নিজস্ব প্রতিবেদক: হাইকোর্টের রায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ বাতিল হওয়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের প্রার্থীরা শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে দশম দিনের মত অবস্থান নিয়ে তাদের নিয়োগ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা; এছাড়া রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) শাহবাগে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনরতরা।
প্রার্থীদের নেতা ও ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার প্রার্থী তালুকদার পিয়াস সংবাদমাধ্যমকে বলেন, রাতে প্রেস ক্লাবে অবস্থান নেব।
‘নারী প্রার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ’ ও ‘নিয়োগ নিশ্চিতের’ দাবিতে রোববার শাহবাগে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানিয়ে পিয়াস বলেন, এ মহাসমাবেশে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের সব প্রার্থী অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রার্থীদের আরেক নেতা মুজিবুর রহমান বলেন, সর্বোচ্চ আদালত থেকে কোটা পুনর্র্নিধারণ করার আগে আমাদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষা হয়েছে। সরকার আইন ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছেন। হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছে তা বৈষম্যমূলক।
এদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাড়ে ছয় হাজার শিক্ষক নিয়োগ বাতিল করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছে সরকার।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গত বৃহস্পতিবার এ আবেদন করেছে বলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন জানান। রোববার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে এ আবেদনের শুনানি হতে পারে বলেছেন তিনি।
‘সড়ক না আটকানোর’ ঘোষণা দিয়েও গত বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে অবস্থান নেন। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ ও জলকামান প্রয়োগ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছিল। সেখান থেকে আটক হয়েছিলেন ১৪ প্রার্থী।
এর আগে গত বুধবার মিরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন প্রার্থীরা। আগের দিন মঙ্গলবার তারা শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সেদিন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের সঙ্গে আলোচনা করে সড়ক আটকাবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রার্থীরা।
এছাড়া সোমবার দুপুরে শিক্ষক পদে নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রার্থীরা শাহবাগ মোড় আটকে অবস্থান নিলে তাদের লাঠিপেটা করে পুলিশ। রাত থেকে তারা শাহাবাগে অবস্থান নেন। এর আগে তারা প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থানে ছিলেন।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে কোটায় নির্বাচিত হওয়া ৬ হাজার ৫৩১ জনের ফল বাতিল করে হাই কোর্ট। আদালত মেধার ভিত্তিতে নতুন করে ফল প্রকাশের আদেশও দেয়। সেদিন রাত থেকেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রার্থীরা। ওই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য ইতোমধ্যে আপিল করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এর আগে, ৩০ চাকরিপ্রার্থীর করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে গত ১৯ নভেম্বর হাই কোর্ট বেঞ্চ রুলসহ নিয়োগ প্রক্রিয়া ছয় মাসের জন্য স্থগিত করার আদেশ দেন। ফলে ৬ হাজার ৫৩১ জন উত্তীর্ণ প্রার্থীর নিয়োগ আটকে যায়। গত ৬ ফেব্রুয়ারি সেই রুলের ওপর রায় দেওয়া হয়।
হাই কোর্টের রায়ের পরদিন ৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তার বাসভবন যমুনার দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।