ঢাকা ০৫:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

শহর কেন গতিহীন?

  • আপডেট সময় : ০৯:৪৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২১
  • ১০৪ বার পড়া হয়েছে

তুষার আবদুল্লাহ : রোববার শুরু হলো নতুন কর্ম সপ্তাহ। কর্মযজ্ঞে ঝাঁপ দেওয়ার নকশা তৈরি করতে গিয়ে কূল-কিনারা পাচ্ছি না। সপ্তাহের কাজ সপ্তাহে তুলে আনতে পারবো কিনা এনিয়ে শঙ্কা বিস্তর। করোনার জন্যে আরোপ করা লকডাউন তুলে নেওয়ার পর, ঢাকা শহরের বাসিন্দা হিসেবে অভিজ্ঞতা ভয়ংকর। হাঁটাপথে দশ মিনিটের গন্তব্যে দেড় ঘণ্টায় পৌঁছানোর রেকর্ড আছে। বিমান বন্দর সড়ক, ধানম-ি, গুলশানসহ শহরের অলিগলি ছিল যানজটে স্থবির। যানজটের কারণেই বকেয়া রয়ে গেছে অনেক কাজ। গত সপ্তাহের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি নতুন কাজ নয়, পুরনো কাজই এ সপ্তাহে শেষ করা সম্ভব হবে না। কারণ এই শহরে একটি কাজ নিয়ে বের হলে দ্বিতীয় কাজটি শুরু করা সৌভাগ্যের ব্যাপার। এমন ভাগ্যবান নাগরিক শহরে দুর্লভ।

যানজটে বসে থেকে, যানজট পেরিয়ে এসে কারণ খুঁজি সব সময়ই। বেশিরভাগ সময়েই যুৎসই কারণ খুঁজে পাই না। গত সপ্তাহের যানজটের অন্যতম কারণ ছিল, শহরের বেশ কিছু প্রধান সড়কে সেবা সংস্থার তথাকথিত উন্নয়ন, মেরামত কাজ চলমান থাকা। একই সঙ্গে ঢাকার অলিগলি পথও উন্নয়নের নামে ক্ষতবিক্ষত থাকায় যানবাহনের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়েছে। আমলে রাখা দরকার উড়াল পথ ও মেট্রোরেলের জন্য এমনিতেই সড়কের কোমর সরু হয়েছে অনেকটা। ফলে সাধারণভাবেই যানবাহনের গতি শ্লথ কয়েক বছর ধরে। যানজটের অন্যতম আরেকটি কারণ – লকডাউনের জন্য ঢাকার বাইরে থেকে যানবাহন এতদিন ঢাকায় এসেছে কম। ঢাকার বাইরের মানুষ কাজ নিয়ে নিজের পরিবহন নিয়ে ঢাকায় ঢুকছে। সেই সঙ্গে বন্ধ থাকা উবার, পাঠাও চলতে শুরু করেছে পুরোদমে। এই চাপ সইবার ক্ষমতা নেই ঢাকার রাস্তার।

চলাচল করতে গিয়ে যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বরাবরই সামনে চলে আসে ঢাকার রাস্তায় চলাচল করা বাস। রাজধানীতে এমন অপরিচ্ছন্ন ও দৃষ্টিদূষণ বাস কীভাবে চলাচল করে? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে বরাবরই বিআরটিএ এবং ট্রাফিক বিভাগ বিব্রত। কত শত বাস রুট এই শহরে। বাসগুলো চলাচল করে একে বেঁকে । কোনও লেন মেনে চলে না। এবং রাস্তার মাঝখানে থেমে যাত্রী ওঠানামা করানো রামপুরা, মীরপুর, উত্তরা রুটে যানজটের অন্যতম মূল কারণ। ট্রাফিক সদস্যদের সামনে তারা এই কা-টি করলেও, ট্রাফিক পুলিশ নিরব। শোনা কথা, এই বাসগুলো সরকারের বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে আঁতাত করে চলে। তাই সড়কে তারা বুক চিতিয়েই চলতে পারে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক উদ্যোগ নিয়েছিলেন, কয়েকটি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে বাস ও বাস রুট নিয়ে আসার। কিন্তু তাঁর প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পটিও হয়তো প্রয়াত হয়েছে।

যানজট কমিয়ে আনতে ইউলুপ করা হয়েছে, কিন্তু উত্তরা চার নম্বর সেক্টরের ইউলুপটি ছাড়া বাকিগুলো প্রত্যাশা মেটাতে পারেনি। উল্টো যানজট দীর্ঘ করার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে জায়গাগুলোতে ইউটার্ন বা সরাসরি যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে আরেকটু নীরিক্ষার প্রয়োজন আছে। কারণ এই সিদ্ধান্তগুলো সঠিক না হাওয়াও যানজটের অন্যতম কারণ। ট্রাফিক সিগন্যাল স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলছে না বেশিরভাগ জায়গাতেই। ট্রাফিক পুলিশ নিজেদের অনুমান, ইচ্ছে ও বিশেষ ব্যক্তিদের চলাচল সহজ করে দিতে গিয়ে সাধারণ নাগরিকদের চলাচলকে দুর্ভোগের সীমানায় পৌঁছে দিচ্ছেন।

শুক্রবার আমরা স্বপ্নের মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল দেখলাম। নগরবাসীর কিছু অংশের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। কিছু অংশ বলছি এজন্য যে মীরপুর বা উত্তরা থেকে যারা মতিঝিল, নারায়ণগঞ্জ, কমলাপুর, ফার্মগেট আসা যাওয়া করবেন, তারা মেট্রোরেলের সুবিধা পাবেন। দুর্ভোগ ছাড়াই হয়তো গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন। বাকিদের কিন্তু পথে নামতেই হবে। বাসসহ মিশ্র যানবাহন থাকবেই পথে। সেই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য শৃঙ্খল ট্রাফিক ব্যবস্থা, সহনীয় সড়ক যোগাযোগের প্রয়োজন হবেই। সেই প্রয়োজন আরও কত প্রকল্প, পরিকল্পনার মাইলফলক পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে, সেই উত্তর জানা প্রয়োজন দুর্ভোগাক্রান্ত নাগরিকদের।
লেখক: গণমাধ্যম কর্মী

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শহর কেন গতিহীন?

আপডেট সময় : ০৯:৪৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২১

তুষার আবদুল্লাহ : রোববার শুরু হলো নতুন কর্ম সপ্তাহ। কর্মযজ্ঞে ঝাঁপ দেওয়ার নকশা তৈরি করতে গিয়ে কূল-কিনারা পাচ্ছি না। সপ্তাহের কাজ সপ্তাহে তুলে আনতে পারবো কিনা এনিয়ে শঙ্কা বিস্তর। করোনার জন্যে আরোপ করা লকডাউন তুলে নেওয়ার পর, ঢাকা শহরের বাসিন্দা হিসেবে অভিজ্ঞতা ভয়ংকর। হাঁটাপথে দশ মিনিটের গন্তব্যে দেড় ঘণ্টায় পৌঁছানোর রেকর্ড আছে। বিমান বন্দর সড়ক, ধানম-ি, গুলশানসহ শহরের অলিগলি ছিল যানজটে স্থবির। যানজটের কারণেই বকেয়া রয়ে গেছে অনেক কাজ। গত সপ্তাহের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি নতুন কাজ নয়, পুরনো কাজই এ সপ্তাহে শেষ করা সম্ভব হবে না। কারণ এই শহরে একটি কাজ নিয়ে বের হলে দ্বিতীয় কাজটি শুরু করা সৌভাগ্যের ব্যাপার। এমন ভাগ্যবান নাগরিক শহরে দুর্লভ।

যানজটে বসে থেকে, যানজট পেরিয়ে এসে কারণ খুঁজি সব সময়ই। বেশিরভাগ সময়েই যুৎসই কারণ খুঁজে পাই না। গত সপ্তাহের যানজটের অন্যতম কারণ ছিল, শহরের বেশ কিছু প্রধান সড়কে সেবা সংস্থার তথাকথিত উন্নয়ন, মেরামত কাজ চলমান থাকা। একই সঙ্গে ঢাকার অলিগলি পথও উন্নয়নের নামে ক্ষতবিক্ষত থাকায় যানবাহনের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়েছে। আমলে রাখা দরকার উড়াল পথ ও মেট্রোরেলের জন্য এমনিতেই সড়কের কোমর সরু হয়েছে অনেকটা। ফলে সাধারণভাবেই যানবাহনের গতি শ্লথ কয়েক বছর ধরে। যানজটের অন্যতম আরেকটি কারণ – লকডাউনের জন্য ঢাকার বাইরে থেকে যানবাহন এতদিন ঢাকায় এসেছে কম। ঢাকার বাইরের মানুষ কাজ নিয়ে নিজের পরিবহন নিয়ে ঢাকায় ঢুকছে। সেই সঙ্গে বন্ধ থাকা উবার, পাঠাও চলতে শুরু করেছে পুরোদমে। এই চাপ সইবার ক্ষমতা নেই ঢাকার রাস্তার।

চলাচল করতে গিয়ে যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বরাবরই সামনে চলে আসে ঢাকার রাস্তায় চলাচল করা বাস। রাজধানীতে এমন অপরিচ্ছন্ন ও দৃষ্টিদূষণ বাস কীভাবে চলাচল করে? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে বরাবরই বিআরটিএ এবং ট্রাফিক বিভাগ বিব্রত। কত শত বাস রুট এই শহরে। বাসগুলো চলাচল করে একে বেঁকে । কোনও লেন মেনে চলে না। এবং রাস্তার মাঝখানে থেমে যাত্রী ওঠানামা করানো রামপুরা, মীরপুর, উত্তরা রুটে যানজটের অন্যতম মূল কারণ। ট্রাফিক সদস্যদের সামনে তারা এই কা-টি করলেও, ট্রাফিক পুলিশ নিরব। শোনা কথা, এই বাসগুলো সরকারের বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে আঁতাত করে চলে। তাই সড়কে তারা বুক চিতিয়েই চলতে পারে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক উদ্যোগ নিয়েছিলেন, কয়েকটি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে বাস ও বাস রুট নিয়ে আসার। কিন্তু তাঁর প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পটিও হয়তো প্রয়াত হয়েছে।

যানজট কমিয়ে আনতে ইউলুপ করা হয়েছে, কিন্তু উত্তরা চার নম্বর সেক্টরের ইউলুপটি ছাড়া বাকিগুলো প্রত্যাশা মেটাতে পারেনি। উল্টো যানজট দীর্ঘ করার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে জায়গাগুলোতে ইউটার্ন বা সরাসরি যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে আরেকটু নীরিক্ষার প্রয়োজন আছে। কারণ এই সিদ্ধান্তগুলো সঠিক না হাওয়াও যানজটের অন্যতম কারণ। ট্রাফিক সিগন্যাল স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলছে না বেশিরভাগ জায়গাতেই। ট্রাফিক পুলিশ নিজেদের অনুমান, ইচ্ছে ও বিশেষ ব্যক্তিদের চলাচল সহজ করে দিতে গিয়ে সাধারণ নাগরিকদের চলাচলকে দুর্ভোগের সীমানায় পৌঁছে দিচ্ছেন।

শুক্রবার আমরা স্বপ্নের মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল দেখলাম। নগরবাসীর কিছু অংশের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। কিছু অংশ বলছি এজন্য যে মীরপুর বা উত্তরা থেকে যারা মতিঝিল, নারায়ণগঞ্জ, কমলাপুর, ফার্মগেট আসা যাওয়া করবেন, তারা মেট্রোরেলের সুবিধা পাবেন। দুর্ভোগ ছাড়াই হয়তো গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন। বাকিদের কিন্তু পথে নামতেই হবে। বাসসহ মিশ্র যানবাহন থাকবেই পথে। সেই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য শৃঙ্খল ট্রাফিক ব্যবস্থা, সহনীয় সড়ক যোগাযোগের প্রয়োজন হবেই। সেই প্রয়োজন আরও কত প্রকল্প, পরিকল্পনার মাইলফলক পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে, সেই উত্তর জানা প্রয়োজন দুর্ভোগাক্রান্ত নাগরিকদের।
লেখক: গণমাধ্যম কর্মী