ঢাকা ১২:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিক্ষার্থীদের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ঢাবির হল, থাকবে না গণরুম

  • আপডেট সময় : ০১:১৩:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ৩৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে টানা দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ধাপে ধাপে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে চলছে নানা প্রস্তুতি। ভিন্ন এই প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি যতটা পারা যায় কমিয়ে আনতে থাকবে কঠোর বিধি-নিষেধ। শিক্ষার্থীদের কীভাবে হলে তোলা হবে সেজন্য করা হয়েছে একটি নীতিমালা। আবাসন সমস্যার কারণে সৃষ্ট দীর্ঘদিনের ‘গণরুম’ ব্যবস্থা এখন আর থাকবে না, এমন প্রতিশ্রুতিই কর্তৃপক্ষ দিচ্ছে।
হল প্রাধ্যক্ষরা বলছেন, একসঙ্গে অনেক শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে থাকতে দেওয়া হবে না। যারা হলের বৈধ শিক্ষার্থী এবং যাদের টিকা নেওয়া হয়েছে, কেবল তারাই হলে উঠতে পারবেন।
যাদের ছাত্রত্ব শেষ, তাদের হল ছেড়ে দিতে হবে। সেসব ফাঁকা আসন বরাদ্দ দেওয়া হবে সেই সব শিক্ষার্থদের, যাদের আগে গণরুমে থাকতে হত নানা ভোগান্তি সয়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি হলে শিক্ষার্থী আছেন ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। আবাসন সঙ্কটের কারণে বেশিরভাগ হলেই সৃষ্টি হয়েছে ‘গণরুমের’, যেখানে বড় হলরুমে মেঝেতে টানা বিছানা পেতে প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে থাকতে হত।
কারা এসব কক্ষে থাকবে তার নিয়ন্ত্রণ থাকত ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের হাতে। কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি আর কিছু উদ্যোগের পরও এ সমস্যার সমাধান এতদিন হয়নি।
এখন মহামারীর মধ্যে হল খোলার আগে ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে এবং হলগুলোতে যাতে বৈধ শিক্ষার্থীরাই থাকে, তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ১৩টি ছাত্র সংগঠনের নেতাদের নিয়ে ৭ সেপ্টেম্বর পরিবেশ কমিটির সভা ডেকেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষ। সেদিন রাত ৯টায় ভার্চুয়াল ওই সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রাধ্যক্ষরাও যুক্ত থাকবেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী।
বলেন, “এখন যে সিদ্ধান্তটা, এটা কোনো স্বাভাবিক অবস্থার সিদ্ধান্ত না। মহামারী পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুকিপূর্ণ পরিবেশে আমরা আছি। বাস্তবতা বিচেনা করে ঝুঁকি নিয়েই আমাদের হল খুলতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব শেষ- এমন কেউ হলে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেও ছাত্রসংগঠনগুলো এবং পরিবেশ পরিষদ একমত হয়ে সহযোগিতা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রক্টর। দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর গত বছর ১৮ মার্চ থেকে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম ধাপে অনার্স চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল খুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছে। তাদের পরীক্ষা শেষ হলে নভেম্বরে দ্বিতীয় ধাপে অনার্স প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে তোলা হবে বলে পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “হল খোলার বিষয়ে আমরা যে পরিকল্পনা নিয়েছি, সেই মোতাবেক আমরা অগ্রসর হচ্ছি। প্রাধ্যক্ষদের যেভাবে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে, তারা সেভাবে কাজ করছেন।”
গত কয়েকদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল, জগন্নাথ হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও বিজয় একাত্তর হলসহ বেশ কয়েকটি আবাসিক হলে দেখা গেছে সেই প্রস্তুতির চিত্র। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে প্রত্যেক হলের প্রবেশপথে বসানো হচ্ছে হাত ধোয়ার বেসিন। দীর্ঘদিনের ধুলোয় মলিন ডায়নিং, ক্যান্টিন, ক্যাফেটেরিয়া, রিডিং রুম ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে। সব হলে টয়লেট ও বাথরুমগুলো পরিষ্কার করার পাশাপাশি কোনো কোনো হলে সংস্কারও করা হচ্ছে। হলের দেয়ালে রঙ করা, বাগানে নতুন ফুলগাছ লাগানো ও মাঠের ঘাস কেটে ছোট করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে প্রস্তুতি শেষ করতে ছুটির দিনেও কাজ চলছে পুরোদমে। ফজলুল হক মুসলিম হলে গিয়ে কথা হয় হলের সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাছিমুল হক গণি ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, খোলামেলা দোকান উচ্ছেদ করে হলের ভেতর দূরত্ব বজায় রেখে নির্দিষ্ট দুটি দোকানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গুর ঝুঁকিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে জগন্নাথ হলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে বলে জানান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মিহির লাল সাহা। তিনি বলেন, “হলে একাট হাইজেনিক কন্ডিশন তৈরির জন্য আমরা চেষ্টা করছি। ছাত্রদের অনুপস্থিতিতেও আমরা সপ্তাহে সপ্তাহে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করেছি। শিক্ষার্থীরা যাতে ফিরে এসে সন্তুষ্ট থাকে যে, অন্তত তারা যে অবস্থায় তারা দেখে গেছে, তার চেয়ে যেন খারাপ পরিবেশ না থাকে।”
কবি জসীম উদ্দীন হলের প্রাধ্যক্ষ মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, “হলে শিক্ষার্থীদের যে কমন ফ্যাসিলিটিজ দরকার হয়, সেগুলোর জন্য আমরা কাজ করছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন বুঝতে পারে, তারা ভালো পরিবেশে এসেছে। তারা মানসিকভাবে যেন সুন্দর পরিবেশ পায়, সে অনুযায়ী কাজ চলছে। সেজন্য সামনের বাগান, দেয়ালে রঙ করা ইত্যাদি কিছু কাজও করছি।”
মহামারীকালে যেভাবে চলবে আবাসিক হল : মহামারীকালে হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা কীভাবে থাকবে, রিডিং রুম , মসজিদ ও ক্যান্টিন কীভাবে ব্যবহার করবে, তা নিয়ে এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসেডিউর) তৈরি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি।
এ কমিটির সভাপতি ও বিজয় একাত্তর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আবদুল বাছির বলেন, “আবাসন, স্বাস্থ্যবিধি ও চিকিৎসা এই তিন ভাগে এসওপি বিভক্ত।
আবাসনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, একজন আবাসিক শিক্ষার্থী কোনোভাবে মেঝেতে থাকতে পারবে না। রুমের আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বড় রুমে সর্বোচ্চ চার জন শিক্ষার্থী থাকতে পারবে।
“যেহেতু আমরা প্রাথমিকভাবে অনার্স ফাইনাল ইয়ার ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরদের ওঠাচ্ছি, সেখানে চার জনের বেশি হওয়ার কথা নয়।”
আর স্বাস্থ্যবিধির পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, “একজন শিক্ষার্থী রুম থেকে বের হলে অবশ্যই তাকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। হলে প্রবেশের সময় বেসিনে হাত ধুয়ে প্রবেশ করতে হবে। যেখানে সেখানে কফ-থুতু ফেলা যাবে না। মসজিদ-ক্যান্টিন এসব জায়গায় ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে।
“আমরা করোনা থেকে মুক্ত হয়ে গেছি, এটা ভাবার সুযোগ নেই। আমাদের এই করোনার সঙ্গেই সচেতনভাবে বসবাস করতে হবে। নানারকম বিধি ব্যবস্থার মধ্যে চলতে হবে।”
কোনো শিক্ষার্থী সংক্রমিত হলে তখন কী করা হবে, তারও একটি পরিকল্পনা হয়েছে।
অধ্যাপক বাছির বলেন, “কোনো শিক্ষার্থীর যদি ক্রনিক অসুখ-বিসুখ থাক, তাহলে সেটা হল প্রশাসনকে জানাতে হবে। অনাকাঙ্খিতভাবে কোনো শিক্ষার্থীরা কোভিড পজিটিভ হলে, তাকে আমাদের মেডিকেল সেন্টারে কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।
“আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলে বিশ্ববদ্যিারয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের অতিথি কক্ষগুলো মেডিকেল সেন্টারের সাথে সমন্বয় করে সেগুলোকে চিকিৎসা কেন্দ্রে রূপান্তর করা হবে।” হলে এখন ‘গণরুম’ থাকবে না জানিয়ে অধ্যাপক বাছির বলেন, “আমাদেরে এখানে আর কোনো গণরুম থাকবে না। ইতোমধ্যে আমরা গণরুমের শিক্ষার্থীদের তালিকা করে ফেলেছি। একটা ভীষণ মানবিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা, সেখানে আমাদের গণরুমের শিক্ষার্থী যাতে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকতে পারে, সেজন্য মেধা অনুযায়ী তাদেরকে সিট বণ্টন করা হবে।”

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার লার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শিক্ষার্থীদের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ঢাবির হল, থাকবে না গণরুম

আপডেট সময় : ০১:১৩:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে টানা দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ধাপে ধাপে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে চলছে নানা প্রস্তুতি। ভিন্ন এই প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি যতটা পারা যায় কমিয়ে আনতে থাকবে কঠোর বিধি-নিষেধ। শিক্ষার্থীদের কীভাবে হলে তোলা হবে সেজন্য করা হয়েছে একটি নীতিমালা। আবাসন সমস্যার কারণে সৃষ্ট দীর্ঘদিনের ‘গণরুম’ ব্যবস্থা এখন আর থাকবে না, এমন প্রতিশ্রুতিই কর্তৃপক্ষ দিচ্ছে।
হল প্রাধ্যক্ষরা বলছেন, একসঙ্গে অনেক শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে থাকতে দেওয়া হবে না। যারা হলের বৈধ শিক্ষার্থী এবং যাদের টিকা নেওয়া হয়েছে, কেবল তারাই হলে উঠতে পারবেন।
যাদের ছাত্রত্ব শেষ, তাদের হল ছেড়ে দিতে হবে। সেসব ফাঁকা আসন বরাদ্দ দেওয়া হবে সেই সব শিক্ষার্থদের, যাদের আগে গণরুমে থাকতে হত নানা ভোগান্তি সয়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি হলে শিক্ষার্থী আছেন ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। আবাসন সঙ্কটের কারণে বেশিরভাগ হলেই সৃষ্টি হয়েছে ‘গণরুমের’, যেখানে বড় হলরুমে মেঝেতে টানা বিছানা পেতে প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে থাকতে হত।
কারা এসব কক্ষে থাকবে তার নিয়ন্ত্রণ থাকত ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের হাতে। কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি আর কিছু উদ্যোগের পরও এ সমস্যার সমাধান এতদিন হয়নি।
এখন মহামারীর মধ্যে হল খোলার আগে ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে এবং হলগুলোতে যাতে বৈধ শিক্ষার্থীরাই থাকে, তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ১৩টি ছাত্র সংগঠনের নেতাদের নিয়ে ৭ সেপ্টেম্বর পরিবেশ কমিটির সভা ডেকেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষ। সেদিন রাত ৯টায় ভার্চুয়াল ওই সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রাধ্যক্ষরাও যুক্ত থাকবেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী।
বলেন, “এখন যে সিদ্ধান্তটা, এটা কোনো স্বাভাবিক অবস্থার সিদ্ধান্ত না। মহামারী পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুকিপূর্ণ পরিবেশে আমরা আছি। বাস্তবতা বিচেনা করে ঝুঁকি নিয়েই আমাদের হল খুলতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব শেষ- এমন কেউ হলে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেও ছাত্রসংগঠনগুলো এবং পরিবেশ পরিষদ একমত হয়ে সহযোগিতা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রক্টর। দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর গত বছর ১৮ মার্চ থেকে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম ধাপে অনার্স চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল খুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছে। তাদের পরীক্ষা শেষ হলে নভেম্বরে দ্বিতীয় ধাপে অনার্স প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে তোলা হবে বলে পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “হল খোলার বিষয়ে আমরা যে পরিকল্পনা নিয়েছি, সেই মোতাবেক আমরা অগ্রসর হচ্ছি। প্রাধ্যক্ষদের যেভাবে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে, তারা সেভাবে কাজ করছেন।”
গত কয়েকদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল, জগন্নাথ হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও বিজয় একাত্তর হলসহ বেশ কয়েকটি আবাসিক হলে দেখা গেছে সেই প্রস্তুতির চিত্র। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে প্রত্যেক হলের প্রবেশপথে বসানো হচ্ছে হাত ধোয়ার বেসিন। দীর্ঘদিনের ধুলোয় মলিন ডায়নিং, ক্যান্টিন, ক্যাফেটেরিয়া, রিডিং রুম ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে। সব হলে টয়লেট ও বাথরুমগুলো পরিষ্কার করার পাশাপাশি কোনো কোনো হলে সংস্কারও করা হচ্ছে। হলের দেয়ালে রঙ করা, বাগানে নতুন ফুলগাছ লাগানো ও মাঠের ঘাস কেটে ছোট করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে প্রস্তুতি শেষ করতে ছুটির দিনেও কাজ চলছে পুরোদমে। ফজলুল হক মুসলিম হলে গিয়ে কথা হয় হলের সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাছিমুল হক গণি ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, খোলামেলা দোকান উচ্ছেদ করে হলের ভেতর দূরত্ব বজায় রেখে নির্দিষ্ট দুটি দোকানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গুর ঝুঁকিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে জগন্নাথ হলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে বলে জানান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মিহির লাল সাহা। তিনি বলেন, “হলে একাট হাইজেনিক কন্ডিশন তৈরির জন্য আমরা চেষ্টা করছি। ছাত্রদের অনুপস্থিতিতেও আমরা সপ্তাহে সপ্তাহে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করেছি। শিক্ষার্থীরা যাতে ফিরে এসে সন্তুষ্ট থাকে যে, অন্তত তারা যে অবস্থায় তারা দেখে গেছে, তার চেয়ে যেন খারাপ পরিবেশ না থাকে।”
কবি জসীম উদ্দীন হলের প্রাধ্যক্ষ মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, “হলে শিক্ষার্থীদের যে কমন ফ্যাসিলিটিজ দরকার হয়, সেগুলোর জন্য আমরা কাজ করছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন বুঝতে পারে, তারা ভালো পরিবেশে এসেছে। তারা মানসিকভাবে যেন সুন্দর পরিবেশ পায়, সে অনুযায়ী কাজ চলছে। সেজন্য সামনের বাগান, দেয়ালে রঙ করা ইত্যাদি কিছু কাজও করছি।”
মহামারীকালে যেভাবে চলবে আবাসিক হল : মহামারীকালে হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা কীভাবে থাকবে, রিডিং রুম , মসজিদ ও ক্যান্টিন কীভাবে ব্যবহার করবে, তা নিয়ে এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসেডিউর) তৈরি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি।
এ কমিটির সভাপতি ও বিজয় একাত্তর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আবদুল বাছির বলেন, “আবাসন, স্বাস্থ্যবিধি ও চিকিৎসা এই তিন ভাগে এসওপি বিভক্ত।
আবাসনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, একজন আবাসিক শিক্ষার্থী কোনোভাবে মেঝেতে থাকতে পারবে না। রুমের আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বড় রুমে সর্বোচ্চ চার জন শিক্ষার্থী থাকতে পারবে।
“যেহেতু আমরা প্রাথমিকভাবে অনার্স ফাইনাল ইয়ার ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরদের ওঠাচ্ছি, সেখানে চার জনের বেশি হওয়ার কথা নয়।”
আর স্বাস্থ্যবিধির পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, “একজন শিক্ষার্থী রুম থেকে বের হলে অবশ্যই তাকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। হলে প্রবেশের সময় বেসিনে হাত ধুয়ে প্রবেশ করতে হবে। যেখানে সেখানে কফ-থুতু ফেলা যাবে না। মসজিদ-ক্যান্টিন এসব জায়গায় ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে।
“আমরা করোনা থেকে মুক্ত হয়ে গেছি, এটা ভাবার সুযোগ নেই। আমাদের এই করোনার সঙ্গেই সচেতনভাবে বসবাস করতে হবে। নানারকম বিধি ব্যবস্থার মধ্যে চলতে হবে।”
কোনো শিক্ষার্থী সংক্রমিত হলে তখন কী করা হবে, তারও একটি পরিকল্পনা হয়েছে।
অধ্যাপক বাছির বলেন, “কোনো শিক্ষার্থীর যদি ক্রনিক অসুখ-বিসুখ থাক, তাহলে সেটা হল প্রশাসনকে জানাতে হবে। অনাকাঙ্খিতভাবে কোনো শিক্ষার্থীরা কোভিড পজিটিভ হলে, তাকে আমাদের মেডিকেল সেন্টারে কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।
“আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলে বিশ্ববদ্যিারয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের অতিথি কক্ষগুলো মেডিকেল সেন্টারের সাথে সমন্বয় করে সেগুলোকে চিকিৎসা কেন্দ্রে রূপান্তর করা হবে।” হলে এখন ‘গণরুম’ থাকবে না জানিয়ে অধ্যাপক বাছির বলেন, “আমাদেরে এখানে আর কোনো গণরুম থাকবে না। ইতোমধ্যে আমরা গণরুমের শিক্ষার্থীদের তালিকা করে ফেলেছি। একটা ভীষণ মানবিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা, সেখানে আমাদের গণরুমের শিক্ষার্থী যাতে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকতে পারে, সেজন্য মেধা অনুযায়ী তাদেরকে সিট বণ্টন করা হবে।”