নিজস্ব প্রতিবেদক : শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন আশরাফুল আহসান জিতু। তিনি এ হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।
গতকাল বুধবার ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতে হাজির করা হলে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন জিতু। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক এমদাদুল হক তার জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব হাসান তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হয়েছিল আশরাফুল আহসান জিতুকে। এর আগে ৩০ জুন জিতুর ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব হাসান। ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউর আনোয়ারুল কবীর বাবুল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে বাড়িতে নালিশ দেওয়ার বলি শিক্ষক উৎপল : রিমার সঙ্গে প্রেম ছিল হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র আশরাফুল আহসান জিতুর। এ নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানেরই শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার তাদের বকাঝকা করতেন। রিমা ও জিতু স্কুলের বারান্দায় কেক খাচ্ছিলেন। উৎপল কুমার তা দেখে ফেলেন। এ নিয়ে তিনি তাদের দুজনের পরিবারে নালিশ দেন। এরপর রিমার কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দেয় তার পরিবার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জিতু দুটি স্ট্যাম্প এনে শিক্ষক উৎপলকে এলোপাড়াতি আঘাত করেন। আঘাতের কারণে উৎপল মারা যান। আদালতে ঘটনার দায় স্বীকার করে দেওয়া জবানবন্দিতে এসব কথা বলেছেন অভিযুক্ত স্কুলছাত্র জিতু। এছাড়া জিতুর বাবাও জবানবন্দিতে এসব কথা স্বীকার করেছেন। পুলিশ ও আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জবানবন্দিতে জিতু বলেছেন, রিমার সঙ্গে প্রেম ছিল তার। স্কুল ক্যাম্পাসে তাদের এ নিয়ে শিক্ষক উৎপল বকাঝকা করতেন। সর্বশেষ ঘটনার দুই-তিন দিন আগে স্কুলের বারান্দায় জিতু ও রিমা কেক খাচ্ছিলেন। এসময় শিক্ষক উৎপল তা দেখে ফেলেন। তিনি জিতু ও রিমাকে বকাঝকা করেন। এসময় জিতুর সঙ্গে উৎপলের কথা কাটাকাটিও হয়। শিক্ষক উৎপল জিতু ও রিমার বাড়িতে নালিশ দেন। এ কারণে রিমার পরিবার থেকে তাকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হন জিতু। জিতু আরও বলেন, ঘটনার দিন বাড়ি থেকে জিতু দুটি স্ট্যাম্প নিয়ে স্কুলে আসেন। সুযোগ পেয়ে উৎপলকে ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন। এসময় শরীফ নামে এক শিক্ষক জিতুকে ধরে ফেলেন। শরীফ আহত উৎপলকে মাটি থেকে ওঠাতে গেলে জিতু ঝিটকা মেরে সেখান থেকে চলে যায়। এরপর জিতু মানিকগঞ্জ পালিয়ে যান। পুলিশের তৎপরতা দেখে তিনি সেখান থেকে পাবনায় চলে যান। সেখানেও পুলিশের তৎপরতা দেখে গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি বাসায় আশ্রয় নেন। সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ ঘটনায় জবানবন্দিতে অনুতাপ প্রকাশ করেছেন জিতু।
পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে বুধবার তাকে ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতে হাজির করা হয়। এসময় তিনি হত্যার দায় স্বীকার করে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন।
এর আগে ২৫ জুন স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে উৎপল কুমার সরকারকে গুরুতর আহত করেন জিতু। এরপর তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৭ জুন ভোরে মৃত্যু হয় তার। উৎপল কুমার ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ছিলেন। তিনি ছিলেন রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক এবং শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি। জিতুও একই প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির ছাত্র। এদিকে এ ঘটনায় নিহত শিক্ষকের বড় ভাই অসীম কুমার সরকার আশুলিয়া থানায় ওই ছাত্রের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। এরপর ২৯ জুন (বুধবার) সন্ধ্যায় গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে জিতুকে গ্রেফতার করে র্যাব।
শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার দায় স্বীকার জিতুর
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ