চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রামে মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন রিগান নামে এক ব্যক্তির অভিনব প্রতারণায় নিঃস্ব হয়েছেন অনেকজন। তিনি চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জের অলিপুর পাটোয়ারী বাড়ির মফিজুল ইসলাম পাটোয়ারীর ছেলে। অভিযোগ উঠেছে, শত কোটি টাকা মেরে দিয়ে সপরিবারে রিগান এখন ‘উধাও’। তার খোঁজ পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। এমনকি তালা ঝুলছে তার অফিস ও বাসা-বাড়িতে।
একটি সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, রেন্ট-এ-কারের ব্যবসার কথা বলে শতাধিক গাড়ি সংগ্রহ করেছিলেন এই প্রতারক। পরে নিজের নামে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে এসব গাড়ি একাধিকবার বিক্রি করেছেন কয়েকশ জনের কাছে। অভিনব এ প্রতারণার ফাঁদে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকেই। ক্ষতিগ্রস্তদের কয়েকজন দ্বারস্থ হয়েছেন থানা পুলিশের। ইতিমধ্যে রিগানের প্রতারণার শিকার ছয় ব্যক্তি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। প্রতারক রিগান চট্টগ্রাম নগরের খুলশী এলাকায় ‘গে¬াবাল করপোরেশন’ নামে একটি নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান খুলে প্রতারণার এই মহাযজ্ঞ চালান।
খুলশী থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘ইসমাইল হোসেন রিগান নামে এক ব্যক্তি ব্যবসার নামে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা মেরে দিয়েছেন। এমন অভিযোগে চার ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। দুজন সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। চার মামলায় দুই কোটি ৩৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আনা হয়েছে।’
ওসি আরও বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে চার মামলা ও দুই জিডির তদন্ত চলছে। তার হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন রিগান সপরিবারে দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন। তবে দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমরা এখনও নিশ্চিত নই। তদন্তের পর জানা যাবে।’
রিগান দক্ষিণ খুলশীর তিন নম্বর সড়কে ‘সানমার রয়েল রিজ’ নামের একটি অভিজাত অ্যাপার্টমেন্টে ২২৮৯ বর্গফুটের ডি-৪ ফ্ল্যাট কিনে সেখানে বসবাস করতে থাকেন। পাশের ৪ নম্বর সড়কে ৫৭০ নম্বর বাড়িতে অফিস বসান। যেখানে ‘গে¬াবাল করপোরেশন’ নামের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।
জানা গেছে, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ চট্টগ্রামে চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দেশি-বিদেশি বড় বড় কোম্পানিকে ভাড়ায় গাড়ি দেওয়ার ব্যবসা শুরু করেছিলেন রিগান। বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে মাসিক ভিত্তিতে কার, জিপসহ বিভিন্ন গাড়ি ভাড়ায় নেন। সেগুলো প্রকল্পে ও প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়ায় লাগানোর কাজই করতেন তিনি।
রিগানকে টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হওয়াদের একটি তালিকা করেছেন ভুক্তভোগীরা। সেটিতে ৫৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকায় রিগানকে টাকা দেওয়া উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলে- মো. আবদুল মান্নান ২০ লাখ, আবু তাহের ১৩ লাখ, আহমেদ করিম মিয়াজি ৩০ লাখ, তৌহিদুল কবির চৌধুরী ১২ লাখ ২০ হাজার, কামরুজ্জামান বাবু ৩৫ লাখ ৫০ হাজার, মনির চার কোটি টাকা, রিফাত হোসেন চৌধুরী ১৭ লাখ, আজাদ ১৬ লাখ ৫০ হাজার, তানজিল ছয় লাখ, আলী আজম ছয় লাখ ৩০ হাজার, আসিফ ২৪ লাখ, রেজা ৪০ লাখ, নাহিদ ১০ লাখ, ফারুক দেড় কোটি, জীবন ১৫ লাখ, একরামুল হক ২১ লাখ, শাহজাহান ৬৪ লাখ, জামাল সুমন ৮৫ লাখ, হোসাইন সবুজ ৩৩ লাখ, সালাহউদ্দিন ৩৩ লাখ, মুহাম্মদ রোকম ৪৬ লাখ, ইমরুল শাহেদ ৩৪ লাখ, সোলায়মান দুই কোটি ১৪ লাখ, দেওয়ান মাহফুজ ৯০ লাখ ৭৫ হাজার, মুহাম্মদ কামাল ২৭ লাখ, সরোয়ার ৩৫ লাখ, মনজুর আলম ৪০ লাখ, শাকিবুল হাসান ২৭ লাখ, কামাল হোসেন ১০ লাখ এবং আনোয়ার হোসেন ও সাইফুলের দুটি গাড়ি নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। নগরের খুলশী এলাকার বাসিন্দা মাসুদ হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘দৈনিক ও মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে গাড়ি সংগ্রহ করেন। কয়েক মাস নিয়মিত এসব গাড়ির ভাড়া পরিশোধ করেছেন। এতে গাড়ির মালিকরা উৎসাহিত হয়ে পরে বেশি আয়ের আশায় আরও বিনিয়োগ করেন। এভাবে প্রায় দেড় শতাধিক গাড়ি সংগ্রহ করেন। পরে এসব গাড়ির ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে গাড়িগুলো নিজের দাবি করে জালিয়াতির মাধ্যমে বিক্রি করে দেন। এমনকি একেকটি গাড়ি একাধিক জনের কাছেও বিক্রি করেছেন।’
তৌহিদুল কবির চৌধুরী নামে আরেক ভুক্তভোগী ব্যক্তি বলেন, ‘আমি রিগানকে নগদ ১২ লাখ টাকা দিয়েছি। ওই টাকা গাড়ি কেনার জন্য দিয়েছিলাম। এতে আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি। গাড়ি ব্যবসায় অন্তত ১৫০ জনের কাজ থেকে টাকা নিয়েছেন। কারও কাছ থেকে কোটি টাকা আবার কার কাছ থেকে ৫-১০ লাখ টাকা করে নিয়েছেন। এমনকি তার ঠিকাদারি ব্যবসায় লাভ দেওয়ার কথা বলেও অন্তত ২৫০ ব্যক্তির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন। সবমিলিয়ে আমরা হিসেব করে দেখেছি, রিগান অন্তত ৩০০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন।’
শত কোটি টাকা নিয়ে ‘লাপাত্তা’ রিগান
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ