ঢাকা ০৭:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

শিল্পীদের তুলির আঁচড়ে সাজছে দুর্গা প্রতিমা

  • আপডেট সময় : ১০:৫৩:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ১২৫ বার পড়া হয়েছে

মহানগর প্রতিবেদন : মাতৃত্ব ও শক্তির প্রতীক দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান জানানোর মাধ্যমে শুরু হয়েছে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। গতকাল রোববার ভোররাতে মহালয়ার মাধ্যমে দেবী দুর্গা পা রাখেন মর্ত্যলোকে। আর মাত্র পাঁচদিন দিন পর ষষ্ঠীতে হবে দেবীর বোধন। আর একেবারে শেষমুহূর্তে রঙ-তুলির আঁচড়ে দেবীকে সাজিয়ে তুলতে নির্ঘুম রাত কাটছে প্রতিমা শিল্পীদের।
পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থানার ২৫টি ম-পে, কোতোয়ালি থানায় ২১টি ম-পে এবং ওয়ারী থানায় ১৭টি ম-পে প্রস্তুতি চলছে দেবীকে বরণের। এসব ম-প ছাড়াও শাঁখারিবাজার, নর্থব্রুক হল এলাকার শিল্পীদের বাড়িতে তৈরি হওয়া প্রতিমাগুলো যাবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ম-পে। প্রতিমা শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শেষ মুহূর্তে এসে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। ব্যস্ততায় দম ফেলার ফুরসত নেই। রঙের ছোঁয়ায় প্রতিমাকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। প্রতিমা তৈরিতে সর্বনি¤œ ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন পুরান ঢাকার এই শিল্পীরা। তবে শুধু জীবিকা নয়, প্রতিমা তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তাদের ধর্মীয় আবেগ ও ভক্তি। বিভিন্ন অনুষঙ্গে প্রতিমা তৈরির কাজ এখনও বাকি। খড়-কাদা মাটির সাহায্যে বানানো হচ্ছে সেগুলোও। ষষ্ঠীর আগেই শেষ হবে প্রস্তুতি। দেবীকে শাড়ি-অলংকার পরিয়ে সবার জন্য করা হবে উন্মুক্ত।
বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই উৎসবে প্রধান অনুষঙ্গ দেবী দুর্গার প্রতিমা। এই দেবীর প্রতিমার পাশাপাশি শিল্পী বানাচ্ছে মহিষাসুরের প্রতিমাও; যাকে বধের জন্য দুর্গা দেবীর আগমন। এছাড়াও লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ এবং দেবী দুর্গার বাহন সিংহের প্রতিমাও তৈরি করছেন শিল্পীরা। এছাড়াও তৈরি হচ্ছে দেবী লক্ষ্মী, সরস্বতী, দেবতা কার্তিক, গণেশের বাহন পেঁচা, হাঁস, ইঁদুর আর ময়ূরও। শাঁখারীবাজারের একটি ম-পে কাজ করছেন শিল্পী পল্টন পাল। তিনি বলেন, ‘২০ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির জিনিসপত্রের দাম প্রতি বছরই বাড়ে। ফলে প্রতিমা তৈরির খরচ বাড়ছে। এটা যে শুধু জীবিকা এমন না– মাকে সাজিয়ে তোলার মধ্য দিয়ে আমরা তার প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসা প্রকাশ করি।’
জগন্নাথ অ্যাপার্টমেন্টে বেশ কয়েকটি প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত শিল্পী ধষরত পাল। পুরান ঢাকা ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যাবে তার বানানো প্রতিমা। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করছি। এখনও অনেক কাজ বাকি। হাতে সময় নেই। প্রতিমা বানিয়ে ম-পে পাঠতে হবে। দেবীকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে পারলেই কাজ করে নিজের মধ্যে শান্তি পাবো।’
পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, তাঁতিবাজার, লক্ষ্মীবাজার, কলতাবাজার, বাংলাবাজার, শ্যামবাজার, পাটুয়াটুলি, প্যারি দাস রোড, মুরগিটোলা, মদনমোহন দাস লেন, গোয়ারনগর, গেন্ডারিয়া, ডালপট্টি এলাকার গলিগুলো ঘুরে দেখা যায়, সবখানেই উৎসবের ছোঁয়া লেগেছে। প্রতিমা তৈরিতে কারিগরদের ব্যস্ততা ছাড়াও ম-পের মঞ্চ, তোরণ নির্মাণের কাজ চলছে। বাংলাবাজারের জমিদার বাড়িতে দেবির প্রতিমার কাজ শেষ হয়েছে। পরানো হয়েছে শাড়ি ও অলংকার। চলছে আলোকসজ্জা ও রঙিন কাগজ, প্যান্ডেলে ম-প সাজানোর কাজ। সকাল থেকেই প্রতিমা দেখতে ম-পে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। এ বছর পুরান ঢাকায় নবকল্লোল পূজা কমিটি, শ্রীশ্রী শিব মন্দির, প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব, সংঘমিত্র পূজা কমিটি, শ্রীশ্রী রাধা মাধব জিউ দেব মন্দির, নতুন কুঁড়ি পূজা কমিটি, নববাণী পূজা কমিটি, রমাকান্ত নন্দীলেন পূজা কমিটিসহ আরও বেশ কিছু ক্লাব পূজা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে শিবমন্দির, তাঁতি বাজার, গোয়ালনগর ঘাট, জুলন বাড়িতে বড় পূজার আয়োজন করা হচ্ছে। সার্বিক বিষয়ে মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক রমেন ম-ল বলেন, ‘পুরান ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ম-পে পূজার আয়োজন হয় সব সময়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শুধু ঢাকার দক্ষিণেই পূজা হবে ১৫১টি। এবার নতুন করে তিনটি পূজা বেড়েছে। শিল্পীরা শেষ মুহূর্তের কাজ করছেন। আগামী দু-এক দিনে তা সম্পন্ন হয়ে যাবে। প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা সার্বিক সহযোগিতা পাচ্ছি। আশা করছি, ভালোভাবে পূজা সম্পন্ন হবে।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

শিল্পীদের তুলির আঁচড়ে সাজছে দুর্গা প্রতিমা

আপডেট সময় : ১০:৫৩:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

মহানগর প্রতিবেদন : মাতৃত্ব ও শক্তির প্রতীক দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান জানানোর মাধ্যমে শুরু হয়েছে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। গতকাল রোববার ভোররাতে মহালয়ার মাধ্যমে দেবী দুর্গা পা রাখেন মর্ত্যলোকে। আর মাত্র পাঁচদিন দিন পর ষষ্ঠীতে হবে দেবীর বোধন। আর একেবারে শেষমুহূর্তে রঙ-তুলির আঁচড়ে দেবীকে সাজিয়ে তুলতে নির্ঘুম রাত কাটছে প্রতিমা শিল্পীদের।
পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থানার ২৫টি ম-পে, কোতোয়ালি থানায় ২১টি ম-পে এবং ওয়ারী থানায় ১৭টি ম-পে প্রস্তুতি চলছে দেবীকে বরণের। এসব ম-প ছাড়াও শাঁখারিবাজার, নর্থব্রুক হল এলাকার শিল্পীদের বাড়িতে তৈরি হওয়া প্রতিমাগুলো যাবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ম-পে। প্রতিমা শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শেষ মুহূর্তে এসে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। ব্যস্ততায় দম ফেলার ফুরসত নেই। রঙের ছোঁয়ায় প্রতিমাকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। প্রতিমা তৈরিতে সর্বনি¤œ ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন পুরান ঢাকার এই শিল্পীরা। তবে শুধু জীবিকা নয়, প্রতিমা তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তাদের ধর্মীয় আবেগ ও ভক্তি। বিভিন্ন অনুষঙ্গে প্রতিমা তৈরির কাজ এখনও বাকি। খড়-কাদা মাটির সাহায্যে বানানো হচ্ছে সেগুলোও। ষষ্ঠীর আগেই শেষ হবে প্রস্তুতি। দেবীকে শাড়ি-অলংকার পরিয়ে সবার জন্য করা হবে উন্মুক্ত।
বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই উৎসবে প্রধান অনুষঙ্গ দেবী দুর্গার প্রতিমা। এই দেবীর প্রতিমার পাশাপাশি শিল্পী বানাচ্ছে মহিষাসুরের প্রতিমাও; যাকে বধের জন্য দুর্গা দেবীর আগমন। এছাড়াও লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ এবং দেবী দুর্গার বাহন সিংহের প্রতিমাও তৈরি করছেন শিল্পীরা। এছাড়াও তৈরি হচ্ছে দেবী লক্ষ্মী, সরস্বতী, দেবতা কার্তিক, গণেশের বাহন পেঁচা, হাঁস, ইঁদুর আর ময়ূরও। শাঁখারীবাজারের একটি ম-পে কাজ করছেন শিল্পী পল্টন পাল। তিনি বলেন, ‘২০ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির জিনিসপত্রের দাম প্রতি বছরই বাড়ে। ফলে প্রতিমা তৈরির খরচ বাড়ছে। এটা যে শুধু জীবিকা এমন না– মাকে সাজিয়ে তোলার মধ্য দিয়ে আমরা তার প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসা প্রকাশ করি।’
জগন্নাথ অ্যাপার্টমেন্টে বেশ কয়েকটি প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত শিল্পী ধষরত পাল। পুরান ঢাকা ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যাবে তার বানানো প্রতিমা। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করছি। এখনও অনেক কাজ বাকি। হাতে সময় নেই। প্রতিমা বানিয়ে ম-পে পাঠতে হবে। দেবীকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে পারলেই কাজ করে নিজের মধ্যে শান্তি পাবো।’
পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, তাঁতিবাজার, লক্ষ্মীবাজার, কলতাবাজার, বাংলাবাজার, শ্যামবাজার, পাটুয়াটুলি, প্যারি দাস রোড, মুরগিটোলা, মদনমোহন দাস লেন, গোয়ারনগর, গেন্ডারিয়া, ডালপট্টি এলাকার গলিগুলো ঘুরে দেখা যায়, সবখানেই উৎসবের ছোঁয়া লেগেছে। প্রতিমা তৈরিতে কারিগরদের ব্যস্ততা ছাড়াও ম-পের মঞ্চ, তোরণ নির্মাণের কাজ চলছে। বাংলাবাজারের জমিদার বাড়িতে দেবির প্রতিমার কাজ শেষ হয়েছে। পরানো হয়েছে শাড়ি ও অলংকার। চলছে আলোকসজ্জা ও রঙিন কাগজ, প্যান্ডেলে ম-প সাজানোর কাজ। সকাল থেকেই প্রতিমা দেখতে ম-পে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। এ বছর পুরান ঢাকায় নবকল্লোল পূজা কমিটি, শ্রীশ্রী শিব মন্দির, প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব, সংঘমিত্র পূজা কমিটি, শ্রীশ্রী রাধা মাধব জিউ দেব মন্দির, নতুন কুঁড়ি পূজা কমিটি, নববাণী পূজা কমিটি, রমাকান্ত নন্দীলেন পূজা কমিটিসহ আরও বেশ কিছু ক্লাব পূজা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে শিবমন্দির, তাঁতি বাজার, গোয়ালনগর ঘাট, জুলন বাড়িতে বড় পূজার আয়োজন করা হচ্ছে। সার্বিক বিষয়ে মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক রমেন ম-ল বলেন, ‘পুরান ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ম-পে পূজার আয়োজন হয় সব সময়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শুধু ঢাকার দক্ষিণেই পূজা হবে ১৫১টি। এবার নতুন করে তিনটি পূজা বেড়েছে। শিল্পীরা শেষ মুহূর্তের কাজ করছেন। আগামী দু-এক দিনে তা সম্পন্ন হয়ে যাবে। প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা সার্বিক সহযোগিতা পাচ্ছি। আশা করছি, ভালোভাবে পূজা সম্পন্ন হবে।’