সিলেট প্রতিনিধি : শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ভিসি অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে মৌন মিছিল করছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা।
গতকাল শনিবার দুপুর ৩টার দিকে গোলচত্বর থেকে মিছিল বের করা হয়। এদিকে অনশনরত ২৩ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৬ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনশনরত এক শিক্ষার্থীর মুখে জোর করে জুস খাওয়ানোর চেষ্টা করেন একজন শিক্ষক। তবে শিক্ষার্থীরা খায়নি। গত শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির আহ্বানে ঢাকায় প্রতিনিধি দল যাওয়ার কথা থাকলেও শেষে প্রত্যাখান করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির একটি প্রতিনিধি দল শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের পর শাবিপ্রবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। ওইদিনই জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে হলে অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা। ভিসির পদত্যাগের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
অনশনরত ১৬ শাবি শিক্ষার্থী হাসপাতালে, তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আমরণ অনশন করছেন ২৪ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ১৬ জন অসুস্থ হয়ে সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অসুস্থ তিন শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
গতকাল শনিবার দুপুরে অনশনস্থলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. মুস্তাকিম জানান, অসুস্থ ১৭ শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে পাঠানো করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে পরে অনশনস্থলে ফিরেছেন। অসুস্থদের মধ্যে ৯ জন ছাত্রী। তিনি আরও জানান, অনশনের প্রায় তিন দিন পেরিয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের গ্লুকোজ লেবেল কমে গেছে। এ জন্য স্যালাইন ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।
ডা. মুস্তাকিম জানান, শিক্ষার্থীদের প্রোটিন লেবেলও কমতে শুরু করেছে। একজন মানুষকে প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় প্রোটিন ও ফ্যাটের প্রয়োজন হয়। অনশনরত শিক্ষার্থীদের এগুলোর ঘাটতি হচ্ছে। শিগগিরই শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজন গুরুতর অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিন শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান তিনি।
এদিকে শাবিপ্রবির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে আলোচনা করতে ঢাকায় অবস্থান করছেন পাঁচ শিক্ষকের একটি প্রতিনিধি দল। শুক্রবার রাতে শাবিপ্রবির শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিলেও ঢাকায় গিয়ে আলোচনায় বসা সম্ভব না বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। অনশনরত শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তারা ঢাকায় আসতে পারবেন না বলে জানান।
এর আগে, শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৩টায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের মাধ্যমে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী। এতে সম্মতিও জানিয়েছেন আন্দোলনরতরা। তবে ভার্চুয়ালি কিংবা সরাসরি শিক্ষামন্ত্রীর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
প্রসঙ্গত, ১৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বেগম সিরাজুননেসা ছাত্রী হলের প্রভোস্টের পদত্যাগসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন তারা। আন্দোলনের এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশি হামলা হয়। এরপর আন্দোলন ভিসির পদত্যাগের একদফা দাবিতে পরিণত হয়। কর্মসূচি চলছে।
শাবিপ্রবিতে এবার কাফনের কাপড় পরে মিছিল
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ