নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম থেকে নবম-দশম শ্রেণির সব পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে এখনও সরবরাহ করতে পারেনি সরকার। এবছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া হয়েছে নামমাত্র কিছু বই। পরে আরও কিছু বই সরবরাহ করা হলেও বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এখনও বই পায়নি। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, যৎসামান্য বই পাওয়া গেছে, তা বিতরণ করা হয়েছে। বাকি বই হাতে পেলে সঙ্গে সঙ্গে তা শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হবে। অথচ সব ক্লাসের বিনামূল্যের পাঠ্যবই পাওয়া যাচ্ছে রাজধানীর নীলক্ষেতের বিভিন্ন লাইব্রেরিতে। বাংলাবাজার থেকে একটি চক্র পাঠ্যবই কিনে চড়া দামে বিক্রি করছে শিক্ষার্থীদের কাছে।
বাংলাবাজারের লাইব্রেরির মালিক আজিজ মোল্লা ও উজ্জ্বল নামে দুজনের কাছ থেকে কিনে নীলক্ষেতের লাইব্রেরিতে বই বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন নীলক্ষেতের লাইব্রেরি সংশ্লিষ্ট লোকজন। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) নীলক্ষেতে সরেজমিন গিয়ে প্রথম থেকে নবম-দশম শ্রেণির সব পাঠ্যবই বিক্রি করতে দেখেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদসংস্থা বাংলা ট্রিবিউন।
নীলক্ষেতের মীম বুক হাউজ, প্রিমিয়ার বুক হাউজ, আরাফাত বুক হাউজ, শহীদ বুক সেন্টার, বুক লাইন এবং আরিয়ান বুক লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন লাইব্রেরিতে সরকারের বিনামূল্যের পাঠ্যবই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। মীম বুক হাউজ অন্য সব লাইব্রেরি মালিকদের কাছে পাইকারি হিসেবে বিক্রি করছে। এসব বই বাংলাবাজার থেকে কিনে এনেছেন বলে জানিয়েছেন লাইব্রেরি সংশ্লিষ্টরা।
নীলক্ষেতের আরাফাত বুক হাউজে গিয়ে দেখা গেলো, ২০২৫ সালের অষ্টম শ্রেণির সাহিত্য কণিকা বইটি বিক্রি করছে ২৫০ টাকায়। এনসিটিবির কোনও ক্লাসের বই ২০০ টাকার নিচে বিক্রি করছে না। একজন ক্রেতা বই কিনে ভাউচার চাইলে লাইব্রেরি থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, বোর্ডের বইয়ের ভাউচার দেওয়া হয় না।
শহীদ বুক সেন্টারের মালিক মো. শহিদ নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বই বিক্রি করছেন ২৫০ টাকায়। আর ষষ্ঠ শ্রেণির চারুপাঠ বিক্রি করছেন ২০০ টাকায়। বইয়ের দাম বেশি কেন জানতে চাইলে ক্রেতাকে শহিদ বলেন, নতুন বইয়ের দাম বেশি। বিক্রি করা ঝামেলা।
আরাফাত বুক হাউজ ও শহীদ বুক সেন্টারে সব বই পাওয়া না গেলে লাইব্রেরি মালিকরা জানান, মীম বুক হাউজ ও প্রিমিয়ার বুক হাউজে সব বই পাওয়া যাবে।
সন্ধ্যার আগে মীম বুক হাইজে গিয়ে দেখা যায়, প্রথম থেকে নবম-দশম শ্রেণির সব বই রয়েছে। বিভিন্ন লাইব্রেরির কাছে পাইকারি হিসেবে বিই বিক্রি করছেন মীম বুক হাউজের মালিক সাইফুলের ছোট ভাই। সব ক্লাসের বই পাওয়া যাবে কিনা জানতে চাইলে একজন ক্রেতাকে জানান এ বছরের সব বই-ই আছে।
একজন ক্রেতার কাছে মীম বুক হাউজ নবম ও দশম শ্রেণির গণিত ২০০, নবম শ্রেণির ইংলিশ ফর টুডে ১০০, ইংলিশ গ্রামার অ্যান্ড কম্পোজিশন ১৫০ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা দ্রুত পঠন-আনন্দ পাঠ ১০০ টাকা দাম রাখলেন। একই সময় রুবেল বুক কর্নারের কাছে বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবই বিক্রির জন্য বের করে দেন। সেখানে সব ক্লাসের বই রয়েছে।
এদিকে সন্ধ্যার আগে প্রিমিয়ার বুক হাউজে গিয়ে নবম ও নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের পাঠ্যবই পাওয়া গেলেও বাংলা বই পাওয়া যায়নি। তবে ২০ জানুয়ারিতে সব বই দিতে পারবেন বলেও এক ক্রেতাকে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছিলো।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির সব বই, সপ্তম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই বছরের প্রথম দিন দিতে দেখা গেছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিভিন্ন বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সপ্তম শ্রেণির বাকি বইগুলো দেওয়া হয়েছে। অন্য বই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে পৌঁছায়নি।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুননাহার লিপি বলেন, ‘আমরা আগে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির সব বই, সপ্তম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই দিয়েছিলাম। পরে ক্লাস সেভেনের আরও কিছু বই দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রথম দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং সপ্তম শ্রেণির সব বই দিতে পেরেছি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না, অথচ নীলক্ষেতে সবই পাওয়া যাচ্ছে এটা কীভাবে সম্ভব জানতে চাইলে এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ জানায়, এক শ্রেণির মুদ্রণ মালিক এই কাজ করছে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘এটা অসৎ প্রিন্টারদের কাজ।’
অসৎ প্রিন্টার্সদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা হানা দিচ্ছে। প্রিন্টারদের ডেকে এনে ধমক দেওয়া হয়েছে। শাস্তির আওতায় আনা হবে দোষীদের।’
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ পরিকল্পনা কমিশনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে শিক্ষার্থীদের সব বই দেওয়া সম্ভব হবে’।
বাংলাবাজার থেকে বই সরবরাহের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আজিজ বুকের মালিক আজিজ মোল্লার সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। উজ্জ্বল নামে বই লাইব্রেরি মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘১০ মিনিট পর কথা বলবো।’ কিন্তু পরে আর তিনি ফোন রিসিভ করেননি।