ঢাকা ০৮:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

শিশু বিয়ে কি যৌন নির্যাতন নয়?

  • আপডেট সময় : ০৯:৪৩:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জুন ২০২২
  • ৭০ বার পড়া হয়েছে

গার্গী তনুশ্রী পাল : যৌন হয়রানি এক ধরনের অপরাধ। আবার কন্যা সন্তান যেন যৌন র্নিযাতনের শিকার না হয় তার জন্যও অনেক বাবা মা তাদের কন্যাকে শিশু বয়সে বিয়ে দিয়ে জড়িয়ে পড়ছেন আরেক অপরাধে।
সম্প্রতি প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে বাংলাদেশে ৩৫ দশমিক ৩০ ভাগ মেয়ের বাবা – মা যৌন হয়রানির ভয়ে তাদের মেয়েকে শিশু বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেন। কিন্তু বাল্যবিয়ের ফলে অনেক শিশুই নতুন সংসারে গিয়ে যে আবারো শারীরিক, মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তা কি দৃষ্টি এড়িয়ে যাচ্ছে আমাদের? নাকি এটাই সামাজিক নিয়ম বলে মেনে নিচ্ছেন অভিভাবকরা? এ নিয়ে হ্যালোর সঙ্গে কথা হয় বান্দরবনের এক রেস্তোরাঁ কর্মী মনসুর আলীর সাথে। তিনি বলেন “বিয়ার হর পোয়া – মাইয়ারা যাই হরুক এতে দোষ নাই।”
কক্সবাজারের রামুর এই স্থায়ী বাসিন্দা মনে করেন যে, শরীর স্বাস্থ্যে বড় হলে শিশু বয়সে বিয়ে কোনো নির্যাতন নয়। কিন্তু, ভিন্নমত পোষণ করে ঢাকার দোহার এলাকায় কর্মরত একটি ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি অমলেশ রায় বলেন, “কোনো শিশুর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করাটাই অপরাধ।”
আন্তর্জাতিকভাবে শিশু অধিকার, বাল্যবিয়েসহ শিশুদের নানান বিষয় নিয়ে কাজ করছে ইউনিসেফ। এই প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ অফিসের জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগে প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন তাহমিনা হক। বাল্যবিবাহ এবং যৌন নির্যাতনের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি হ্যালোকে বলেন, “বাংলাদেশ দ-বিধি ১৮৬০ এর ৩৭৫ ধারা আনুযায়ী ১৪ বছরের কম বয়সী কন্যা শিশুর অনুমতিসহ বা অনুমতি ছাড়া তার সাথে যৌন সম্পর্ক করা বাংলাদেশের আইন আনুযায়ী ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন বলে বিবেচিত হবে।”
তবে তিনি মনে করেন যে, বয়স ১৪ বা এর কম, যাই হোক না কেন, বাল্যবিবাহ প্রতিটি শিশুর শারিরীক ও মানসিক বিকাশের অন্তরায়। ১৮ বছর পূর্ণ হবার পূর্বেই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট থানার কয়লা ব্যবসায়ী আবুল হোসেন। হ্যালোর সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয় তার। তিনি বলেন, “দেখতে শোনতে বড় হইলেও বয়সের আগে কোনো মেয়েকে বিয়ে দেওয়া ঠিক না।”
এর কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, “তখন মেয়েরা নিজের, স্বামীর, সন্তানের যতœ নিতে পারে না। সংসারে শান্তি থাকে না।” তবে তার মতে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে যৌন নির্যাতন বলে কিছু নেই।
এ বিষয়ে বিএসএমএমইউ এর শিশু বিভাগের চিকিৎসক দেবশ্রী পালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিয়ের একটি দিক হচ্ছে, এটি শারিরীক সম্পর্কের গ্রহণযোগ্য সামাজিক রূপ। কিন্তু, কোনো শিশুকে যদি বিয়ে দেওয়া হয়, তাহলেও বিবাহ পরবর্তী যেকোনো শারিরীক সম্পর্ক তার জন্য নির্যাতনের সমান। কারণ তার শরীর ও মন তখন এই সম্পর্কের জন্য সঠিকভাবে তৈরি হয় না।” এই চিকিৎসক মনে করেন, বাল্যবিয়ে দিয়ে বাবা-মাও যে তার সন্তানের নির্যাতনকারীদের দলে যোগ দিচ্ছেন তা প্রতিটি অভিভাবকের সামনে তুলে ধরা জরুরি।-সৌজন্যে : বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম-এর শিশু সাংবাদিকতা বিভাগ ‘হ্যালো’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শিশু বিয়ে কি যৌন নির্যাতন নয়?

আপডেট সময় : ০৯:৪৩:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জুন ২০২২

গার্গী তনুশ্রী পাল : যৌন হয়রানি এক ধরনের অপরাধ। আবার কন্যা সন্তান যেন যৌন র্নিযাতনের শিকার না হয় তার জন্যও অনেক বাবা মা তাদের কন্যাকে শিশু বয়সে বিয়ে দিয়ে জড়িয়ে পড়ছেন আরেক অপরাধে।
সম্প্রতি প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে বাংলাদেশে ৩৫ দশমিক ৩০ ভাগ মেয়ের বাবা – মা যৌন হয়রানির ভয়ে তাদের মেয়েকে শিশু বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেন। কিন্তু বাল্যবিয়ের ফলে অনেক শিশুই নতুন সংসারে গিয়ে যে আবারো শারীরিক, মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তা কি দৃষ্টি এড়িয়ে যাচ্ছে আমাদের? নাকি এটাই সামাজিক নিয়ম বলে মেনে নিচ্ছেন অভিভাবকরা? এ নিয়ে হ্যালোর সঙ্গে কথা হয় বান্দরবনের এক রেস্তোরাঁ কর্মী মনসুর আলীর সাথে। তিনি বলেন “বিয়ার হর পোয়া – মাইয়ারা যাই হরুক এতে দোষ নাই।”
কক্সবাজারের রামুর এই স্থায়ী বাসিন্দা মনে করেন যে, শরীর স্বাস্থ্যে বড় হলে শিশু বয়সে বিয়ে কোনো নির্যাতন নয়। কিন্তু, ভিন্নমত পোষণ করে ঢাকার দোহার এলাকায় কর্মরত একটি ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি অমলেশ রায় বলেন, “কোনো শিশুর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করাটাই অপরাধ।”
আন্তর্জাতিকভাবে শিশু অধিকার, বাল্যবিয়েসহ শিশুদের নানান বিষয় নিয়ে কাজ করছে ইউনিসেফ। এই প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ অফিসের জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগে প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন তাহমিনা হক। বাল্যবিবাহ এবং যৌন নির্যাতনের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি হ্যালোকে বলেন, “বাংলাদেশ দ-বিধি ১৮৬০ এর ৩৭৫ ধারা আনুযায়ী ১৪ বছরের কম বয়সী কন্যা শিশুর অনুমতিসহ বা অনুমতি ছাড়া তার সাথে যৌন সম্পর্ক করা বাংলাদেশের আইন আনুযায়ী ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন বলে বিবেচিত হবে।”
তবে তিনি মনে করেন যে, বয়স ১৪ বা এর কম, যাই হোক না কেন, বাল্যবিবাহ প্রতিটি শিশুর শারিরীক ও মানসিক বিকাশের অন্তরায়। ১৮ বছর পূর্ণ হবার পূর্বেই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট থানার কয়লা ব্যবসায়ী আবুল হোসেন। হ্যালোর সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয় তার। তিনি বলেন, “দেখতে শোনতে বড় হইলেও বয়সের আগে কোনো মেয়েকে বিয়ে দেওয়া ঠিক না।”
এর কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, “তখন মেয়েরা নিজের, স্বামীর, সন্তানের যতœ নিতে পারে না। সংসারে শান্তি থাকে না।” তবে তার মতে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে যৌন নির্যাতন বলে কিছু নেই।
এ বিষয়ে বিএসএমএমইউ এর শিশু বিভাগের চিকিৎসক দেবশ্রী পালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিয়ের একটি দিক হচ্ছে, এটি শারিরীক সম্পর্কের গ্রহণযোগ্য সামাজিক রূপ। কিন্তু, কোনো শিশুকে যদি বিয়ে দেওয়া হয়, তাহলেও বিবাহ পরবর্তী যেকোনো শারিরীক সম্পর্ক তার জন্য নির্যাতনের সমান। কারণ তার শরীর ও মন তখন এই সম্পর্কের জন্য সঠিকভাবে তৈরি হয় না।” এই চিকিৎসক মনে করেন, বাল্যবিয়ে দিয়ে বাবা-মাও যে তার সন্তানের নির্যাতনকারীদের দলে যোগ দিচ্ছেন তা প্রতিটি অভিভাবকের সামনে তুলে ধরা জরুরি।-সৌজন্যে : বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম-এর শিশু সাংবাদিকতা বিভাগ ‘হ্যালো’