প্রত্যাশা ডেস্ক: শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফোন করেছেন ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো।
গত শুক্রবার (১০ অক্টোবর) হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এমনটাই জানিয়েছেন ট্রাম্প। বলেছেন, ‘যিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তিনি আজ আমাকে ফোন করেছেন এবং বলেছেন, আমি এ পুরস্কার আপনার সম্মানে গ্রহণ করছি। কারণ আপনি সত্যিই এর যোগ্য ছিলেন। আমি অবশ্য তখন তাকে বলিনি, তাহলে পুরস্কারটা আমাকেই দিয়ে দিন।’ মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।
হোয়াইট হাউজ অবশ্য ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার না দেওয়ায় নোবেল কমিটির সমালোচনা করেছে। ট্রাম্প কখনোই নিজের নোবেল পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা গোপন করেননি। এই সপ্তাহে তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি-বন্দিবিনিময় চুক্তি ঘোষণা করেছেন। ট্রাম্পের দাবি, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি আটটি যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছেন। তাই তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের প্রকৃত দাবিদার। গাজা যুদ্ধবিরতির পর, অনেক বিশ্বনেতাই তাকে এই পুরস্কারের যোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। এরপরও ট্রাম্পকে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত না করায় হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র স্টিভেন চেউং এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘নোবেল কমিটি প্রমাণ করেছে, তারা শান্তির বদলে রাজনীতিকে গুরুত্ব দেয়।’ তবে নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এ বছরের মনোনয়নের সময়সীমা জানুয়ারির শেষেই শেষ হয়ে গেছে।
গত শুক্রবার নোবেল কমিটি ঘোষণা করে, ভেনেজুয়েলায় গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা এবং স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে ন্যায়সংগত ও শান্তিপূর্ণ রূপান্তরের সংগ্রামের জন্য ২০২৫ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন মাচাদো।
স্প্যানিশ সংবাদপত্র এল পাইসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাচাদো জানান, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন, তবে কথোপকথনের বিস্তারিত প্রকাশ করতে চাননি। তিনি বলেন, পুরস্কার গ্রহণের সময় যেমন বলেছেন, ট্রাম্পের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ।
শুক্রবার রাতে সাংবাদিকদের হাস্যরসের সুরে ট্রাম্প আরও বলেন, মাচাদো খুবই আন্তরিক ছিলেন। আমি চাইলেই তিনি হয়তো পুরস্কারটি আমাকে দিয়ে দিতেন। ট্রাম্প আরো বলেন, ‘আমি তাকে (মাচাদোকে) অনেকভাবে সাহায্য করেছি। ভেনেজুয়েলায় এখন ভয়াবহ অবস্থা, তাদের অনেক সহায়তা প্রয়োজন। বলা যায়, এই পুরস্কারটা ২০২৪ সালের কর্মকাণ্ডের জন্য দেওয়া হয়েছে, আর আমি তখন নির্বাচনি প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলাম।’
ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বহু বছর ধরে সক্রিয় মাচাদো তার কাজকে বর্ণনা করেন ‘গুলির পরিবর্তে ব্যালটের জয়’ হিসেবে। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে দমননীতির কারণে তিনি দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের বহু সদস্য এর আগে মাচাদোর কাজের প্রশংসা করেছেন। একই সঙ্গে তারা মাদুরো সরকারের বিরোধিতায় কঠোর অবস্থান নেয় এবং মাদক পাচার রোধের নামে ওই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করে। অনেকের মতে, এটি মাদুরোকে দুর্বল করে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রচেষ্টা ছিল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওসহ যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন প্রভাবশালী সিনেটর ২০২৪ সালে মাচাদোকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন দেন। তারা তাদের যৌথ চিঠিতে লেখেন, স্বৈরশাসনের মুখে দাঁড়িয়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য যারা কাজ করেন, এমন দৃঢ় মনোবল, আত্মত্যাগ ও নৈতিক সাহস আমরা খুব কমই দেখেছি। মারিয়া কোরিনা মাচাদো সেই সাহসের এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
এমনকি ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে নিজের শপথের আগেও ট্রাম্প মাচাদোকে স্বাধীনতার যোদ্ধা আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, “তার নিরাপত্তা ও জীবন রক্ষা করতে হবে!
শুক্রবার মাচাদো নোবেল পুরস্কার গ্রহণের পর বলেন, এই পুরস্কার আমি উৎসর্গ করছি ভেনেজুয়েলার কষ্টভোগী মানুষদের এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে—আমাদের আন্দোলনে তার সাহসী ও দৃঢ় সহায়তার জন্য!’ তবে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে কোনও অভিনন্দন আসেনি। বরং অনেকেই মাচাদোর পুরস্কারকে ট্রাম্পের প্রতি ‘অবমূল্যায়ন’ বলে মনে করছেন।
ট্রাম্পের ভেনেজুয়েলা বিষয়ক দূত রিচার্ড গ্রেনেল এক পোস্টে লেখেন, নোবেল পুরস্কার বহু আগেই মর্যাদা হারিয়েছে। ওবামা প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ভেনেজুয়েলা বিষয়ক সাবেক পরিচালক বেনজামিন গেদান বলেন, নোবেল কমিটি এই পুরস্কারের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার বিরোধী পক্ষ—উভয়ের জন্যই একটি বার্তা দিয়েছে।
তিনি সিএনএনকে বলেন, হোয়াইট হাউজ ইঙ্গিত দিচ্ছিল, তারা হয়তো সামরিক শক্তি ব্যবহার করে মাদুরো সরকারকে উৎখাত করতে পারে এবং মাচাদোও এতে সমর্থন দিচ্ছেন। নোবেল কমিটি বোঝাতে চেয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার বিরোধীরা যেন শান্তিপূর্ণ উপায়ে পরিবর্তনের চেষ্টা চালিয়ে যায়।’
সানা/আপ্র/১১/১০/২০২৫