প্রত্যাশা ডেস্ক: সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার বৈষম্য নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ন্যাশনাল বিহেভিয়ার সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে স্কুল থেকে বহিষ্কার এবং অনুপস্থিতির হারে গুরুতর পার্থক্য দেখা গেছে। যেখানে শ্বেতাঙ্গ নিম্নবিত্ত শিক্ষার্থীদের চ্যালেঞ্জগুলো সামনে এসেছে। সেই সঙ্গে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি, ব্রিটিশ-দক্ষিণ এশীয় এবং ব্রিটিশ মুসলিম শিক্ষার্থীদের চোখে পড়ার মতো সাফল্য শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে দরিদ্র পরিবারের ১০ জন শ্বেতাঙ্গ শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে, যা তাদের ধনী সহপাঠীদের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি। এই গোষ্ঠীটির মধ্যে স্কুল থেকে অনুপস্থিতির হারও সর্বোচ্চ।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রিজেট ফিলিপসন অভিভাবক, স্কুল এবং পরিবারগুলোকে তাদের সন্তানদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার জন্য আরো বেশি প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন যে, এই ব্যর্থতা শুধু তরুণদের ওপর নয়, বরং সামগ্রিকভাবে সমাজের ওপর গভীর প্রভাব পড়বে। তিনি আরো বলেন, যারা ধারাবাহিকভাবে স্কুল থেকে অনুপস্থিত থাকে, তারা ২৮ বছর বয়সে বার্ষিক গড়ে ১০ হাজার পাউন্ড কম উপার্জন করে। তবে যুক্তরাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার চিত্র সর্বত্র এক নয়। যেখানে শ্বেতাঙ্গ নিম্নবিত্ত সম্প্রদায় সংগ্রাম করছে, সেখানে অন্যান্য গোষ্ঠী, বিশেষ করে দক্ষিণ এশীয় ঐতিহ্যবাহী পরিবারগুলো অসাধারণ সাফল্য প্রদর্শন করছে। বৃহত্তর দক্ষিণ এশীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সম্প্রদায় দ্রুত শিক্ষাগত উন্নতির এক উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ৪৭ শতাংশ ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জিসিএসইতে ইংরেজি এবং গণিত উভয় বিষয়েই অন্তত একটি গ্রেড ৫ অর্জন করেছে, যা জাতীয় গড় ৪২ শতাংশের চেয়ে বেশি। এটি শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের গড় ৪০ শতাংশের চেয়েও এগিয়ে। শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের তুলনায় ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির হার বেশি; যা ভবিষ্যতের সাফল্য এবং সামাজিক গতিশীলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক।
জয়েন্ট কাউন্সিল ফর কোয়ালিফিকেশনসের তথ্য অনুযায়ী, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা তাদের শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ সহপাঠীদের চেয়ে এ-লেভেলে এ প্লাস এবং এ গ্রেড বেশি অর্জন করেছে। এই সাফল্যের কারণ দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ মুসলিম পরিবারগুলো শিক্ষাকে উন্নত জীবনের পথ হিসেবে অগ্রাধিকার দেয়। তারা শিক্ষাকে আর্থ-সামাজিক বাধা অতিক্রম করার এবং তাদের পরিবারের সম্মান রক্ষার উপায় হিসেবে দেখে।
ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের অর্জন একক কোনো ঘটনা নয়। বৃহত্তর ব্রিটিশ দক্ষিণ এশীয় জনগোষ্ঠী, যার মধ্যে ভারতীয় এবং পাকিস্তানি বংশোদ্ভূতরাও অন্তর্ভুক্ত, তারাও শিক্ষাক্ষেত্রে শক্তিশালী ফলাফল দেখাচ্ছে। ২০২২-২৩ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬২ শতাংশ ইংরেজি এবং গণিত জিসিএসইতে গ্রেড ৫ বা তার বেশি অর্জন করেছে। এছাড়াও যেকোনো জাতিগোষ্ঠীর তুলনায় তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির হারও ধারাবাহিকভাবে সর্বোচ্চ।
শিক্ষামন্ত্রী ফিলিপসনের উপস্থাপিত তথ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে তুলে ধরে, শিক্ষাগত অর্জনের এই ব্যবধানটি আর্থ-সামাজিক অবস্থার সাথে গভীরভাবে জড়িত। বিশেষ করে শ্বেতাঙ্গ নিম্নবিত্তদের মধ্যে শিক্ষার হার কম। তবে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি এবং অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায় প্রমাণ করে যে, অর্থনৈতিক অসুবিধা একটি বড় বাধা হলেও এটি অপ্রতিরোধ্য নয়। তাদের সাফল্য অভিভাবকের সক্রিয় অংশগ্রহণ, সামাজিক সহযোগিতা এবং শিক্ষার রূপান্তরমূলক শক্তিতে সম্মিলিত বিশ্বাসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে নির্দেশ করে। ব্রিটিশ বাংলাদেশি শিক্ষাবিদ ও লেখক ড. রেনু লুৎফা বলেন, ব্রিটেনে বাংলাদেশি ও দক্ষিণ এশীয় নতুন প্রজন্ম তাদের ঈর্ষণীয় মেধার দ্যুতি ছড়াচ্ছেন শিক্ষাক্ষেত্রে। অভিভাবকদের সচেতনতার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিজেদের মধ্যেও এগিয়ে যাবার আকাঙ্ক্ষা তাদের আরো সফল করে তুলছে।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ