প্রত্যাশা ডেস্ক: গাজাগামী ফ্রিডম ফ্লোটিলার জাহাজগুলো দখল করে বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলমসহ আটক অধিকারকর্মীদের ইসরায়েলের একটি বন্দরে নিয়ে যাচ্ছে সেদেশের নৌবাহিনী।
ফ্রিডম ফ্লোটিলার অধিকারকর্মীদের পক্ষে আইনি লড়াই চালিয়ে আসা ‘আদালাহ – দ্য লিগাল সেন্টার ফর আরব মাইনোরিটি রাইটস ইন ইসরাইল’এর বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে দৃক, শহিদুল আলম যার ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দৃক বলেছে, আন্তর্জাতিক জলসীমায় নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের উপর ইসরায়েলের আক্রমণ আন্তর্জাতিক আইনের চূড়ান্ত লঙ্ঘন।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) এবং থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা (টিএমটিজি) এর দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিকে জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে দৃক।
এর আগে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরের ৪০টির বেশি ত্রাণবাহী নৌযান ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে গাজায় ঢোকার চেষ্টা করেছিল। ইসরায়েলি সেনারা সেগুলো দখল করে নেয় এবং জাহাজগুলোতে থাকা চার শতাধিক অধিকারকর্মীকে আটক করে নিয়ে যায়। এরপর আরো ১১টি জাহাজের আরেকটি নৌবহর ১ অক্টোবর গাজা অভিমুখে যাত্রা শুরু করে, যার আয়োজক আন্তর্জাতিক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) এবং থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা (টিএমটিজি)।
এ বহরের ‘কনশানস’ নামের জাহাজটিতে দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলমসহ ২৫ দেশের সাংবাদিক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ছিলেন। ইসরায়েলের অবৈধ দখলদারত্বের অবসান এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবিতে তারা গাজা অভিমুখে রওনা হয়েছিলেন।
বুধবার (৮ অক্টোবর) সকালে ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় শহিদুল আলম বলেন, ইসরায়েলি হানাদার বাহিনী আমাদের জাহাজে উঠেছে এবং আমাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পশ্চিমা দেশগুলোর সহায়তায় ইসরায়েল যে গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে, সে কথা তুলে ধরে সকল কমরেড ও বন্ধুদের ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। পরে দৃকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবার ফিলিস্তিনি সময় আনুমানিক সকাল ৬টার সময় (বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা) গাজা থেকে ১২০ নটিক্যাল মাইল (২২০ কিলোমিটার) দূরে ফ্রিডম ফ্লোটিলার ‘কনশানস’সহ সর্বমোট ৮টি জাহাজকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ‘সহিংসভাবে দখল করে’ নেয় ইসরায়েলের বাহিনী।
ভোরে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে, কনশানসের গাজাগামী যাত্রীরা একটি ইসরায়েলি সামরিক হেলিকপ্টারের আক্রমণের কথা জানান। ওই সময় ইসরায়েলি নৌবাহিনী একসঙ্গে থাউজেন্ড ম্যাডলিনস বহরের পালতোলা নৌকাগুলোও দখল করে নেয়।
দৃক বলছে, পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ-সমর্থিত গণহত্যা ও বেআইনি গাজা অবরোধ ভাঙার লক্ষ্যে ফ্রিডম ফ্লোটিলার এই জাহাজগুলিকে দখল করার কোনো আইনি অধিকার ইসরায়েলের নেই।
তাদের দাবি ১. গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা এই মুহূর্তে বন্ধ করতে হবে। ২. গাজায় ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধের অবসান হতে হবে। ৩. ফিলিস্তিনিদের কাছে সরাসরি মানবিক সাহায্য পৌঁছে দিতে হবে। ৪. ফ্রিডম ফ্লোটিলা গাজাগামী নৌবহর থেকে অপহৃত সকল সাংবাদিক, স্বাস্থ্যসেবাকর্মী এবং জাহাজের সকল নাবিককে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। ৫. ফ্রিডম ফ্লোটিলার গাজাগামী নৌবহরের উপর সামরিক আক্রমণের পূর্ণ আইনগত জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। ইসরায়েল সরকার প্রায় ২ বছর ধরে গাজায় গণমাধ্যমকর্মীদের যাতায়াত ও সংবাদ প্রবাহ বন্ধ করে রেখেছে।
শহিদুল আলমের মুক্তির দাবিতে সরব নেটিজেনরা: ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে অপহৃত হওয়ার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশি আলোকচিত্রী ও লেখক শহিদুল আলম। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ তথ্য জানান। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ।
সাদিকুর রহমান সাদিক লিখেছেন, ‘শহিদুল আলমের নিরাপদে প্রত্যাবর্তন বিষয়ে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
বেলাল রিজভী লিখেছেন, ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের অংশ হিসেবে গাজা অভিমুখে যাত্রারত কনশেনস জাহাজ থেকে বাংলাদেশের বিশিষ্ট আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) আটক করেছে। আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই-তাঁর অবিলম্বে মুক্তি নিশ্চিত করতে এবং প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।’
মো. আদনান সিকদার লিখেছেন, ‘শহিদুল আলমের নিরাপদে প্রত্যাবর্তন বিষয়ে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
আসিফ ইকবাল ইরন লিখেছেন, ‘আলোকচিত্রী ও লেখক শহিদুল আলমসহ ফ্রিডম ফ্লোটিলার সাংবাদিক, স্বাস্থ্যকর্মী ও মানবাধিকার কর্মীদের অপহরণ করেছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী!’
মুস্তাফিজ ফরায়েজী লিখেছেন, ‘আইডিএফ কর্তৃক আটককৃত শহিদুল আলমসহ গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার সকলের মুক্তি কামনা করি। বাংলাদেশের সরকারের এই বিষয়ে কাজ করা উচিত। তাছাড়া ফিলিস্তিনের মুক্তির পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান ও কার্যক্রম আরো জোরালো করা দরকারি।’
মো. নাসির উদ্দিন ফকির লিটন লিখেছেন, ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের অংশ হিসেবে গাজা অভিমুখে যাত্রারত কনশেন্স জাহাজ থেকে বাংলাদেশের বিশিষ্ট আলোকচিত্রী, লেখক, মানবতার প্রতীক শহিদুল আলমকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) আটক করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই-তাঁর অবিলম্বে মুক্তি নিশ্চিত করতে এবং প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
মাসুম পারভেজ লিখেছেন, ‘উনি আবু সাইদ, ওয়াসিমদের অগ্রজ। ভাঙবে তবু মচকাবে না। উই অল আর শহিদুল…’
মাহমুদ ইয়াসিন লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের খ্যাতিমান আলোকচিত্রী, শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলমকে কিডন্যাপ করেছে ইসরায়েলের ‘অ্যাকুপেশন ফোর্স’।’
আশিকুর রহমান সাদ লিখেছেন, ‘ইসরায়েলি দখলদার কর্তৃক সাংবাদিক শহিদুল আলমকে অপহরণ করায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’ জব্বার আল নাঈম লিখেছেন, ‘দখলদারের হাত থেকে শহিদুল আলমের মুক্তি চাই।’
‘কনশান্স’ জাহাজ আটকের খবর নিশ্চিত করেছে ফ্রিডম ফ্লোটিলা: বাংলাদেশি আলোকচিত্রী ও লেখক শহিদুল আলম এবং অন্যান্য অধিকারকর্মী ও চিকিৎসকদের বহনকারী ‘কনশান্স’ জাহাজ আটকের খবর নিশ্চিত করেছে ফ্রিডম ফ্লোটিলা। এক বিবৃতিতে গাজা ফ্রিডম ফ্লোটিলা জানিয়েছে যে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের কনভয়ে আক্রমণ করেছে এবং গাজার দিকে যাত্রা করার সময় বেশ কয়েকটি জাহাজকে আটক করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় যাওয়ার পথে কমপক্ষে দুটি নৌকায় উঠে পড়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বুধবার (৮ অক্টোবর) অন্তত তিনটি জাহাজ আটক করেছে। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা সামাজিক মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জানিয়েছে, গাজা সানবার্ডস, আলা আল-নাজ্জার ও আনাস আল-শরীফ নামের তিনটি জাহাজে হামলা চালিয়ে অবৈধভাবে লোকজনকে আটক করা হয়েছে। গাজা উপকূল থেকে প্রায় ২২০ কিলোমিটার দূরে বুধবার ভোরের দিকে এই ঘটনা ঘটেছে বলে তারা জানিয়েছে।
‘কনশান্স’ নামের একটি জাহাজেও আক্রমণ চালানো হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ওই জাহাজে শহিদুল আলমসহ ৯০ জনের বেশি সাংবাদিক, চিকিৎসক ও অধিকারকর্মী ছিলেন।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন জানিয়েছে, আটককৃত নৌবহরগুলোতে গাজার ক্ষুধার্ত হাসপাতালগুলোর জন্য ১ লাখ ১০ হাজার ডলারের বেশি মূল্যের ওষুধ, শ্বাসযন্ত্রের সরঞ্জাম ও পুষ্টিসামগ্রী ছিল।
গত কয়েক মাসে ইসরায়েল গাজায় প্রবেশের চেষ্টা করা একাধিক আন্তর্জাতিক সহায়তা বহরকে বাধা দিয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত এ অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গত সপ্তাহে ইসরায়েল একই সংগঠনের প্রায় ৪৫টি জাহাজ আটক করেছিল। এসব জাহাজে রাজনীতিক ও অধিকারকর্মীদের পাশাপাশি সুইডেনের জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও ছিলেন। ওই ঘটনার পর ইউরোপজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।
সানা/আপ্র/০৮/১০১/২০২৫