ঢাকা ১১:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

শিশুদের নিরাপদ রাখতে অফকমের নীতিমালা ঘোষণা

  • আপডেট সময় : ০৫:০৩:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
  • ৩ বার পড়া হয়েছে

নারী ও শিশু ডেস্ক: অনলাইনে শিশুদের নিরাপদ রাখতে বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির জন্য নতুন নীতিমালা ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্যের যোগাযোগ পর্যবেক্ষক সংস্থা অফকম।
সংস্থাটি ঘোষণায় বলেছে, এ বছরের জুলাই থেকে শিশুদের ক্ষতিকর কনটেন্টে প্রবেশাধিকার বন্ধ করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যান্য ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মকে আইনগতভাবে বাধ্য করা হবে, অন্যথায় বড় অঙ্কের জরিমানা গুনতে হবে তাদের।
যুক্তরাজ্যের অনলাইন নিরাপত্তা আইনের আওতায় বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে, তা না হলে জরিমানা বা চরম পর্যায়ে পৌঁছালে প্লাটফর্ম বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঝুঁকি নিতে হবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান।

সম্প্রতি শিশুদের ব্যবহৃত সাইট ও বিভিন্ন অ্যাপের ওপর ৪০টিরও বেশি পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে অফকম। যার মধ্যে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে সার্চ ও গেইমিং কোম্পানিও। এসব পদক্ষেপের আওতায় ‘সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ’ সেবার মধ্যে রয়েছে বড় বড় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এসব কোম্পানিকে ১৮ বছরের কম বয়সী ব্যবহারকারীদের শনাক্ত করতে ‘কার্যকরভাবে’ বয়স পরীক্ষা করতে হবে; ব্যবহারকারীদের কাছে কনটেন্ট রেকোমেন্ড করে এমন অ্যালগরিদম থেকে ক্ষতিকর উপাদান ফিল্টার করতে হবে; সকল সাইট ও অ্যাপে থাকা বিপজ্জনক কনটেন্ট দ্রুত সরানোর পদ্ধতি থাকতে হবে এবং শিশুদের কনটেন্ট রিপোর্ট করার জন্য অবশ্যই একটি ব্যবহারবান্ধব উপায় থাকতে হবে।

অফকমের প্রধান নির্বাহী মেলানি ডাউস বলেছেন, শিশুদের অনলাইনে প্রবেশের জন্য একটি ‘রিসেট’ হিসেবে কাজ করবে এসব পরিবর্তন এবং যেসব কোম্পানি এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হবে তাদেরকে আইনের আওতায় আসতে হবে। তিনি বলেছেন, এর মানে হচ্ছে, ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক কনটেন্ট নেই শিশুদের জন্য এমন নিরাপদ সামাজিক মাধ্যম ফিড, অপরিচিতদের সংস্পর্শে আসা থেকে এদের সুরক্ষা দেওয়া ও প্রাপ্তবয়স্কদের কনটেন্টের ওপর কার্যকর বয়স যাচাইকরণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে বিভিন্ন প্লাটফর্মকে।

অফকমের এমন পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাজ্যে অবস্থিত শিশুদের জন্য দাতব্য সংস্থা ‘এনএসপিসিসি’। একইসঙ্গে এটিকে ‘অনলাইনে শিশুদের সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক মুহূর্ত’ বলেও বর্ণনা করেছে তারা।

চা বাগানে থাকা শিশুদের যক্ষ্মার প্রকোপ উদ্বেগজনক
নারী ও শিশু ডেস্ক: সিলেট অঞ্চলের জন্য প্রধান স্বাস্থ্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে যক্ষ্মা, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে প্রকোপ বেশি দেখা যায়। বিশেষজ্ঞদের দেওয়া উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান হলো, সাধারণত চা বাগানে বসবাসরত মানুষ যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হন। এ জন্য এই অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অপুষ্টির হার অনেকাংশে দায়ী।
পরিসংখ্যান বলছে, সিলেটে শিশুদের যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়েছে। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সিলেট বিভাগীয় অফিসের তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালে নতুন শিশু আক্রান্তের হার ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ, ২০২২ সালে ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ, ২০২৩ সালে ৭ শতাংশ এবং ২০২৪ সালে ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, ‘চা বাগানে বসবাসকারী অনেকে এখনো নির্দিষ্ট গণ্ডির বাইরে বের হতে পারছেন না। যেমন—অতিরিক্ত ভিড়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, মাদকাসক্তি, প্রয়োজনীয় খাবারের অভাব, কিছু ক্ষেত্রে একই বাড়িতে গবাদিপশুর সঙ্গে বসবাস। তা ছাড়া বেশিরভাগ চা শ্রমিক সচেতন নন। আবার প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাব আছে। এসব কারণে তাদের যক্ষ্মার ঝুঁকিপূর্ণ বেশি। চা শ্রমিকরা একই ঘরে পাঁচ থেকে আটজন থাকার কারণে যক্ষ্মার জীবাণু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।’
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত বলেন, ‘চা বাগানের অনেক বাসিন্দা অপুষ্টিতে ভোগেন। এ কারণে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় চা বাগানের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা কাজ করছে। বর্তমানে চা বাগানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সন্দেহভাজন রোগীদের থুতু সংগ্রহ করে পরীক্ষার আওতায় আনা হচ্ছে।’
হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. রত্নদ্বীপ বিশ্বাস বলেন, ‘যক্ষ্মার লক্ষণ হলো দীর্ঘস্থায়ী কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, ওজন হ্রাস, জ্বর ও রাতের ঘাম। যদি কারো এই লক্ষণগুলো থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। চা শ্রমিকদের বসবাসের পরিবেশ নিম্নমানের। অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে তারা পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে না। ফলে এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে যক্ষ্মা রোগের প্রকোপ অনেক বেশি।’
মৌলভীবাজার জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. মামুনুর রহমান বলেন, ‘সপ্তাহে পাঁচ দিন এক্স-রে মেশিনের মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করা হচ্ছে। মৌলভীবাজারে শিশুদের মধ্যে রোগ নির্ণয়ের হার বেশি।’
সিলেট বিভাগের হিড টিবি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম-জিএফএটিএমের ভারপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক রায়হান আহমেদ বলেন, চা বাগানের জন্য পরিচিত মৌলভীবাজার জেলা যক্ষ্মা (টিবি) সংক্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটি। এই ঝুঁকিপূর্ণ মূলত দুর্বল পুষ্টি, স্যাঁতসেঁতে জীবনযাপন, টিবি-পজিটিভ ব্যক্তিদের সান্নিধ্য এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবের কারণে। ফলে চা বাগানের শ্রমিকরা যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হওয়ার জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ এবং রোগটি প্রায়ই অনেক দেরিতে নির্ণয় করা হয়। শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ এবং কুলাউড়া উপজেলায় সমস্ত টিবি রোগীর ৬৫ শতাংশ চা বাগানের কর্মী। ২০২৪ সালে মৌলভীবাজার জেলায় মোট চার হাজার ৬৬৪ টিবি রোগী শনাক্ত হয়েছিল; যার মধ্যে এক হাজার ৫০৩ (অথবা ৩৫ শতাংশ) জন ছিলেন চা বাগানের কর্মী। তিনি জানান, ২০২৪ সালে মৌলভীবাজার জেলার শিশুদের মধ্যে যক্ষ্মা রোগ শনাক্তের হার ছিল আট শতাংশ;যা জাতীয় গড়ের তুলনায় বেশি। সরকার ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা মৃত্যুর হার শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এবং সিলেট বিভাগে চলমান কাজের মাধ্যমে হিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সিলেট বিভাগীয় কনসালটেন্ট শহীদ আনোয়ার বলেন, ‘চা বাগানের পরিচ্ছন্নতা, পুষ্টি, তাদের ভুল ধারণা, কুসংস্কার—সবই যক্ষ্মা রোগের জন্য উপযুক্ত। সিলেট বিভাগে ১৪ বছরের কম বয়সী রোগীদের মধ্যে আট শতাংশ রোগীর যক্ষ্মার হার। শিশুরা যক্ষ্মায় আক্রান্ত দাদা বা পিতামহের কাছাকাছি থাকায় শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এ কারণে তারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণতে থাকে। কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে যক্ষ্মা নির্ণয় করা কঠিন।’
স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. মোহাম্মদ নূরে আলম শামীম বলেন, ‘সচেতনতার অভাব ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কারণে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে কুষ্ঠরোগ ছড়িয়ে পড়ার কারণ। আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শিশুদের নিরাপদ রাখতে অফকমের নীতিমালা ঘোষণা

আপডেট সময় : ০৫:০৩:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

নারী ও শিশু ডেস্ক: অনলাইনে শিশুদের নিরাপদ রাখতে বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির জন্য নতুন নীতিমালা ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্যের যোগাযোগ পর্যবেক্ষক সংস্থা অফকম।
সংস্থাটি ঘোষণায় বলেছে, এ বছরের জুলাই থেকে শিশুদের ক্ষতিকর কনটেন্টে প্রবেশাধিকার বন্ধ করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যান্য ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মকে আইনগতভাবে বাধ্য করা হবে, অন্যথায় বড় অঙ্কের জরিমানা গুনতে হবে তাদের।
যুক্তরাজ্যের অনলাইন নিরাপত্তা আইনের আওতায় বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে, তা না হলে জরিমানা বা চরম পর্যায়ে পৌঁছালে প্লাটফর্ম বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঝুঁকি নিতে হবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান।

সম্প্রতি শিশুদের ব্যবহৃত সাইট ও বিভিন্ন অ্যাপের ওপর ৪০টিরও বেশি পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে অফকম। যার মধ্যে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে সার্চ ও গেইমিং কোম্পানিও। এসব পদক্ষেপের আওতায় ‘সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ’ সেবার মধ্যে রয়েছে বড় বড় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এসব কোম্পানিকে ১৮ বছরের কম বয়সী ব্যবহারকারীদের শনাক্ত করতে ‘কার্যকরভাবে’ বয়স পরীক্ষা করতে হবে; ব্যবহারকারীদের কাছে কনটেন্ট রেকোমেন্ড করে এমন অ্যালগরিদম থেকে ক্ষতিকর উপাদান ফিল্টার করতে হবে; সকল সাইট ও অ্যাপে থাকা বিপজ্জনক কনটেন্ট দ্রুত সরানোর পদ্ধতি থাকতে হবে এবং শিশুদের কনটেন্ট রিপোর্ট করার জন্য অবশ্যই একটি ব্যবহারবান্ধব উপায় থাকতে হবে।

অফকমের প্রধান নির্বাহী মেলানি ডাউস বলেছেন, শিশুদের অনলাইনে প্রবেশের জন্য একটি ‘রিসেট’ হিসেবে কাজ করবে এসব পরিবর্তন এবং যেসব কোম্পানি এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হবে তাদেরকে আইনের আওতায় আসতে হবে। তিনি বলেছেন, এর মানে হচ্ছে, ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক কনটেন্ট নেই শিশুদের জন্য এমন নিরাপদ সামাজিক মাধ্যম ফিড, অপরিচিতদের সংস্পর্শে আসা থেকে এদের সুরক্ষা দেওয়া ও প্রাপ্তবয়স্কদের কনটেন্টের ওপর কার্যকর বয়স যাচাইকরণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে বিভিন্ন প্লাটফর্মকে।

অফকমের এমন পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাজ্যে অবস্থিত শিশুদের জন্য দাতব্য সংস্থা ‘এনএসপিসিসি’। একইসঙ্গে এটিকে ‘অনলাইনে শিশুদের সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক মুহূর্ত’ বলেও বর্ণনা করেছে তারা।

চা বাগানে থাকা শিশুদের যক্ষ্মার প্রকোপ উদ্বেগজনক
নারী ও শিশু ডেস্ক: সিলেট অঞ্চলের জন্য প্রধান স্বাস্থ্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে যক্ষ্মা, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে প্রকোপ বেশি দেখা যায়। বিশেষজ্ঞদের দেওয়া উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান হলো, সাধারণত চা বাগানে বসবাসরত মানুষ যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হন। এ জন্য এই অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অপুষ্টির হার অনেকাংশে দায়ী।
পরিসংখ্যান বলছে, সিলেটে শিশুদের যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়েছে। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সিলেট বিভাগীয় অফিসের তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালে নতুন শিশু আক্রান্তের হার ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ, ২০২২ সালে ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ, ২০২৩ সালে ৭ শতাংশ এবং ২০২৪ সালে ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, ‘চা বাগানে বসবাসকারী অনেকে এখনো নির্দিষ্ট গণ্ডির বাইরে বের হতে পারছেন না। যেমন—অতিরিক্ত ভিড়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, মাদকাসক্তি, প্রয়োজনীয় খাবারের অভাব, কিছু ক্ষেত্রে একই বাড়িতে গবাদিপশুর সঙ্গে বসবাস। তা ছাড়া বেশিরভাগ চা শ্রমিক সচেতন নন। আবার প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাব আছে। এসব কারণে তাদের যক্ষ্মার ঝুঁকিপূর্ণ বেশি। চা শ্রমিকরা একই ঘরে পাঁচ থেকে আটজন থাকার কারণে যক্ষ্মার জীবাণু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।’
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত বলেন, ‘চা বাগানের অনেক বাসিন্দা অপুষ্টিতে ভোগেন। এ কারণে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় চা বাগানের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা কাজ করছে। বর্তমানে চা বাগানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সন্দেহভাজন রোগীদের থুতু সংগ্রহ করে পরীক্ষার আওতায় আনা হচ্ছে।’
হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. রত্নদ্বীপ বিশ্বাস বলেন, ‘যক্ষ্মার লক্ষণ হলো দীর্ঘস্থায়ী কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, ওজন হ্রাস, জ্বর ও রাতের ঘাম। যদি কারো এই লক্ষণগুলো থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। চা শ্রমিকদের বসবাসের পরিবেশ নিম্নমানের। অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে তারা পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে না। ফলে এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে যক্ষ্মা রোগের প্রকোপ অনেক বেশি।’
মৌলভীবাজার জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. মামুনুর রহমান বলেন, ‘সপ্তাহে পাঁচ দিন এক্স-রে মেশিনের মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করা হচ্ছে। মৌলভীবাজারে শিশুদের মধ্যে রোগ নির্ণয়ের হার বেশি।’
সিলেট বিভাগের হিড টিবি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম-জিএফএটিএমের ভারপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক রায়হান আহমেদ বলেন, চা বাগানের জন্য পরিচিত মৌলভীবাজার জেলা যক্ষ্মা (টিবি) সংক্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটি। এই ঝুঁকিপূর্ণ মূলত দুর্বল পুষ্টি, স্যাঁতসেঁতে জীবনযাপন, টিবি-পজিটিভ ব্যক্তিদের সান্নিধ্য এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবের কারণে। ফলে চা বাগানের শ্রমিকরা যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হওয়ার জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ এবং রোগটি প্রায়ই অনেক দেরিতে নির্ণয় করা হয়। শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ এবং কুলাউড়া উপজেলায় সমস্ত টিবি রোগীর ৬৫ শতাংশ চা বাগানের কর্মী। ২০২৪ সালে মৌলভীবাজার জেলায় মোট চার হাজার ৬৬৪ টিবি রোগী শনাক্ত হয়েছিল; যার মধ্যে এক হাজার ৫০৩ (অথবা ৩৫ শতাংশ) জন ছিলেন চা বাগানের কর্মী। তিনি জানান, ২০২৪ সালে মৌলভীবাজার জেলার শিশুদের মধ্যে যক্ষ্মা রোগ শনাক্তের হার ছিল আট শতাংশ;যা জাতীয় গড়ের তুলনায় বেশি। সরকার ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা মৃত্যুর হার শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এবং সিলেট বিভাগে চলমান কাজের মাধ্যমে হিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সিলেট বিভাগীয় কনসালটেন্ট শহীদ আনোয়ার বলেন, ‘চা বাগানের পরিচ্ছন্নতা, পুষ্টি, তাদের ভুল ধারণা, কুসংস্কার—সবই যক্ষ্মা রোগের জন্য উপযুক্ত। সিলেট বিভাগে ১৪ বছরের কম বয়সী রোগীদের মধ্যে আট শতাংশ রোগীর যক্ষ্মার হার। শিশুরা যক্ষ্মায় আক্রান্ত দাদা বা পিতামহের কাছাকাছি থাকায় শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এ কারণে তারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণতে থাকে। কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে যক্ষ্মা নির্ণয় করা কঠিন।’
স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. মোহাম্মদ নূরে আলম শামীম বলেন, ‘সচেতনতার অভাব ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কারণে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে কুষ্ঠরোগ ছড়িয়ে পড়ার কারণ। আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।’