ঢাকা ১২:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

শিক্ষক হত্যা ও লাঞ্ছনার বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ

  • আপডেট সময় : ০২:২৮:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জুন ২০২২
  • ৭৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :নড়াইলে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও সাভারে শিক্ষক হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশ থেকে শিক্ষককে লাঞ্ছনা ও হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। এসব ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিসহ শিক্ষক সংগঠনগুলোর ভূমিকারও সমালোচনা করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’-এর ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই সমাবেশ হয়। ‘শিক্ষকের গলায় জুতার মালা: নৈতিকতার অবক্ষয় ও সাম্প্রদায়িকতার ছড়াছড়ির শেষ কোথায়’ শীর্ষক সমাবেশে জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ মিহির লাল সাহাও অংশ নেন।
সমাবেশে মিহির লাল সাহা বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের পরিবারের ইতিহাস দেখতে হবে। পরিবার তাঁদের শিক্ষাদানে ব্যর্থ। তাই ঘটনার দায়ভার পরিবারকেও নিতে হবে। এমন সমাজ আমরা চাইনি। বিচারহীনতার সমাজে কখন বিচার হবে? যাঁরা বিচার করবেন, দেখা যায় যে তাঁরাই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। প্রশাসন বলছে, ঘটনা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আগে ধরে প্রকাশ্যে জুতার মালা পরাতে হবে। তাঁদের আগে জুতার মালা পরিয়ে শিক্ষকের সামনে দাঁড় করাতে হবে। এটি হলে বিচারের প্রথম কাজ এগোবে। আজ লজ্জায় মুখ ঢাকতে হচ্ছে যে আমি একজন শিক্ষক।
উদ্ভিদবিজ্ঞানের অধ্যাপক মিহির লাল শিক্ষক সংগঠনগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি যেখানে সব সময় দেশের পাশে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে, সেখানে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় তারা বিবৃতি পর্যন্ত দেয়নি। সব শিক্ষক সমিতির উচিত শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ করা। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, শিক্ষক লাঞ্ছনার দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজল দাস বলেন, সমাজের কতটুকু অবক্ষয় ঘটলে, শিক্ষার্থীরা কোন পর্যায়ে পৌঁছালে শিক্ষককে অপমান করতে পারে! নড়াইলে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও সাভারে শিক্ষক হত্যার ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া উচিত। যেসব শিক্ষার্থী শিক্ষকদের অপমানিত-লাঞ্ছিত করছে, তাদেরও লাগাম টেনে ধরা উচিত।
হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অতনু বর্মণ বলেন, জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষককে আজ জুতার মালা পরানো হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে। এসব ঘটনায় জাতির বিবেক কলুষিত, হতভম্ব ও বাকরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নড়াইল সদরের এক কলেজছাত্রের পোস্টকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে ১৮ জুন মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। আর গত শনিবার দুপুরে সাভারের আশুলিয়ার হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির এক ছাত্রের ক্রিকেট স্টাম্পের আঘাতে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার গুরুতর আহত হন। পরে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত সোমবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।
শিক্ষক উৎপলের মৃত্যু ১৭ কোটি মানুষের জন্য লজ্জার-অপমানের : ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ার হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাঁরা এই হত্যার বিচার দাবি করেছেন। একই সঙ্গে বলেছেন, শিক্ষক উৎপলের মৃত্যু বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের জন্য লজ্জার, অপমানের।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারের সামনে এই মানববন্ধন হয়। কর্মসূচির আয়োজক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১ ব্যাচ (২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষ)। উৎপল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পাস করার পর তিনি আশুলিয়ার হাজি ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা করেছিলেন। এই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ছিলেন।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ফণী ভূষণ বিশ্বাস বলেন, তিনি আর উৎপল একই ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। উৎপল হাজি ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ছিলেন। গত শনিবার দুপুরে দশম শ্রেণির এক ছাত্র ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় শিক্ষক উৎপলের ওপর। গত সোমবার ভোরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় উৎপল মারা যান। হামলাকারী ছাত্রের বিরুদ্ধে উত্ত্যক্তের অভিযোগ দিয়েছিল এক ছাত্রী। হামলাকারী ছাত্র বিদ্যালয়ের সভাপতির আত্মীয়। এই হত্যায় জড়িত সবাইকেই শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আজকে ২০২২ সালে আমরা সভ্যতার এমন একপর্যায়ে দাঁড়িয়েছি, যেখানে একজন ছাত্র তার শিক্ষককে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। আর আমাদের সেই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে হচ্ছে। এই ঘটনাকে কোনো সাধারণ অপরাধ হিসেবে দেখলে চলবে না। সভ্যতার উন্নয়নের নিচে আমরা যে অন্ধকার লালন করি, এই ঘটনা তার প্রমাণ। সামগ্রিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে আমরা যে একটি নগ্ন-নোংরা-পিছিয়ে পড়া সভ্যতা বহন করে চলেছি—এ ঘটনা তারই প্রমাণ।’
নাসির উদ্দিন বলেন, ‘যে শিক্ষার্থীকে আমরা ক্লাসে পড়াই, যে শিক্ষার্থীকে আমরা আলোকিত করি, আলোড়িত করি, সেই শিক্ষার্থীর আঘাতে আমাদের মৃত্যুবরণ করতে হবে, এর চেয়ে লজ্জার, দুঃখের, ঘৃণার, অপমানের আর কিছু হতে পারে না। এ অপমান, এ লজ্জা শুধু উৎপলের নয়, শুধু শিক্ষক সমাজের নয়; এ অপমান, এ লজ্জা বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের।’
উৎপলের সহপাঠী মোহাম্মদ সুমনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এনায়েত উল্যা পাটওয়ারি, একই বিভাগের ভূঁইয়া মো. মনোয়ার কবীর, ক্রিমিনোলজি বিভাগের সভাপতি মো. সাখাওয়াত হোসেন, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রুনা সাহা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ নিয়াজ মোরশেদ প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এ ঘটনা নিছক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের ব্যাপার নয়। একে দেখতে হবে সমাজব্যবস্থার প্রগতির বাধা হিসেবে। একে দেখতে হবে, সমাজকে পিছিয়ে টেনে নেওয়ার নোংরা লক্ষণ হিসেবে।
বক্তারা বলেন, এই প্রতিবাদ শুধু শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নয়, এই প্রতিবাদ দেশের সব বিবেকবান মানুষের। একজন অপরাধী, একজন খুনিকে ধরে শাস্তি দিলেই এই অপরাধের দায় থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। এ ধরনের ঘটনা থেকে রেহাই পেতে সমাজের সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে শ্রদ্ধা-ভালোবাসার যে সংস্কৃতি, তাকে লালন করতে হবে। চর্চা করতে হবে। তা না হলে উৎপলের মতো ঘটনা আবার দেখা যাবে।
বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : সাভারের আশুলিয়ায় শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারের হত্যাকারীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারসহ এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে মহাসড়কে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে ইপিজেড-আশুলিয়া-টঙ্গী সড়কে এই বিক্ষোভ করেন হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় অন্যান্য স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, ঘটনার দিন সকাল থেকেই জিতুসহ আরও দু-তিনজন স্ট্যাম্প হাতে ঘোরাঘুরি করে। জিতুর সঙ্গে তারাও অপরাধী। ঘটনার ২০ মিনিটের মধ্যে জিতুর বাবা ঘটনাস্থলে এসে প্রভাব খাটিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে নেন। কিন্তু নিহত শিক্ষক কিংবা তার পরিবারকে আর্থিক ও মানসিক সাপোর্ট তিনি দেননি। বরং তিনি ও তার পরিবার জিতুকে পালিয়ে থাকতে সহায়তা করছেন। তারা নিজেরাও পলাতক। জিতু সংঘবদ্ধ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য বলেও দাবি তাদের।
এর আগে হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করেন শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- অনতিবিলম্বে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারী জিতুকে গ্রেফতার করতে হবে। জিতুর সঙ্গে থাকা অজ্ঞাতনামা আসামিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। জিতুর বাবা প্রভাব খাটিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছেন। তাই তার বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে হবে। নিহতের পরিবারকে সর্বোচ্চ আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী ও স্থানীয় শিক্ষার্থীদের ভেদাভেদ নির্মূলে সর্বজনীন আইন প্রণয়ন করতে হবে। পুরো এলাকা থেকে কিশোর গ্যাং নির্মূলে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে।
মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা সড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা ইপিজেড-আশুলিয়া-টঙ্গী সড়কের জামগড়ায় এই বিক্ষোভ করেন। এর আগে শনিবার (২৫ জুন) দুপুর ২টার দিকে স্কুল মাঠে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে (৩৫) স্ট্যাম্প দিয়ে বেধড়ক মারধর করে দশম শ্রেণির ছাত্র জিতু। পরে আহত অবস্থায় তাকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন সোমবার (২৭ জুন) ভোর সোয়া ৫টার দিকে মারা যান তিনি।
নিহত শিক্ষক উৎপল সরকার সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার এঙ্গেলদানি গ্রামের মৃত অজিত সরকারের ছেলে। তিনি আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের কলেজ শাখার রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক এবং শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
নড়াইলে কলেজ শিক্ষককে হেনস্তায় মামলা, গ্রেপ্তার ৩ : নড়াইলে কলেজ শিক্ষককে অপদস্ত করার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে মামলা দায়েরের পর তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নড়াইল সদর থানার ওসি মোহাম্মদ শওকত কবীর জানান, গত সোমবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে গত সোমবার দুপুরে মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শেখ মোরছালিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ১৭০ থেকে ১৮০ জনকে আসামি করে নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন।
গ্রেপ্তারা হলেন মির্জাপুরের সৈয়দ রিমন আলী, মির্জাপুর বাজারের মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী শাওন খান ও মধ্যপাড়ার মো. মনিরুল ইসলাম। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, গত ১৭ জুন মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক ছাত্র ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার বিতর্কিত এক বক্তব্য নিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দেওয়ার পরদিন কলেজে গেলে কিছু মুসলমান ছাত্র তাকে ওই পোস্ট মুছে ফেলতে বলেন। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস পুলিশে খবর দেন। এর মধ্যে ‘অধ্যক্ষ ওই ছাত্রের পক্ষ নিয়েছেন’ এমন কথা রটানো হলে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। অধ্যক্ষ ও দুজন শিক্ষকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে তাদেরও সংঘর্ষ বাধে। ওই সময় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কলেজের ছাত্র ও স্থানীয়রা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়। ওই ঘটনার কিছু ছবি ও ভিডিও ফেইসবুকে আসে, যাতে পুলিশের উপস্থিতিও দেখা যায়। তখন পুলিশ ওই ছাত্রের সঙ্গে অধ্যক্ষকেও থানায় নিয়ে যায়। তবে অধ্যক্ষকে আটক করা হয়নি বলে জানান নড়াইল সদর থানার ওসি মোহাম্মদ শওকত কবীর। এ ঘটনায় সারাদেশে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে ঘটনাটি তদন্তে শিক্ষা দপ্তর একটি কমিটি করেছে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করেছেন। তবে ১৮ জুনের ঘটনার পর থেকে আর বাড়িতে থাকছেন না ওই শিক্ষক। তিনি নিরাপত্তাহীনতার ভুগছেন বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শিক্ষক হত্যা ও লাঞ্ছনার বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ

আপডেট সময় : ০২:২৮:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জুন ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :নড়াইলে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও সাভারে শিক্ষক হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশ থেকে শিক্ষককে লাঞ্ছনা ও হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। এসব ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিসহ শিক্ষক সংগঠনগুলোর ভূমিকারও সমালোচনা করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’-এর ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই সমাবেশ হয়। ‘শিক্ষকের গলায় জুতার মালা: নৈতিকতার অবক্ষয় ও সাম্প্রদায়িকতার ছড়াছড়ির শেষ কোথায়’ শীর্ষক সমাবেশে জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ মিহির লাল সাহাও অংশ নেন।
সমাবেশে মিহির লাল সাহা বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের পরিবারের ইতিহাস দেখতে হবে। পরিবার তাঁদের শিক্ষাদানে ব্যর্থ। তাই ঘটনার দায়ভার পরিবারকেও নিতে হবে। এমন সমাজ আমরা চাইনি। বিচারহীনতার সমাজে কখন বিচার হবে? যাঁরা বিচার করবেন, দেখা যায় যে তাঁরাই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। প্রশাসন বলছে, ঘটনা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আগে ধরে প্রকাশ্যে জুতার মালা পরাতে হবে। তাঁদের আগে জুতার মালা পরিয়ে শিক্ষকের সামনে দাঁড় করাতে হবে। এটি হলে বিচারের প্রথম কাজ এগোবে। আজ লজ্জায় মুখ ঢাকতে হচ্ছে যে আমি একজন শিক্ষক।
উদ্ভিদবিজ্ঞানের অধ্যাপক মিহির লাল শিক্ষক সংগঠনগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি যেখানে সব সময় দেশের পাশে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে, সেখানে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় তারা বিবৃতি পর্যন্ত দেয়নি। সব শিক্ষক সমিতির উচিত শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ করা। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, শিক্ষক লাঞ্ছনার দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজল দাস বলেন, সমাজের কতটুকু অবক্ষয় ঘটলে, শিক্ষার্থীরা কোন পর্যায়ে পৌঁছালে শিক্ষককে অপমান করতে পারে! নড়াইলে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও সাভারে শিক্ষক হত্যার ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া উচিত। যেসব শিক্ষার্থী শিক্ষকদের অপমানিত-লাঞ্ছিত করছে, তাদেরও লাগাম টেনে ধরা উচিত।
হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অতনু বর্মণ বলেন, জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষককে আজ জুতার মালা পরানো হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে। এসব ঘটনায় জাতির বিবেক কলুষিত, হতভম্ব ও বাকরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নড়াইল সদরের এক কলেজছাত্রের পোস্টকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে ১৮ জুন মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। আর গত শনিবার দুপুরে সাভারের আশুলিয়ার হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির এক ছাত্রের ক্রিকেট স্টাম্পের আঘাতে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার গুরুতর আহত হন। পরে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত সোমবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।
শিক্ষক উৎপলের মৃত্যু ১৭ কোটি মানুষের জন্য লজ্জার-অপমানের : ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ার হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাঁরা এই হত্যার বিচার দাবি করেছেন। একই সঙ্গে বলেছেন, শিক্ষক উৎপলের মৃত্যু বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের জন্য লজ্জার, অপমানের।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারের সামনে এই মানববন্ধন হয়। কর্মসূচির আয়োজক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১ ব্যাচ (২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষ)। উৎপল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পাস করার পর তিনি আশুলিয়ার হাজি ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা করেছিলেন। এই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ছিলেন।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ফণী ভূষণ বিশ্বাস বলেন, তিনি আর উৎপল একই ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। উৎপল হাজি ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ছিলেন। গত শনিবার দুপুরে দশম শ্রেণির এক ছাত্র ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় শিক্ষক উৎপলের ওপর। গত সোমবার ভোরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় উৎপল মারা যান। হামলাকারী ছাত্রের বিরুদ্ধে উত্ত্যক্তের অভিযোগ দিয়েছিল এক ছাত্রী। হামলাকারী ছাত্র বিদ্যালয়ের সভাপতির আত্মীয়। এই হত্যায় জড়িত সবাইকেই শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আজকে ২০২২ সালে আমরা সভ্যতার এমন একপর্যায়ে দাঁড়িয়েছি, যেখানে একজন ছাত্র তার শিক্ষককে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। আর আমাদের সেই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে হচ্ছে। এই ঘটনাকে কোনো সাধারণ অপরাধ হিসেবে দেখলে চলবে না। সভ্যতার উন্নয়নের নিচে আমরা যে অন্ধকার লালন করি, এই ঘটনা তার প্রমাণ। সামগ্রিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে আমরা যে একটি নগ্ন-নোংরা-পিছিয়ে পড়া সভ্যতা বহন করে চলেছি—এ ঘটনা তারই প্রমাণ।’
নাসির উদ্দিন বলেন, ‘যে শিক্ষার্থীকে আমরা ক্লাসে পড়াই, যে শিক্ষার্থীকে আমরা আলোকিত করি, আলোড়িত করি, সেই শিক্ষার্থীর আঘাতে আমাদের মৃত্যুবরণ করতে হবে, এর চেয়ে লজ্জার, দুঃখের, ঘৃণার, অপমানের আর কিছু হতে পারে না। এ অপমান, এ লজ্জা শুধু উৎপলের নয়, শুধু শিক্ষক সমাজের নয়; এ অপমান, এ লজ্জা বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের।’
উৎপলের সহপাঠী মোহাম্মদ সুমনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এনায়েত উল্যা পাটওয়ারি, একই বিভাগের ভূঁইয়া মো. মনোয়ার কবীর, ক্রিমিনোলজি বিভাগের সভাপতি মো. সাখাওয়াত হোসেন, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রুনা সাহা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ নিয়াজ মোরশেদ প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এ ঘটনা নিছক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের ব্যাপার নয়। একে দেখতে হবে সমাজব্যবস্থার প্রগতির বাধা হিসেবে। একে দেখতে হবে, সমাজকে পিছিয়ে টেনে নেওয়ার নোংরা লক্ষণ হিসেবে।
বক্তারা বলেন, এই প্রতিবাদ শুধু শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নয়, এই প্রতিবাদ দেশের সব বিবেকবান মানুষের। একজন অপরাধী, একজন খুনিকে ধরে শাস্তি দিলেই এই অপরাধের দায় থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। এ ধরনের ঘটনা থেকে রেহাই পেতে সমাজের সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে শ্রদ্ধা-ভালোবাসার যে সংস্কৃতি, তাকে লালন করতে হবে। চর্চা করতে হবে। তা না হলে উৎপলের মতো ঘটনা আবার দেখা যাবে।
বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : সাভারের আশুলিয়ায় শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারের হত্যাকারীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারসহ এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে মহাসড়কে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে ইপিজেড-আশুলিয়া-টঙ্গী সড়কে এই বিক্ষোভ করেন হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় অন্যান্য স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, ঘটনার দিন সকাল থেকেই জিতুসহ আরও দু-তিনজন স্ট্যাম্প হাতে ঘোরাঘুরি করে। জিতুর সঙ্গে তারাও অপরাধী। ঘটনার ২০ মিনিটের মধ্যে জিতুর বাবা ঘটনাস্থলে এসে প্রভাব খাটিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে নেন। কিন্তু নিহত শিক্ষক কিংবা তার পরিবারকে আর্থিক ও মানসিক সাপোর্ট তিনি দেননি। বরং তিনি ও তার পরিবার জিতুকে পালিয়ে থাকতে সহায়তা করছেন। তারা নিজেরাও পলাতক। জিতু সংঘবদ্ধ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য বলেও দাবি তাদের।
এর আগে হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করেন শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- অনতিবিলম্বে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারী জিতুকে গ্রেফতার করতে হবে। জিতুর সঙ্গে থাকা অজ্ঞাতনামা আসামিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। জিতুর বাবা প্রভাব খাটিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছেন। তাই তার বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে হবে। নিহতের পরিবারকে সর্বোচ্চ আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী ও স্থানীয় শিক্ষার্থীদের ভেদাভেদ নির্মূলে সর্বজনীন আইন প্রণয়ন করতে হবে। পুরো এলাকা থেকে কিশোর গ্যাং নির্মূলে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে।
মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা সড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা ইপিজেড-আশুলিয়া-টঙ্গী সড়কের জামগড়ায় এই বিক্ষোভ করেন। এর আগে শনিবার (২৫ জুন) দুপুর ২টার দিকে স্কুল মাঠে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে (৩৫) স্ট্যাম্প দিয়ে বেধড়ক মারধর করে দশম শ্রেণির ছাত্র জিতু। পরে আহত অবস্থায় তাকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন সোমবার (২৭ জুন) ভোর সোয়া ৫টার দিকে মারা যান তিনি।
নিহত শিক্ষক উৎপল সরকার সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার এঙ্গেলদানি গ্রামের মৃত অজিত সরকারের ছেলে। তিনি আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের কলেজ শাখার রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক এবং শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
নড়াইলে কলেজ শিক্ষককে হেনস্তায় মামলা, গ্রেপ্তার ৩ : নড়াইলে কলেজ শিক্ষককে অপদস্ত করার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে মামলা দায়েরের পর তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নড়াইল সদর থানার ওসি মোহাম্মদ শওকত কবীর জানান, গত সোমবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে গত সোমবার দুপুরে মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শেখ মোরছালিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ১৭০ থেকে ১৮০ জনকে আসামি করে নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন।
গ্রেপ্তারা হলেন মির্জাপুরের সৈয়দ রিমন আলী, মির্জাপুর বাজারের মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী শাওন খান ও মধ্যপাড়ার মো. মনিরুল ইসলাম। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, গত ১৭ জুন মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক ছাত্র ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার বিতর্কিত এক বক্তব্য নিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দেওয়ার পরদিন কলেজে গেলে কিছু মুসলমান ছাত্র তাকে ওই পোস্ট মুছে ফেলতে বলেন। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস পুলিশে খবর দেন। এর মধ্যে ‘অধ্যক্ষ ওই ছাত্রের পক্ষ নিয়েছেন’ এমন কথা রটানো হলে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। অধ্যক্ষ ও দুজন শিক্ষকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে তাদেরও সংঘর্ষ বাধে। ওই সময় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কলেজের ছাত্র ও স্থানীয়রা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়। ওই ঘটনার কিছু ছবি ও ভিডিও ফেইসবুকে আসে, যাতে পুলিশের উপস্থিতিও দেখা যায়। তখন পুলিশ ওই ছাত্রের সঙ্গে অধ্যক্ষকেও থানায় নিয়ে যায়। তবে অধ্যক্ষকে আটক করা হয়নি বলে জানান নড়াইল সদর থানার ওসি মোহাম্মদ শওকত কবীর। এ ঘটনায় সারাদেশে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে ঘটনাটি তদন্তে শিক্ষা দপ্তর একটি কমিটি করেছে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করেছেন। তবে ১৮ জুনের ঘটনার পর থেকে আর বাড়িতে থাকছেন না ওই শিক্ষক। তিনি নিরাপত্তাহীনতার ভুগছেন বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী।