সিলেট প্রতিনিধি : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, আমরণ অনশন ভাঙার জন্য তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
আমরণ অনশন শুরুর ৯৪ ঘণ্টা পর গতকাল রোববার দুপুর পৌনে ১টায় আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করা হয়; যদিও এ ধরনের অভিযোগ না পাওয়ার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অনশনস্থল ভিসির বাসভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের একজন লিখিত বক্তব্যে বলেন, “এদের (অনশনকারী) প্রায় সবাইকে ডিপার্টমেন্ট থেকে ফোন দিয়ে পরোক্ষভাবে ভয় দেখানো হচ্ছে। বাসায় ফোন দিয়ে বলা হচ্ছে, তাদেরকে দেখার নাকি কেউ নেই। যেখানে আমাদের ভলান্টিয়ার টিম থেকে ডাক্তাররা সর্বক্ষণ তাদের দেখভাল করছেন।
“এমনকি গতকাল একটি বিভাগের শিক্ষকরা একজন শিক্ষার্থীকে তার অমত সত্ত্বেও জোরপূর্বক জুস খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এসব পরিস্থিতি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব রাখলেও আজকে অনশনের পঞ্চম দিনে এসেও তারা কেউ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন ভাঙবেন না বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাসের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যাক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম মুঠোফোনে একটি সংবাদসংস্থাকে বলেন, “এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে বিষয়টি আমরা দেখব।”
“এখন এই বিষয়টি নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই”, যোগ করেন কোষাধ্যক্ষ। এদিকে অনশনকারীদের স্বাস্থ্যগত দিক তুলে ধরে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, অনশনকারীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৫ জন হাসপাতালে আছেন। গণঅনশনের ঘোষণা দেওয়ার পর নতুন চারজনসহ মোট ১২ জন অনশনকারী ভিসির বাসভবনে সামনে অবস্থান করছেন। এতে আরও বলা হয়, “হাসপাতালে অবস্থানরতদের অবস্থা খুবই খারাপ। অনেকের ডিহাইড্রেশন, গ্লুকোজ লেভেল, পালস রেট নিচের দিকে। সাধারণত ৭২ ঘণ্টা না খেয়ে পার করলে অনেকের শক হয়ে যেতে পারে। এই সমস্যা থেকে পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে একজনের তিন মাসের বেশি সময় লাগতে পারে। আবার অনেকে পূর্বের অবস্থায় ফিরতে নাও পারেন।”
এ ছাড়া দুপুরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, “গত ১৪ জানুয়ারি থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু করেন, যা এখনও চলমান। দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষ আমাদের এই যৌক্তিক দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। সে জন্য তাদের আমরা অনেক ধন্যবাদ জানাই।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “আমাদের এ দাবি খুবই সাধারণ এবং এক দফা। আমাদের এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কেউ যদি তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার করতে চায় এবং সহিংসতায় জড়ায়, তবে তার দায়ভার কোনোভাবেই আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা নেবেন না।”
“আমরা আবারও বলতে চাই, এটি শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শুধু শাবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, যা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও অসহিংস।”
বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। ১৬ জানুয়ারি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। ওইদিন বিকালে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েনের প্রতিবাদ করলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয় পুলিশ। ধাওয়া-পাল্টার এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশত আহত হন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষা করে উল্টো উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন তারা। ওই ঘটনায় পুলিশ ‘গুলি বর্ষণ ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিটের অভিযোগে’ অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে।
শাবিতে অনশন ভাঙতে হুমকি, ভয় দেখানোর অভিযোগ
ট্যাগস :
শাবিতে অনশন ভাঙতে হুমকি
জনপ্রিয় সংবাদ