ঢাকা ০৮:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

শিল্প ও আধ্যাত্মিকতার মিলনকেন্দ্র পাহাড়ে ঝুলন্ত সুমেলা মনাস্ট্রি

  • আপডেট সময় : ০৫:২৫:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
  • ৩ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

লাইফস্টাইল ডেস্ক: তুরস্কের পূর্বাঞ্চলের ব্ল্যাক সি উপকূল থেকে প্রায় এক ঘণ্টার পথ ঘুরে পন্টিক পর্বতমালার উপরে পৌঁছালে চোখে পড়ে এক অসাধারণ দৃশ্য- পাহাড়ের প্রাচীরের ওপর ঝুলন্ত সুমেলা মনাস্ট্রি।

মনাস্ট্রির স্থাপনা দেখলে মনে হবে কোনো বিখ্যাত শিল্পী তার ক্যানভাসে ছবি এঁকে রেখেছেন। চ্যাপেল, প্রাঙ্গণ, লাইব্রেরি, সন্ন্যাসীদের কক্ষ, ঘণ্টাঘর ও পাথরে ঘেরা পবিত্র উৎস, সবই ঝুলে আছে পাহাড়ের গায়ে- প্রায় ৩০০ মিটার বা এক হাজার ফুট উপরে। এর নিচে ঘন বন ও নদী। ওপর থেকে দেখলে সবকিছুই হালকা কুয়াশার চাদরে ঢাকা মনে হয়।

মনাস্ট্রির ইতিহাস: মনাস্ট্রিটি চতুর্থ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত বলে ধারণা করা হয়। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, বারনাবাস ও সোফ্রোনিওস নামে দুই গ্রিক সন্ন্যাসী এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছিলেন ওই সময়। স্বপ্নে মেরি তাদের জানান, পন্টিক পর্বতমালায় লুকানো আছে লুক দ্য অ্যাপোস্টল আঁকা একটি পবিত্র ছবি। বারনাবাস ও সোফ্রোনিওস ওই ছবি খুঁজে পেয়ে নাম দেন ‘প্যানাগিয়া সুমেলা’।

১৩০০ শতাব্দীতে মনাস্ট্রিটি বর্তমান আকার পায়। এই প্রাচীন প্রাচীরের মধ্যে রোমান সাম্রাজ্য থেকে বাইজেন্টাইন, ওসমানি শাসন এবং পরবর্তী সময়ে তুরস্কের স্বাধীনতা সংগ্রামের মতো অনেক ইতিহাস সাক্ষী হয়েছে।

ওসমানি শাসনকালে মুসলিম শাসকেরা খ্রিস্টানদের ওপর আক্রমণ না করে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থানগুলো রক্ষা করত। কখনো কখনো তারা ছোট ছোট দান বা জমি দিয়ে মনাস্ট্রির সন্ন্যাসীদের সাহায্যও করত। ফলে সুমেলা শুধু একটি ধর্মীয় স্থানই নয়, ভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে সহনশীলতার নিদর্শন হিসেবেও পরিচিত।

স্থাপত্য ও ফ্রেস্কো: সুমেলা মনাস্ট্রি শুধু ইতিহাস নয়। এখানকার চিত্রশিল্প ও স্থাপত্য পর্যটকদের আরও চমকপ্রদ করে তোলে। মনাস্ট্রির বাইরের অংশে চোখে পড়ে বিশাল চিত্রকলা। সেখানে যিশু, মেরি ও দেবদূতদের ছবি আঁকা আছে। প্রতিটি ছবি যেন একেকটি গল্প; যা দর্শকের চোখে ইতিহাসকে জীবন্ত করে তোলে।

গুহার ভেতরে ১৩০০ শতাব্দীতে আঁকা আরো রহস্যময় চিত্রশিল্প আছে। তবে জানিয়ে রাখা ভালো, এই মনাস্ট্রিতে শুধু সৌন্দর্য নয়; রোমান যুগের সিংহদের হাতে মানুষ মারা যাওয়ার মতো ভয়ঙ্কর দৃশ্যের ছবিও দেখা যায়।

রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনর্নির্মাণ: মনাস্ট্রির রক্ষণাবেক্ষণ চলমান। সেখানে ফ্রেস্কো পুনরুদ্ধারের কাজ অত্যন্ত যত্নসহকারে করা হচ্ছে। শিল্পী সেনল আক্তাশ জানান, তারা মূল রং ও শৈলীর সঙ্গে মিল রেখে ফ্রেস্কোগুলো পুনরায় সাজাচ্ছেন। এখানে পর্যটকরা গোপন চ্যাপেল ও ছোট ছোট কক্ষগুলো ঘুরে দেখতে পারেন। রক্ষণাবেক্ষণ চলাকালীন অপ্রত্যাশিত অনেক কিছু আবিষ্কারও হয়েছে ওই মনাস্ট্রিতে। এর মধ্যে আছে একটি গোপন সুড়ঙ্গ এবং পাওয়া গেছে কিছু চমকপ্রদ ফ্রেস্কো। সেসব ফ্রেস্কতে ফুটে উঠেছে ইতিহাসের অনেক গল্প।

ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব: সুমেলা মনাস্ট্রি এক সময় ছিল গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ। ওসমানি সাম্রাজ্যের পতনের পর তুরস্কের স্থানীয় গ্রিকরা গ্রিসে চলে যায়। ২০১০ সালের ১৫ আগস্ট ৮৮ বছরে প্রথমবারের মতো পুনরায় অর্থোডক্স উপাসনার আয়োজন হয়েছিল। এখন অবশ্য প্রতি বছর একই দিনে অর্থোডক্স উপাসনার আয়োজন করা হয়।

দর্শক ও ভ্রমণ তথ্য: তুরস্কের আলতিন্দেরে ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে অবস্থিত এ মনাস্ট্রি। ব্ল্যাক সি উপকূলের ট্রাবজোন শহর থেকে প্রায় এক ঘণ্টার পথ পারি দিয়ে যেতে হয় সেখানে।

পরিবহন: পার্কিং লট থেকে শাটল বা সিঁড়িপথ দিয়ে ধাপে ধাপে মনাস্ট্রিতে পৌঁছানো।

ব্যয়: ২০ ইউরো।

খোলা থাকার সময়: সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা।

ভ্রমণকাল: সাধারণত ১ থেকে ২ ঘণ্টা।

শীতকালে তুষার ও গ্রীষ্মে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। তাই শক্ত জুতা ও আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক পরা প্রয়োজন সেখানে যেতে চাইলে।

আশপাশে থাকার ব্যবস্থা: সেখানে কোসানদেরে গ্রামে তিন তারকা মানের সুমেলা হলিডে হোটেল রয়েছে। এ ছাড়া ট্রাবজোন শহরে রামাদা প্লাজা ও র‌্যাডিসন ব্লুর মতো বড় হোটেল আছে।

সুমেলা মনাস্ট্রি শুধু প্রাচীন স্থাপত্যের জন্যই নয়। এটি ভ্রমণ, ইতিহাস, শিল্প ও আধ্যাত্মিকতার মিলনকেন্দ্র হিসেবেও বিখ্যাত। পাহাড়ের প্রাচীরের সঙ্গে ঝুলে থাকা, চোখধাঁধানো ফ্রেস্কো আর সমৃদ্ধ ইতিহাস এই জায়গাকে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে। সূত্র: সিএনএন।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

ঐকমত্য কমিশনের শেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত, সুপারিশ পেশ মঙ্গলবার

শিল্প ও আধ্যাত্মিকতার মিলনকেন্দ্র পাহাড়ে ঝুলন্ত সুমেলা মনাস্ট্রি

আপডেট সময় : ০৫:২৫:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

লাইফস্টাইল ডেস্ক: তুরস্কের পূর্বাঞ্চলের ব্ল্যাক সি উপকূল থেকে প্রায় এক ঘণ্টার পথ ঘুরে পন্টিক পর্বতমালার উপরে পৌঁছালে চোখে পড়ে এক অসাধারণ দৃশ্য- পাহাড়ের প্রাচীরের ওপর ঝুলন্ত সুমেলা মনাস্ট্রি।

মনাস্ট্রির স্থাপনা দেখলে মনে হবে কোনো বিখ্যাত শিল্পী তার ক্যানভাসে ছবি এঁকে রেখেছেন। চ্যাপেল, প্রাঙ্গণ, লাইব্রেরি, সন্ন্যাসীদের কক্ষ, ঘণ্টাঘর ও পাথরে ঘেরা পবিত্র উৎস, সবই ঝুলে আছে পাহাড়ের গায়ে- প্রায় ৩০০ মিটার বা এক হাজার ফুট উপরে। এর নিচে ঘন বন ও নদী। ওপর থেকে দেখলে সবকিছুই হালকা কুয়াশার চাদরে ঢাকা মনে হয়।

মনাস্ট্রির ইতিহাস: মনাস্ট্রিটি চতুর্থ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত বলে ধারণা করা হয়। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, বারনাবাস ও সোফ্রোনিওস নামে দুই গ্রিক সন্ন্যাসী এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছিলেন ওই সময়। স্বপ্নে মেরি তাদের জানান, পন্টিক পর্বতমালায় লুকানো আছে লুক দ্য অ্যাপোস্টল আঁকা একটি পবিত্র ছবি। বারনাবাস ও সোফ্রোনিওস ওই ছবি খুঁজে পেয়ে নাম দেন ‘প্যানাগিয়া সুমেলা’।

১৩০০ শতাব্দীতে মনাস্ট্রিটি বর্তমান আকার পায়। এই প্রাচীন প্রাচীরের মধ্যে রোমান সাম্রাজ্য থেকে বাইজেন্টাইন, ওসমানি শাসন এবং পরবর্তী সময়ে তুরস্কের স্বাধীনতা সংগ্রামের মতো অনেক ইতিহাস সাক্ষী হয়েছে।

ওসমানি শাসনকালে মুসলিম শাসকেরা খ্রিস্টানদের ওপর আক্রমণ না করে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থানগুলো রক্ষা করত। কখনো কখনো তারা ছোট ছোট দান বা জমি দিয়ে মনাস্ট্রির সন্ন্যাসীদের সাহায্যও করত। ফলে সুমেলা শুধু একটি ধর্মীয় স্থানই নয়, ভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে সহনশীলতার নিদর্শন হিসেবেও পরিচিত।

স্থাপত্য ও ফ্রেস্কো: সুমেলা মনাস্ট্রি শুধু ইতিহাস নয়। এখানকার চিত্রশিল্প ও স্থাপত্য পর্যটকদের আরও চমকপ্রদ করে তোলে। মনাস্ট্রির বাইরের অংশে চোখে পড়ে বিশাল চিত্রকলা। সেখানে যিশু, মেরি ও দেবদূতদের ছবি আঁকা আছে। প্রতিটি ছবি যেন একেকটি গল্প; যা দর্শকের চোখে ইতিহাসকে জীবন্ত করে তোলে।

গুহার ভেতরে ১৩০০ শতাব্দীতে আঁকা আরো রহস্যময় চিত্রশিল্প আছে। তবে জানিয়ে রাখা ভালো, এই মনাস্ট্রিতে শুধু সৌন্দর্য নয়; রোমান যুগের সিংহদের হাতে মানুষ মারা যাওয়ার মতো ভয়ঙ্কর দৃশ্যের ছবিও দেখা যায়।

রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনর্নির্মাণ: মনাস্ট্রির রক্ষণাবেক্ষণ চলমান। সেখানে ফ্রেস্কো পুনরুদ্ধারের কাজ অত্যন্ত যত্নসহকারে করা হচ্ছে। শিল্পী সেনল আক্তাশ জানান, তারা মূল রং ও শৈলীর সঙ্গে মিল রেখে ফ্রেস্কোগুলো পুনরায় সাজাচ্ছেন। এখানে পর্যটকরা গোপন চ্যাপেল ও ছোট ছোট কক্ষগুলো ঘুরে দেখতে পারেন। রক্ষণাবেক্ষণ চলাকালীন অপ্রত্যাশিত অনেক কিছু আবিষ্কারও হয়েছে ওই মনাস্ট্রিতে। এর মধ্যে আছে একটি গোপন সুড়ঙ্গ এবং পাওয়া গেছে কিছু চমকপ্রদ ফ্রেস্কো। সেসব ফ্রেস্কতে ফুটে উঠেছে ইতিহাসের অনেক গল্প।

ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব: সুমেলা মনাস্ট্রি এক সময় ছিল গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ। ওসমানি সাম্রাজ্যের পতনের পর তুরস্কের স্থানীয় গ্রিকরা গ্রিসে চলে যায়। ২০১০ সালের ১৫ আগস্ট ৮৮ বছরে প্রথমবারের মতো পুনরায় অর্থোডক্স উপাসনার আয়োজন হয়েছিল। এখন অবশ্য প্রতি বছর একই দিনে অর্থোডক্স উপাসনার আয়োজন করা হয়।

দর্শক ও ভ্রমণ তথ্য: তুরস্কের আলতিন্দেরে ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে অবস্থিত এ মনাস্ট্রি। ব্ল্যাক সি উপকূলের ট্রাবজোন শহর থেকে প্রায় এক ঘণ্টার পথ পারি দিয়ে যেতে হয় সেখানে।

পরিবহন: পার্কিং লট থেকে শাটল বা সিঁড়িপথ দিয়ে ধাপে ধাপে মনাস্ট্রিতে পৌঁছানো।

ব্যয়: ২০ ইউরো।

খোলা থাকার সময়: সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা।

ভ্রমণকাল: সাধারণত ১ থেকে ২ ঘণ্টা।

শীতকালে তুষার ও গ্রীষ্মে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। তাই শক্ত জুতা ও আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক পরা প্রয়োজন সেখানে যেতে চাইলে।

আশপাশে থাকার ব্যবস্থা: সেখানে কোসানদেরে গ্রামে তিন তারকা মানের সুমেলা হলিডে হোটেল রয়েছে। এ ছাড়া ট্রাবজোন শহরে রামাদা প্লাজা ও র‌্যাডিসন ব্লুর মতো বড় হোটেল আছে।

সুমেলা মনাস্ট্রি শুধু প্রাচীন স্থাপত্যের জন্যই নয়। এটি ভ্রমণ, ইতিহাস, শিল্প ও আধ্যাত্মিকতার মিলনকেন্দ্র হিসেবেও বিখ্যাত। পাহাড়ের প্রাচীরের সঙ্গে ঝুলে থাকা, চোখধাঁধানো ফ্রেস্কো আর সমৃদ্ধ ইতিহাস এই জায়গাকে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে। সূত্র: সিএনএন।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ