ঢাকা ০১:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

শিবচরে বাল্কহেডে স্পিডবোটের ধাক্কা, নিহত ২৬

  • আপডেট সময় : ০৩:১৮:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ মে ২০২১
  • ১৩২ বার পড়া হয়েছে


মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরের শিবচরে থেমে থাকা বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডে একটি স্পিডবোট ধাক্কা দিয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত ২৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কয়েকজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
গতকাল সোমবার ভোর ছয়টার দিকে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস ও নৌপুলিশ নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করে।
বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শক আশিকুর রহমান জানান, ভোরে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে ২২-২৪ জন যাত্রী নিয়ে একটি স্পিডবোট মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজারের দিকে আসছিল। ঘাটের কাছাকাছি আসার পর নোঙর করা বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডের পেছনে স্পিডবোটটি ধাক্কা দেয়। এতে স্পিডবোটটি উল্টে গেলে সেখানে থাকা যাত্রীরা ডুবে যায়। খবর পেয়ে উদ্ধার অভিযানে যায় শিবচর ফায়ার সার্ভিস ও নৌ পুলিশ। এখন পর্যন্ত ২৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। স্পিডবোট ডুবিতে নিহত ২৬ জনের মধ্যে ২১ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মরদেহগুলো কাঠালবাড়ী হাজী ইয়াসিন মোল্লাকান্দি দোতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাঙ্গণে রাখা আছে। সেখান থেকে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হচ্ছে।
নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেন-খুলনার তেরখাদা উপজেলার বারুখালির মনির মিয়া (৩৮), হেনা বেগম (৩৬), সুমি আক্তার (৫) ও রুমি আক্তার (৩), ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার চরডাঙা গ্রামের আরজু শেখ (৫০) ও ইয়ামিন সরদার (২), মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার সাগর ব্যাপারী (৪০), কুমিল্লার দাউদকান্দির কাউসার আহম্মেদ (৪০) ও রুহুল আমিন (৩৫), মাদারীপুর জেলার রাজৈরের তাহের মীর (৪২), কুমিল্লা তিতাসের জিয়াউর রহমান (৩৫), মাদারীপুরের শিবচরের হালান মোল্লা (৩৮) ও শাহাদাত হোসেন মোল্লা (২৯), বরিশালের তেদুরিয়ার আনোয়ার চৌকিদার (৫০), মাদারীপুর রায়েরকান্দি মাওলানা আব্দুল আহাদ (৩০), চাঁদপুর জেলার উত্তর মতলব মো. দেলোয়ার হোসেন (৪৫), নড়াইলের লোহাগড়া রাজাপুর জুবায়ের মোল্লা (৩৫), মুন্সিগঞ্জ সদরের সাগর শেখ (৪১), বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের সায়দুল হোসেন (২৭) ও রিয়াজ হোসেন (৩৩), ঢাকা পীরেরবাগ খেরশেদ আলম (৪৫), ঝালকাঠি নালসিটির এসএম নাসির উদ্দীন (৪৫), বরিশাল মেহেন্দিগঞ্জের মো. সাইফুল ইসলাম (৩৫), পিরোজপুরের চরখামার মো. বাপ্পি (২৮), পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার জনি অধিকারী (২৬)। এরমধ্যে ২১ জনের মরদেহ স্বজনদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। আহত হয়েছেন চারজন। মাদারীপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে তাদের ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনা তদন্তে দুপুরে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন। কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দেবেন।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশাদুজ্জামান, শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন, শিমুলিয়া বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. শাহাদাত হোসেন, মাদারীপুর শিবচর চরজানাজাত নৌ-পুলিশ ইনচার্জ শেখ মো. আব্দুর রাজ্জাক ও নারায়ণগঞ্জ পাগলা বাংলাদেশ কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার লে. আসমাদুল। এদিকে স্পিডবোট চালক শাহ আলমকে অসুস্থ অবস্থায় শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘ইতোমধ্যে দুর্ঘটনা এলাকা পরিদর্শন করেছি। যারা দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। মর্মান্তিক নৌ-দুর্ঘটনায় যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়া হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে সোমবার সকাল পৌনে ৭টায় ৩০ জন যাত্রী নিয়ে স্পিডবোটটি ছেড়ে আসে। এ সময় মাদারীপুর কাঁঠালবাড়ী বাংলাবাজার পুরোনো ঘাটে থেমে থাকা বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডে ধাক্কা দিয়ে ডুবে যায় স্পিডবোটটি। এসময় সব যাত্রী পানিতে পড়ে যান। পরে নদী থেকে একে একে ২৪টি লাশ উদ্ধার করা হয়। ছয়জনকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে আরও দুজনের মৃত্যু হয়। স্থানীয় ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এ উদ্ধার কাজ পরিচালনা করেন।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শিবচরে বাল্কহেডে স্পিডবোটের ধাক্কা, নিহত ২৬

আপডেট সময় : ০৩:১৮:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ মে ২০২১


মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরের শিবচরে থেমে থাকা বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডে একটি স্পিডবোট ধাক্কা দিয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত ২৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কয়েকজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
গতকাল সোমবার ভোর ছয়টার দিকে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস ও নৌপুলিশ নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করে।
বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শক আশিকুর রহমান জানান, ভোরে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে ২২-২৪ জন যাত্রী নিয়ে একটি স্পিডবোট মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজারের দিকে আসছিল। ঘাটের কাছাকাছি আসার পর নোঙর করা বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডের পেছনে স্পিডবোটটি ধাক্কা দেয়। এতে স্পিডবোটটি উল্টে গেলে সেখানে থাকা যাত্রীরা ডুবে যায়। খবর পেয়ে উদ্ধার অভিযানে যায় শিবচর ফায়ার সার্ভিস ও নৌ পুলিশ। এখন পর্যন্ত ২৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। স্পিডবোট ডুবিতে নিহত ২৬ জনের মধ্যে ২১ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মরদেহগুলো কাঠালবাড়ী হাজী ইয়াসিন মোল্লাকান্দি দোতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাঙ্গণে রাখা আছে। সেখান থেকে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হচ্ছে।
নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেন-খুলনার তেরখাদা উপজেলার বারুখালির মনির মিয়া (৩৮), হেনা বেগম (৩৬), সুমি আক্তার (৫) ও রুমি আক্তার (৩), ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার চরডাঙা গ্রামের আরজু শেখ (৫০) ও ইয়ামিন সরদার (২), মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার সাগর ব্যাপারী (৪০), কুমিল্লার দাউদকান্দির কাউসার আহম্মেদ (৪০) ও রুহুল আমিন (৩৫), মাদারীপুর জেলার রাজৈরের তাহের মীর (৪২), কুমিল্লা তিতাসের জিয়াউর রহমান (৩৫), মাদারীপুরের শিবচরের হালান মোল্লা (৩৮) ও শাহাদাত হোসেন মোল্লা (২৯), বরিশালের তেদুরিয়ার আনোয়ার চৌকিদার (৫০), মাদারীপুর রায়েরকান্দি মাওলানা আব্দুল আহাদ (৩০), চাঁদপুর জেলার উত্তর মতলব মো. দেলোয়ার হোসেন (৪৫), নড়াইলের লোহাগড়া রাজাপুর জুবায়ের মোল্লা (৩৫), মুন্সিগঞ্জ সদরের সাগর শেখ (৪১), বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের সায়দুল হোসেন (২৭) ও রিয়াজ হোসেন (৩৩), ঢাকা পীরেরবাগ খেরশেদ আলম (৪৫), ঝালকাঠি নালসিটির এসএম নাসির উদ্দীন (৪৫), বরিশাল মেহেন্দিগঞ্জের মো. সাইফুল ইসলাম (৩৫), পিরোজপুরের চরখামার মো. বাপ্পি (২৮), পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার জনি অধিকারী (২৬)। এরমধ্যে ২১ জনের মরদেহ স্বজনদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। আহত হয়েছেন চারজন। মাদারীপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে তাদের ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনা তদন্তে দুপুরে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন। কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দেবেন।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশাদুজ্জামান, শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন, শিমুলিয়া বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. শাহাদাত হোসেন, মাদারীপুর শিবচর চরজানাজাত নৌ-পুলিশ ইনচার্জ শেখ মো. আব্দুর রাজ্জাক ও নারায়ণগঞ্জ পাগলা বাংলাদেশ কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার লে. আসমাদুল। এদিকে স্পিডবোট চালক শাহ আলমকে অসুস্থ অবস্থায় শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘ইতোমধ্যে দুর্ঘটনা এলাকা পরিদর্শন করেছি। যারা দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। মর্মান্তিক নৌ-দুর্ঘটনায় যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়া হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে সোমবার সকাল পৌনে ৭টায় ৩০ জন যাত্রী নিয়ে স্পিডবোটটি ছেড়ে আসে। এ সময় মাদারীপুর কাঁঠালবাড়ী বাংলাবাজার পুরোনো ঘাটে থেমে থাকা বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডে ধাক্কা দিয়ে ডুবে যায় স্পিডবোটটি। এসময় সব যাত্রী পানিতে পড়ে যান। পরে নদী থেকে একে একে ২৪টি লাশ উদ্ধার করা হয়। ছয়জনকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে আরও দুজনের মৃত্যু হয়। স্থানীয় ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এ উদ্ধার কাজ পরিচালনা করেন।