ঢাকা ০৪:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

শিরোনামহীন

  • আপডেট সময় : ০৯:৫৮:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৪
  • ২৯৪ বার পড়া হয়েছে

ফারজানা কাশেমী : “অ ঃঁৎব ভৎরবহফ রং ভড়ৎবাবৎ ধ ভৎরবহফ ”
১২ঃয ভধরষ মুভিটা সাম্প্রতিক সময়ে প্রচারিত ও প্রসারিত হচ্ছে। খুব বেশি সিনেমা বোদ্ধা আমি নই। আমার মতো ক্ষুদ্র দর্শকের বিশ্লেষণে কাহিনী, চিত্রনাট্য, লেখনীর মাপকাঠিতে এই মুভিটা অনবদ্য। এই মুভিটি দ্বাদশ শ্রেণিতে অকৃতকার্য একজন ছেলের জীবন পরিক্রমার পটপরিবর্তন, সংগ্রাম, সাফল্য আর ভালবাসার পূর্ণতাকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণিতে অকৃতকার্য মনোজ কুমার শর্মার জীবন কাহিনী। পরবর্তীতে এই মনোজ কুমার শর্মা ওচঝ অফিসার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়। মনোজ কুমার শর্মার হাজারো চড়াই, উৎড়াইয়ে প্রেমিকা তাকে ছেড়ে যায়নি; আগলে রেখেছে ভালবাসার পরম আরাধ্য অনুভূতিতে।
মনোজ কুমার শর্মা জীবনের জটিলতা পেরিয়ে একদিন সফল হয়েছে। সফল মানুষের কাহিনীচিত্র সর্বদা প্রশংসনীয়। সফল মানুষের কাহিনীতে মানুষ অনুপ্রাণিত হয়। সফলতা ভূয়সী প্রশংসার প্রাপ্য।
হয়তো মনোজ কুমার শর্মা হেরে গেলে তাকে জানার আগ্রহ মানুষের থাকতো না। হেরে যাওয়া মানুষের গল্প কেউ শুনে না। পরাজিত মানুষের গল্পকে অনাহুত ধরা হয়। হেরে যাওয়া, পথহারা মানুষের সাথে কেউ থাকে না।
সাম্প্রতিক সময়ে এ-ই মুভির প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশের বিসিএস (পুলিশ প্রশাসন) এ উত্তীর্ণ একজন মানুষ অকপটে তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা দ্বিধাহীনভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রকাশ করেছে। ক্যাডার সার্ভিসে যোগদানের পূর্বে এই মানুষটার জীবনেও একজন প্রেমিকা ছিল। মনোজ কুমার শর্মার প্রেমিকা শ্রদ্ধা প্রেমিকের সাথে কখনো সম্পর্ক ছিন্ন করেননি। দুর্দিনেও প্রেমিকের ছায়াসঙ্গী ছিল। কিন্তু আমাদের অল্পবিস্তর পরিচিত এই মানুষটার প্রেমিকা তার দুঃসময়ে তাকে ছেড়ে গিয়েছিল সুপ্রতিষ্ঠিত কারো হাত ধরে। হেরে যাওয়া প্রেমের গল্প শুনার সময় কারো হয় না। হেরে যাওয়ার গল্পে মোটিভেশন পাওয়া যায় না। হেরে যাওয়া গল্প সমাজের বস্তাপচা গল্প। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষের জীবনের গল্প হেরে যাওয়ার গল্প। মানুষের জীবন চোরাবালির সাদৃশ্য। পায়ের নিচের মাটি সরে গেলে যেমন মানুষ এড়িয়ে যায়, তেমনি হেরে গেলেও মানুষকে জবরদস্তিতে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হয়। অন্ধকারের গল্প, নিশুতির গল্প কেউ শোনে না। ব্যর্থ গল্পে কারো আকর্ষণ থাকে না। আমাদের দেশের বিসিএস (পুলিশ প্রশাসন)-এ উত্তীর্ণ এই মানুষটা আজ প্রতিষ্ঠিত বলে তার জীবনের কষ্টের কথা অকপটে স্বীকার করতে পেরেছে। নতুবা তাকে কেউ হয়তো অকৃতজ্ঞ প্রেমিকার নির্লিপ্ত বিশ্বাসঘাতকতার কাহিনী তুলে ধরার সুযোগ দিতো না। এই সমাজে হেরে যাওয়া মানুষ সময়ের জঞ্জাল। যে জঞ্জাল পদেপদে উপেক্ষিত হয়। পরাজিত মানুষের পাশে কেউ থাকে না। পরাজয়ের গল্প বলতে হলেও বাস্তবতায় সফল হতে হয়। হেরে যাওয়ার গল্প লজ্জার গল্প। লজ্জা গোপন করতে হয়। প্রকাশ্যে হেরে যাওয়ার গল্প বলার দুঃসাহস অনেক মানুষের হয় না। সফলের জয়জয়কার সর্বত্র।
কিছুদিন আগে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, একজন পুরুষ মানুষ সরকারি চাকরি পাবার পরপরই তার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করেছে। যদিও এই পুরুষ মানুষটার স্ত্রী তার যাবতীয় ব্যয় বহন করতো। এই গল্পে নারী চরিত্র একজন হেরে যাওয়া মানুষ। কারো ভাষায় ব্যর্থ নারী; কারণ সে তার স্বামীকে নিয়ম রক্ষার সংসারে বেঁধে রাখতে পারেনি। ভালবাসার গল্প মানে শুধুই সুখ, শুকপাখিকে আপন করে পাওয়া। বাস্তবে অধিকাংশ পুরুষ কিংবা নারীর ভালবাসার গল্পের অন্তরালে নিঃস্ব হয়েছে অনেকের জীবন।
ভালবাসার রঙিন প্রচ্ছদে সিনেমার বাহারি পোস্টার আলো ছড়ায়, ভালবাসাহীন ভালবাসার মিথ্যে ফানুসের গল্পের তেতো আর্বজনা তাই গোপন করা হয়। কিছু গল্প ভালবাসা আর দায়িত্বের পরশ ছড়ায়। তবে আনাচে-কানাচেতে বিষাক্ত ভালবাসার গল্পের কালো রঙের প্রলেপে ছেড়ে যায় বহু মানুষের জীবন। ভালবাসার গল্প মানে সত্যিকারের বন্ধুত্বের বন্ধন; বন্ধুত্বের সম্পর্ক আর প্রাণজুড়ানো গল্পের আচ্ছাদন; যেখানে কেউ কাউকে ছেড়ে যায় না। প্রকৃতপক্ষে সত্যিকার বন্ধু অনেকের জীবনে অধরা রয়ে যায়।
লেখক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শিরোনামহীন

আপডেট সময় : ০৯:৫৮:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৪

ফারজানা কাশেমী : “অ ঃঁৎব ভৎরবহফ রং ভড়ৎবাবৎ ধ ভৎরবহফ ”
১২ঃয ভধরষ মুভিটা সাম্প্রতিক সময়ে প্রচারিত ও প্রসারিত হচ্ছে। খুব বেশি সিনেমা বোদ্ধা আমি নই। আমার মতো ক্ষুদ্র দর্শকের বিশ্লেষণে কাহিনী, চিত্রনাট্য, লেখনীর মাপকাঠিতে এই মুভিটা অনবদ্য। এই মুভিটি দ্বাদশ শ্রেণিতে অকৃতকার্য একজন ছেলের জীবন পরিক্রমার পটপরিবর্তন, সংগ্রাম, সাফল্য আর ভালবাসার পূর্ণতাকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণিতে অকৃতকার্য মনোজ কুমার শর্মার জীবন কাহিনী। পরবর্তীতে এই মনোজ কুমার শর্মা ওচঝ অফিসার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়। মনোজ কুমার শর্মার হাজারো চড়াই, উৎড়াইয়ে প্রেমিকা তাকে ছেড়ে যায়নি; আগলে রেখেছে ভালবাসার পরম আরাধ্য অনুভূতিতে।
মনোজ কুমার শর্মা জীবনের জটিলতা পেরিয়ে একদিন সফল হয়েছে। সফল মানুষের কাহিনীচিত্র সর্বদা প্রশংসনীয়। সফল মানুষের কাহিনীতে মানুষ অনুপ্রাণিত হয়। সফলতা ভূয়সী প্রশংসার প্রাপ্য।
হয়তো মনোজ কুমার শর্মা হেরে গেলে তাকে জানার আগ্রহ মানুষের থাকতো না। হেরে যাওয়া মানুষের গল্প কেউ শুনে না। পরাজিত মানুষের গল্পকে অনাহুত ধরা হয়। হেরে যাওয়া, পথহারা মানুষের সাথে কেউ থাকে না।
সাম্প্রতিক সময়ে এ-ই মুভির প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশের বিসিএস (পুলিশ প্রশাসন) এ উত্তীর্ণ একজন মানুষ অকপটে তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা দ্বিধাহীনভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রকাশ করেছে। ক্যাডার সার্ভিসে যোগদানের পূর্বে এই মানুষটার জীবনেও একজন প্রেমিকা ছিল। মনোজ কুমার শর্মার প্রেমিকা শ্রদ্ধা প্রেমিকের সাথে কখনো সম্পর্ক ছিন্ন করেননি। দুর্দিনেও প্রেমিকের ছায়াসঙ্গী ছিল। কিন্তু আমাদের অল্পবিস্তর পরিচিত এই মানুষটার প্রেমিকা তার দুঃসময়ে তাকে ছেড়ে গিয়েছিল সুপ্রতিষ্ঠিত কারো হাত ধরে। হেরে যাওয়া প্রেমের গল্প শুনার সময় কারো হয় না। হেরে যাওয়ার গল্পে মোটিভেশন পাওয়া যায় না। হেরে যাওয়া গল্প সমাজের বস্তাপচা গল্প। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষের জীবনের গল্প হেরে যাওয়ার গল্প। মানুষের জীবন চোরাবালির সাদৃশ্য। পায়ের নিচের মাটি সরে গেলে যেমন মানুষ এড়িয়ে যায়, তেমনি হেরে গেলেও মানুষকে জবরদস্তিতে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হয়। অন্ধকারের গল্প, নিশুতির গল্প কেউ শোনে না। ব্যর্থ গল্পে কারো আকর্ষণ থাকে না। আমাদের দেশের বিসিএস (পুলিশ প্রশাসন)-এ উত্তীর্ণ এই মানুষটা আজ প্রতিষ্ঠিত বলে তার জীবনের কষ্টের কথা অকপটে স্বীকার করতে পেরেছে। নতুবা তাকে কেউ হয়তো অকৃতজ্ঞ প্রেমিকার নির্লিপ্ত বিশ্বাসঘাতকতার কাহিনী তুলে ধরার সুযোগ দিতো না। এই সমাজে হেরে যাওয়া মানুষ সময়ের জঞ্জাল। যে জঞ্জাল পদেপদে উপেক্ষিত হয়। পরাজিত মানুষের পাশে কেউ থাকে না। পরাজয়ের গল্প বলতে হলেও বাস্তবতায় সফল হতে হয়। হেরে যাওয়ার গল্প লজ্জার গল্প। লজ্জা গোপন করতে হয়। প্রকাশ্যে হেরে যাওয়ার গল্প বলার দুঃসাহস অনেক মানুষের হয় না। সফলের জয়জয়কার সর্বত্র।
কিছুদিন আগে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, একজন পুরুষ মানুষ সরকারি চাকরি পাবার পরপরই তার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করেছে। যদিও এই পুরুষ মানুষটার স্ত্রী তার যাবতীয় ব্যয় বহন করতো। এই গল্পে নারী চরিত্র একজন হেরে যাওয়া মানুষ। কারো ভাষায় ব্যর্থ নারী; কারণ সে তার স্বামীকে নিয়ম রক্ষার সংসারে বেঁধে রাখতে পারেনি। ভালবাসার গল্প মানে শুধুই সুখ, শুকপাখিকে আপন করে পাওয়া। বাস্তবে অধিকাংশ পুরুষ কিংবা নারীর ভালবাসার গল্পের অন্তরালে নিঃস্ব হয়েছে অনেকের জীবন।
ভালবাসার রঙিন প্রচ্ছদে সিনেমার বাহারি পোস্টার আলো ছড়ায়, ভালবাসাহীন ভালবাসার মিথ্যে ফানুসের গল্পের তেতো আর্বজনা তাই গোপন করা হয়। কিছু গল্প ভালবাসা আর দায়িত্বের পরশ ছড়ায়। তবে আনাচে-কানাচেতে বিষাক্ত ভালবাসার গল্পের কালো রঙের প্রলেপে ছেড়ে যায় বহু মানুষের জীবন। ভালবাসার গল্প মানে সত্যিকারের বন্ধুত্বের বন্ধন; বন্ধুত্বের সম্পর্ক আর প্রাণজুড়ানো গল্পের আচ্ছাদন; যেখানে কেউ কাউকে ছেড়ে যায় না। প্রকৃতপক্ষে সত্যিকার বন্ধু অনেকের জীবনে অধরা রয়ে যায়।
লেখক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ