অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ : ভাষাশহীদ দিবস এবং শহীদ মিনার নিয়ে সব সময়ই একটি ষড়যন্ত্র ছিল। স্বাধীনতার ঠিক অব্যবহিত পরই পরাজিত পাকিস্তানিদের একটি অংশ রাতের বেলা শহীদ মিনারের পরিবেশকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টায় লিরিক ছিল। তখন এখনকার মতো এত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। একটি রাজাকার গোষ্ঠী প্রাণপণ চেষ্টা করেছিল শহীদ মিনারের পবিত্রতা নষ্ট করতে।
তারপর বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর এই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তখন শুরু হয় জিয়াউর রহমানের প্রতিকৃতি মিনারের সবচেয়ে উপরে স্থাপন করার প্রতিযোগিতা। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কর্মীবৃন্দও ছাড় দেয়নি। প্রায়শই শহীদ মিনারে সংঘর্ষ হতো। মনে হয়নি দেশে কোনো সরকার আছে। শহীদ মিনারে নেতৃবৃন্দের কাপড় ছেড়ার ঘটনাও ঘটেছে।
অর্থাৎ এসব করা হয়েছিল যাতে মানুষ শহীদ মিনারে যেতে নিরুৎসাহিত বোধ করে। এরশাদের আমলে তো বিভিন্ন বাহিনীর লোকজন জুতা পরে শহীদ মিনারে উঠে যেত। এখনো একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী গ্রামেগঞ্জে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়টি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বর্ণনা করে এবং শহীদ দিবস এলেই এদের তৎপরতা বেড়ে যায়।
স্বাধীনতার পূর্বে এবং ঠিক তার পর শহীদ দিবসকে ঘিরে যেভাবে সাংস্কৃতিক কর্মকা- পরিচালিত হতো, তার অনেকটাই ’৭৫-পরবর্তী সময়ে কমে গিয়েছিল। নিজামীরা তো কখনোই শহীদ মিনারে যায়নি। তারা আবার দেশ শাসনও করেছিল।
এভাবে একটি দীর্ঘ প্রজন্ম বিভ্রান্ত হয়েছে। তারা ‘জীবন থেকে নেয়া‘ ছবির কথাও শোনেনি। আমরা ভাগ্যবান যে বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এসেছিলেন। নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন। এ জন্য অনেক সময় মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন।
আজ যে সারা দেশে সুষ্ঠুভাবে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের ব্যাপারটি, সেটা সম্পূর্ণ বঙ্গবন্ধু-কন্যার অবদান। আমদের সবাইকে শহীদদের সম্মানে নিজ নিজ অবস্থান থেকে শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে, অন্যকে উৎসাহিত করতে হবে এবং শহীদ মিনার বিরোধীদের রুখতে হবে।
লেখক: ট্রেজারার ও সাবেক প্রক্টর এবং সাবেক চেয়ারম্যান, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
শহীদ মিনার নিয়ে যুগে যুগে ষড়যন্ত্র হয়েছে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ