ঢাকা ০৩:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

শিশুকে সেরা করতে যেসব অভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ

  • আপডেট সময় : ১০:৪৩:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ মার্চ ২০২২
  • ৭৬ বার পড়া হয়েছে

সাইখ আল তমাল : সব বাবা-মা চায় তাদের সন্তান সেরা হোক। কিন্তু শিশুদের বেড়ে উঠতে দেওয়ার সময় অনেক বাবা-মা বেশ কিছু ভুল পন্থা বেছে নেন। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। তারা সবসময় চারপাশের অবস্থা, আচার-আচরণ, প্রকৃতি, মানুষজন ইত্যাদি দেখে তাদের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করে। তাদের মতই আচরণ করতে চেষ্টা করে। কিন্তু বাবা-মা হিসেবে আমরা অনেক ছোট ছোট বিষয় এড়িয়ে যাই। জেনে নেয়া যাক যেসব আচরণ শিশুদের সঙ্গে আজ থেকেই বন্ধ করা উচিত-
শিশুদের আচরণে নিজেকে কখনোই ব্যর্থ মনে করবেন না: সন্তানের অনেক কাজেই বাবা-মা হতাশ হয়ে যান। বিশেষ করে শিশুরা যখন ভুল করে তখন বাবা-মা নিজেদের দোষী মনে করতে থাকেন। শিশুদেরকে এ নিয়ে শাসনও করেন হয়তো। কিন্তু এরকম করা একদমই অনুচিত। শিশুদের ভুল করতে দিন। ভুল করেই তাদের সেখান থেকে শিক্ষা নিতে দিন। শিশুরাই তো ভুল করবে। এর জন্য নিজেদেরকে ব্যর্থ ভাবা উচিত নয়। শিশুদের বড় হবার জন্য ভুল থেকেই শিক্ষা নিতে দেওয়া উচিত। তারা যখন নিজের মতো করে বড় হবে এবং তাদের ভুল থেকেই শিক্ষা নেবে সেটা তাদের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত সুফল বয়ে আনবে। তারা ভুল করলে তাদের উৎসাহ দিয়ে বুঝিয়ে দিন একদিন তারাও অন্যদের থেকে ভালো কাজ উপহার দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
শিশুদের স্বাধীনতা দেওয়া: প্রতিটা শিশুর স্বাধীনতা প্রয়োজন। কারণ প্রতিটা শিশুই সম্ভাবনাময়। কোন শিশুর মধ্যে কোন প্রতিভা লুকায়িত তা জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই অনুমান করা যায় না। তাদেরকে নিজের জগৎ সাজাতে দিন। বিভিন্ন গবেষণার তথ্য মতে, নিজের মতো করে বেড়ে ওঠা শিশুরা ব্যক্তিজীবনে বেশি সফল।
শিশুদের ছোটখাটো আবদারে ঝগড়া নয়: ভালো শিশু গড়ার আগে ভালো বাবা-মা হতে হবে। শিশুরা অনেক সময় এমন সব বায়না ধরে যেটা শুনলে হয়তো আপনি রেগে যান। শিশুদের ব্যাপারে কখনই নেতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করবেন না। শিশুর সঙ্গে এমন সব ছোটখাটো ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আপনি বাস্তবিক অর্থে কখনোই জিততে পারবেন না। তাই ছোটখাটো ব্যাপারে শিশুদের ছাড় দিন।
শিশুদের দায়িত্ব দিন: শিশুদেরকে আমরা সবসময় কাজ করা থেকে দূরে রাখি। তাদের প্রতি এই মনোভাব বিলাস জীবনযাপনের দিকে প্রভাবিত করে। তবে অবশ্যই শিশুকে দিয়ে ভারী কাজ করাতে যাবেন না। শিশুর বয়স এবং সামর্থ্য অনুযায়ী হালকা কাজের দায়িত্ব দিন। এরকম আচরণের কারণে আপনার আদরের সন্তান কখনোই অলস বা বিলাসিতার দিকে যাবে না। সেইসঙ্গে তার মধ্যে দায়িত্বজ্ঞান বৃদ্ধি পাবে। শিশু থেকে বড় হয়ে একসময় পরিবারের দায়িত্ব নিতে সক্ষম হয়ে উঠবে, যখন আপনার দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা থাকবে না।
শিশুদের শৃঙ্খল জীবনযাপন ও খেলার সুযোগ দিন: শিশুদের দৈনিক সুসংগঠিত রাখতে চেষ্টা করুন। কিন্তু তাদের অতিরিক্ত চাপে রাখবেন না। আজকাল অভিভাবকরা শিশুদের পড়াশোনার বোঝা চাপিয়ে দেন। শিশুদের প্রতিটা কাজ করতে দেয়া উচিত। পড়াশোনার পাশাপাশি সমানভাবে খেলাধুলা এবং অন্যান্য বিনোদনের সুযোগ দেয়া উচিত। তাদের নতুন কিছু শিখানোর প্রতি আগ্রহী করুন। রুটিন মাফিক চলার অভ্যাস করে দিন। এতে তারা আস্তে আস্তে কর্মঠ হয়ে উঠবে। শিশুদের অসংগঠিত রাখা তাদের সুস্থতা ও বিকাশের অন্তুরায়। তাদের খেলার সুযোগ দেয়া হলে বিকাশ হয় অনেক বেশি। কারণ তারা খেলার সময় নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করে, নিয়ম তৈরি করে এবং অন্যদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করে। এর ফলে তারা মানসিক চাপ ছেড়ে দেয়।
শিশুদের থেকে শুরুতেই প্রত্যাশা নয়: বাবা-মা হিসেবে শিশুদের থেকে আমাদের অনেক বেশি প্রত্যাশা থাকে। অনেক বেশি প্রত্যাশা করতে গিয়ে তাদের উপর আমরা নিজেদের স্বপ্নগুলো চাপিয়ে দেই। শিশুদের চাপ নেওয়ার ক্ষমতা সম্পর্কে ভুলে যাই। একটি শিশু বড় হলে সে নিজ থেকেই নিজের দায়িত্ব এবং বাবা-মায়ের চাহিদা বুঝতে শুরু করে। কিন্তু তার আগেই তার থেকে প্রত্যাশা করা ঠিক নয়। তাদের বেড়ে ওঠতে দেওয়া উচিত প্রথমে।
প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার : বর্তমান যুগে প্রযুক্তির নির্ভরশীলতা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে শিশুদের সামনে আমাদের যতটুকু সম্ভব প্রযুক্তির ব্যবহার সীমিত করা উচিত। প্রযুক্তির বাইরে গিয়ে শিশুদের সময় দিন। তবে সারাক্ষণ তাদের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করবেন না। কারণ প্রতিটা মানুষ সে শিশু হোক বা প্রাপ্তবয়স্ক হোক, নিজের কিছু ব্যক্তিগত সময় কাটানোর প্রয়োজন হয়।
অন্য শিশুদের সঙ্গে তুলনা নয় : নিজের শিশুকে কখনো অন্য শিশুর সঙ্গে তুলনা করবেন না। এতে তাদের মানসিক চাপ বাড়ে এবং তার মধ্যে থাকা আত্মবিশ্বাস ভেঙে যায়, হীনমন্যতায় ভোগে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের নিখুঁত বানানোর চেষ্টা থেকে অভিভাবকদের বিরত থাকা উচিত।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শিশুকে সেরা করতে যেসব অভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ

আপডেট সময় : ১০:৪৩:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ মার্চ ২০২২

সাইখ আল তমাল : সব বাবা-মা চায় তাদের সন্তান সেরা হোক। কিন্তু শিশুদের বেড়ে উঠতে দেওয়ার সময় অনেক বাবা-মা বেশ কিছু ভুল পন্থা বেছে নেন। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। তারা সবসময় চারপাশের অবস্থা, আচার-আচরণ, প্রকৃতি, মানুষজন ইত্যাদি দেখে তাদের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করে। তাদের মতই আচরণ করতে চেষ্টা করে। কিন্তু বাবা-মা হিসেবে আমরা অনেক ছোট ছোট বিষয় এড়িয়ে যাই। জেনে নেয়া যাক যেসব আচরণ শিশুদের সঙ্গে আজ থেকেই বন্ধ করা উচিত-
শিশুদের আচরণে নিজেকে কখনোই ব্যর্থ মনে করবেন না: সন্তানের অনেক কাজেই বাবা-মা হতাশ হয়ে যান। বিশেষ করে শিশুরা যখন ভুল করে তখন বাবা-মা নিজেদের দোষী মনে করতে থাকেন। শিশুদেরকে এ নিয়ে শাসনও করেন হয়তো। কিন্তু এরকম করা একদমই অনুচিত। শিশুদের ভুল করতে দিন। ভুল করেই তাদের সেখান থেকে শিক্ষা নিতে দিন। শিশুরাই তো ভুল করবে। এর জন্য নিজেদেরকে ব্যর্থ ভাবা উচিত নয়। শিশুদের বড় হবার জন্য ভুল থেকেই শিক্ষা নিতে দেওয়া উচিত। তারা যখন নিজের মতো করে বড় হবে এবং তাদের ভুল থেকেই শিক্ষা নেবে সেটা তাদের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত সুফল বয়ে আনবে। তারা ভুল করলে তাদের উৎসাহ দিয়ে বুঝিয়ে দিন একদিন তারাও অন্যদের থেকে ভালো কাজ উপহার দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
শিশুদের স্বাধীনতা দেওয়া: প্রতিটা শিশুর স্বাধীনতা প্রয়োজন। কারণ প্রতিটা শিশুই সম্ভাবনাময়। কোন শিশুর মধ্যে কোন প্রতিভা লুকায়িত তা জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই অনুমান করা যায় না। তাদেরকে নিজের জগৎ সাজাতে দিন। বিভিন্ন গবেষণার তথ্য মতে, নিজের মতো করে বেড়ে ওঠা শিশুরা ব্যক্তিজীবনে বেশি সফল।
শিশুদের ছোটখাটো আবদারে ঝগড়া নয়: ভালো শিশু গড়ার আগে ভালো বাবা-মা হতে হবে। শিশুরা অনেক সময় এমন সব বায়না ধরে যেটা শুনলে হয়তো আপনি রেগে যান। শিশুদের ব্যাপারে কখনই নেতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করবেন না। শিশুর সঙ্গে এমন সব ছোটখাটো ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আপনি বাস্তবিক অর্থে কখনোই জিততে পারবেন না। তাই ছোটখাটো ব্যাপারে শিশুদের ছাড় দিন।
শিশুদের দায়িত্ব দিন: শিশুদেরকে আমরা সবসময় কাজ করা থেকে দূরে রাখি। তাদের প্রতি এই মনোভাব বিলাস জীবনযাপনের দিকে প্রভাবিত করে। তবে অবশ্যই শিশুকে দিয়ে ভারী কাজ করাতে যাবেন না। শিশুর বয়স এবং সামর্থ্য অনুযায়ী হালকা কাজের দায়িত্ব দিন। এরকম আচরণের কারণে আপনার আদরের সন্তান কখনোই অলস বা বিলাসিতার দিকে যাবে না। সেইসঙ্গে তার মধ্যে দায়িত্বজ্ঞান বৃদ্ধি পাবে। শিশু থেকে বড় হয়ে একসময় পরিবারের দায়িত্ব নিতে সক্ষম হয়ে উঠবে, যখন আপনার দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা থাকবে না।
শিশুদের শৃঙ্খল জীবনযাপন ও খেলার সুযোগ দিন: শিশুদের দৈনিক সুসংগঠিত রাখতে চেষ্টা করুন। কিন্তু তাদের অতিরিক্ত চাপে রাখবেন না। আজকাল অভিভাবকরা শিশুদের পড়াশোনার বোঝা চাপিয়ে দেন। শিশুদের প্রতিটা কাজ করতে দেয়া উচিত। পড়াশোনার পাশাপাশি সমানভাবে খেলাধুলা এবং অন্যান্য বিনোদনের সুযোগ দেয়া উচিত। তাদের নতুন কিছু শিখানোর প্রতি আগ্রহী করুন। রুটিন মাফিক চলার অভ্যাস করে দিন। এতে তারা আস্তে আস্তে কর্মঠ হয়ে উঠবে। শিশুদের অসংগঠিত রাখা তাদের সুস্থতা ও বিকাশের অন্তুরায়। তাদের খেলার সুযোগ দেয়া হলে বিকাশ হয় অনেক বেশি। কারণ তারা খেলার সময় নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করে, নিয়ম তৈরি করে এবং অন্যদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করে। এর ফলে তারা মানসিক চাপ ছেড়ে দেয়।
শিশুদের থেকে শুরুতেই প্রত্যাশা নয়: বাবা-মা হিসেবে শিশুদের থেকে আমাদের অনেক বেশি প্রত্যাশা থাকে। অনেক বেশি প্রত্যাশা করতে গিয়ে তাদের উপর আমরা নিজেদের স্বপ্নগুলো চাপিয়ে দেই। শিশুদের চাপ নেওয়ার ক্ষমতা সম্পর্কে ভুলে যাই। একটি শিশু বড় হলে সে নিজ থেকেই নিজের দায়িত্ব এবং বাবা-মায়ের চাহিদা বুঝতে শুরু করে। কিন্তু তার আগেই তার থেকে প্রত্যাশা করা ঠিক নয়। তাদের বেড়ে ওঠতে দেওয়া উচিত প্রথমে।
প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার : বর্তমান যুগে প্রযুক্তির নির্ভরশীলতা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে শিশুদের সামনে আমাদের যতটুকু সম্ভব প্রযুক্তির ব্যবহার সীমিত করা উচিত। প্রযুক্তির বাইরে গিয়ে শিশুদের সময় দিন। তবে সারাক্ষণ তাদের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করবেন না। কারণ প্রতিটা মানুষ সে শিশু হোক বা প্রাপ্তবয়স্ক হোক, নিজের কিছু ব্যক্তিগত সময় কাটানোর প্রয়োজন হয়।
অন্য শিশুদের সঙ্গে তুলনা নয় : নিজের শিশুকে কখনো অন্য শিশুর সঙ্গে তুলনা করবেন না। এতে তাদের মানসিক চাপ বাড়ে এবং তার মধ্যে থাকা আত্মবিশ্বাস ভেঙে যায়, হীনমন্যতায় ভোগে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের নিখুঁত বানানোর চেষ্টা থেকে অভিভাবকদের বিরত থাকা উচিত।