ক্রীড়া ডেস্ক : আশা জাগানিয়া শুরুর পর অল্পতে গুটিয়ে যাওয়ার চোখ রাঙানি। চাপের মুখে ব্যাটিংয়ে নেমে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিলেন শাদাব খান। পরে বল হাতেও তিনি ছড়ালেন আলো। তার দুর্দান্ত অলরাউন্ড দ্যুতিতে ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে ছাড়ল পাকিস্তান। মুলতান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোববার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ৫৩ রানে জিতেছে বাবরের আজমের দল। পাকিস্তানের ইনিংসের মাঝপথে ধূলিঝড়ে ঘণ্টাখানেক খেলা বন্ধ থাকার পর ম্যাচের দৈর্ঘ্য নেমে আসে ৪৮ ওভারে। ৫ উইকেটে ১১৭ রানের নড়বড়ে অবস্থান থেকে ৯ উইকেটে ২৬৯ রান করে স্বাগতিকরা। ইমাম-উল-হকের আরেকটি ফিফটির পর ৭৮ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ৮৬ রানের ইনিংস খেলেন শাদাব। এই লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার পরে ৬২ রানে নেন ৪ উইকেট। ম্যাচের সেরা তিনি ছাড়া আর কে! ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে এদিন চমক দেখান অধিনায়ক নিকোলাস পুরান। তবে তার মূল কাজ ব্যাটিংয়ে নয়, বল হাতে! আগের ৯৯ আন্তর্জাতিক ম্যাচে একবার ওয়ানডেতে কেবল ৩ বল করেছিলেন তিনি। এবার শততম ম্যাচে অফ স্পিনে ১০ ওভার বোলিং করে ৪৮ রানে নেন ৪ উইকেট! ব্যাটিং ধসে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টপ আর মিডল অর্ডার। সাত নম্বরে নেমে আকিল হোসেনের ঝড়ো ফিফটির পর ৩৭.২ ওভারে ২১৬ রানে অলআউট হয় তারা। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তানের শুরুটা হয় ভালো। পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে ৫৬ রান তুলে ফেলেন ফখর জামান ও ইমাম। ত্রয়োদশ ওভারে প্রথমবার আক্রমণে আসা পুরান নিজের তৃতীয় ওভারে ফখরকে (৪৮ বলে ৩৫) বোল্ড করে ভাঙেন ৮৫ রানের শুরুর জুটি।
দারুণ ছন্দে থাকা বাবর এবার থামেন ১ রান করেই। লেগ স্পিনার হেইডেন ওয়ালশের বলে এলবিডব্লিউ হন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ উইকেটটা পায় রিভিউ নিয়ে। ওয়ানডেতে টানা ৬ ও সব সংস্করণ মিলিয়ে রেকর্ড টানা ৯ ইনিংসে পঞ্চাশ ছোঁয়ার যাত্রা থেমে গেল পাকিস্তান অধিনায়কের। ওই ওভারেই ইমাম ফিফটি পূর্ণ করেন ৫৫ বলে। ওয়ানডে ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা ৭ ইনিংসে পঞ্চাশ ছুঁলেন তিনি। টানা সবচেয়ে বেশি ৯ ইনিংসে ফিফটি ছোঁয়ার রেকর্ড তার স্বদেশি জাভেদ মিয়াঁদাদের। ফিফটি করে বেশিদূর যেতে পারেননি তিনি। একই ওভারে তিন বলের মধ্যে ইমাম ও মোহাম্মদ হারিসকে ফিরিয়ে দেন পুরান। স্লগ সুইপের চেষ্টায় ব্যাটের কানায় লেগে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়া ইমামের ৬৮ বলে ৬২ রানের ইনিংস গড়া ৭ চার ও একটি ছক্কায়। নিজের পরের ওভারে আরেকটি বড় উইকেট নেন পুরান। এবার তার শিকার মোহাম্মদ রিজওয়ান। এই উইকেটও আসে রিভিউ নিয়ে। একটা পর্যায়ে বিনা উইকেটে ৮৫ থেকে পাকিস্তানের স্কোর তখন ৫ উইকেটে ১১৭! খানিক পরই ধূলিঝড়ের কারণে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। পরে খেলা শুরু হলে শাদাবের ব্যাটে আবার পাল্টে যায় চিত্র। প্রাই একাই দলকে টেনে স্কোর আড়াইশ পার করেন তিনি। শুরুতে খুশদিল শার সঙ্গে ৮৪ রানের জুটিতে ধাক্কা সামাল দেন শাদাব। ৪৩ বলে ৩৪ রান করে ফেরেন খুশদিল। মোহাম্মদ নওয়াজ পারেননি কিছু করতে।
৫৭ বলে চতুর্থ ওয়ানডে ফিফটি করা শাদাব জাগান সেঞ্চুরির সম্ভাবনাও। এজন্য শেষ ওভারে তার দরকার ছিল ১৪ রান। তবে জেডেন সিলসের ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে যান প্রথম বলেই। তার আগের সর্বোচ্চ ছিল ৫৪। পাকিস্তান এই ম্যাচে বিশ্রাম দেয় দলের মূল স্ট্রাইক বোলার শাহিন শাহ আফ্রিদিকে। তবু রান তাড়ায় চতুর্থ ওভারেই কাইল মেয়ার্সকে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হাসান আলির আগের ওভারে বোল্ড হয়েও তিনি বেঁচে যান ‘নো’ বলের কারণে। পরের ওভারে শাহনাওয়াজ দাহানির বলে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। এরপর তেমন কিছু করে দেখাতে পারেননি শেই হোপ (২১), শামার ব্রুকস (১৮), পুরান (১১) ও রভম্যান পাওয়েল (১০)। ৯৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ক্যারিবিয়ানরা। দলকে টানছিলেন দলে ফেরা কেসি কার্টি। শাদাবকে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় বলের লাইন মিস করে স্টাম্পড হন তিনি। ৪৫ বলে ২ চার ও এক ছক্কায় করেন ৩৩ রান। কিমো পল ১১ বলে ২১ রান করে যখন ফিরলেন, ১৫৫ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে অল্পতে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপরই ঝড় তোলেন আকিল। ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি ৩৪ বলে। তার ব্যাটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে জাগে আশাও। তবে ৩৭ বলে ৬ ছক্কা ও ২ চারে ৬০ রানে করে শাদাবের বলে আকিল স্টাম্পড হতেই নিভে যায় সেই সম্ভাবনা।
শাদাবের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে হোয়াইটওয়াশড উইন্ডিজ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ