ঢাকা ১১:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিল্পকলায় ২২৮ কোটি টাকার অনিয়ম

  • আপডেট সময় : ০২:১১:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর ২০২১
  • ৩৬ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ২২৭ কোটি ৭১ লাখ ১৭ হাজার ৪৫৯ টাকার অনিয়মের সন্ধান পেয়েছে হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত অনুসন্ধান করে এই অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায়। বিষয়টির জবাব দিতে দুই সপ্তাহ সময় নিলেও এখনও জবাব দেয়নি একাডেমি। মন্ত্রণালয়ের চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স অফিসার বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। তাতে অনিয়মের ৭২টি ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে একটি সংবাদসংস্থা।
অডিট প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পিপিআর লঙ্ঘন করে সরাসরি ক্রয়ে নির্ধারিত ক্রয়সীমার অতিরিক্ত ১৪ লাখ ৩০ হাজার ১২৬ টাকার অনিয়ম ঘটানো হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পিমা অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের আউটসোর্সিং বিল হতে চুক্তি দাবি অপেক্ষা অতিরিক্ত ১ লাখ ৬৭ হাজার ৪০৬ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এশিয়ান বিয়েনাল সেলে কর্মরত ব্যক্তিদের ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সম্মানী ভাতা থেকে ১২ লাখ ৫২ হাজার ৬৮০ টাকার আয়কর কর্তন করা হয়নি। ফলে এই অর্থ সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, প্রবিধানমালা উপেক্ষা করে কালচারাল অফিসারদের উপ-পরিচালক পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করে ২ লাখ ৪৫ হাজার ২৫৯ টাকার দায়িত্ব ভাতা প্রদান করা হয়েছে। একাডেমির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অগ্রিম বাবদ ১৩ কোটি ৫৬ লাখ ৯৩ হাজার ৭৬৬ টাকা দেওয়া হয়েছে। ড্যান্স অ্যাগেইনস্ট করোনার আওতায় খ-নৃত্য কোরিওগ্রাফি অনুষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ৯৪ লাখ ৬ হাজার ২৪৪ টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু অনুষ্ঠানটি আর হয়নি।
চুক্তিমূল্যের ৫৯ শতাংশের ঊর্ধ্বে রিপিট অর্ডার না করে সরবরাহকারীকে বিল পরিশোধ করায় ৫ লাখ ৬৯ হাজার ১৫০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। উন্মুক্ত দরপত্র বাদ দিয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে খ- খ- ভাউচার ও আরএফকিউ’র মাধ্যমে মালামাল কিনে অনিয়মিত ব্যয় করা হয়েছে ৬৯ লাখ ৫১ হাজার ৪১৯ টাকা। উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির বিপরীতে বরাদ্দকৃত অনুদান ১২ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ের সত্যতাও পায়নি অডিট দল।
জনবল কাঠামো লঙ্ঘন করে একাডেমির কণ্ঠশিল্পী ও নৃত্যশিল্পীদের সংগীত বিভাগের পরিবর্তে প্রযোজনা বিভাগে ন্যস্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে সরকারি চাকরি করা অবস্থায় ব্যবসা করা সত্ত্বেও সেট ডিজাইনার আলী আহমেদ মুকুলের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইন অমান্য করে সচিব নিয়োগ করে ৩০ কোটি ৬৩ লাখ ৬০ হাজার ৭৯৬ টাকা ব্যয় করেছেন মহাপরিচালক। বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে একাডেমির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনুকূলে অগ্রীম চেক ইস্যু করা হলেও সকল চেক একাডেমির হিসাব শাখায় জমা রাখা হয়েছে। যার ফলে ১ কোটি ৩১ লাখ ৩৭ লাখ ৩৯ টাকার অনিয়ম হয়েছে।
ক্যাশবুক যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি এবং ক্যাশবুকের জের ও ব্যাংক বিবরণী জেরের সঙ্গে ১৭ কোটি ৫১ লাখ ৩৮ হাজার ৯২৯ টাকার গরমিল পাওয়া গেছে। অর্থবছরের শেষ কর্মদিবসে অগ্রিম প্রদান করায় ১৫ কোটি ২৯ লাখ ৯৫ হাজার ৬১৩ টাকার আর্থিক অনিয়ম হয়েছে।
অনুদান খাতের অব্যয়িত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না করে ২ কোটি ৪২ লাখ ২০ হাজার ৪৫৫ টাকা রেখে দেওয়া হয়েছে। পিপিআর লঙ্ঘন করে আরএফকিউ পদ্ধতির মাধ্যমে পণ্য ও মালামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে বাৎসরিক ক্রয়সীমা অতিক্রম করে অনিয়মিতভাবে অতিরিক্ত ২২ লাখ ৪ হাজার ২৪৮ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
উচ্চতর স্কেল প্রদান করে বেতন নির্ধারণ করায় ৪ জন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত বেতন-ভাতা বাবদ ২১ লাখ ৫ হাজার ৬৭৯ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। পিপিআর লঙ্ঘন করে সাজানো কোটেশনের মাধ্যমে ৩৮ লাখ ৩১ হাজার ৬৯৫ টাকা অনিয়মিত ব্যয় দেখানো হয়েছে। পরিষদের অনুমোদন ছাড়াই ডা. ইশিতা বিশ্বাসকে খ-কালীন চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ করায় ১৫ লাখ ২০ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
বিধি লঙ্ঘন করে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রকার অনুষ্ঠানের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে ৭ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে অগ্রিম প্রদান করায় ৫ কোটি ২ লাখ ৩ হাজার ৭১৬ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বিধি উপেক্ষা করে এক খাতের টাকা অন্য খাতে ব্যয় করায় এক লাখ টাকা আর্থিক অনিয়ম হয়েছে।
বিভিন্ন খাতে বাজেট বরাদ্দ অপেক্ষা অতিরিক্ত ১৩ লাখ ৮৩ হাজার ৯৮৪ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। আর্থিক ক্ষমতার অতিরিক্ত গাড়ি মেরামত বাবদ ব্যয় ১৬ লাখ ৩৮ হাজার ৭৩ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। প্রতিমাসে বেতন বিলে রাজস্ব টিকিট সংযুক্ত না করায় ১ লাখ ৮১ হাজার ২০০ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।
বিধি লঙ্ঘন করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ এবং দরপত্র আহ্বান ছাড়াই ব্রশিউর মুদ্রণ কাজে অনিয়মিতভাবে ২৮ লাখ ৮৬ হাজার ৮৪০ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। বাজেট বরাদ্দ না থাকা সত্ত্বেও অনিয়মিতভাবে ৫ লাখ ১৮ হাজার ১০০ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। আপ্যায়ন বাবদ অতিরিক্ত ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৮২ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
দাফতরিক চাহিদাপত্র ছাড়া সাত লাখ ৪০ হাজার ১৩৬ টাকার মালামাল কেনা হয়েছে। আর্থিক মূল্যসীমার নির্দেশনা অনুসরণ না করে কোটেশন পদ্ধতির মাধ্যমে পণ্য ও সরবরাহ সেবা ক্রয় বাবদ ৭ লাখ ৯৮ হাজার টাকা অনিয়মিত ব্যয় করা হয়েছে।
চাহিদাপত্র এবং বিদ্যুৎ বিলের কপি না থাকলেও বকেয়া বিদ্যুৎ বিল বাবদ ৬৮ লাখ ৯১ হাজার ৫১৬ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। মেরামত সংক্রান্ত কাজে জেলা শিল্পকলা একাডেমির চাহিদাপত্র ছাড়া এবং বিল-ভাউচার ছাড়াই ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় নম্বর পরিবর্তন করে বিভিন্ন স্তরের ২৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
টিএন্ডইও বহির্ভূত রাজস্ব বাজেট বরাদ্দ থেকে সদ্য সমাপ্ত উন্নয়ন প্রকল্পের গাড়ি মেরামত ও জ্বালানি বাবদ ২৪ লাখ ৩ হাজার ৭১৯ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অনুমোদিত ব্যয় বিভাজন পরিকল্পনার বাইরে ৬৭ লাখ ১৬ হাজার ৩০৭ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। বিধি লঙ্ঘন করে আরএফকিউ পদ্ধতির মাধ্যমে কার্য ও ভৌত সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে বাৎসরিক ক্রয়সীমা অতিক্রম করে অতিরিক্ত ২৬ লাখ ১৩ হাজার ৯৪৩ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
সিএনজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের নামে চেক ইস্যু না করে ট্রান্সপোর্ট সুপারভাইজারের নামে ৯ লাখ ২৭ হাজার ৫৩৬ টাকার চেক ইস্যু করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না করলেও ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ৫৭৬ টাকার সম্মানী ব্যয় দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত প্রাক্কলন এবং অনুমোদিত অর্থের চেয়ে অতিরিক্ত শিল্পী সম্মানী প্রদান করায় ১২ লাখ ৯২ হাজার ৩৫ টাকা ক্ষতি করা হয়েছে।
অনুমোদিত ব্যয় বিভাজন উপেক্ষা করে আপ্যায়ন খাতে ৩১ লাখ ২৬ হাজার ৭২৫ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে। ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির বিপরীতে রিকন্ডিশনড গাড়ি ক্রয় করায় একাডেমির ক্ষতি হয়েছে ৩৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
৭ মার্চের আলোকধ্বনি অনুষ্ঠানে ৪০ লাখ টাকা ব্যয় বাবদ অর্থের রেকর্ডপত্র রাখা হয়নি। গাড়ি কেনায় চুক্তিমূল্যের ওপর ইন্সুরেন্স না করায় ভ্যাট বাবদ সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৬ হাজার ৮৮২ টাকা। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বহির্ভূত ৬৭ লাখ ৪৮ হাজার ৭০০ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সরাসরি চুক্তির আওতায় ডিপিএম পদ্ধতিতে ঢাকা আর্ট সামিট উদযাপন উপলক্ষে বাৎসরিক সিলিং সীমার অতিরিক্ত ৪০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকার আয়কর না কেটে বিল পরিশোধ করা হয়েছে। ভবন মেরামত ও সংরক্ষণ কাজে বাজেট অতিরিক্ত ২৯ লাখ ৭৯ হাজার ২০৬ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়ের রামু বিহারে ‘মহাস্থান’ নাটক মঞ্চায়ন না হওয়ায় অগ্রিম প্রদত্ত অর্থ আদায়পূর্বক একাডেমি তহবিলে জমা না করায় একাডেমির ৮৫ লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
৬৩টি জেলা শিল্পকলা একাডেমির অংশগ্রহণে ৫ দিনব্যাপী সংগীত বিষয়ক কর্মশালার মহড়া না হওয়ায় অগ্রিম প্রদত্ত অর্থ আদায় করে একাডেমির তহবিলে জমা না করায় ১ কোটি ৭৫ হাজার ৮৫০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাবদ অগ্রিম প্রদান করা হলেও অনুষ্ঠান সম্পন্ন না হওয়ায় গৃহীত অগ্রিম আদায় করে একাডেমির তহবিলে জমা না করায় ক্ষতি হয়েছে আরও ২ কোটি ৫৬ লাখ ২৩ হাজার ৩৮ টাকা।
সরবরাহকারীকে দাবিকৃত অর্থ পরিশোধের পরও একই বিষয়ে খ- খ- ভাউচারের মাধ্যমে ৪১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৯৫ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বাবদ ৭ লাখ ৫১ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে।
২০২০-২১ অর্থবছরের শুরুতে পূর্ববর্তী বছরের সমাপনী জের ৩৩ কোটি ৯৬ লাখ ২৮ হাজার ৯১২ টাকা বাজেটে প্রদর্শন করা হয়নি। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে বাজেট বরাদ্দ প্রদানের ক্ষেত্রে বিষয়টি গোপন করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শিল্পকলা একাডেমির উপপরিচালক (অর্থ) মো. শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রমাণিত বিষয়গুলোতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা নিরীক্ষা দলকে অবহিতকরণ করা হয়নি। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য শিল্পীদের যাতায়াত ভাতা বাবদ প্রদত্ত অগ্রিম সমন্বয় না করায় একাডেমির ৭৭ লাখ ১০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। অর্গানোগ্রাম ব্যতীত কালচারাল অফিসারদের বেতন-ভাতা বাবদ ৪ কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার ৬৩৬ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
সংগীত বিভাগের করোনাকালীন মিউজিক সংক্রান্ত বিশেষ কর্মসূচির জন্য বিভিন্ন ব্যক্তিকে অগ্রিম প্রদান করা হলেও এখনও অনুষ্ঠানগুলো হয়নি। এতেও ৫২ লাখ ২৩ হাজার ১৫৪ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
চুক্তি সম্পাদন ছাড়াই ১৮ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৩ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অন্যান্য ভবন ও স্থাপনায় মেরামত ও সংরক্ষণ কাজে এক কোটি ৩১ লাখ ৩০ হাজার ৩৭৮ টাকার বিল-ভাউচার নিরীক্ষায় উপস্থাপন করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারীকে দাবিকৃত অর্থ পরিশোধের পরও একই বিষয়ে খ- খ- ভাউচারের মাধ্যমে ব্যয় নির্বাহ করায় একাডেমির ৪০ লাখ ৬০ হাজার ১৬৩ টাকার ক্ষতি হয়েছে। শিল্পী সম্মানী প্রদানের লক্ষে অগ্রীম নেওয়া ৯৮ লাখ টাকা অনুষ্ঠান সম্পন্নের আট মাস পরও সমন্বয় করা হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় এলডি বাবদ আরোপযোগ্য জরিমানা কর্তন ছাড়াই বিল পরিশোধ করায় ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮৬ হাজার ৫৬৭ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
ডিপিপি বহির্ভূত নতুন টাইলস বসানো এবং পুরাতন টাইলস উঠানোর কাজে প্রাক্কলন প্রস্তুত এবং ঠিকাদার কর্তৃক বিওকিউ দাখিল করে ২ কোটি ২২ লাখ ৮ হাজার টাকার চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে। বিধিমালা ভঙ্গ করে প্রকল্পের ভবন নির্মাণে ১২ কোটি ৭০ লাখ ৮ হাজার টাকার অনিয়মিত ব্যয় দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কাজে ১৫ কোটি ১৮ লাখ ৭ হাজার টাকা ব্যয় করা হলেও ক্যাশবুক সংরক্ষণ করা হয়নি। বিধি লঙ্ঘন এবং বিজ্ঞাপন আহবান না করে সরাসরি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অনিয়মিত চুক্তি সম্পাদন করে ব্যয় করা হয়েছে ৬ কোটি ৩৩ লাখ ৩ হাজার ১৫০ টাকা। বিধি লঙ্ঘন করে একক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে ক্রয়সীমার অতিরিক্ত ১ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
প্রকল্পের অব্যয়িত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান না করায় সরকারের ১৭ কোটি ৩৬ লাখ ৫২ হাজার ৫৯৬ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় ব্যর্থ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে জরিমানা আরোপ না করায় সরকারের আরও ৮ কোটি ৪৯ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৬ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া জিসিসির শর্ত মোতাবেক ইনস্যুরেন্স কভারেজ না করায় রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজার ৯০১ টাকা।
এ নিয়ে জানতে চাইলে নিরীক্ষা দলনেতা ও সমাজকল্যাণ ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের চিফ একাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স অফিসার মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটি অডিট করেছি। শিল্পকলা একাডেমি সেগুলোর জবাব দেওয়ার জন্য দুই সপ্তাহ সময় নিয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারবো না।’ তিনি শিক্ষা অডিট অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে শিক্ষা অডিট অধিদফতরের মহাপরিচালকের দফতরে গিয়ে তার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) লিয়াকত আলী লাকীকে ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। বিষয়টি উল্লেখ করে এসএমএস পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার লার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শিল্পকলায় ২২৮ কোটি টাকার অনিয়ম

আপডেট সময় : ০২:১১:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর ২০২১

প্রত্যাশা ডেস্ক : বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ২২৭ কোটি ৭১ লাখ ১৭ হাজার ৪৫৯ টাকার অনিয়মের সন্ধান পেয়েছে হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত অনুসন্ধান করে এই অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায়। বিষয়টির জবাব দিতে দুই সপ্তাহ সময় নিলেও এখনও জবাব দেয়নি একাডেমি। মন্ত্রণালয়ের চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স অফিসার বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। তাতে অনিয়মের ৭২টি ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে একটি সংবাদসংস্থা।
অডিট প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পিপিআর লঙ্ঘন করে সরাসরি ক্রয়ে নির্ধারিত ক্রয়সীমার অতিরিক্ত ১৪ লাখ ৩০ হাজার ১২৬ টাকার অনিয়ম ঘটানো হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পিমা অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের আউটসোর্সিং বিল হতে চুক্তি দাবি অপেক্ষা অতিরিক্ত ১ লাখ ৬৭ হাজার ৪০৬ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এশিয়ান বিয়েনাল সেলে কর্মরত ব্যক্তিদের ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সম্মানী ভাতা থেকে ১২ লাখ ৫২ হাজার ৬৮০ টাকার আয়কর কর্তন করা হয়নি। ফলে এই অর্থ সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, প্রবিধানমালা উপেক্ষা করে কালচারাল অফিসারদের উপ-পরিচালক পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করে ২ লাখ ৪৫ হাজার ২৫৯ টাকার দায়িত্ব ভাতা প্রদান করা হয়েছে। একাডেমির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অগ্রিম বাবদ ১৩ কোটি ৫৬ লাখ ৯৩ হাজার ৭৬৬ টাকা দেওয়া হয়েছে। ড্যান্স অ্যাগেইনস্ট করোনার আওতায় খ-নৃত্য কোরিওগ্রাফি অনুষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ৯৪ লাখ ৬ হাজার ২৪৪ টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু অনুষ্ঠানটি আর হয়নি।
চুক্তিমূল্যের ৫৯ শতাংশের ঊর্ধ্বে রিপিট অর্ডার না করে সরবরাহকারীকে বিল পরিশোধ করায় ৫ লাখ ৬৯ হাজার ১৫০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। উন্মুক্ত দরপত্র বাদ দিয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে খ- খ- ভাউচার ও আরএফকিউ’র মাধ্যমে মালামাল কিনে অনিয়মিত ব্যয় করা হয়েছে ৬৯ লাখ ৫১ হাজার ৪১৯ টাকা। উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির বিপরীতে বরাদ্দকৃত অনুদান ১২ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ের সত্যতাও পায়নি অডিট দল।
জনবল কাঠামো লঙ্ঘন করে একাডেমির কণ্ঠশিল্পী ও নৃত্যশিল্পীদের সংগীত বিভাগের পরিবর্তে প্রযোজনা বিভাগে ন্যস্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে সরকারি চাকরি করা অবস্থায় ব্যবসা করা সত্ত্বেও সেট ডিজাইনার আলী আহমেদ মুকুলের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইন অমান্য করে সচিব নিয়োগ করে ৩০ কোটি ৬৩ লাখ ৬০ হাজার ৭৯৬ টাকা ব্যয় করেছেন মহাপরিচালক। বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে একাডেমির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনুকূলে অগ্রীম চেক ইস্যু করা হলেও সকল চেক একাডেমির হিসাব শাখায় জমা রাখা হয়েছে। যার ফলে ১ কোটি ৩১ লাখ ৩৭ লাখ ৩৯ টাকার অনিয়ম হয়েছে।
ক্যাশবুক যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি এবং ক্যাশবুকের জের ও ব্যাংক বিবরণী জেরের সঙ্গে ১৭ কোটি ৫১ লাখ ৩৮ হাজার ৯২৯ টাকার গরমিল পাওয়া গেছে। অর্থবছরের শেষ কর্মদিবসে অগ্রিম প্রদান করায় ১৫ কোটি ২৯ লাখ ৯৫ হাজার ৬১৩ টাকার আর্থিক অনিয়ম হয়েছে।
অনুদান খাতের অব্যয়িত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না করে ২ কোটি ৪২ লাখ ২০ হাজার ৪৫৫ টাকা রেখে দেওয়া হয়েছে। পিপিআর লঙ্ঘন করে আরএফকিউ পদ্ধতির মাধ্যমে পণ্য ও মালামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে বাৎসরিক ক্রয়সীমা অতিক্রম করে অনিয়মিতভাবে অতিরিক্ত ২২ লাখ ৪ হাজার ২৪৮ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
উচ্চতর স্কেল প্রদান করে বেতন নির্ধারণ করায় ৪ জন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত বেতন-ভাতা বাবদ ২১ লাখ ৫ হাজার ৬৭৯ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। পিপিআর লঙ্ঘন করে সাজানো কোটেশনের মাধ্যমে ৩৮ লাখ ৩১ হাজার ৬৯৫ টাকা অনিয়মিত ব্যয় দেখানো হয়েছে। পরিষদের অনুমোদন ছাড়াই ডা. ইশিতা বিশ্বাসকে খ-কালীন চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ করায় ১৫ লাখ ২০ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
বিধি লঙ্ঘন করে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রকার অনুষ্ঠানের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে ৭ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে অগ্রিম প্রদান করায় ৫ কোটি ২ লাখ ৩ হাজার ৭১৬ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বিধি উপেক্ষা করে এক খাতের টাকা অন্য খাতে ব্যয় করায় এক লাখ টাকা আর্থিক অনিয়ম হয়েছে।
বিভিন্ন খাতে বাজেট বরাদ্দ অপেক্ষা অতিরিক্ত ১৩ লাখ ৮৩ হাজার ৯৮৪ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। আর্থিক ক্ষমতার অতিরিক্ত গাড়ি মেরামত বাবদ ব্যয় ১৬ লাখ ৩৮ হাজার ৭৩ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। প্রতিমাসে বেতন বিলে রাজস্ব টিকিট সংযুক্ত না করায় ১ লাখ ৮১ হাজার ২০০ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।
বিধি লঙ্ঘন করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ এবং দরপত্র আহ্বান ছাড়াই ব্রশিউর মুদ্রণ কাজে অনিয়মিতভাবে ২৮ লাখ ৮৬ হাজার ৮৪০ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। বাজেট বরাদ্দ না থাকা সত্ত্বেও অনিয়মিতভাবে ৫ লাখ ১৮ হাজার ১০০ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। আপ্যায়ন বাবদ অতিরিক্ত ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৮২ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
দাফতরিক চাহিদাপত্র ছাড়া সাত লাখ ৪০ হাজার ১৩৬ টাকার মালামাল কেনা হয়েছে। আর্থিক মূল্যসীমার নির্দেশনা অনুসরণ না করে কোটেশন পদ্ধতির মাধ্যমে পণ্য ও সরবরাহ সেবা ক্রয় বাবদ ৭ লাখ ৯৮ হাজার টাকা অনিয়মিত ব্যয় করা হয়েছে।
চাহিদাপত্র এবং বিদ্যুৎ বিলের কপি না থাকলেও বকেয়া বিদ্যুৎ বিল বাবদ ৬৮ লাখ ৯১ হাজার ৫১৬ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। মেরামত সংক্রান্ত কাজে জেলা শিল্পকলা একাডেমির চাহিদাপত্র ছাড়া এবং বিল-ভাউচার ছাড়াই ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় নম্বর পরিবর্তন করে বিভিন্ন স্তরের ২৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
টিএন্ডইও বহির্ভূত রাজস্ব বাজেট বরাদ্দ থেকে সদ্য সমাপ্ত উন্নয়ন প্রকল্পের গাড়ি মেরামত ও জ্বালানি বাবদ ২৪ লাখ ৩ হাজার ৭১৯ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অনুমোদিত ব্যয় বিভাজন পরিকল্পনার বাইরে ৬৭ লাখ ১৬ হাজার ৩০৭ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। বিধি লঙ্ঘন করে আরএফকিউ পদ্ধতির মাধ্যমে কার্য ও ভৌত সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে বাৎসরিক ক্রয়সীমা অতিক্রম করে অতিরিক্ত ২৬ লাখ ১৩ হাজার ৯৪৩ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
সিএনজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের নামে চেক ইস্যু না করে ট্রান্সপোর্ট সুপারভাইজারের নামে ৯ লাখ ২৭ হাজার ৫৩৬ টাকার চেক ইস্যু করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না করলেও ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ৫৭৬ টাকার সম্মানী ব্যয় দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত প্রাক্কলন এবং অনুমোদিত অর্থের চেয়ে অতিরিক্ত শিল্পী সম্মানী প্রদান করায় ১২ লাখ ৯২ হাজার ৩৫ টাকা ক্ষতি করা হয়েছে।
অনুমোদিত ব্যয় বিভাজন উপেক্ষা করে আপ্যায়ন খাতে ৩১ লাখ ২৬ হাজার ৭২৫ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে। ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির বিপরীতে রিকন্ডিশনড গাড়ি ক্রয় করায় একাডেমির ক্ষতি হয়েছে ৩৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
৭ মার্চের আলোকধ্বনি অনুষ্ঠানে ৪০ লাখ টাকা ব্যয় বাবদ অর্থের রেকর্ডপত্র রাখা হয়নি। গাড়ি কেনায় চুক্তিমূল্যের ওপর ইন্সুরেন্স না করায় ভ্যাট বাবদ সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৬ হাজার ৮৮২ টাকা। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বহির্ভূত ৬৭ লাখ ৪৮ হাজার ৭০০ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সরাসরি চুক্তির আওতায় ডিপিএম পদ্ধতিতে ঢাকা আর্ট সামিট উদযাপন উপলক্ষে বাৎসরিক সিলিং সীমার অতিরিক্ত ৪০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকার আয়কর না কেটে বিল পরিশোধ করা হয়েছে। ভবন মেরামত ও সংরক্ষণ কাজে বাজেট অতিরিক্ত ২৯ লাখ ৭৯ হাজার ২০৬ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়ের রামু বিহারে ‘মহাস্থান’ নাটক মঞ্চায়ন না হওয়ায় অগ্রিম প্রদত্ত অর্থ আদায়পূর্বক একাডেমি তহবিলে জমা না করায় একাডেমির ৮৫ লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
৬৩টি জেলা শিল্পকলা একাডেমির অংশগ্রহণে ৫ দিনব্যাপী সংগীত বিষয়ক কর্মশালার মহড়া না হওয়ায় অগ্রিম প্রদত্ত অর্থ আদায় করে একাডেমির তহবিলে জমা না করায় ১ কোটি ৭৫ হাজার ৮৫০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাবদ অগ্রিম প্রদান করা হলেও অনুষ্ঠান সম্পন্ন না হওয়ায় গৃহীত অগ্রিম আদায় করে একাডেমির তহবিলে জমা না করায় ক্ষতি হয়েছে আরও ২ কোটি ৫৬ লাখ ২৩ হাজার ৩৮ টাকা।
সরবরাহকারীকে দাবিকৃত অর্থ পরিশোধের পরও একই বিষয়ে খ- খ- ভাউচারের মাধ্যমে ৪১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৯৫ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বাবদ ৭ লাখ ৫১ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে।
২০২০-২১ অর্থবছরের শুরুতে পূর্ববর্তী বছরের সমাপনী জের ৩৩ কোটি ৯৬ লাখ ২৮ হাজার ৯১২ টাকা বাজেটে প্রদর্শন করা হয়নি। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে বাজেট বরাদ্দ প্রদানের ক্ষেত্রে বিষয়টি গোপন করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শিল্পকলা একাডেমির উপপরিচালক (অর্থ) মো. শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রমাণিত বিষয়গুলোতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা নিরীক্ষা দলকে অবহিতকরণ করা হয়নি। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য শিল্পীদের যাতায়াত ভাতা বাবদ প্রদত্ত অগ্রিম সমন্বয় না করায় একাডেমির ৭৭ লাখ ১০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। অর্গানোগ্রাম ব্যতীত কালচারাল অফিসারদের বেতন-ভাতা বাবদ ৪ কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার ৬৩৬ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
সংগীত বিভাগের করোনাকালীন মিউজিক সংক্রান্ত বিশেষ কর্মসূচির জন্য বিভিন্ন ব্যক্তিকে অগ্রিম প্রদান করা হলেও এখনও অনুষ্ঠানগুলো হয়নি। এতেও ৫২ লাখ ২৩ হাজার ১৫৪ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
চুক্তি সম্পাদন ছাড়াই ১৮ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৩ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অন্যান্য ভবন ও স্থাপনায় মেরামত ও সংরক্ষণ কাজে এক কোটি ৩১ লাখ ৩০ হাজার ৩৭৮ টাকার বিল-ভাউচার নিরীক্ষায় উপস্থাপন করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারীকে দাবিকৃত অর্থ পরিশোধের পরও একই বিষয়ে খ- খ- ভাউচারের মাধ্যমে ব্যয় নির্বাহ করায় একাডেমির ৪০ লাখ ৬০ হাজার ১৬৩ টাকার ক্ষতি হয়েছে। শিল্পী সম্মানী প্রদানের লক্ষে অগ্রীম নেওয়া ৯৮ লাখ টাকা অনুষ্ঠান সম্পন্নের আট মাস পরও সমন্বয় করা হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় এলডি বাবদ আরোপযোগ্য জরিমানা কর্তন ছাড়াই বিল পরিশোধ করায় ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮৬ হাজার ৫৬৭ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
ডিপিপি বহির্ভূত নতুন টাইলস বসানো এবং পুরাতন টাইলস উঠানোর কাজে প্রাক্কলন প্রস্তুত এবং ঠিকাদার কর্তৃক বিওকিউ দাখিল করে ২ কোটি ২২ লাখ ৮ হাজার টাকার চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে। বিধিমালা ভঙ্গ করে প্রকল্পের ভবন নির্মাণে ১২ কোটি ৭০ লাখ ৮ হাজার টাকার অনিয়মিত ব্যয় দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কাজে ১৫ কোটি ১৮ লাখ ৭ হাজার টাকা ব্যয় করা হলেও ক্যাশবুক সংরক্ষণ করা হয়নি। বিধি লঙ্ঘন এবং বিজ্ঞাপন আহবান না করে সরাসরি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অনিয়মিত চুক্তি সম্পাদন করে ব্যয় করা হয়েছে ৬ কোটি ৩৩ লাখ ৩ হাজার ১৫০ টাকা। বিধি লঙ্ঘন করে একক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে ক্রয়সীমার অতিরিক্ত ১ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
প্রকল্পের অব্যয়িত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান না করায় সরকারের ১৭ কোটি ৩৬ লাখ ৫২ হাজার ৫৯৬ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় ব্যর্থ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে জরিমানা আরোপ না করায় সরকারের আরও ৮ কোটি ৪৯ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৬ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া জিসিসির শর্ত মোতাবেক ইনস্যুরেন্স কভারেজ না করায় রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজার ৯০১ টাকা।
এ নিয়ে জানতে চাইলে নিরীক্ষা দলনেতা ও সমাজকল্যাণ ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের চিফ একাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স অফিসার মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটি অডিট করেছি। শিল্পকলা একাডেমি সেগুলোর জবাব দেওয়ার জন্য দুই সপ্তাহ সময় নিয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারবো না।’ তিনি শিক্ষা অডিট অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে শিক্ষা অডিট অধিদফতরের মহাপরিচালকের দফতরে গিয়ে তার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) লিয়াকত আলী লাকীকে ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। বিষয়টি উল্লেখ করে এসএমএস পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।