কুষ্টিয়া সংবাদদাতা: পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে এস এম জুমজুমকে আনতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়েছিলেন মা রজনী ইসলাম (৩৭)। মেয়েকে স্কুল থেকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হলেও রজনীর কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না পরিবারের সদস্যরা। পরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) শাড়ি দেখে মরদেহটি রজনীর বলে শনাক্ত করেন স্বামী জহুরুল ইসলাম। মরদেহ বুঝে পাওয়ার পর আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
রজনী ও জহুরুল দম্পতি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামের বাসিন্দা। আজ সকাল ৯টায় জানাজা শেষে ১০টার দিকে গ্রামটির গোরস্তানে রজনীর মরদেহ দাফন করা হয়েছে। এই দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে এস এম রুবাই একটি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। মেয়ে জুমজুমের সঙ্গে আরেক ছেলে এস এম রোহানও মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী। সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। তবে গত সোমবার অসুস্থ থাকায় সে স্কুলে যায়নি।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় দুই দশক ধরে জহুরুল সপরিবারে ঢাকায় থাকেন। সেখানে তিনি গার্মেন্টস ব্যবসা করেন। গত সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে পরিবারের কাছে রজনীর মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। পরে রাত ১০টার দিকে মরদেহ নিয়ে দৌলতপুরের গ্রামের বাড়িতে রওনা হন তাঁরা। ভোরের দিকে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বাওট গ্রামে রজনীর বাবার বাড়িতে মরদেহটি নেওয়া হয়। সেখানে কিছুক্ষণ রাখার পর মরদেহটি দৌলতপুরের বাড়িতে নিয়ে যান তাঁরা।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে দৌলতপুরে গ্রামের বাড়িতে মরদেহটি পৌঁছালে সেখানে ভিড় করেন আশপাশের বাসিন্দারা। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় রজনীর এমন করুণ মৃত্যুতে প্রায় সবার চোখ ছলছল করছিল। শোকে স্তব্ধ তিন সন্তানকে সান্ত¡না দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন পরিবারের অন্য সদস্যরা।
জহুরুল ইসলাম বলেন, তিনি গতকাল ব্যবসার কাজে চট্টগ্রাম ছিলেন। স্কুলে যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনার খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় রওনা করেন। এর মধ্যে পরিবারের সদস্যরা জুমজুমকে স্কুল থেকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। কিন্তু রজনীর কোনো খোঁজ মিলছিল না। পরিবারের সদস্যরা হন্যে হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে তাঁর খোঁজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে এক আত্মীয় মুঠোফোনে জানান যে রজনীর মরদেহ সিএমএইচে আছে। তিনি দ্রুত সেখানে ছুটে যান। দূর থেকে শাড়ি দেখে চিনতে পারেন, মরদেহটি রজনীর। জহুরুল বলেন, ‘যতটুকু দেখেছি, তাতে রজনীর মাথার পেছনে আঘাত। শরীরের কোথাও পোড়া চিহ্ন নেই। ধারণা করছি, দুর্ঘটনার সময় বিমানের কোনো অংশ তাঁর মাথায় গিয়ে লেগেছে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। মেনে নেওয়া যায় না। আবার না মেনেও উপায় নেই।’
রজনী তিন ছেলেমেয়ের পড়াশোনার বিষয়ে খুবই আন্তরিক ছিলেন জানিয়ে জহুরুলের বড় ভাই আহসানুল ইসলাম বলেন, মেয়ে জুমজুমকে আনতে স্কুলটিতে গিয়েছিলেন রজনী। বেলা একটার দিকে ক্লাস শেষ করে জুমজুম ক্যানটিনে ছিল। স্কুলে মায়ের সঙ্গে তার দেখা হয়নি, কথাও হয়নি। দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে জুমজুমের খোঁজে পরিবারের আরো কয়েকজন সদস্য স্কুলে ছুটে যান। রজনীর দাফনে উপস্থিত ছিলেন দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল হাই সিদ্দিকী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একটা পরিবারে যে ক্ষতি হলো, সেটি কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। মায়ের কোনো বিকল্প হতে পারে না। সন্তানেরা যাতে ভালো থাকে, সেই দোয়া করা হয়েছে।