ঢাকা ০২:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শত শত কোটি টাকার রপ্তানি পণ্য চুরি হচ্ছে: বিজিএমইএ

  • আপডেট সময় : ০২:৩৮:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ১০৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রায় দেড় যুগ ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুই হাজারের বেশি কাভার্ডভ্যান থেকে শত শত কোটি টাকার রপ্তানিযোগ্য তৈরি পোশাক পণ্য চুরি করেছে একটি চক্র। ২০২২ সালে প্রায় ২০-২২টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এই অভিযোগ করেছেন দেশের পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টায় পোশাক শিল্পে আইনশৃঙ্খলাজনিত বিষয় নিয়ে আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বিজিএমইএ সভাপতি এ অভিযোগ করেন। রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সের সভাকক্ষে এই সভা হয়। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘গত জানুয়ারি মাসের শুরুতে ব্রাজিল থেকে ভিডিওর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারককে জানানো হয়— প্রায় বেশিরভাগ কার্টনের ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ পোশাক তারা বুঝে পাননি। এই শিপমেন্টে ২৬ হাজারের বেশি পোশাক ছিল। তখন প্রায় আট হাজার পোশাক চুরি হয় এবং একটি চোর চক্রের মূলহোতা শাহেদসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আশা করছি বাকিদেরও গ্রেপ্তার করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’ সংবাদ সম্মেলনে ফারুক হাসান বলেন, পোশাক পণ্য চুরির বিষয়টি নিয়ে আমরা দফায় দফায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধান ও ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সর্বশেষ র‌্যাব গত ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পোশাক শিল্পের পণ্য চুরির একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মূলহোতা শাহেদসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। ফারুক হাসান বলেন, চক্রের প্রধান হোতা গডফাদার শাহেদের বিরুদ্ধে ১৭ থেকে ১৮টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও আছে। ধরা পড়ার পর শাহেদ জানিয়েছেন, ক্রেতাদের স্যাম্পল দেখে তারা সেই স্যাম্পলের বাজার দর যাচাই করেন। যদি পণ্যের মূল্যমান ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকার মধ্যে হয়, তবেই তারা এ ধরনের চুরির অভিযান চালায়। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, পোশাক শিল্প আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। বিশ্বব্যাপী নিরাপদ কর্মক্ষেত্রের রোল মডেলের তকমা পেয়েছে পোশাক শিল্প। গত ১০ বছরে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, শ্রমিকের কল্যাণ ও পরিবেশবান্ধব শিল্প নির্মাণে পরিশ্রম করেছি, বিনিয়োগ করেছি এবং সফলতা পেয়েছি, তা সমগ্র বিশ্বের প্রশংসা অর্জন করেছে।

পোশাক শিল্প মালিকদের এই নেতা বলেন, মহাসড়কে পোশাক শিল্পের পণ্য চুরি রপ্তানিকারকদের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। বিজিএমইএ পোশাক শিল্পের চুরি রোধে বছরের পর বছর ধরে মহাসড়কে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য দাবি জানিয়ে আসছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে র্যা ব ও ডিবিসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা সংস্থা একাধিক চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু চুরির মামলা হওয়ায় আইনের দুর্বলতার কারণে চোর চক্র ১৫ দিন থেকে এক মাসের মধ্যে জামিনে বের হয়ে আসে। এরপর পুনরায় একই কাজ করতে থাকে। তিনি বলেন, পোশাক শিল্পের অসৎ কর্মচারী এসব অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। তাদের আইনের আওতায় দ্রুত আনা হোক আনা হোক। এদিকে মহাসড়কে পোশাক চুরি রোধে বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা দিয়েছে বিজিএমইএ। সেগুলো হলো—
১. ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের চলমান কাজ আগামী মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। মহাসড়কে গার্মেন্টস পণ্য চুরির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কতিপয় নাম সর্বস্ব কোম্পানি এসব চুরির মালামাল কিনে স্টকলট হিসেবে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। স্টকলট রপ্তানির ক্ষেত্রে মালের উৎস নিশ্চিত করতে হবে।

৩. প্রয়োজনে বিজিএমইএ/বিকেএমইএ থেকে সনদপত্র গ্রহণের মাধ্যমে রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে।
৪. চোর চক্রকে ধরতে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দাদেরও কাজে লাগাতে হবে।
৫. কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতি, কাভার্ডভ্যান চালক ও হেলপারদের ডাটাবেইজ প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্টদের কাছে সেই তথ্য হস্তান্তর করতে হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শত শত কোটি টাকার রপ্তানি পণ্য চুরি হচ্ছে: বিজিএমইএ

আপডেট সময় : ০২:৩৮:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রায় দেড় যুগ ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুই হাজারের বেশি কাভার্ডভ্যান থেকে শত শত কোটি টাকার রপ্তানিযোগ্য তৈরি পোশাক পণ্য চুরি করেছে একটি চক্র। ২০২২ সালে প্রায় ২০-২২টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এই অভিযোগ করেছেন দেশের পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টায় পোশাক শিল্পে আইনশৃঙ্খলাজনিত বিষয় নিয়ে আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বিজিএমইএ সভাপতি এ অভিযোগ করেন। রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সের সভাকক্ষে এই সভা হয়। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘গত জানুয়ারি মাসের শুরুতে ব্রাজিল থেকে ভিডিওর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারককে জানানো হয়— প্রায় বেশিরভাগ কার্টনের ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ পোশাক তারা বুঝে পাননি। এই শিপমেন্টে ২৬ হাজারের বেশি পোশাক ছিল। তখন প্রায় আট হাজার পোশাক চুরি হয় এবং একটি চোর চক্রের মূলহোতা শাহেদসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আশা করছি বাকিদেরও গ্রেপ্তার করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’ সংবাদ সম্মেলনে ফারুক হাসান বলেন, পোশাক পণ্য চুরির বিষয়টি নিয়ে আমরা দফায় দফায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধান ও ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সর্বশেষ র‌্যাব গত ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পোশাক শিল্পের পণ্য চুরির একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মূলহোতা শাহেদসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। ফারুক হাসান বলেন, চক্রের প্রধান হোতা গডফাদার শাহেদের বিরুদ্ধে ১৭ থেকে ১৮টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও আছে। ধরা পড়ার পর শাহেদ জানিয়েছেন, ক্রেতাদের স্যাম্পল দেখে তারা সেই স্যাম্পলের বাজার দর যাচাই করেন। যদি পণ্যের মূল্যমান ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকার মধ্যে হয়, তবেই তারা এ ধরনের চুরির অভিযান চালায়। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, পোশাক শিল্প আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। বিশ্বব্যাপী নিরাপদ কর্মক্ষেত্রের রোল মডেলের তকমা পেয়েছে পোশাক শিল্প। গত ১০ বছরে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, শ্রমিকের কল্যাণ ও পরিবেশবান্ধব শিল্প নির্মাণে পরিশ্রম করেছি, বিনিয়োগ করেছি এবং সফলতা পেয়েছি, তা সমগ্র বিশ্বের প্রশংসা অর্জন করেছে।

পোশাক শিল্প মালিকদের এই নেতা বলেন, মহাসড়কে পোশাক শিল্পের পণ্য চুরি রপ্তানিকারকদের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। বিজিএমইএ পোশাক শিল্পের চুরি রোধে বছরের পর বছর ধরে মহাসড়কে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য দাবি জানিয়ে আসছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে র্যা ব ও ডিবিসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা সংস্থা একাধিক চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু চুরির মামলা হওয়ায় আইনের দুর্বলতার কারণে চোর চক্র ১৫ দিন থেকে এক মাসের মধ্যে জামিনে বের হয়ে আসে। এরপর পুনরায় একই কাজ করতে থাকে। তিনি বলেন, পোশাক শিল্পের অসৎ কর্মচারী এসব অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। তাদের আইনের আওতায় দ্রুত আনা হোক আনা হোক। এদিকে মহাসড়কে পোশাক চুরি রোধে বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা দিয়েছে বিজিএমইএ। সেগুলো হলো—
১. ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের চলমান কাজ আগামী মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। মহাসড়কে গার্মেন্টস পণ্য চুরির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কতিপয় নাম সর্বস্ব কোম্পানি এসব চুরির মালামাল কিনে স্টকলট হিসেবে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। স্টকলট রপ্তানির ক্ষেত্রে মালের উৎস নিশ্চিত করতে হবে।

৩. প্রয়োজনে বিজিএমইএ/বিকেএমইএ থেকে সনদপত্র গ্রহণের মাধ্যমে রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে।
৪. চোর চক্রকে ধরতে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দাদেরও কাজে লাগাতে হবে।
৫. কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতি, কাভার্ডভ্যান চালক ও হেলপারদের ডাটাবেইজ প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্টদের কাছে সেই তথ্য হস্তান্তর করতে হবে।