ঢাকা ০২:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

শিশুদের জন্য পৃথক আদালতকে স্বাগত জানাল ইউনিসেফ

  • আপডেট সময় : ০৯:০০:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
  • ২৮ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সরকার শিশুদের জন্য সম্প্রতি পৃথক আদালত প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়ায় তাকে স্বাগত জানিয়েছে ইউনিসেফ। শিশুদের জন্য আদালত প্রতিষ্ঠা আইনের সংস্পর্শে আসা প্রতিটি শিশুর অধিকার রক্ষা ও তাদের চাহিদাগুলো পূরণের লক্ষ্যে বিচার ব্যবস্থায় শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরির পথে প্রথম পদক্ষেপ বলেও মনে করছে সংস্থাটি।

এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদসহ (ইউএনসিআরসি) আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের আলোকে প্রণীত শিশু আইন, ২০১৩ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।

অনেকে ক্ষেত্রে দেখা যায়, যেখানে শিশুর সমাজকল্যাণ ব্যবস্থার আওতায় সহায়তা প্রয়োজন, সেখানে তাকে ফৌজদারি বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে একটি শিশুবান্ধব ব্যবস্থা পাওয়া, পুনর্বাসনের প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগানোর বিষয়টি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। এটা এমন একটা ব্যবস্থা যেখানে শাস্তি দেওয়া নয়, পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কাজ করা হবে, বলেছেন বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স।

তিনি আরো বলেন, এই উদ্যোগ ২০২৪-এর গ্রীষ্মে তরুণেরা ন্যায়বিচার এবং আরো ন্যায্য একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলার যে সাহসী দাবি তুলেছিল তারই ফলশ্রুতিতে এসেছে। এটা তরুণদের আরো অসহায় ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ার চক্র ভেঙে দিতে এবং তাদের জন্য আরো ন্যায়সংগত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে সহায়তা করবে। ইউনিসেফ বাংলাদেশ সরকারকে এটা নিশ্চিত করার জন্য সহায়তা করে যাবে যেন শিশু ও তরুণদের নির্বিচারে আটক করা না হয় অথবা তাদেরকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা না হয়, বরং সেখানে এমন একটি ব্যবস্থা করা হয় যেখানে তাদের বয়স বিবেচনায় নেওয়া হবে, তাদের সহযোগিতার জন্য প্রশিক্ষিত জনবল নিযুক্ত করা হবে এবং যেখানে পুনর্বাসনই হবে মূল লক্ষ্য।

ইউনিসেফ বাংলাদেশের কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট ফারিয়া সেলিম জানান, শিশুদের জন্য পৃথক আদালত প্রতিষ্ঠা আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুদের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই আদালতগুলো শাস্তির পরিবর্তে পুনর্বাসনের ওপর জোর দিয়ে শিশুদের জন্য বিশেষায়িত আইনি ও সামাজিক সেবা দেবে এবং প্রশিক্ষিত বিচারক ও আইন পেশা সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে শিশু-সংবেদনশীল পরিবেশে বিচারিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করবে।

খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়ে শিশুদের জন্য পৃথক আদালত গঠনের এই সিদ্ধান্ত এসেছে, বিশেষ করে ২০২৪ সালের গণবিক্ষোভের পরে, যেখানে তরুণেরা ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা ও আরো ভালো সুযোগের দাবি তুলেছিল। তাদের সেই দাবিগুলো শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সহিংসতা, বঞ্চনা ও অন্যায়ভাবে আটক হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।

দুঃখের বিষয় গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত ওএইচসিএইচআর-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ এর আন্দোলনের সময় প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে শিশুদেরও নির্বিচারে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং প্রায়ই তাদের অনেককে থানায়, গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান কার্যালয় ও কারাগারে আটক রাখা হয়েছিল। সেখানে তারা নির্যাতন, খারাপ আচরণ এবং স্বীকারোক্তি আদায়ে জোরজবরদস্তিসহ অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছিল।

তরুণদের ওই আন্দোলন বাংলাদেশের তরুণদের শক্তি ও নেতৃত্বগুণ দেখিয়েছে। তাতে শিশুদের অধিকার ও সম্ভাবনার সহায়ক এমন নীতি গ্রহণের গুরুত্ব সামনে চলে আসে। এই সংস্কার হলো তাদের সেই সব দাবি-দাওয়ার সরাসরি প্রতিফলন, যার মাধ্যমে সকল শিশুর ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার ও ন্যায্যতা নিশ্চিত হবে এবং পুনর্বাসনের ধারণা বাস্তবায়িত হবে।

একই সঙ্গে ওএইচসিএইচআর-এর প্রতিবেদনে শিশুদের ওপর নিষ্ঠুরতার যে চিত্র উঠে এসেছে, তার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে।

ইউনিসেফ এই সংস্কার বাস্তবায়নে সহায়তার লক্ষ্যে সরকার, বিচার বিভাগ, সুশীল সমাজ ও তরুণদের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর আওতায় আদালত প্রতিষ্ঠা, বিচার সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং শিশুদের সুরক্ষা ও সেবা নিশ্চিতে সমাজসেবার ব্যবস্থাগুলো শক্তিশালী করতে সহায়তা দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ এসব জরুরি সংস্কারের দিকে এগিয়ে চলায় ইউনিসেফ শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পরিবর্তে সংশোধন, পুনরুদ্ধারমূলক ন্যায়বিচার এবং পুনর্বাসনের ওপর গুরুত্ব দেয় এমন বিচার ব্যবস্থা কায়েমের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছে। একই সঙ্গে এসব আদালতের সাফল্য নিশ্চিতে শিশুদের জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, আইনি সহায়তা সম্প্রসারণ ও সহজলভ্যকরণ এবং মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোসামাজিক সহায়তা সেবার সমন্বয় অপরিহার্য বলে মনে করছে ইউনিসেফ।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শিশুদের জন্য পৃথক আদালতকে স্বাগত জানাল ইউনিসেফ

আপডেট সময় : ০৯:০০:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সরকার শিশুদের জন্য সম্প্রতি পৃথক আদালত প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়ায় তাকে স্বাগত জানিয়েছে ইউনিসেফ। শিশুদের জন্য আদালত প্রতিষ্ঠা আইনের সংস্পর্শে আসা প্রতিটি শিশুর অধিকার রক্ষা ও তাদের চাহিদাগুলো পূরণের লক্ষ্যে বিচার ব্যবস্থায় শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরির পথে প্রথম পদক্ষেপ বলেও মনে করছে সংস্থাটি।

এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদসহ (ইউএনসিআরসি) আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের আলোকে প্রণীত শিশু আইন, ২০১৩ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।

অনেকে ক্ষেত্রে দেখা যায়, যেখানে শিশুর সমাজকল্যাণ ব্যবস্থার আওতায় সহায়তা প্রয়োজন, সেখানে তাকে ফৌজদারি বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে একটি শিশুবান্ধব ব্যবস্থা পাওয়া, পুনর্বাসনের প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগানোর বিষয়টি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। এটা এমন একটা ব্যবস্থা যেখানে শাস্তি দেওয়া নয়, পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কাজ করা হবে, বলেছেন বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স।

তিনি আরো বলেন, এই উদ্যোগ ২০২৪-এর গ্রীষ্মে তরুণেরা ন্যায়বিচার এবং আরো ন্যায্য একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলার যে সাহসী দাবি তুলেছিল তারই ফলশ্রুতিতে এসেছে। এটা তরুণদের আরো অসহায় ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ার চক্র ভেঙে দিতে এবং তাদের জন্য আরো ন্যায়সংগত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে সহায়তা করবে। ইউনিসেফ বাংলাদেশ সরকারকে এটা নিশ্চিত করার জন্য সহায়তা করে যাবে যেন শিশু ও তরুণদের নির্বিচারে আটক করা না হয় অথবা তাদেরকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা না হয়, বরং সেখানে এমন একটি ব্যবস্থা করা হয় যেখানে তাদের বয়স বিবেচনায় নেওয়া হবে, তাদের সহযোগিতার জন্য প্রশিক্ষিত জনবল নিযুক্ত করা হবে এবং যেখানে পুনর্বাসনই হবে মূল লক্ষ্য।

ইউনিসেফ বাংলাদেশের কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট ফারিয়া সেলিম জানান, শিশুদের জন্য পৃথক আদালত প্রতিষ্ঠা আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুদের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই আদালতগুলো শাস্তির পরিবর্তে পুনর্বাসনের ওপর জোর দিয়ে শিশুদের জন্য বিশেষায়িত আইনি ও সামাজিক সেবা দেবে এবং প্রশিক্ষিত বিচারক ও আইন পেশা সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে শিশু-সংবেদনশীল পরিবেশে বিচারিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করবে।

খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়ে শিশুদের জন্য পৃথক আদালত গঠনের এই সিদ্ধান্ত এসেছে, বিশেষ করে ২০২৪ সালের গণবিক্ষোভের পরে, যেখানে তরুণেরা ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা ও আরো ভালো সুযোগের দাবি তুলেছিল। তাদের সেই দাবিগুলো শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সহিংসতা, বঞ্চনা ও অন্যায়ভাবে আটক হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।

দুঃখের বিষয় গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত ওএইচসিএইচআর-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ এর আন্দোলনের সময় প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে শিশুদেরও নির্বিচারে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং প্রায়ই তাদের অনেককে থানায়, গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান কার্যালয় ও কারাগারে আটক রাখা হয়েছিল। সেখানে তারা নির্যাতন, খারাপ আচরণ এবং স্বীকারোক্তি আদায়ে জোরজবরদস্তিসহ অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছিল।

তরুণদের ওই আন্দোলন বাংলাদেশের তরুণদের শক্তি ও নেতৃত্বগুণ দেখিয়েছে। তাতে শিশুদের অধিকার ও সম্ভাবনার সহায়ক এমন নীতি গ্রহণের গুরুত্ব সামনে চলে আসে। এই সংস্কার হলো তাদের সেই সব দাবি-দাওয়ার সরাসরি প্রতিফলন, যার মাধ্যমে সকল শিশুর ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার ও ন্যায্যতা নিশ্চিত হবে এবং পুনর্বাসনের ধারণা বাস্তবায়িত হবে।

একই সঙ্গে ওএইচসিএইচআর-এর প্রতিবেদনে শিশুদের ওপর নিষ্ঠুরতার যে চিত্র উঠে এসেছে, তার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে।

ইউনিসেফ এই সংস্কার বাস্তবায়নে সহায়তার লক্ষ্যে সরকার, বিচার বিভাগ, সুশীল সমাজ ও তরুণদের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর আওতায় আদালত প্রতিষ্ঠা, বিচার সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং শিশুদের সুরক্ষা ও সেবা নিশ্চিতে সমাজসেবার ব্যবস্থাগুলো শক্তিশালী করতে সহায়তা দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ এসব জরুরি সংস্কারের দিকে এগিয়ে চলায় ইউনিসেফ শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পরিবর্তে সংশোধন, পুনরুদ্ধারমূলক ন্যায়বিচার এবং পুনর্বাসনের ওপর গুরুত্ব দেয় এমন বিচার ব্যবস্থা কায়েমের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছে। একই সঙ্গে এসব আদালতের সাফল্য নিশ্চিতে শিশুদের জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, আইনি সহায়তা সম্প্রসারণ ও সহজলভ্যকরণ এবং মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোসামাজিক সহায়তা সেবার সমন্বয় অপরিহার্য বলে মনে করছে ইউনিসেফ।