ঢাকা ০২:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ফেনীর লালপোল বেদে পল্লির শিশুরা

  • আপডেট সময় : ১১:৫৭:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ৯৭ বার পড়া হয়েছে

ফেনী প্রতিনিধি : দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় শিক্ষার আলো পৌঁছেনি বেদে পল্লিতে। ফলে এখানে বেড়ে ওঠা শিশুরা অনেকেই অক্ষরজ্ঞান অর্জন করতে পারেনি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ফেনীর লালপোল বেদে পল্লির শিশু-কিশোররা শিক্ষাবঞ্চিত। দেশের ক্রমবর্ধমান শিক্ষার ধারার সঙ্গে এ পল্লির শিশু-কিশোরকে ফেরাতে কেউ উদ্যোগী না হওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পল্লির সর্দার ও অভিভাবকরা। যারা এখন বড় হচ্ছে তাদেরও একই অবস্থা। এ পল্লির শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় আনার জন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগ কামনা করেছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
জানা যায়, ১৯৮১ সাল থেকে ফেনীর লালপোল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সরকারি খাসজমিতে বসবাস শুরু করে বেদে পল্লির কয়েকটি পরিবার। তাদের সঙ্গে আরো কিছু পরিবার যোগ হওয়ায় একপর্যায়ে এটি বেদে পল্লি হিসেবে খ্যাতি পায়। কখনো সাপের খেলা, তাবিজ বিক্রি, ঝাড়-ফুঁক দেয়া অথবা মাথায় ঝুড়ি নিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রির টাকায় চলে তাদের পরিবার। এখানে গড়ে ওঠেনি নিরাপদ স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা। জানা যায়, দীর্ঘদিন শিক্ষার আলো ও নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত এ পল্লির শিশুরা বছরজুড়ে বিভিন্ন শ্রমে জড়িয়ে থাকে। এদের মাঝে বেশির ভাগ শিশু-কিশোর হোটেল-রেন্তোরাঁ শ্রমিক। বাকিরা গাড়ি পরিষ্কার, ইটভাটায় কাজ নেয়া ও গৃহকর্মীর কাজ করে। নারীরা ঝাড়-ফুঁক দেয়া, বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে সংসার চালান। আবার কেউ কেউ সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে অবৈধ কার্যক্রমেও জড়িয়ে পড়ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা ও নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত এ পল্লির বাসিন্দাদের নেই স্থায়ী কোনো পেশা। এ সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ লোক বিভিন্ন রকমের ফেরি করে জীবিকা নির্বাহ করে। এখানকার শিশুর জন্য নেই পড়ালেখা শেখার কোনো স্কুল। শিক্ষার আলো বঞ্চিত রয়েছেন বর্তমানে এ পল্লিতে বসবাসরত ৭০টি পরিবারের শিশু। এসব পরিবারের ৬ শতাধিক সদস্যের মধ্যে ২৩০ জন জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছেন। তারা স্থানীয় কালীদহ ইউনিয়ন পরিষদের ভোটার হয়েছেন। নির্বাচনের সময় নাগরিক সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও জনপ্রতিনিধিরা এ পল্লির অবহেলিত বাসিন্দাদের খোঁজ রাখেন না। লালপোল বেদে পল্লির সরদার আমীর হোসেন বলেন, দেশের অন্যান্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বেদে পল্লীর জীবনধারা পরিবর্তনে এখনো কোনো উদ্যোগ আমরা দেখছি না।
তিনি বলেন, আমরাও দেশের নাগরিক। শিক্ষা-স্বাস্থ্য, অন্ন-বস্ত্র ও বাসস্থানের অধিকার আমাদেরও আছে। কিন্তু আমাদের এ অধিকারে রাষ্ট্রের উদাসীন ভূমিকা ভাবিয়ে তুলছে। আমাদের এ পল্লিতে পড়াশোনা জানা মানুষ নেই। আমাদের সন্তানদেরও লেখাপড়া করাতে পারছি না। বেশ কয়েক বছর আগে এখানে একটি অস্থায়ী স্কুল চালু হলেও একপর্যায়ে সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরে আমাদের ছেলেমেয়েদের পাশের একটি কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে স্কুলের অন্য শিক্ষার্থীরা আমাদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ক্লাসে বসতে চায় না। আমরা গরিব বলে আমাদের সন্তানদের সঙ্গে এলাকার অন্য ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতে চায় না। একপর্যায়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাদের ডেকে নিয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলে না পাঠাতে বলে দিয়েছেন। স্কুল না থাকায় ছেলেমেয়েরা শিক্ষাবিহীন বেড়ে উঠছে। আমাদের অন্তত নাম লেখাটা হলেও শিখিয়ে দেন। আমরা নিরক্ষর থাকতে চাই না; দেশের বোঝা হয়ে বাঁচতে চাই না। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ফেনী জেলার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, শিক্ষা নাগরিকের মৌলিক অধিকার। লালপোল বেদে পল্লির মানুষের জন্য শিক্ষা নিয়ে রাষ্ট্রীয় কোনো পদক্ষেপ না নেয়া দুঃখজনক। ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান বলেন, লালপোল বেদে পল্লির বাসিন্দাদের নাগরিক সুবিধার আওতায় আনতে প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি করে ঘর নির্মাণের জন্য জমি খোঁজা হচ্ছে। শিগগিরই তাদের জমিসহ বাসস্থান দেয়া হবে। তাদের শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও বাসস্থানসহ যাবতীয় নাগরিক সুবিধার আওতায় নিয়ে আসার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রক্রিয়াধীন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান জেড আই খান পান্না

শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ফেনীর লালপোল বেদে পল্লির শিশুরা

আপডেট সময় : ১১:৫৭:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফেনী প্রতিনিধি : দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় শিক্ষার আলো পৌঁছেনি বেদে পল্লিতে। ফলে এখানে বেড়ে ওঠা শিশুরা অনেকেই অক্ষরজ্ঞান অর্জন করতে পারেনি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ফেনীর লালপোল বেদে পল্লির শিশু-কিশোররা শিক্ষাবঞ্চিত। দেশের ক্রমবর্ধমান শিক্ষার ধারার সঙ্গে এ পল্লির শিশু-কিশোরকে ফেরাতে কেউ উদ্যোগী না হওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পল্লির সর্দার ও অভিভাবকরা। যারা এখন বড় হচ্ছে তাদেরও একই অবস্থা। এ পল্লির শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় আনার জন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগ কামনা করেছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
জানা যায়, ১৯৮১ সাল থেকে ফেনীর লালপোল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সরকারি খাসজমিতে বসবাস শুরু করে বেদে পল্লির কয়েকটি পরিবার। তাদের সঙ্গে আরো কিছু পরিবার যোগ হওয়ায় একপর্যায়ে এটি বেদে পল্লি হিসেবে খ্যাতি পায়। কখনো সাপের খেলা, তাবিজ বিক্রি, ঝাড়-ফুঁক দেয়া অথবা মাথায় ঝুড়ি নিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রির টাকায় চলে তাদের পরিবার। এখানে গড়ে ওঠেনি নিরাপদ স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা। জানা যায়, দীর্ঘদিন শিক্ষার আলো ও নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত এ পল্লির শিশুরা বছরজুড়ে বিভিন্ন শ্রমে জড়িয়ে থাকে। এদের মাঝে বেশির ভাগ শিশু-কিশোর হোটেল-রেন্তোরাঁ শ্রমিক। বাকিরা গাড়ি পরিষ্কার, ইটভাটায় কাজ নেয়া ও গৃহকর্মীর কাজ করে। নারীরা ঝাড়-ফুঁক দেয়া, বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে সংসার চালান। আবার কেউ কেউ সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে অবৈধ কার্যক্রমেও জড়িয়ে পড়ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা ও নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত এ পল্লির বাসিন্দাদের নেই স্থায়ী কোনো পেশা। এ সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ লোক বিভিন্ন রকমের ফেরি করে জীবিকা নির্বাহ করে। এখানকার শিশুর জন্য নেই পড়ালেখা শেখার কোনো স্কুল। শিক্ষার আলো বঞ্চিত রয়েছেন বর্তমানে এ পল্লিতে বসবাসরত ৭০টি পরিবারের শিশু। এসব পরিবারের ৬ শতাধিক সদস্যের মধ্যে ২৩০ জন জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছেন। তারা স্থানীয় কালীদহ ইউনিয়ন পরিষদের ভোটার হয়েছেন। নির্বাচনের সময় নাগরিক সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও জনপ্রতিনিধিরা এ পল্লির অবহেলিত বাসিন্দাদের খোঁজ রাখেন না। লালপোল বেদে পল্লির সরদার আমীর হোসেন বলেন, দেশের অন্যান্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বেদে পল্লীর জীবনধারা পরিবর্তনে এখনো কোনো উদ্যোগ আমরা দেখছি না।
তিনি বলেন, আমরাও দেশের নাগরিক। শিক্ষা-স্বাস্থ্য, অন্ন-বস্ত্র ও বাসস্থানের অধিকার আমাদেরও আছে। কিন্তু আমাদের এ অধিকারে রাষ্ট্রের উদাসীন ভূমিকা ভাবিয়ে তুলছে। আমাদের এ পল্লিতে পড়াশোনা জানা মানুষ নেই। আমাদের সন্তানদেরও লেখাপড়া করাতে পারছি না। বেশ কয়েক বছর আগে এখানে একটি অস্থায়ী স্কুল চালু হলেও একপর্যায়ে সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরে আমাদের ছেলেমেয়েদের পাশের একটি কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে স্কুলের অন্য শিক্ষার্থীরা আমাদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ক্লাসে বসতে চায় না। আমরা গরিব বলে আমাদের সন্তানদের সঙ্গে এলাকার অন্য ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতে চায় না। একপর্যায়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাদের ডেকে নিয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলে না পাঠাতে বলে দিয়েছেন। স্কুল না থাকায় ছেলেমেয়েরা শিক্ষাবিহীন বেড়ে উঠছে। আমাদের অন্তত নাম লেখাটা হলেও শিখিয়ে দেন। আমরা নিরক্ষর থাকতে চাই না; দেশের বোঝা হয়ে বাঁচতে চাই না। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ফেনী জেলার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, শিক্ষা নাগরিকের মৌলিক অধিকার। লালপোল বেদে পল্লির মানুষের জন্য শিক্ষা নিয়ে রাষ্ট্রীয় কোনো পদক্ষেপ না নেয়া দুঃখজনক। ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান বলেন, লালপোল বেদে পল্লির বাসিন্দাদের নাগরিক সুবিধার আওতায় আনতে প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি করে ঘর নির্মাণের জন্য জমি খোঁজা হচ্ছে। শিগগিরই তাদের জমিসহ বাসস্থান দেয়া হবে। তাদের শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও বাসস্থানসহ যাবতীয় নাগরিক সুবিধার আওতায় নিয়ে আসার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রক্রিয়াধীন।