বিনোদন ডেস্ক: ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনার মাঝেই জমকালো আয়োজনে শুরু হয়েছে বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতা ‘মিস ওয়ার্ল্ড ২০২৫’। শনিবার (১০ মে) হায়দ্রাবাদের তেলেঙ্গানায় উদ্বোধন হয় এই ঐতিহ্যবাহী আয়োজনের ৭২তম আসর।
গ্ল্যামার আর সংস্কৃতির এই মিলনমেলায় বাংলাদেশের হয়ে অংশ নিয়েছেন মডেল ও সুন্দরী প্রতিযোগী আকলিমা আতিকা কনিকা। আর প্রথম দিনেই তিনি নজর কেড়েছেন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী এক ফ্যাশনচয়েসে-রিকশার ছাউনির আদলে তৈরি গাউন পরে হাজির হয়েছেন র্যাম্পে।
র্যাম্পে কনিকার উপস্থিতি মুহূর্তেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। তার পরনে ছিল একটি লাল রঙা, উজ্জ্বল ও সৃষ্টিশীল গাউন, যার ডিজাইন অনুপ্রাণিত বাংলাদেশের রিকশার ঐতিহ্যবাহী ছাউনি ও বডি আর্ট থেকে। গাউনের পেছনে স্পষ্টভাবে লেখা ছিল ‘মা-বাবার দোয়া’-যা আমাদের লোকজ সংস্কৃতিরই এক আবেগঘন বহিঃপ্রকাশ।
এই অনন্য গাউনটির পেছনে রয়েছে এক তরুণ প্রতিভার সৃজনশীলতা। ডিজাইন করেছেন রাইসা আমিন শৈলী, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির একজন উদীয়মান ফ্যাশন ডিজাইনার। রাইসা জানান, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে একদিন ধানমন্ডিতে ট্র্যাফিক জ্যামে বসে থাকা অবস্থায় চারপাশে থাকা রিকশাগুলোই তাকে নতুন ভাবনার অনুপ্রেরণা দেয়। তখনই তার মনে হয়-লোকজ রিকশার রঙিনতা, শিল্প আর আবেগ যদি বিশ্বমঞ্চে পৌঁছায়, তবে তা হতে পারে এক নতুন বার্তা।
“রিকশার পেছনে প্রায়ই লেখা থাকে ‘মা-বাবার দোয়া’। সেটা শুধু লেখা নয়, একটা জীবনদর্শনও। মায়েরা যেমন পেছন থেকে শক্তি দেন, আমিও সেই আবেগটা গাউনের পেছনে ফুটিয়ে তুলেছি,”-বলছিলেন রাইসা।
এ গাউনের গঠন এবং উপকরণে ব্যবহৃত হয়েছে রিকশার আসল ম্যাটেরিয়াল, যেমন-হুডের কাপড়, সিটের ডিজাইন ও ব্যাকপ্যানেল আর্ট। এই ডিজাইন শুধু নজরকাড়া নয়, বরং এটি বিশ্বের সামনে বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও আবেগের এক শৈল্পিক বার্তাও।
মিস ওয়ার্ল্ডে অংশ নেওয়া কনিকা শুধুই একজন রূপসী নন, বরং একাধারে আত্মপ্রত্যয়ী, সচেতন এবং দেশপ্রেমিক। তিনি এর আগেও আন্তর্জাতিক ফ্যাশনমঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত ফেস অব এশিয়া ২০২৪ আসরে তিনি বাংলাদেশের হয়ে অংশ নিয়েছিলেন এবং প্রশংসিত হন তার অভিনয়, উপস্থিতি ও পরিচয় উপস্থাপনায়।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে এমন একটি গাউন নিয়ে হাজির হওয়া নিঃসন্দেহে সাহসী এবং সৃজনশীল পদক্ষেপ। এটি কেবল সৌন্দর্য নয়, বাংলাদেশের সংস্কৃতি, আবেগ ও আত্মপরিচয়কেও তুলে ধরেছে বিশ্ববাসীর সামনে।
র্যাম্পে কনিকার সাবলীল হাঁটা, আত্মবিশ্বাসী হাসি এবং গাউনটি বহনের গর্বিত-সব মিলিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন দিনটির অন্যতম আলোচনার বিষয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে তার সেই মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও, এবং হাজারো মানুষ প্রশংসা করেছেন তার এই অভিনব উপস্থাপনাকে।