লাইফস্টাইল ডেস্ক: কথায় প্রচলিত আছে – শিশুর প্রথম শিক্ষক মা। তবে সেই সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনের শুরুতে স্কুলের প্রথম শিক্ষক একটি শিশুর জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা অনেকেই দেখে থাকি, বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সফল মানুষগুলো তাদের প্রথম শিক্ষকের কথা মনে করে আবেগাপ্লুত হয়ে যান। সারাজীবনে অসংখ্য শিক্ষকের সাহচর্যে এসেও প্রথম শিক্ষককে কেন মনে রাখেন তারা? শিশুর জীবনের প্রথম শিক্ষক কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
প্রি-স্কুল, কিন্ডারগার্টেন বা প্রাথমিক বিদ্যালয় – প্রথম শিক্ষক শিশুর মন, আচরণ ও শেখার আগ্রহের এমন একটি ভিত্তি তৈরি করেন, যা তার ভবিষ্যৎ বিকাশের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।
আজ ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস এ বিষয়ে গবেষণা কী বলে –
১. শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঘনিষ্ঠতার প্রভাব
২০২৩ সালে দ্য জার্নাল অব এক্সপেরিমেন্টাল এডুকেশন–এ প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক যত ঘনিষ্ঠ, শিক্ষার্থীর শেখার আগ্রহ ও একাডেমিক সাফল্য তত উন্নত হয়।
২. মানসিক স্বাস্থ্য ও আচরণগত উন্নয়ন
বিএমসি সাইকোলজি জার্নাল–এ ২০১৪ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, ছোটবেলা থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক থাকলে শিশুর স্কুলজীবনের মানসিক চাপ কমে যায় এবং শিশু মানসিকভাবে আরো স্থিতিশীল হয়ে ওঠে।
৩. প্রাথমিক শিক্ষক ও ভবিষ্যতের একাডেমিক সাফল্য
২০২৩ সালে দ্য জার্নাল অব অ্যাডোলেসেন্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সাইকোলজি–তে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায় – যেসব শিশু প্রাথমিক পর্যায়ে সহানুভূতিশীল ও যত্নশীল শিক্ষক পেয়েছে, কৈশোরে তাদের একাডেমিক সাফল্য তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
৪. সহানুভূতিশীল আচরণে প্রভাব
২০২২ সালে এমডিপিআই–এর ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেলথ–এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যত বেশি বোঝাপড়া ও সহযোগিতা থাকবে, শিক্ষার্থীর সামাজিক আচরণ ও সহানুভূতিশীল মনোভাব তত বাড়ে।
প্রথম শিক্ষক যেভাবে শিশুর জীবনে প্রভাব ফেলেন-
# আস্থা ও সুরক্ষার বোধ তৈরি করেন: প্রথম শিক্ষক শিশুর আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলেন। শিশু নিজেকে যোগ্য মনে করতে শেখে প্রথম শিক্ষকের কাছ থেকে। প্রথম শিক্ষক হলেন পরিবারের বাইরে শিশুর শিক্ষার সঙ্গে জড়িত প্রথম মানুষ। তাই এই শিক্ষকের প্রতি শিশুর এক অপার গ্রহণযোগ্যতা থাকে। এসময় শিক্ষক যদি শিশুকে ইতিবাচক মনোভাব শেখান, সেটাই তার শিক্ষা জীবনের ভিত্তি হয়ে যায়।
# আচরণ ও মানবিক গুণ শেখান: শিক্ষকের ব্যবহার, কথা বলার ধরন, ন্যায়-অন্যায়ের বোধ শিশুর মধ্যে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। শিশু মনের অজান্তেই তার প্রথম শিক্ষকের কাছ থেকে অনেক বেসিক বিষয় শেখে।
# শেখার প্রতি আগ্রহ তৈরি করেন: প্রথম শিক্ষকের উৎসাহ শিশুর মধ্যে কৌতূহল ও শেখার আনন্দ বাড়ায়। সামনের জীবনে শিশু পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ পাবে কি না- এই ভিত্তি তৈরি হয় শিক্ষা জীবনের প্রথম কয়েক বছরেই।
# মানসিক স্বাস্থ্যের ভিত্তি তৈরি করেন: ইতিবাচক শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক শিশুকে মানসিকভাবে স্থির ও আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করে। তাই তো প্রথম শিক্ষক শিশুর জীবনে এত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম শিক্ষক শুধু পড়ালেখা শেখান না, তিনি শেখান মানুষ হওয়া। শিশুর মনে আত্মবিশ্বাস, মূল্যবোধ ও শেখার আনন্দ জাগিয়ে তোলার সবচেয়ে বড় ভূমিকা থাকে এই প্রথম শিক্ষকের হাতেই। তাই শিক্ষার শুরুটা যদি মমতা ও বোঝাপড়ায় ভরা হয়, তাহলে সেই শিশুই বড় হয়ে সমাজে আলো ছড়াতে পারে।
তথ্যসূত্র: দ্য জার্নাল অব এক্সপেরিমেন্টাল এডুকেশন (২০২৩), বিএমসি সাইকোলজি (২০১৪), ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেলথ (২০২২), দ্য জার্নাল অব অ্যাডোলেসেন্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সাইকোলজি (২০২৩)
এসি/আপ্র/০৫/১০/২০২৫