ঢাকা ০৯:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

শিশু বেড়ে উঠুক মনের আনন্দে, সৃজনশীল চিন্তাধারায়

  • আপডেট সময় : ১০:০১:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ জুলাই ২০২২
  • ৭৯ বার পড়া হয়েছে

নারী ও শিশু ডেস্ক : বাবা-মায়ের ধ্যান-ধারণা সন্তানদের উপর চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা বহুদিনের চর্চা এবং একটা অপরাধও। শিশুদের সৃজনশীলতাকে প্রতিবন্ধী করে দেয় অভিভাবকদের হাজারও শখ।
সন্তানদেরও ইচ্ছে হয় শিল্পী, আর্টিস্ট কবি এবং লেখক হয়ে সমাজের চিত্র তুলে ধরার। অথচ অভিভাবকরা ভেবেই থাকে ছেলে-মেয়েরা আকাশের সীমানা ধরবে। একজন ক্রিকেটার, ফুটবলার, ডাক্তার, অফিসার কিংবা জজ হয়। বাবা মায়ের সেই ফ্যান্টাসি একটা সময় সন্তানদের শরীরের ইনজেকশনের মতো পুষ হয়ে যায় ইচ্ছের বিরুদ্ধে মস্তিষ্কের শিরা উপশিরায়।
কেন আমাদের বড় হয়ে এসব হতে হবে? তার ব্যখ্যা বা সারমর্ম আমাদেরকে অভিভাবকরা দিতেন না। আমাদের ভাবনার বাহিরে ছিল এই পেশাগুলোই কেন? শুধু আমাদেরকে ফ্যান্টাসি পুষ করতেন ডক্টর প্রকৌশলী মানেই বড় কিছু। সেই ফ্যান্টাসির নিচে চাপা পড়ে যেত আমাদের শৈশবের ইচ্ছেগুলো।
আমাদের বাবা-মায়ের ধ্যান ধারণায় আমাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বেছে নিয়েছি তাদের ইচ্ছে পূর্ণ করতে। আবার ব্যর্থ হয়েছি আমাদের সেই ফ্যান্টাসি লালন করে। নিজেরা হতে পারিনি যা হতে চেয়েছিলাম আমাদের বাবা-মায়ের ইচ্ছেকে ভালোবেসে। সেই সময় পুনরাবৃত্তি করেছি আমাদের জীবনে এসে। আমাদের সন্তানদের শৈশবের আনন্দময় মুহূর্তগুলোতে তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছি অপূর্ণতাগুলো আমাদের ব্যর্থতাগুলো যা আমাদের অভিভাবকে তথা বাবা-মায়ের জন্য পারিনি। তা এখন এসে করাতে আমাদের সন্তানদেরকে দিয়ে শিশুদেরকে দিয়ে। অভিভাবকরা এখন সন্তানদেরকে ডক্টর, প্রকৌশলী পুলিশ অফিসার বানাতে চাই, সক্রেটিস, প্লেটো বানাতে চাই। জন্মের পর তারা কিছু বুঝে উঠার আগে পরিচয় করিয়ে দেই ডক্টর, ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ অফিসার এসব শব্দের সঙ্গে। ফলে বিদ্যাশিক্ষা শিশুর স্বভাব ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে। ফলে বড় স্বার্থপরতার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠে শিশুরা। আনন্দগুলো ক্লাসের রোলের মানদ-ে বিক্রি হয়ে যায় খুব গোপনে। শৈশবে তা জেনেও আমরা কেন তাদের ইচ্ছেগুলো গ্রহণ করছি না, ভাবনার বিষয়।
আমরা এমন জীবন যাপন করে এসেও আমাদের সন্তানরা আসলে কি হতে চায় এমন প্রশ্ন তাদেরক করি না। যেমন আমাদের অভিভাবকরা আমাদেরকে করেনি। সেই শিক্ষা বয়ে নিয়ে আমাদের নিজেদের ধ্যান-ধারণাকে সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেয়ার কোনো অধিকার যে আমাদের নেই। সেই বিষয়ে আমরা উদার হতে পারি না। সন্তান শুধু আমার না সে পৃথিবীর সন্তান।
সেই সম্পর্কে দারুনভাবে ব্যখ্যা করেছেন। কবি কাহলিল জিবরান তার ‘‘ঙহ ঈযরষফৎবহ’’ কবিতায়ও উল্লেখ করেছেন, ‘‘ণড়ঁৎ পযরষফৎবহ ধৎব হড়ঃ ুড়ঁৎ পযরষফৎবহ. ঞযবু ধৎব ঃযব ংড়হং ধহফ ফধঁমযঃবৎং ড়ভ খরাবং’খড়হমরহম ভড়ৎ রঃংবষভ. ঞযবু পড়সব ঃযৎড়ঁময ুড়ঁ নঁঃ হড়ঃ ভড়ৎ ুড়ঁ, অহফ ঃযড়ঁময ঃযবু ধৎব রিঃয ুড়ঁ ুবঃ ঃযবু নবষড়হম হড়ঃ ঃড় ুড়ঁ.ণড়ঁ সধু মরাব ঃযবস ুড়ঁৎ ষড়াব নঁঃ হড়ঃ ুড়ঁৎ ঃযড়ঁমযঃং.’’
আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের অভিভাবকদের অনেক প্রশ্ন করতাম। একটা শিশুর স্বভাবজাত বৈশিষ্ট নানা প্রশ্ন করা। এখন আমাদের সন্তানরা প্রশ্ন করলে ধৈর্য হারিয়ে ফেলি, তার উত্তর দিই না। প্রশ্নের বিপরীতে তাদেরকে একাডেমিক পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ হতে বলি। তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়া জরুরি তা আমরা কখনো মনে করি না। শিশুদের বুদ্ধি বিকাশের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটা শিশু যত প্রশ্ন করবে ‘কেন ‘কীভাবে’ তার সাফল্যের সম্ভাবনা ততই বাড়বে তার সৃজনশীল তত বাড়বে। তা জেনেও না জানার ভান করি।
স্কুল শুরুর আগেই শিশুদেরকে আমরা বিজ্ঞানভিত্তিক না করে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মস্তিস্কে বসিয়ে দেই। যা আমাদের পূর্বপুরুষেরা দিয়ে গেছে। আমরা মানি না শিশুকে মানসিকভাবে পরিণত হওয়ার আগেই কোনো কিছু।
চাপিয়ে দেয়াও এক প্রকারের শিশু নির্যাতন। যার ফলে অহংকার ঘৃণা এই শব্দগুলো তাদেরকে প্রভাবিত করে দারুনভাবে। যা হিংস্রতার সঙ্গে আপস করার সমীকরণ। আমরা পড়ে এসেছি ‘আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ’ কিন্তু কার ভবিষ্যৎ এটা স্পষ্ট না এই ভবিষ্যৎ শব্দটার মাঝে কি লোকানো তা স্পষ্ট না করে বুঝে উঠতে পারি না।
আমাদের সন্তানদের শারীরিক-মানসিক সক্ষমতা সম্পর্কে পরিষ্কার না জেনে বাড়তি চাপ দিয়ে তাদেরকে নামিদামি স্কুলে ভর্তি করার জন্য যুদ্ধ নেমে পড়ি। যেহেতু সন্তানরা আমাদের স্মৃতি বহন করে বেড়ায় সেহেতু পরিবারের কাছ থেকে যা শোনে তাই বিশ্বাস করে। শিশুরা কিছু বুঝে উঠার আগেই জীবনের শুরুতেই মোহের পোশাক পরিয়ে দেই যার পরিণতি অ্যালকোহলের মতো ভয়ঙ্কর।
শৈশবের মানদ-ে আমরা যা করেছি সেই চিন্তা করে সন্তানদেরকে বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে দিই না। যার ফলে একাকীত্ব শব্দটা তাদেরকে অসহায় করে তোলে। একটা জরিপে দেখা গেছে, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে একাকীত্বের কারণে। এর ফলে তাদের জীবন আলস্য, স্থবিরতা ভরে যায়।
মস্তিস্ক অলস হতে শুরু করে। যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি পথে বিচরণ করে। তাদের নতুন কিছু জানার আগ্রহ তৈরি হয় না। অথচ সমস্ত শিক্ষার মূলে রয়েছে জানার আগ্রহ, জীবনের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা হয় আড্ডা থেকে।
সবার আগে একজন মানুষ হওয়া জরুরি সেই শিক্ষা দেয়ার আগে আমরা বলি তোমার চাচা পুলিশ অফিসার তোমার মামা বড় জব করে তোমারও তাদের মতো হতে হবে। অন্য শিশুদের সঙ্গে তুলনা করে শুধু ক্লাসের তার অবস্থানকে মানদ-ে রেখে তাকে মেধাবি বলি। এই কথাটা বলতে একটু অন্যরকম দেখালেও পৃথিবীতে যারা বিশেষ কাজে বিখ্যাত তারা সার্টিফিকেটকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অমর হয়েছে। একাডেমিক সিলেবাস আর মুখস্থ পড়াশোনা করে পরীক্ষায় ভালো ফল করলেই শিশুরা ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠতে পারে না। তা আমরা জেনেও একই সমীকরণে তাদেরকে পথ দেখাই।
বিবিসির একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, বিশ্বখ্যাত কনসাল্টেন্সি সংস্থা ম্যাকিনসি গ্লোবাল ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৬টি দেশের ৮০ কোটি মানুষ চাকরি হারাবে। কারণ, তখন অটোমেশন তথা রোবটের মাধ্যমে এই কাজগুলো করা হবে।
দৈনন্দিন সকল দাফতরিক কাজ, হিসাবনিকাশ ও প্রশাসনিক ইত্যাদি সবই রোবটের মাধ্যমেই করানো সম্ভব হবে আগামীর পৃথিবীতে। এদিকে গত বছরের জুলাইয়ে খ্যাতনামা প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডেল একটি রিপোর্টে জানিয়েছিল, ২০৩০ সাল নাগাদ পৃথিবীতে যেসব চাকরি থাকবে, তার ৮৫ শতাংশই এখনও পর্যন্ত তৈরিই হয়নি।
এর মানে হলো, মাত্র একযুগ পরের দুনিয়াতে আমাদের পরের প্রজন্ম যেসব কাজ করবে, তার মধ্যে ৮৫ শতাংশ ধরনের কাজ এখনও মানুষ শুরুই করেনি। তাই আমাদের উচিত সন্তানদেরকে শুধু একাডেমিক শিকলে আবদ্ধ না রেখে তাদের ইচ্ছেকে ভালোবেসে সৃজনশীলতার শিক্ষা দিয়ে একজন মানবিক মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠার সুযোগ করে দেয়া। সৃজনশীল পৃথিবীর সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া।
একাডেমিক তথা ক্লাসের বাইরে খেলাধুলা, সঙ্গীত বা নাটকের ক্লাস, সৃজনশীল কাজ নিয়ে আমাদের শিশুদেরকে তাদের আগ্রহ অনুযায়ী সুযোগ করে দেয়া। মানবিক ও সৃজনশীল কাজে আগ্রহী রাখতে তাদেরকে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করা। জীবনের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা শিশুদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় সাহসী করে বাড়ায় তুলে একজন মানুষের দৈনন্দিন চলার পথে ৭৫ শতাংশ জীবনের বাস্তবিক অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়।
তাই আমাদের ধ্যান-ধারণাকে শিশুদের উপর চাপিয়ে না দিয়ে তাদের ইচ্ছেকে ভালোবেসে আগামী পৃথিবীর জন্য তৈরি করতে হবে। শিশু এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ। আমাদের এই ফ্যান্টাসি থেকে আমাদের বেরিয়ে না এলে আগামীর শিশুরা এই বিশাল পৃথিবীতে থেকেও বসবাস করবে ক্ষুদ্র পৃথিবীতে। শিশু বেড়ে উঠুক মনের আনন্দে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শিশু বেড়ে উঠুক মনের আনন্দে, সৃজনশীল চিন্তাধারায়

আপডেট সময় : ১০:০১:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ জুলাই ২০২২

নারী ও শিশু ডেস্ক : বাবা-মায়ের ধ্যান-ধারণা সন্তানদের উপর চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা বহুদিনের চর্চা এবং একটা অপরাধও। শিশুদের সৃজনশীলতাকে প্রতিবন্ধী করে দেয় অভিভাবকদের হাজারও শখ।
সন্তানদেরও ইচ্ছে হয় শিল্পী, আর্টিস্ট কবি এবং লেখক হয়ে সমাজের চিত্র তুলে ধরার। অথচ অভিভাবকরা ভেবেই থাকে ছেলে-মেয়েরা আকাশের সীমানা ধরবে। একজন ক্রিকেটার, ফুটবলার, ডাক্তার, অফিসার কিংবা জজ হয়। বাবা মায়ের সেই ফ্যান্টাসি একটা সময় সন্তানদের শরীরের ইনজেকশনের মতো পুষ হয়ে যায় ইচ্ছের বিরুদ্ধে মস্তিষ্কের শিরা উপশিরায়।
কেন আমাদের বড় হয়ে এসব হতে হবে? তার ব্যখ্যা বা সারমর্ম আমাদেরকে অভিভাবকরা দিতেন না। আমাদের ভাবনার বাহিরে ছিল এই পেশাগুলোই কেন? শুধু আমাদেরকে ফ্যান্টাসি পুষ করতেন ডক্টর প্রকৌশলী মানেই বড় কিছু। সেই ফ্যান্টাসির নিচে চাপা পড়ে যেত আমাদের শৈশবের ইচ্ছেগুলো।
আমাদের বাবা-মায়ের ধ্যান ধারণায় আমাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বেছে নিয়েছি তাদের ইচ্ছে পূর্ণ করতে। আবার ব্যর্থ হয়েছি আমাদের সেই ফ্যান্টাসি লালন করে। নিজেরা হতে পারিনি যা হতে চেয়েছিলাম আমাদের বাবা-মায়ের ইচ্ছেকে ভালোবেসে। সেই সময় পুনরাবৃত্তি করেছি আমাদের জীবনে এসে। আমাদের সন্তানদের শৈশবের আনন্দময় মুহূর্তগুলোতে তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছি অপূর্ণতাগুলো আমাদের ব্যর্থতাগুলো যা আমাদের অভিভাবকে তথা বাবা-মায়ের জন্য পারিনি। তা এখন এসে করাতে আমাদের সন্তানদেরকে দিয়ে শিশুদেরকে দিয়ে। অভিভাবকরা এখন সন্তানদেরকে ডক্টর, প্রকৌশলী পুলিশ অফিসার বানাতে চাই, সক্রেটিস, প্লেটো বানাতে চাই। জন্মের পর তারা কিছু বুঝে উঠার আগে পরিচয় করিয়ে দেই ডক্টর, ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ অফিসার এসব শব্দের সঙ্গে। ফলে বিদ্যাশিক্ষা শিশুর স্বভাব ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে। ফলে বড় স্বার্থপরতার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠে শিশুরা। আনন্দগুলো ক্লাসের রোলের মানদ-ে বিক্রি হয়ে যায় খুব গোপনে। শৈশবে তা জেনেও আমরা কেন তাদের ইচ্ছেগুলো গ্রহণ করছি না, ভাবনার বিষয়।
আমরা এমন জীবন যাপন করে এসেও আমাদের সন্তানরা আসলে কি হতে চায় এমন প্রশ্ন তাদেরক করি না। যেমন আমাদের অভিভাবকরা আমাদেরকে করেনি। সেই শিক্ষা বয়ে নিয়ে আমাদের নিজেদের ধ্যান-ধারণাকে সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেয়ার কোনো অধিকার যে আমাদের নেই। সেই বিষয়ে আমরা উদার হতে পারি না। সন্তান শুধু আমার না সে পৃথিবীর সন্তান।
সেই সম্পর্কে দারুনভাবে ব্যখ্যা করেছেন। কবি কাহলিল জিবরান তার ‘‘ঙহ ঈযরষফৎবহ’’ কবিতায়ও উল্লেখ করেছেন, ‘‘ণড়ঁৎ পযরষফৎবহ ধৎব হড়ঃ ুড়ঁৎ পযরষফৎবহ. ঞযবু ধৎব ঃযব ংড়হং ধহফ ফধঁমযঃবৎং ড়ভ খরাবং’খড়হমরহম ভড়ৎ রঃংবষভ. ঞযবু পড়সব ঃযৎড়ঁময ুড়ঁ নঁঃ হড়ঃ ভড়ৎ ুড়ঁ, অহফ ঃযড়ঁময ঃযবু ধৎব রিঃয ুড়ঁ ুবঃ ঃযবু নবষড়হম হড়ঃ ঃড় ুড়ঁ.ণড়ঁ সধু মরাব ঃযবস ুড়ঁৎ ষড়াব নঁঃ হড়ঃ ুড়ঁৎ ঃযড়ঁমযঃং.’’
আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের অভিভাবকদের অনেক প্রশ্ন করতাম। একটা শিশুর স্বভাবজাত বৈশিষ্ট নানা প্রশ্ন করা। এখন আমাদের সন্তানরা প্রশ্ন করলে ধৈর্য হারিয়ে ফেলি, তার উত্তর দিই না। প্রশ্নের বিপরীতে তাদেরকে একাডেমিক পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ হতে বলি। তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়া জরুরি তা আমরা কখনো মনে করি না। শিশুদের বুদ্ধি বিকাশের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটা শিশু যত প্রশ্ন করবে ‘কেন ‘কীভাবে’ তার সাফল্যের সম্ভাবনা ততই বাড়বে তার সৃজনশীল তত বাড়বে। তা জেনেও না জানার ভান করি।
স্কুল শুরুর আগেই শিশুদেরকে আমরা বিজ্ঞানভিত্তিক না করে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মস্তিস্কে বসিয়ে দেই। যা আমাদের পূর্বপুরুষেরা দিয়ে গেছে। আমরা মানি না শিশুকে মানসিকভাবে পরিণত হওয়ার আগেই কোনো কিছু।
চাপিয়ে দেয়াও এক প্রকারের শিশু নির্যাতন। যার ফলে অহংকার ঘৃণা এই শব্দগুলো তাদেরকে প্রভাবিত করে দারুনভাবে। যা হিংস্রতার সঙ্গে আপস করার সমীকরণ। আমরা পড়ে এসেছি ‘আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ’ কিন্তু কার ভবিষ্যৎ এটা স্পষ্ট না এই ভবিষ্যৎ শব্দটার মাঝে কি লোকানো তা স্পষ্ট না করে বুঝে উঠতে পারি না।
আমাদের সন্তানদের শারীরিক-মানসিক সক্ষমতা সম্পর্কে পরিষ্কার না জেনে বাড়তি চাপ দিয়ে তাদেরকে নামিদামি স্কুলে ভর্তি করার জন্য যুদ্ধ নেমে পড়ি। যেহেতু সন্তানরা আমাদের স্মৃতি বহন করে বেড়ায় সেহেতু পরিবারের কাছ থেকে যা শোনে তাই বিশ্বাস করে। শিশুরা কিছু বুঝে উঠার আগেই জীবনের শুরুতেই মোহের পোশাক পরিয়ে দেই যার পরিণতি অ্যালকোহলের মতো ভয়ঙ্কর।
শৈশবের মানদ-ে আমরা যা করেছি সেই চিন্তা করে সন্তানদেরকে বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে দিই না। যার ফলে একাকীত্ব শব্দটা তাদেরকে অসহায় করে তোলে। একটা জরিপে দেখা গেছে, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে একাকীত্বের কারণে। এর ফলে তাদের জীবন আলস্য, স্থবিরতা ভরে যায়।
মস্তিস্ক অলস হতে শুরু করে। যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি পথে বিচরণ করে। তাদের নতুন কিছু জানার আগ্রহ তৈরি হয় না। অথচ সমস্ত শিক্ষার মূলে রয়েছে জানার আগ্রহ, জীবনের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা হয় আড্ডা থেকে।
সবার আগে একজন মানুষ হওয়া জরুরি সেই শিক্ষা দেয়ার আগে আমরা বলি তোমার চাচা পুলিশ অফিসার তোমার মামা বড় জব করে তোমারও তাদের মতো হতে হবে। অন্য শিশুদের সঙ্গে তুলনা করে শুধু ক্লাসের তার অবস্থানকে মানদ-ে রেখে তাকে মেধাবি বলি। এই কথাটা বলতে একটু অন্যরকম দেখালেও পৃথিবীতে যারা বিশেষ কাজে বিখ্যাত তারা সার্টিফিকেটকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অমর হয়েছে। একাডেমিক সিলেবাস আর মুখস্থ পড়াশোনা করে পরীক্ষায় ভালো ফল করলেই শিশুরা ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠতে পারে না। তা আমরা জেনেও একই সমীকরণে তাদেরকে পথ দেখাই।
বিবিসির একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, বিশ্বখ্যাত কনসাল্টেন্সি সংস্থা ম্যাকিনসি গ্লোবাল ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৬টি দেশের ৮০ কোটি মানুষ চাকরি হারাবে। কারণ, তখন অটোমেশন তথা রোবটের মাধ্যমে এই কাজগুলো করা হবে।
দৈনন্দিন সকল দাফতরিক কাজ, হিসাবনিকাশ ও প্রশাসনিক ইত্যাদি সবই রোবটের মাধ্যমেই করানো সম্ভব হবে আগামীর পৃথিবীতে। এদিকে গত বছরের জুলাইয়ে খ্যাতনামা প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডেল একটি রিপোর্টে জানিয়েছিল, ২০৩০ সাল নাগাদ পৃথিবীতে যেসব চাকরি থাকবে, তার ৮৫ শতাংশই এখনও পর্যন্ত তৈরিই হয়নি।
এর মানে হলো, মাত্র একযুগ পরের দুনিয়াতে আমাদের পরের প্রজন্ম যেসব কাজ করবে, তার মধ্যে ৮৫ শতাংশ ধরনের কাজ এখনও মানুষ শুরুই করেনি। তাই আমাদের উচিত সন্তানদেরকে শুধু একাডেমিক শিকলে আবদ্ধ না রেখে তাদের ইচ্ছেকে ভালোবেসে সৃজনশীলতার শিক্ষা দিয়ে একজন মানবিক মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠার সুযোগ করে দেয়া। সৃজনশীল পৃথিবীর সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া।
একাডেমিক তথা ক্লাসের বাইরে খেলাধুলা, সঙ্গীত বা নাটকের ক্লাস, সৃজনশীল কাজ নিয়ে আমাদের শিশুদেরকে তাদের আগ্রহ অনুযায়ী সুযোগ করে দেয়া। মানবিক ও সৃজনশীল কাজে আগ্রহী রাখতে তাদেরকে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করা। জীবনের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা শিশুদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় সাহসী করে বাড়ায় তুলে একজন মানুষের দৈনন্দিন চলার পথে ৭৫ শতাংশ জীবনের বাস্তবিক অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়।
তাই আমাদের ধ্যান-ধারণাকে শিশুদের উপর চাপিয়ে না দিয়ে তাদের ইচ্ছেকে ভালোবেসে আগামী পৃথিবীর জন্য তৈরি করতে হবে। শিশু এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ। আমাদের এই ফ্যান্টাসি থেকে আমাদের বেরিয়ে না এলে আগামীর শিশুরা এই বিশাল পৃথিবীতে থেকেও বসবাস করবে ক্ষুদ্র পৃথিবীতে। শিশু বেড়ে উঠুক মনের আনন্দে।