মিনহাজ উদ্দীন শরীফ : দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে সৃষ্টি,বাবা মায়ের সাথে শহরে বেড়ে উঠে। শহরে উঁচু উঁচু বিল্ডিংয়ের জন্য সূর্য দেখা যায় না বললেই চলে। সৃষ্টি সকালের সূর্য দেখার জন্য কত বাহানা করে কিন্তু বাবা মা বাসা থেকে যেতেই দেয় না, তারা কখনো ছাঁদে নিয়ে সূর্য দেখাবে এই সুযোগ ও তাদের মেলেনি। কারণ দু’জনেই সরকারি চাকরিজীবি, সকালে বাসা থেকে অফিসে যায় বিকেলে বাসায় ফিরে, এসে ফ্রেশ হয়ে বাসার টুকটাক কাজে বাবা মা দু’জনেই হাত লাগায়।
- অনেক সময় ব্যস্ততার জন্য তারা সৃষ্টির খেয়াল রাখতেও ভুলে যায়। সৃষ্টি ছোট হলেও এই নিয়ে বাবা মায়ের প্রতি তার বিন্দুমাত্র অভিমান নেই। তারপরও বাবা মায়ের সাথে এখানে সেখানে ঘুরতে যাওয়ার আগ্রহ মনে পোষে কিন্তু মুখ ফোটে আর বলা হয় না।এভাবেই সৃষ্টির ইচ্ছা গুলো ছাপা পড়ে যায়।
-হঠাৎ একদিন বাবা এসে বললো, ‘সৃষ্টি গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যেতে চাও কি? সৃষ্টি বলে,’ আব্বু সেখানে কে কে থাকেন,বাবা বল তোমার দাদুভাই আর দিদা যাদের সাথে প্রতি সাপ্তাহে টেলিফোনে কথা বলো। সৃষ্টি খুশিতে আত্মহারা দাদু দিদার কাছে যাওয়ার জন্য হ্যাঁ বলে দিলো। এদিকে বাবা মা দু’দিনের মধ্যেই এক সাপ্তার ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যায়।
-গ্রামের বাড়িতে সৃষ্টির প্রথম ঘুম ভাঙল মুয়াজ্জিনের মধুর আযানের ধ্বনিতে এবং পাখিদের
কলতানে। গ্রামের মনোরম পরিবেশ দেখে সৃষ্টি বিস্মিত হয়ে গেলো। আফসোস করে বলে শহরে এই সব ক্যান দেখা যায় না, আর বাবা মা এতো সুন্দর পরিবেশ ছেড়ে শহরেই ক্যান চলে গেলো। এসব ভাবতে ভাবতেই ডাক আসলো নাশতা খাওয়ার জন্য। সকালের নাশতা খেতে সৃষ্টি টেবিল গেলো। হঠাৎ জানলা দিয়ে চেয়ে দেখে গগনে শুভ্র মেঘের ভেলা হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে।
-সৃষ্টি দাদুকে বললো দাদু আকাশে এসব কি? দাদু বললো,’ এইসব তো মেঘের দল তুমি জানো না? তোমার বাবা মা তোমাকে বলেনি শরতের প্রকৃতি সম্পর্কে! সৃষ্টি বললো নাহ দাদু, সৃষ্টি আগ্রহ নিয়ে বলে উঠলো,’ দাদু আমার পাঠ্যবইয়ে ছয়টি ঋতু এর মধ্যে আপনি যে নামটা বলেছেন এটা পড়েছি, দাদু, বলে শুধু ছয় ঋতু পড়েছো? এর সম্পর্কে জানো না? সৃষ্টি বলে তাতো জানি না।
-দাদু বলেন মন খারাপ করো না দাদুভাই আমি তোমাকে এক্ষুনি শরৎ ঋতু সম্পর্কে বলছি।
দাদু বললো, ‘বর্তমানে এখন বাংলাদেশে শরৎ ঋতু বিরাজমান,বাতাসে শিউলি ফুলের সুবাস ছড়িয়ে আসে শরৎ ঋতু। শরৎকালে কী কী ফুল ফুটে তুমি কি তা জানো? সৃষ্টি বলে দাদু কাশফুল ফুটে এটা বাবার মুখে শুনেছিলাম এছাড়া আমি জানি না। দাদু বলেন, ঠিক আছে, আমিও এখন শরতের ফুল সম্পর্কে বিস্তারিত তোমায় বলছি। - শরতের ফুল, হিমঝাুরি,গগনশিরীষ, ছাতিম,পাখিফুল,পান্থপাদপ,বকফুল,শেফালি,
শিউলি,কালিয়েন্ড্রা কাশফুল ইত্যাদি।
-এখন শোনো শরৎকাল সম্পর্কে ভাদ্র-আশ্বিন দুই মাস শরৎকাল। এ সময় বর্ষার কালো মেঘ শুভ্র হয়ে স্বচ্ছল নীল আকাশে তুলোর মতো ভেসে বেড়ায়। নদীর তীরে বসে সাদা কাশফুলের মেলা। বিকেল বেলা মালা গেঁথে উড়ে চলে সাদা বকের সারি,সবুজ ঢেউয়ের দোলায় দুলে ওঠে ধানের ক্ষেত। রাতের আকাশে জ্বলজ্বল করে অজস্র তারার মেলা।
-সাদা শাপলার হাসিতে বিলের জল ঝলমল ঝলমল করে।
তাইতো কবি গেয়েছেন-
এই শরতে রোদ আর মেঘের
লুকোচুরি খেলা;
কাশফুলেদের নৃত্য দেখে
কাটে সারাবেলা।
শরতের এই অপরুপ রূপের জন্যই বলা হয় ঋতুর রাণি।
দাদুর মুখে শরতের গল্প শুনে সৃষ্টির মন জুড়িয়ে গেলো,দাদু বলেন,’ দাদুভাই তুমি এসব বিকালে নিজ চোখে দেখতে পারবে। দাদুর কথা মতো তারা বিকালে গ্রাম পরিদর্শন করতে গেলো। দাদুর কাছে যা শুনেছিল তার এখন বিন্দু মিথ্যে নয়, একদম হুবহু মিলে গেছে। এ-সব দেখে সৃষ্টি পাখির মতো হাওয়ার তালে দু’হাত উড়াচ্ছে, এবং কাশফুলদের দু’হাতে টেনে আলিঙ্গন করছে, এর কিছুক্ষণ পরেই গোধুলি একাকার হয়ে সন্ধ্যার চাদরে সমগ্র আকাশ ঢাকা পড়লো।
-দিন শেষে যেমন করে নীড় হারা পাখিরা আপন নীড়ে আশ্রয় নেন। তেমনি ভাবেই সৃষ্টি সাতদিনের অতিথি হয়ে দাদুর বাড়িতে এসে শরতের প্রকৃতি উপভোগ করে,শহরের মেয়ে আবার শহর চলে গেলো।