ঢাকা ০৯:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫

শরীরের ভেতরে গিয়ে টিস্যু মেরামত করে এই থ্রিডি প্রিন্টার

  • আপডেট সময় : ০৯:১৮:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মার্চ ২০২৩
  • ১০৯ বার পড়া হয়েছে

প্রযুক্তি ডেস্ক : গবেষকরা এমন এক নমনীয় থ্রিডি বায়োপ্রিন্টার তৈরি করেছেন, যা সরাসরি অঙ্গ বা টিস্যুর ওপর বিভিন্ন জৈব উপাদানের আলাদা ‘লেয়ার’ তৈরি করে দিতে পারে। সিডনির ‘ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস (ইউএনএসডব্লিউ)’র গবেষকদের প্রবর্তিত এই ব্যবস্থায় বায়োপ্রিন্টিংয়ের অন্যান্য প্রক্রিয়ার বিপরীতে শরীরে সরঞ্জাম প্রবেশ কমিয়ে আনা যাবে, যা সম্ভবত বড় পরিসরে অস্ত্রোপচার বা অঙ্গ অপসারণের মতো বিষয়গুলো এড়াতে সাহায্য করবে বলে উল্লেখ করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট এনগ্যাজেট।
অন্তত তাত্ত্বিকভাবে হলেও এই দাবি ভবিষ্যদ্বাণীর মতো শোনাচ্ছে। তবে, গবেষণা দল সতর্কবার্তা দিয়েছে, এই পদ্ধতি মানুষের ওপর প্রয়োগ উপযোগী হতে এখনও পাঁচ থেকে সাত বছর বাকি।
‘এফথ্রিডিবি’ নামে পরিচিত এই প্রিন্টারের একটি কোমল রোবটিক বাহু রয়েছে, যা জ্যান্ত কোষওয়ালা বিভিন্ন জৈব উপাদান ও ক্ষতিগ্রস্ত অভ্যন্তরীণ অঙ্গ বা টিস্যুতে জুড়ে দিতে পারে। এর ‘সর্পিল গঠন মুখ বা মলদ্বারের মাধ্যমে মানব শরীরে প্রবেশ করে, যেখানে একজন পাইলট/ সার্জন হাতের বিভিন্ন সংকেতের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ অংশের দিকে যাওয়ার দিক নির্দেশনা দেন।
পাশাপাশি, এর বিভিন্ন ‘জেট’ লক্ষ্য করা জায়গায় পানি ছিটাতে পারে। আর বৈদ্যুতিক শল্যছুরিকার মতো আকারে দ্বিগুণ হতে পারে এর ‘প্রিন্টিং নজল’। গবেষণা দলের প্রত্যাশা, তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারের বেলায় এর ‘মাল্টিফাংশনাল’ পদ্ধতি একদিন ‘অল-ইন-ওয়ান’ (খোদাই, পরিচ্ছন্নতা ও প্রিন্টিংয়ের) টুল হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে।
প্রকৌশল বিষয়ে বিশ্বের শীর্ষ সাময়িকী ‘আইইইই স্পেকট্রামের’ সংক্ষিপ্ত বিবরণী অনুসারে, প্রিন্টারের রোবটিক বাহু হাইড্রোলিক ব্যবস্থার মাধ্যমে নিজ ‘অ্যাকুরেটরের’ নীচে তিনটি নরম কাপড় ব্যবহার করে। এতে ব্যবহৃত হয়েছে ‘ডিসি-মটর চালিত’ সিরিঞ্জ, যা পানিকে অ্যাকুরেটরে নিতে সহায়তা করে।
ডেস্কটপ সংস্করণের থ্রিডি প্রিন্টারের মতোই, এর বাহু ও ফ্লেক্সিবল বা নমনীয় প্রিন্টিং মাথা চালিত হয় ‘থ্রি ডিগ্রিজ অফ ফ্রিডম (ডিওএফ)’ নামের ব্যবস্থার মাধ্যমে। পাশাপাশি, এতে আকারে ছোট একটি নমনীয় ক্যামেরাও রয়েছে, যা মেশিন পরিচালককে সরাসরি কার্যক্রম দেখার সুযোগ করে দেয়। গবেষণা দলটি ডিভাইসটির ওপর নিজেদের প্রথম ল্যাব পরীক্ষা চালিয়েছে চকলেট ও তরল সিলিকনের মতো বিভিন্ন অজৈব উপাদান ব্যবহার করে। পরবর্তীতে কাচের পৃষ্ঠে এক কৃত্রিম কোলন মুদ্রিত বিভিন্ন জৈব উপাদানে যাওয়ার আগে তারা একটি শূকরের কিডনিতে এটি পরীক্ষা করে দেখেন।
“আমরা দেখেছি কোষগুলো প্রতিদিনই বৃদ্ধি পায়। আর সপ্তম দিন অর্থাৎ পরীক্ষার শেষ দিনে এটি চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।” –বলেন এই গবেষণা দলের সহ-নেতা ও ‘ইউএনএসডব্লিউ’র ‘গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ বায়োমেডিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক থান হো ডো। “এর ফলাফলে দেখা যায়, এন্ডোস্কোপিক সাবমিউকোসাল ডিসেকশন পদ্ধতির জন্য নিজেকে একটি ‘অল-ইন-ওয়ান এন্ডোস্কপিক টুল’ হিসেবে তৈরি করার ব্যাপক সম্ভাবনা আছে এফথ্রিডিবি’র।”
গবেষণা দলের বিশ্বাস, এই ডিভাইসের অপার সম্ভাবনা থাকলেও বাস্তব জগতে এর প্রবেশাধিকারের জন্য একে আরও বেশ কয়েকটি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এর পরবর্তী ধাপগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাণী ও এমনকি মানুষের ওপর এটি ব্যবহার করে গবেষণা চালানো। ডো বিশ্বাস করেন, এটি বাস্তবায়িত হতে এখনও পাঁচ থেকে সাত বছর বাকি। তবে, ‘পেনসিলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি’র প্রকৌশল বিজ্ঞান ও মেকানিক্স বিভাগের অধ্যাপক ইব্রাহিম অজবোলাত মনে করেন, “এর বাণিজ্যিকরণ এখন কেবলই সময়ের ব্যাপার।”

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

গভীর সংস্কার না করলে স্বৈরাচার ফিরে আসবে

শরীরের ভেতরে গিয়ে টিস্যু মেরামত করে এই থ্রিডি প্রিন্টার

আপডেট সময় : ০৯:১৮:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মার্চ ২০২৩

প্রযুক্তি ডেস্ক : গবেষকরা এমন এক নমনীয় থ্রিডি বায়োপ্রিন্টার তৈরি করেছেন, যা সরাসরি অঙ্গ বা টিস্যুর ওপর বিভিন্ন জৈব উপাদানের আলাদা ‘লেয়ার’ তৈরি করে দিতে পারে। সিডনির ‘ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস (ইউএনএসডব্লিউ)’র গবেষকদের প্রবর্তিত এই ব্যবস্থায় বায়োপ্রিন্টিংয়ের অন্যান্য প্রক্রিয়ার বিপরীতে শরীরে সরঞ্জাম প্রবেশ কমিয়ে আনা যাবে, যা সম্ভবত বড় পরিসরে অস্ত্রোপচার বা অঙ্গ অপসারণের মতো বিষয়গুলো এড়াতে সাহায্য করবে বলে উল্লেখ করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট এনগ্যাজেট।
অন্তত তাত্ত্বিকভাবে হলেও এই দাবি ভবিষ্যদ্বাণীর মতো শোনাচ্ছে। তবে, গবেষণা দল সতর্কবার্তা দিয়েছে, এই পদ্ধতি মানুষের ওপর প্রয়োগ উপযোগী হতে এখনও পাঁচ থেকে সাত বছর বাকি।
‘এফথ্রিডিবি’ নামে পরিচিত এই প্রিন্টারের একটি কোমল রোবটিক বাহু রয়েছে, যা জ্যান্ত কোষওয়ালা বিভিন্ন জৈব উপাদান ও ক্ষতিগ্রস্ত অভ্যন্তরীণ অঙ্গ বা টিস্যুতে জুড়ে দিতে পারে। এর ‘সর্পিল গঠন মুখ বা মলদ্বারের মাধ্যমে মানব শরীরে প্রবেশ করে, যেখানে একজন পাইলট/ সার্জন হাতের বিভিন্ন সংকেতের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ অংশের দিকে যাওয়ার দিক নির্দেশনা দেন।
পাশাপাশি, এর বিভিন্ন ‘জেট’ লক্ষ্য করা জায়গায় পানি ছিটাতে পারে। আর বৈদ্যুতিক শল্যছুরিকার মতো আকারে দ্বিগুণ হতে পারে এর ‘প্রিন্টিং নজল’। গবেষণা দলের প্রত্যাশা, তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারের বেলায় এর ‘মাল্টিফাংশনাল’ পদ্ধতি একদিন ‘অল-ইন-ওয়ান’ (খোদাই, পরিচ্ছন্নতা ও প্রিন্টিংয়ের) টুল হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে।
প্রকৌশল বিষয়ে বিশ্বের শীর্ষ সাময়িকী ‘আইইইই স্পেকট্রামের’ সংক্ষিপ্ত বিবরণী অনুসারে, প্রিন্টারের রোবটিক বাহু হাইড্রোলিক ব্যবস্থার মাধ্যমে নিজ ‘অ্যাকুরেটরের’ নীচে তিনটি নরম কাপড় ব্যবহার করে। এতে ব্যবহৃত হয়েছে ‘ডিসি-মটর চালিত’ সিরিঞ্জ, যা পানিকে অ্যাকুরেটরে নিতে সহায়তা করে।
ডেস্কটপ সংস্করণের থ্রিডি প্রিন্টারের মতোই, এর বাহু ও ফ্লেক্সিবল বা নমনীয় প্রিন্টিং মাথা চালিত হয় ‘থ্রি ডিগ্রিজ অফ ফ্রিডম (ডিওএফ)’ নামের ব্যবস্থার মাধ্যমে। পাশাপাশি, এতে আকারে ছোট একটি নমনীয় ক্যামেরাও রয়েছে, যা মেশিন পরিচালককে সরাসরি কার্যক্রম দেখার সুযোগ করে দেয়। গবেষণা দলটি ডিভাইসটির ওপর নিজেদের প্রথম ল্যাব পরীক্ষা চালিয়েছে চকলেট ও তরল সিলিকনের মতো বিভিন্ন অজৈব উপাদান ব্যবহার করে। পরবর্তীতে কাচের পৃষ্ঠে এক কৃত্রিম কোলন মুদ্রিত বিভিন্ন জৈব উপাদানে যাওয়ার আগে তারা একটি শূকরের কিডনিতে এটি পরীক্ষা করে দেখেন।
“আমরা দেখেছি কোষগুলো প্রতিদিনই বৃদ্ধি পায়। আর সপ্তম দিন অর্থাৎ পরীক্ষার শেষ দিনে এটি চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।” –বলেন এই গবেষণা দলের সহ-নেতা ও ‘ইউএনএসডব্লিউ’র ‘গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ বায়োমেডিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক থান হো ডো। “এর ফলাফলে দেখা যায়, এন্ডোস্কোপিক সাবমিউকোসাল ডিসেকশন পদ্ধতির জন্য নিজেকে একটি ‘অল-ইন-ওয়ান এন্ডোস্কপিক টুল’ হিসেবে তৈরি করার ব্যাপক সম্ভাবনা আছে এফথ্রিডিবি’র।”
গবেষণা দলের বিশ্বাস, এই ডিভাইসের অপার সম্ভাবনা থাকলেও বাস্তব জগতে এর প্রবেশাধিকারের জন্য একে আরও বেশ কয়েকটি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এর পরবর্তী ধাপগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাণী ও এমনকি মানুষের ওপর এটি ব্যবহার করে গবেষণা চালানো। ডো বিশ্বাস করেন, এটি বাস্তবায়িত হতে এখনও পাঁচ থেকে সাত বছর বাকি। তবে, ‘পেনসিলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি’র প্রকৌশল বিজ্ঞান ও মেকানিক্স বিভাগের অধ্যাপক ইব্রাহিম অজবোলাত মনে করেন, “এর বাণিজ্যিকরণ এখন কেবলই সময়ের ব্যাপার।”