৎপাদিত খাদ্য নিজের হাতেই অনিরাপদ হয়ে উঠতে পারে। নিরাপদ খাদ্যের জন্য প্রতিটি ব্যক্তি ও পরিবারের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে সচেতনতা। ব্যবসায়ীদের ভেজাল মিশিয়ে লাভ করার চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”
দেশে বর্তমানে খাদ্যের মজুদ সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নি¤œ আয়ের মানুষের কষ্ট দূর করতে জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে ওএমএস এর মাধ্যমে চাল বিক্রি হচ্ছে। “করোনা মহামারীকালেও দেশে খাদ্যের অভাব হয়নি, একজন মানুষও না খেয়ে মারা যায়নি,” বলেন খাদ্যমন্ত্রী।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আয়োজিত এই আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকারও উপস্থিত ছিলেন। মাছ, মাংস ও দুধ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন উদ্বৃত্ত দেশের পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এই পণ্যগুলোর বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভোক্তার কাছে মান সম্পন্ন মাছ, মাংস ও দুধ পৌঁছানো নিশ্চিতে ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে ‘নৈতিকতার দিকে’ জোর দেওয়ার আহ্বান জানান রেজাউল করিম। তিনি বলেন, “নিরাপদ খাবারের জন্য সততাকে অনুসরণ করুন। মানুষকে মৃত্যুর মুখে পাঠিয়ে দেওয়ার মতো অনৈতিক কাজ করবেন না। পচা, বিষাক্ত, মেয়াদোত্তীর্ণ, ভেজাল মিশ্রিত খাবার খাওয়াবেন না। “৪১টি কোম্পানির মালিক যমুনা গ্রুপের নুরুল ইসলাম বাবুল সঙ্গে করে কিছুই নিতে পারেননি। এস আলম গ্রুপের একজন চলে গেছেন, কিছুই নিতেই পারেননি । মন্ত্রী, এমপি, সচিব, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার চলে যাচ্ছেন, কেউ কিছুই নিতে পারেননি।”

খাদ্য সচিব বলেন, ফুড চেইনের যে কোনো পর্যায়ে খাবার অনিরাপদ হয়ে পড়তে পারে। এমন কী খাবার টেবিলের কাছে এসেও খাবার অনিরাপদ হয়ে উঠতে পারে। তাই সবদিক মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে।
“ইতোমধ্যে আইনের আওতায় আরও ১২টি বিধি-প্রবিধি প্রণয়ন করেছি। অনেকে খেয়ালের ভুলে অপরাধ করে ফেলে। আমরা প্রাথমিকভাবে তাদের সতর্ক করতে চাই। তাতে কাজ না হলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।”
তিনি বলেন, খাদ্য খাতের যেসব স্তরে সমস্যা আছে বলে মনে হচ্ছে, সেখানে ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউশনকে দিয়ে গবেষণা চালানো হচ্ছে। আরও আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে গবেষণা চলছে। সেগুলোর তথ্য উপাত্ত থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। ‘সুস্বাস্থ্যের মূলনীতি, নিরাপদ খাদ্য ও স্বাস্থ্যবিধি’ প্রতিপাদ্যে পঞ্চমবারের মত দেশে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস পালিত হচ্ছে।
২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইনের পর ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ চালু হয়। দেশের প্রতিটি জেলায় রয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যালয়।