ঢাকা ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানপ্রধান নিয়োগের বিবেচ্য বিষয় যা হওয়া উচিত

  • আপডেট সময় : ০৩:৪৫:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ১৪ বার পড়া হয়েছে

মো. রহমত উল্লাহ : সম্প্রতি জানা যাচ্ছে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও কর্মচারীদের নিয়োগের জন্য বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দায়িত্ব পাচ্ছে এনটিআরসিএ। এটি আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। কেননা বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার প্রধান ও কর্মচারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রায়শই অনিয়মের অভিযোগ উঠে থাকে। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে এ অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। তাই আজকের আলোচনাটি এক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ রাখছি।

যে কোনো কারণে শিক্ষক অযোগ্য হলে দীর্ঘমেয়াদি অপূরণীয় ক্ষতি হয় দেশ ও জাতির। একজন অযোগ্য শিক্ষক তার শিক্ষকতা জীবনে তৈরি করেন অগণিত অযোগ্য নাগরিক। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান অযোগ্য হলে, অসৎ হলে জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পায় সেই ক্ষতির পরিমাণ। কর্মরত শিক্ষকগণ ও পরিচালনা কমিটির সদস্যগণ সুযোগ্য হলে, ভালো হলে যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে ঐ প্রতিষ্ঠানের সফলতা। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে সুযোগ্য প্রতিষ্ঠান প্রধানই প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়নে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেন স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি বিভিন্ন পরিকল্পনা। শিক্ষার্থীদের জন্য নিশ্চিত করেন শিক্ষার সার্বিক সুন্দর পরিবেশ। বিভিন্ন মুখি সহশিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের করে তোলেন মননশীল। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতিনিয়ত প্রদান করেন উদ্দীপনা, বৃদ্ধি করেন কর্ম উদ্যম, নিশ্চিত করেন সফলতা।

শিক্ষার্থীদের প্রদান করেন নৈতিক, আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষা। গড়ে তোলেন ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে শুভ সম্পর্ক। সুশিক্ষার পাশাপাশি নিশ্চিত করেন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন। এছাড়াও একজন ভাল প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রতিনিয়ত করে থাকেন আরও অনেক অনেক শুভ কাজ। এককথায় জুতা সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ পর্যন্ত করতে হয় একজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে। তাই তার থাকতে হয় নানামুখী যোগ্যতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা; যা তালিকা করে শেষ করা অসম্ভব। অর্থাৎ অত্যন্ত সমৃদ্ধ থাকতে হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ। তাইতো বলা হয়ে থাকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান যেমন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তেমন। এ কারণেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান, ধরন, অবস্থা ও অবস্থান অনুসারে যথাযোগ্য প্রধান বাছাই করা অত্যন্ত দায়িত্বশীল কঠিন কাজ। যারা বাছাই করবেন তাদেরও থাকতে হবে ততোধিক উন্নত জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ, সততা, নিরপেক্ষতা ও দূরদর্শিতা।

কেবল একাডেমিক রেজাল্ট ও অভিজ্ঞতা দেখে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে কাউকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানপ্রধান করার যোগ্যতা পরিমাপ করা প্রায় অসম্ভব। শুধু এসব দিক বিবেচনা করে কাউকে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে নির্বাচন করা কতা যুক্তিযুক্ত, তাও ভেবে দেখার বিষয়।
যার একাডেমিক রেজাল্ট ভালো, যিনি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় বেশি নম্বর পান; তিনি জ্ঞানের মূল্যায়নে অবশ্যই এগিয়ে থাকবেন- এতে সন্দেহ নেই। তবে মনে রাখতে হবে, জ্ঞান হচ্ছে কারো যোগ্যতা মূল্যায়নের একটি মাত্র মাপকাঠি। তাই প্রচলিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে কাউকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে নির্বাচন করা উচিত নয়। কেননা, অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রার্থীর সংখ্যা কমানোর উদ্দেশ্যে অধিক নম্বরের অপ্রাসঙ্গিক ও অতিজাটিল প্রশ্নে নেওয়া হয় এসব লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা।

আসলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়ার যোগ্যতার মাপকাঠি আরো অনেক বিস্তৃত। তাই প্রার্থীর জ্ঞানের পাশাপাশি দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ মূল্যায়ন প্রয়োজন। এটি অভিজ্ঞতা ভিত্তিক একটি জটিল প্রশাসনিক পদ। এই পদে প্রশাসন থেকে ব্যবস্থাপনাই বেশি। এইরূপ নির্বাহী পদে অধিক পাকা/পরিপক্ব লোক নিয়োগের জন্য বাছাই প্রক্রিয়ায় হাতে লিখিত পরীক্ষার গুরুত্ব অনভিজ্ঞ এন্ট্রি পোস্টের তুলনায় অনেক কম। ব্যাংক-বীমাসহ দেশি-বিদেশি অধিকাংশ আর্থিক/ অনার্থিক প্রতিষ্ঠানেই নির্বাহী/ উচ্চপদে নিয়োগের জন্য প্রার্থীর জীবনবৃত্তান্ত বিবেচনা করে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়ে থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের কলমের জোরের পাশাপাশি পারিপার্শ্বিক জ্ঞান, মনোবৈজ্ঞানিক জ্ঞান, বাস্তব অভিজ্ঞতা, তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, অন্যকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা, উৎসাহ-উদ্দীপনা জাগানোর ক্ষমতা, মানবীয় গুণাবলি, ন্যায় পরায়ণতা ও সৎ সাহস থাকা অত্যাবশ্যক।

প্রতিষ্ঠানের প্রধান বিখ্যাত ও সুযোগ্য হলে তাকে নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক গর্বিত হয়। তার কারণে প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। শিক্ষার্থীরা বিখ্যাত ও সুযোগ্য হবার স্বপ্ন দেখে। কর্মে, কথায়, ধর্মে, জ্ঞানে তিনি হবেন সকল মানুষের শ্রদ্ধার পাত্র। শিক্ষার্থীদের জন্য হবেন সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আপন মানুষ। তাই কাউকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান করার আগে শিক্ষাক্ষেত্রে তার অবদান, মন-মানসিকতা, আচার-আচরণ, নৈতিক চরিত্র, জাতীয়তাবোধ, দেশপ্রেম, ইত্যাদিসহ দীর্ঘ অতীত জীবনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া খুব জরুরি। ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রদত্ত নেতৃত্ব ও অর্জিত কৃতিত্বসহ ভালোভাবে মূল্যায়ন করা উচিত তার পূর্ণ জীবনবৃত্তান্ত। নেওয়া উচিত প্রার্থীর দীর্ঘ সাক্ষাৎকার (দমবন্ধ মৌখিক পরীক্ষা নয়)। উন্নত বিশ্বে অন-লাইনেও হয়ে থাকে সেই সাক্ষাৎকার। গুগল বা সোশ্যাল মিডিয়া থেকেও নেওয়া হয় প্রার্থী সম্পর্কিত তথ্যাদি।
আমাদের দেশে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নিয়োগে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার একটা প্রচলন বিদ্যমান। অথচ এই লিখিত এবং/অথবা মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার লিখিত কোনো বিধান বা বাধ্যবাধকতা নেই। তদুপরি নেওয়া হলে কোন কোন বিষয়ক প্রশ্নে শতকরা কত নম্বরের লিখিত এবং কত নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নিতে হবে তাও নির্ধারিত নেই। তাই এক্ষেত্রে নিয়োগ নির্বাচনী কমিটির স্বেচ্ছাচারিতার অবাধ সুযোগ বিদ্যমান। আমি মনে করি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগের জন্য বাছাই প্রক্রিয়ায় একজন প্রার্থীর কোনো কোনো বিষয়/দিক কীভাবে কতটুকু মূল্যায়ন করতে হবে তার একটা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা জারি থাকা আবশ্যক। সেক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্ট্যাটাস অনুসারে যথাযোগ্য প্রধান নিয়োগের বাছাই প্রক্রিয়ায় প্রাসঙ্গিক লিখিত পরীক্ষা ও দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের পাশাপাশি অনুসরণ করা যেতে পারে আমাদের জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্বাচনের জন্য প্রবর্তিত কিছু কৌশল বা নীতিমালা। এর আলোকে মূল্যায়ন করা যেতে পারে একজন প্রার্থীর-

 

শিক্ষাগত যোগ্যতা; শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা; জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ; পরিবেশ সচেতনতা, সৃজনশীলতা ও দূরদর্শিতা; ছাত্র-ছাত্রী ও সহকর্মীদের উপর প্রভাব বিস্তারের যোগ্যতা এবং অভিভাবক ও কর্তৃপক্ষের সাথে সহযোগিতার প্রবণতা; চারিত্রিক দৃঢ়তা, ব্যক্তিত্ব, সততা ও সুনাম; দায়িত্ব-কর্তব্য বোধ এবং শৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতা; মাল্টিমিডিয়া ক্লাসে আগ্রহ ও আইসিটি বিষয়ে দক্ষতা; সহশিক্ষা বিষয়াদিতে আগ্রহ এবং দক্ষতা, বিশেষ করে শুদ্ধ ভাষায় ও শুদ্ধ উচ্চারণে মোটিভেশনাল বক্তব্য প্রদানের দক্ষতা; পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও পেশাগত/গবেষণামূলক সৃজনশীল প্রকাশনা; গুণগত মানের শিক্ষায় উদ্ভাবনী/সৃজনশীল উদ্যোগ ও উত্তম চর্চার নিদর্শন; দেশপ্রেম ও জাতীয়তা বোধ। তাছাড়া জীবন দক্ষতা ভিত্তিক অন্যান্য শিক্ষায় সুশিক্ষিত।
উল্লিখিত বিষয়গুলোর মূল্যায়নে থাকা উচিত শতকরা ৪০ ভাগ নম্বর। যদিও এসকল বিষয় সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ কাজ। এক্ষেত্রে, যে প্রার্থী ছাত্র জীবনে ভাল ছাত্র ছিলেন, ক্লাসে ক্যাপ্টেনই ছিলেন, রোভার স্কাউট বা গার্স গাইড লিডার ছিলেন, বিএনসিসি লিডার ছিলেন, অসহায়দের সহায়তায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন আয়োজনে নেতা ছিলেন, ক্রীড়া সংগঠক ছিলেন, সাংবাদিকতা/লেখালেখিতে সক্রিয় ছিলেন, রচনা-বক্তৃতা-বিতর্কে বিজয়ী ছিলেন, জাতীয় দিবস উদযাপনে সক্রিয় ছিলেন, কল্যাণমুখী ক্লাব বা সংগঠনের উদ্যোক্তা/নেতা ছিলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আপন ছিলেন, স্টুডেন্ট কেবিনেট/কাউন্সিলে নির্বাচিত ছিলেন, শিক্ষকগণের খুব প্রিয় পাত্র ছিলেন, সর্বোপরি শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়ে ছিলেন এবং যিনি শিক্ষকতা জীবনে এসে শিক্ষার্থীদের প্রিয় শিক্ষক হয়েছেন, শিক্ষকদের প্রতিনিধি হয়েছেন, পরিচালনা কমিটির সদস্য হয়েছেন, অত্যন্ত সততার সাথে অডিট ও উন্নয়ন কমিটিতে কাজ করেছেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনে ও জাতীয় দিবস উদযাপনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন, বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্য রেখেছেন, প্রতিষ্ঠানের ক্লাস রুটিন ও বাজেট তৈরির করেছেন, পরীক্ষা পরিচালনা করেছেন, বোর্ড/

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষক হয়েছেন, প্রশাসনের বিভিন্ন কাজে স্বেচ্ছায় সহযোগিতা করেছেন, দাপ্তরিক কাজে বিভিন্ন অফিসে গিয়েছেন, অভিভাবকদের সাথে সুসম্পর্ক রেখেছেন, পাঠ্যবই/মননশীল বই বা শিক্ষা বিষয়ক লেখালেখি করছেন, চিন্তা-চেতনায় বিজ্ঞানমনস্ক ও জাতীয়তা বোধে সমৃদ্ধ হয়েছেন, সর্বোপরি শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন বা হবার যোগ্যতা অর্জন করেছেন; এমন প্রার্থী/প্রার্থীরা পেতে পারেন অন্যের তুলনায় অধিক নম্বর। অবশ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের ও সহ-প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এ সকল বিষয়ের পাশাপাশি তার বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানের (শুধু অভিজ্ঞতার সনদ দেখে নয়) কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত তথ্য সরাসরি সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করা আবশ্যক।
যতই কষ্টসাধ্য হোক যুক্তিযুক্ত মান নির্ধারণ করে উল্লিখিত বিষয়গুলোর আলোকে সঠিক জীবন-বৃত্তান্তের বাস্তবিক মূল্যায়নের মাধ্যমে নিরপেক্ষ ভাবে বাছাই করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগ করা হলে এবং তাকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হলে অবশ্যই অধিক ভালো হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, লাভবান হবে শিক্ষার্থী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হচ্ছেন জীবন্ত আইকন। তার দিকে চোখ পড়ে সবারই। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা তাকে পেতে চায় সূর্যের মতো আলোপ্রদ, বটবৃক্ষের মতো ছায়াপ্রদ, আকাশের মত অসীম, প্রকৃতির মতো যুক্তিবাদী, মুক্তি সেনার মতো প্রতিবাদী, অপরিসীম জ্ঞান ও দক্ষতার অধিকারী এক পূজনীয় ব্যক্তিত্ব রূপে। কেননা, তিনি হচ্ছেন সবার বড় স্যার।

সচেতন ও অবচেতনভাবে ওই বড় স্যারকেই অনুকরণ ও অনুসরণ করে অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। ধারণ করে বড় স্যারের ন্যায়নীতি, সতাদর্শ ও সদাচরণ। হয়ে উঠে এ+ মানুষ। তাই এসব দিক বিবেচনায় রেখে সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রয়োগের মাধ্যমে নিরপেক্ষভাবে বাছাই করে নিয়োগ করা উচিত অধিক যোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান।

লেখক: শিক্ষক ও শিক্ষা গবেষক

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানপ্রধান নিয়োগের বিবেচ্য বিষয় যা হওয়া উচিত

আপডেট সময় : ০৩:৪৫:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মো. রহমত উল্লাহ : সম্প্রতি জানা যাচ্ছে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও কর্মচারীদের নিয়োগের জন্য বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দায়িত্ব পাচ্ছে এনটিআরসিএ। এটি আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। কেননা বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার প্রধান ও কর্মচারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রায়শই অনিয়মের অভিযোগ উঠে থাকে। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে এ অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। তাই আজকের আলোচনাটি এক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ রাখছি।

যে কোনো কারণে শিক্ষক অযোগ্য হলে দীর্ঘমেয়াদি অপূরণীয় ক্ষতি হয় দেশ ও জাতির। একজন অযোগ্য শিক্ষক তার শিক্ষকতা জীবনে তৈরি করেন অগণিত অযোগ্য নাগরিক। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান অযোগ্য হলে, অসৎ হলে জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পায় সেই ক্ষতির পরিমাণ। কর্মরত শিক্ষকগণ ও পরিচালনা কমিটির সদস্যগণ সুযোগ্য হলে, ভালো হলে যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে ঐ প্রতিষ্ঠানের সফলতা। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে সুযোগ্য প্রতিষ্ঠান প্রধানই প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়নে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেন স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি বিভিন্ন পরিকল্পনা। শিক্ষার্থীদের জন্য নিশ্চিত করেন শিক্ষার সার্বিক সুন্দর পরিবেশ। বিভিন্ন মুখি সহশিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের করে তোলেন মননশীল। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতিনিয়ত প্রদান করেন উদ্দীপনা, বৃদ্ধি করেন কর্ম উদ্যম, নিশ্চিত করেন সফলতা।

শিক্ষার্থীদের প্রদান করেন নৈতিক, আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষা। গড়ে তোলেন ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে শুভ সম্পর্ক। সুশিক্ষার পাশাপাশি নিশ্চিত করেন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন। এছাড়াও একজন ভাল প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রতিনিয়ত করে থাকেন আরও অনেক অনেক শুভ কাজ। এককথায় জুতা সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ পর্যন্ত করতে হয় একজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে। তাই তার থাকতে হয় নানামুখী যোগ্যতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা; যা তালিকা করে শেষ করা অসম্ভব। অর্থাৎ অত্যন্ত সমৃদ্ধ থাকতে হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ। তাইতো বলা হয়ে থাকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান যেমন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তেমন। এ কারণেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান, ধরন, অবস্থা ও অবস্থান অনুসারে যথাযোগ্য প্রধান বাছাই করা অত্যন্ত দায়িত্বশীল কঠিন কাজ। যারা বাছাই করবেন তাদেরও থাকতে হবে ততোধিক উন্নত জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ, সততা, নিরপেক্ষতা ও দূরদর্শিতা।

কেবল একাডেমিক রেজাল্ট ও অভিজ্ঞতা দেখে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে কাউকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানপ্রধান করার যোগ্যতা পরিমাপ করা প্রায় অসম্ভব। শুধু এসব দিক বিবেচনা করে কাউকে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে নির্বাচন করা কতা যুক্তিযুক্ত, তাও ভেবে দেখার বিষয়।
যার একাডেমিক রেজাল্ট ভালো, যিনি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় বেশি নম্বর পান; তিনি জ্ঞানের মূল্যায়নে অবশ্যই এগিয়ে থাকবেন- এতে সন্দেহ নেই। তবে মনে রাখতে হবে, জ্ঞান হচ্ছে কারো যোগ্যতা মূল্যায়নের একটি মাত্র মাপকাঠি। তাই প্রচলিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে কাউকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে নির্বাচন করা উচিত নয়। কেননা, অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রার্থীর সংখ্যা কমানোর উদ্দেশ্যে অধিক নম্বরের অপ্রাসঙ্গিক ও অতিজাটিল প্রশ্নে নেওয়া হয় এসব লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা।

আসলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়ার যোগ্যতার মাপকাঠি আরো অনেক বিস্তৃত। তাই প্রার্থীর জ্ঞানের পাশাপাশি দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ মূল্যায়ন প্রয়োজন। এটি অভিজ্ঞতা ভিত্তিক একটি জটিল প্রশাসনিক পদ। এই পদে প্রশাসন থেকে ব্যবস্থাপনাই বেশি। এইরূপ নির্বাহী পদে অধিক পাকা/পরিপক্ব লোক নিয়োগের জন্য বাছাই প্রক্রিয়ায় হাতে লিখিত পরীক্ষার গুরুত্ব অনভিজ্ঞ এন্ট্রি পোস্টের তুলনায় অনেক কম। ব্যাংক-বীমাসহ দেশি-বিদেশি অধিকাংশ আর্থিক/ অনার্থিক প্রতিষ্ঠানেই নির্বাহী/ উচ্চপদে নিয়োগের জন্য প্রার্থীর জীবনবৃত্তান্ত বিবেচনা করে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়ে থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের কলমের জোরের পাশাপাশি পারিপার্শ্বিক জ্ঞান, মনোবৈজ্ঞানিক জ্ঞান, বাস্তব অভিজ্ঞতা, তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, অন্যকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা, উৎসাহ-উদ্দীপনা জাগানোর ক্ষমতা, মানবীয় গুণাবলি, ন্যায় পরায়ণতা ও সৎ সাহস থাকা অত্যাবশ্যক।

প্রতিষ্ঠানের প্রধান বিখ্যাত ও সুযোগ্য হলে তাকে নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক গর্বিত হয়। তার কারণে প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। শিক্ষার্থীরা বিখ্যাত ও সুযোগ্য হবার স্বপ্ন দেখে। কর্মে, কথায়, ধর্মে, জ্ঞানে তিনি হবেন সকল মানুষের শ্রদ্ধার পাত্র। শিক্ষার্থীদের জন্য হবেন সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আপন মানুষ। তাই কাউকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান করার আগে শিক্ষাক্ষেত্রে তার অবদান, মন-মানসিকতা, আচার-আচরণ, নৈতিক চরিত্র, জাতীয়তাবোধ, দেশপ্রেম, ইত্যাদিসহ দীর্ঘ অতীত জীবনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া খুব জরুরি। ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রদত্ত নেতৃত্ব ও অর্জিত কৃতিত্বসহ ভালোভাবে মূল্যায়ন করা উচিত তার পূর্ণ জীবনবৃত্তান্ত। নেওয়া উচিত প্রার্থীর দীর্ঘ সাক্ষাৎকার (দমবন্ধ মৌখিক পরীক্ষা নয়)। উন্নত বিশ্বে অন-লাইনেও হয়ে থাকে সেই সাক্ষাৎকার। গুগল বা সোশ্যাল মিডিয়া থেকেও নেওয়া হয় প্রার্থী সম্পর্কিত তথ্যাদি।
আমাদের দেশে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নিয়োগে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার একটা প্রচলন বিদ্যমান। অথচ এই লিখিত এবং/অথবা মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার লিখিত কোনো বিধান বা বাধ্যবাধকতা নেই। তদুপরি নেওয়া হলে কোন কোন বিষয়ক প্রশ্নে শতকরা কত নম্বরের লিখিত এবং কত নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নিতে হবে তাও নির্ধারিত নেই। তাই এক্ষেত্রে নিয়োগ নির্বাচনী কমিটির স্বেচ্ছাচারিতার অবাধ সুযোগ বিদ্যমান। আমি মনে করি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগের জন্য বাছাই প্রক্রিয়ায় একজন প্রার্থীর কোনো কোনো বিষয়/দিক কীভাবে কতটুকু মূল্যায়ন করতে হবে তার একটা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা জারি থাকা আবশ্যক। সেক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্ট্যাটাস অনুসারে যথাযোগ্য প্রধান নিয়োগের বাছাই প্রক্রিয়ায় প্রাসঙ্গিক লিখিত পরীক্ষা ও দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের পাশাপাশি অনুসরণ করা যেতে পারে আমাদের জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্বাচনের জন্য প্রবর্তিত কিছু কৌশল বা নীতিমালা। এর আলোকে মূল্যায়ন করা যেতে পারে একজন প্রার্থীর-

 

শিক্ষাগত যোগ্যতা; শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা; জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ; পরিবেশ সচেতনতা, সৃজনশীলতা ও দূরদর্শিতা; ছাত্র-ছাত্রী ও সহকর্মীদের উপর প্রভাব বিস্তারের যোগ্যতা এবং অভিভাবক ও কর্তৃপক্ষের সাথে সহযোগিতার প্রবণতা; চারিত্রিক দৃঢ়তা, ব্যক্তিত্ব, সততা ও সুনাম; দায়িত্ব-কর্তব্য বোধ এবং শৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতা; মাল্টিমিডিয়া ক্লাসে আগ্রহ ও আইসিটি বিষয়ে দক্ষতা; সহশিক্ষা বিষয়াদিতে আগ্রহ এবং দক্ষতা, বিশেষ করে শুদ্ধ ভাষায় ও শুদ্ধ উচ্চারণে মোটিভেশনাল বক্তব্য প্রদানের দক্ষতা; পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও পেশাগত/গবেষণামূলক সৃজনশীল প্রকাশনা; গুণগত মানের শিক্ষায় উদ্ভাবনী/সৃজনশীল উদ্যোগ ও উত্তম চর্চার নিদর্শন; দেশপ্রেম ও জাতীয়তা বোধ। তাছাড়া জীবন দক্ষতা ভিত্তিক অন্যান্য শিক্ষায় সুশিক্ষিত।
উল্লিখিত বিষয়গুলোর মূল্যায়নে থাকা উচিত শতকরা ৪০ ভাগ নম্বর। যদিও এসকল বিষয় সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ কাজ। এক্ষেত্রে, যে প্রার্থী ছাত্র জীবনে ভাল ছাত্র ছিলেন, ক্লাসে ক্যাপ্টেনই ছিলেন, রোভার স্কাউট বা গার্স গাইড লিডার ছিলেন, বিএনসিসি লিডার ছিলেন, অসহায়দের সহায়তায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন আয়োজনে নেতা ছিলেন, ক্রীড়া সংগঠক ছিলেন, সাংবাদিকতা/লেখালেখিতে সক্রিয় ছিলেন, রচনা-বক্তৃতা-বিতর্কে বিজয়ী ছিলেন, জাতীয় দিবস উদযাপনে সক্রিয় ছিলেন, কল্যাণমুখী ক্লাব বা সংগঠনের উদ্যোক্তা/নেতা ছিলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আপন ছিলেন, স্টুডেন্ট কেবিনেট/কাউন্সিলে নির্বাচিত ছিলেন, শিক্ষকগণের খুব প্রিয় পাত্র ছিলেন, সর্বোপরি শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়ে ছিলেন এবং যিনি শিক্ষকতা জীবনে এসে শিক্ষার্থীদের প্রিয় শিক্ষক হয়েছেন, শিক্ষকদের প্রতিনিধি হয়েছেন, পরিচালনা কমিটির সদস্য হয়েছেন, অত্যন্ত সততার সাথে অডিট ও উন্নয়ন কমিটিতে কাজ করেছেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনে ও জাতীয় দিবস উদযাপনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন, বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্য রেখেছেন, প্রতিষ্ঠানের ক্লাস রুটিন ও বাজেট তৈরির করেছেন, পরীক্ষা পরিচালনা করেছেন, বোর্ড/

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষক হয়েছেন, প্রশাসনের বিভিন্ন কাজে স্বেচ্ছায় সহযোগিতা করেছেন, দাপ্তরিক কাজে বিভিন্ন অফিসে গিয়েছেন, অভিভাবকদের সাথে সুসম্পর্ক রেখেছেন, পাঠ্যবই/মননশীল বই বা শিক্ষা বিষয়ক লেখালেখি করছেন, চিন্তা-চেতনায় বিজ্ঞানমনস্ক ও জাতীয়তা বোধে সমৃদ্ধ হয়েছেন, সর্বোপরি শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন বা হবার যোগ্যতা অর্জন করেছেন; এমন প্রার্থী/প্রার্থীরা পেতে পারেন অন্যের তুলনায় অধিক নম্বর। অবশ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের ও সহ-প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এ সকল বিষয়ের পাশাপাশি তার বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানের (শুধু অভিজ্ঞতার সনদ দেখে নয়) কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত তথ্য সরাসরি সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করা আবশ্যক।
যতই কষ্টসাধ্য হোক যুক্তিযুক্ত মান নির্ধারণ করে উল্লিখিত বিষয়গুলোর আলোকে সঠিক জীবন-বৃত্তান্তের বাস্তবিক মূল্যায়নের মাধ্যমে নিরপেক্ষ ভাবে বাছাই করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগ করা হলে এবং তাকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হলে অবশ্যই অধিক ভালো হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, লাভবান হবে শিক্ষার্থী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হচ্ছেন জীবন্ত আইকন। তার দিকে চোখ পড়ে সবারই। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা তাকে পেতে চায় সূর্যের মতো আলোপ্রদ, বটবৃক্ষের মতো ছায়াপ্রদ, আকাশের মত অসীম, প্রকৃতির মতো যুক্তিবাদী, মুক্তি সেনার মতো প্রতিবাদী, অপরিসীম জ্ঞান ও দক্ষতার অধিকারী এক পূজনীয় ব্যক্তিত্ব রূপে। কেননা, তিনি হচ্ছেন সবার বড় স্যার।

সচেতন ও অবচেতনভাবে ওই বড় স্যারকেই অনুকরণ ও অনুসরণ করে অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। ধারণ করে বড় স্যারের ন্যায়নীতি, সতাদর্শ ও সদাচরণ। হয়ে উঠে এ+ মানুষ। তাই এসব দিক বিবেচনায় রেখে সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রয়োগের মাধ্যমে নিরপেক্ষভাবে বাছাই করে নিয়োগ করা উচিত অধিক যোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান।

লেখক: শিক্ষক ও শিক্ষা গবেষক