ক্যাম্পাস ক্যারিয়ার ডেস্ক : আজ ১৬ জানুয়ারি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। পড়ুন ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পথচলা ও অর্জনের গল্প।
অধ্যাপক এম আলিমউল্যা মিয়ানের লক্ষ্যটা পরিষ্কার ছিল। এমন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তিনি গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম থেকে অন্তত একজন স্নাতক গড়ে তুলবে। প্রয়াত এই শিক্ষাবিদের স্বপ্ন ধারণ করেই ঢাকার উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি)। ১৯৯১ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। ৩১ বছরের পথচলায় আইইউবিএটি লক্ষ্য অর্জনে অনেকটাই এগিয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসছেন। ২০ বিঘা জায়গাজুড়ে সবুজ ক্যাম্পাস আপন করে নিয়েছে সবাইকে।
ক্যাম্পাস ঘুরে ঃ ১১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পা রেখে দেখা গেল, ৩১ বছর পূর্তি উপলক্ষে নানা রঙে সাজানো হয়েছে ক্যাম্পাস। কয়েক হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি অনুষদে ১১টি প্রোগ্রামে পড়ছেন। বিতর্ক, বিএনসিসি, বিজনেস সোসাইটি, রোবোটিকস ক্লাব, রোটার্যাক্ট, প্রোগ্রামিং ক্লাব, বিভাগীয় সোসাইটিসহ নানা রকম সহশিক্ষা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা গড়ে উঠছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং ফোরাম অব আইইউবিএটির সভাপতি ও ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান হোসাইন বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে সহশিক্ষা কার্যক্রমকে খুবই উৎসাহ দেওয়া হয়।’
এক প্রাঙ্গণে নানা দেশের পতাকা ঃ আইইউবিএটিতেই দেখা হলো ফিলিস্তিনের শিক্ষার্থী বারাহ কাশিফের সঙ্গে। এক বছর ধরে তিনি পড়ছেন নার্সিং বিষয়ে। বললেন, ‘আমি এই ক্যাম্পাসে অনেক বাংলাদেশি বন্ধু পেয়েছি। বন্ধুরা আমাকে দারুণভাবে এখানকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করছেন।’ এশিয়া ও আফ্রিকার ১২টি দেশের শতাধিক শিক্ষার্থীর পদচারণ আছে এই ক্যাম্পাসে।
গবেষণা যেখানে গুরুত্বপূর্ণ ঃ আইইউবিএটি সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে গবেষণা ও হাতে–কলমের শিক্ষায়। স্নাতক শেষে শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে মিয়ান রিসার্চ ইনস্টিটিউট। কৃষি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এবং ব্যবসায় প্রশাসনসহ অন্যান্য বিভাগের শিক্ষক বিভিন্ন গবেষণায় নিয়োজিত আছেন। এসব গবেষণার ফলাফল নিয়ে রিসার্চ সেমিনারের আয়োজন করা হয় নিয়মিত। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা সম্পর্কে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সেলিনা নার্গিস বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থীকে আমরা চেষ্টা করি এমনভাবে গড়ে তুলতে, যেন সে তার নিজের ও চারপাশের স্বপ্ন পূরণে সফল হয়ে ওঠে। ৩১ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়কে শুধু আমরা কলেবরে বড় করে তুলতে চাইনি; বরং আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন তার পারিপার্শ্বিক, সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অবদান রাখতে পারে, তার সর্বাত্মক চেষ্টা করি আমরা।’
শিক্ষার্থীদের জন্য নানা সুযোগ ঃ আইইউবিএটি কর্তৃপক্ষ জানান, এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য মেধাবৃত্তিসহ নানা আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা আছে। প্রতি বছর প্রায় দুই কোটি টাকা সমমূল্যের মেধাবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া নারী শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় উৎসাহ দিতে অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ বৃত্তি দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের জন্য আইইউবিএটি নিয়মিতই আয়োজন করে ক্যারিয়ারবিষয়ক কর্মশালার। গত ডিসেম্বর মাসে ৮৫টি স্থানীয় ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে আইইউবিএটি প্রাঙ্গণেই আয়োজন করা হয়েছিল ন্যাশনাল ক্যারিয়ার ফেস্টিভ্যাল। আইইউবিএটির শিক্ষার্থীরা ছাড়াও দেশের নানা প্রান্তের প্রায় পাঁচ হাজার ছাত্রছাত্রী হাজির হন এই আয়োজনে। এ ছাড়া বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরিতে কাজ করে আইইউবিএটির অ্যালামনাই ও প্লেসমেন্ট অফিস।
৩১ বছরের অর্জন ঃ ৩১ বছরের পথচলায় আইইউবিএটির আছে বেশ কিছু অর্জন। প্রকৌশল বিভাগের কোর্সগুলো দ্য ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। এ ছাড়া ২০২১ সালের ইউআই গ্রিন মেট্রিক ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশে আইইউবিএটির অবস্থান দ্বিতীয়, আর বিশ্বের ৭৯টি দেশের ৯৫৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অবস্থান ২৯৪তম। ২০২১ সালে উরি (ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিস উইথ রিয়েল ইমপ্যাক্ট) র্যাঙ্কিংয়ে নৈতিক মানের বিবেচনায় বিশ্বের শীর্ষ ৫০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় স্থান পেয়েছে আইইউবিএটি।
এরই মধ্যে মিয়ান রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে বিশ্বের বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু গবেষণাপত্র। আন্তর্জাতিক পরিসরের গবেষণায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যুক্ত করতে ১৬তম সাউথ এশিয়ান ম্যানেজমেন্ট ফোরাম (এসএএমএফ)–এর আয়োজন করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। অনলাইন-অফলাইন মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ৯৬টি সারসংক্ষেপ ও ৫১টি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। অংশ নেন শতাধিক শিক্ষাবিদ ও গবেষক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আবদুর রব বলেন, ‘দেশের প্রতিটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়ার যে প্রত্যয় নিয়ে আইইউবিএটি যাত্রা শুরু করেছিল, সেই প্রত্যয় অনেকটাই সফল হয়েছে। শুধু দেশের ভেতরেই নয়; বরং আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজেদের সেরাটা দিয়ে মেলে ধরতে চাই আমরা।’ উপাচার্য জানান, ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শীর্ষে জায়গা করে নেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন তাঁরা। তিনি আরও বলেন, ‘আইইউবিএটির প্রতিষ্ঠাতা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কৃষ্ণচূড়া ফুলের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। কৃষ্ণচূড়া ফুলের গাছে যেমন ফুল ফুটলে তা দূর থেকে দেখা যায়; তেমনি একটি গ্রামে একজন শিক্ষিত পেশাজীবী স্নাতক থাকলে তাঁর মাধ্যমে গোটা গ্রাম তথা সারা দেশ উপকৃত হয়।’ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আগামীর প্রজন্মকে প্রস্তুত করতে আইইউবিএটির এই প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।
শিক্ষা ও গবেষণায় আলো ছড়ানোর ৩১ বছরে আইইউবিএটি
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ