ঢাকা ০৫:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫

শব্দহীন কাটানো মুহূর্তই বাড়িয়ে দেয় মনের যোগসূত্র

  • আপডেট সময় : ০৪:৫৭:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫
  • ৪৬ বার পড়া হয়েছে

লাইফস্টাইল ডেস্ক: দাম্পত্য জীবনে সুখী থাকার ফর্মুলা কী, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে নানাজনে নানা কথা বলবেন। মনোবিদদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, সম্পর্ক ভালো রাখতে মন খুলে কথা বলা জরুরি। কারো আবার মত- ঝগড়া করলে মনের জমা অভিমান-ক্ষোভ বের করে দিলেও দুই মানুষের মধ্যে তৈরি হওয়া দূরত্ব কমে যেতে পারে। সম্পর্ক থাকলে ঝগড়া, মান-অভিমান থাকবেই; থাকবে ভালবাসাও। তবে সব সময় মনের কথা কি শব্দেই প্রকাশ করতে হবে?

মনোবিদেরা অনেক সময় বলেন- বহু কথায় যে কাজ হয় না, হাজার কথাতেও যা বোঝানো যায় না; ওই কাজ করে দিতে পারে নীরবতা।
নৈঃশব্দ্যেরও ভাষা হয়। ওই ভাষার কথাই প্রকাশিত হলো সাম্প্রতিক সমীক্ষায়। দিনের শেষে পরস্পরের সঙ্গে অনর্গল কথা নয়; বরং শব্দহীন কাটানো মুহূর্তই বাড়িয়ে দিতে পারে দুটি মানুষের মনের যোগসূত্র- বলছে ব্রিটেনের দি ইউনিভার্সিটি অফ রিডিংয়ের সমীক্ষা। তবে রাগ, অভিমানে কথা বন্ধ করে দেওয়া নয়, নিঃশব্দে সঙ্গীর সঙ্গে সুন্দর মুহূর্ত কাটানোর কথাই উঠে এসেছে এখানে। নৈঃশব্দ্য দুটি মানুষের সংযোগের ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, তা জানার জন্য, মনোজগতে তার প্রভাবের আভাস পেতেই সমীক্ষার সূচনা। ‘মোটিভেশন অ্যান্ড ইমোশন’ নামে জার্নালে প্রকাশিত সেই সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, একেবারে চুপ করে একে অন্যের সঙ্গে বসে থেকেও সেই মুহূর্তকে উপভোগ করা এক সুন্দর সুস্থ সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়।

মনে প্রশ্ন উঠতেই পারে, তাহলে কি স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের সঙ্গে কথা বন্ধ করে দেবেন? মান-অভিমান না মিটিয়ে নৈঃশব্দ্যের পন্থাকেই শ্রেয় মনে করবেন? অনেক সময়েই দু’জন মানুষের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। বন্ধ হয়ে যায় কথা। সেই নীরবতাও কি তবে সম্পর্ক মজবুত করতে পারে?
সমীক্ষার জন্য বেশ কিছু দম্পতিকে বলা হয়েছিল কথা না বলে চুপ থাকতে। এক দলকে বলা হয়েছিল, নীরব থাকার সময় অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা মনে করতে। বিরক্ত হলে যেমন কেউ কথা বলতে চান না, তেমন মানসিকতা থেকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছিল। আর এক দলকে বলা হয়েছিল, শাস্তি দেওয়া হয়েছে, এমন মনোভাব নিয়ে চুপ থাকতে। আর এক দল নৈঃশব্দ্যকে তাদের সঙ্গীর সঙ্গে উপভোগ করেছিলেন।
সমীক্ষকেরা দেখেন, রাগ, অভিমান বা তিক্ত কথা স্মরণ করে নীরব থাকায় মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে কোনো তিক্ত মানসিকতা ছাড়া স্বাভাবিক ভাবে নীরব থাকা পরস্পরের মধ্যে সংযোগ বাড়িয়েছে।

দলের মুখ্য সমীক্ষক নেট্টা ওয়েনস্টাইন বলছেন, অসন্তোষ নয়; বরং ভালবাসা, অন্তরঙ্গতার ভাষার কথাই এ ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে। নীরবতায় স্বতঃস্ফূর্ততা থাকা দরকার, জানাচ্ছেন তিনি। অন্তরঙ্গতা না থাকলেও, অশান্তি ছাড়া দু’জন মানুষের মধ্যে নিঃশব্দে কাটানো সময়ও অর্থবহ, সুম্পর্কের ইঙ্গিতবাহী হয়ে উঠতে পারে- বলছে এই সমীক্ষা।

আমেরিকার নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী ক্লডিয়া হ্যাসে অবশ্য এই সমীক্ষার ফলাফলকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ। তার বক্তব্য- উদ্দেশ্যপূর্ণ নীরব সংযোগই দাম্পত্যে মাধুর্য এনে দিতে পারে। দু’জন একসঙ্গে গান শুনছেন, হাইকিং করছেন, নীরব থেকেও যখন দু’জনেই সেই মুহূর্ত উপভোগ করছেন; তখন তাদের মধ্যে ভালবাসা ও বন্ধন দৃঢ় হয়।
নেট্টার কথায়- সব সময় দু’জন মানুষের মধ্যে কথার প্রয়োজন হয় না; বরং নৈঃশব্দ্যই অনেক বেশি অর্থবহ হয়ে উঠতে পারে অনেক ক্ষেত্রে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শব্দহীন কাটানো মুহূর্তই বাড়িয়ে দেয় মনের যোগসূত্র

আপডেট সময় : ০৪:৫৭:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫

লাইফস্টাইল ডেস্ক: দাম্পত্য জীবনে সুখী থাকার ফর্মুলা কী, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে নানাজনে নানা কথা বলবেন। মনোবিদদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, সম্পর্ক ভালো রাখতে মন খুলে কথা বলা জরুরি। কারো আবার মত- ঝগড়া করলে মনের জমা অভিমান-ক্ষোভ বের করে দিলেও দুই মানুষের মধ্যে তৈরি হওয়া দূরত্ব কমে যেতে পারে। সম্পর্ক থাকলে ঝগড়া, মান-অভিমান থাকবেই; থাকবে ভালবাসাও। তবে সব সময় মনের কথা কি শব্দেই প্রকাশ করতে হবে?

মনোবিদেরা অনেক সময় বলেন- বহু কথায় যে কাজ হয় না, হাজার কথাতেও যা বোঝানো যায় না; ওই কাজ করে দিতে পারে নীরবতা।
নৈঃশব্দ্যেরও ভাষা হয়। ওই ভাষার কথাই প্রকাশিত হলো সাম্প্রতিক সমীক্ষায়। দিনের শেষে পরস্পরের সঙ্গে অনর্গল কথা নয়; বরং শব্দহীন কাটানো মুহূর্তই বাড়িয়ে দিতে পারে দুটি মানুষের মনের যোগসূত্র- বলছে ব্রিটেনের দি ইউনিভার্সিটি অফ রিডিংয়ের সমীক্ষা। তবে রাগ, অভিমানে কথা বন্ধ করে দেওয়া নয়, নিঃশব্দে সঙ্গীর সঙ্গে সুন্দর মুহূর্ত কাটানোর কথাই উঠে এসেছে এখানে। নৈঃশব্দ্য দুটি মানুষের সংযোগের ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, তা জানার জন্য, মনোজগতে তার প্রভাবের আভাস পেতেই সমীক্ষার সূচনা। ‘মোটিভেশন অ্যান্ড ইমোশন’ নামে জার্নালে প্রকাশিত সেই সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, একেবারে চুপ করে একে অন্যের সঙ্গে বসে থেকেও সেই মুহূর্তকে উপভোগ করা এক সুন্দর সুস্থ সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়।

মনে প্রশ্ন উঠতেই পারে, তাহলে কি স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের সঙ্গে কথা বন্ধ করে দেবেন? মান-অভিমান না মিটিয়ে নৈঃশব্দ্যের পন্থাকেই শ্রেয় মনে করবেন? অনেক সময়েই দু’জন মানুষের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। বন্ধ হয়ে যায় কথা। সেই নীরবতাও কি তবে সম্পর্ক মজবুত করতে পারে?
সমীক্ষার জন্য বেশ কিছু দম্পতিকে বলা হয়েছিল কথা না বলে চুপ থাকতে। এক দলকে বলা হয়েছিল, নীরব থাকার সময় অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা মনে করতে। বিরক্ত হলে যেমন কেউ কথা বলতে চান না, তেমন মানসিকতা থেকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছিল। আর এক দলকে বলা হয়েছিল, শাস্তি দেওয়া হয়েছে, এমন মনোভাব নিয়ে চুপ থাকতে। আর এক দল নৈঃশব্দ্যকে তাদের সঙ্গীর সঙ্গে উপভোগ করেছিলেন।
সমীক্ষকেরা দেখেন, রাগ, অভিমান বা তিক্ত কথা স্মরণ করে নীরব থাকায় মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে কোনো তিক্ত মানসিকতা ছাড়া স্বাভাবিক ভাবে নীরব থাকা পরস্পরের মধ্যে সংযোগ বাড়িয়েছে।

দলের মুখ্য সমীক্ষক নেট্টা ওয়েনস্টাইন বলছেন, অসন্তোষ নয়; বরং ভালবাসা, অন্তরঙ্গতার ভাষার কথাই এ ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে। নীরবতায় স্বতঃস্ফূর্ততা থাকা দরকার, জানাচ্ছেন তিনি। অন্তরঙ্গতা না থাকলেও, অশান্তি ছাড়া দু’জন মানুষের মধ্যে নিঃশব্দে কাটানো সময়ও অর্থবহ, সুম্পর্কের ইঙ্গিতবাহী হয়ে উঠতে পারে- বলছে এই সমীক্ষা।

আমেরিকার নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী ক্লডিয়া হ্যাসে অবশ্য এই সমীক্ষার ফলাফলকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ। তার বক্তব্য- উদ্দেশ্যপূর্ণ নীরব সংযোগই দাম্পত্যে মাধুর্য এনে দিতে পারে। দু’জন একসঙ্গে গান শুনছেন, হাইকিং করছেন, নীরব থেকেও যখন দু’জনেই সেই মুহূর্ত উপভোগ করছেন; তখন তাদের মধ্যে ভালবাসা ও বন্ধন দৃঢ় হয়।
নেট্টার কথায়- সব সময় দু’জন মানুষের মধ্যে কথার প্রয়োজন হয় না; বরং নৈঃশব্দ্যই অনেক বেশি অর্থবহ হয়ে উঠতে পারে অনেক ক্ষেত্রে।