নিজস্ব প্রতিবেদক : শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী তার বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ‘শত কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের’ অভিযোগকে ‘অপপ্রচারের অংশ’ বলে দাবি করেছেন।
গতকাল রোববার এ অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান কর্মকর্তা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত লাকীকে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিম জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিল্পকলার মহাপরিচালক (ডিজি) বলেন, “যেসব অভিযোগ এসেছে অধিকাংশই অপপ্রচারের অংশ হিসেবে এসেছে। একটি পত্রিকায় নিউজ এসেছে, সেখানে ভুয়া বিল ভাউচারের কথা বলা হয়েছে। ওইসব বিল পরিশোধই করা হয়নি। সেগুলোর সঙ্গে আমার কোনো স্বার্থ নেই। এটা একটা অপপ্রচার।
“আপনারা সাংবাদিক বন্ধুরা বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করেন, আপনারা আমাদের সম্পদ। সাংবাদিকতা যদি ব্যাহত হয় তাহলে আমাদের দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।“
অপপ্রচারকে কেন্দ্র করে অভিযোগ এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে যেসব প্রশ্ন করেছেন (দুদক কর্মকর্তা) তার উত্তর দিয়েছি।”
কারা অপপ্রচার চালাচ্ছেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে লাকী বলেন, “বলা হচ্ছে ২৬ কোটি টাকা লোপাট, বলতে হবে এখানে ২৬ কোটি টাকার ব্যত্যয় আছে। যদি সেটা না হয় তাহলে অপপ্রচার হয়ে যায়। আমি একটা বিল পরিশোধ করিনি, বলা হল আমি ভুয়া বিল ভাউচার নিয়ে পরিশোধ করলাম, তাহলে তো বস্তুনিষ্ঠতা থাকল না।”
অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ৬ জানুয়ারি লিয়াকত আলী লাকীকে নোটিস পাঠিয়ে রোববার তলব করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা ইব্রাহিম। তার বিরুদ্ধে দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘ঘুষ গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করে’ বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে ‘পাচার করেছেন’।
এক অর্থবছরে ২৬ কোটি উত্তোলন করে আত্মসাৎ করার অভিযোগের বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে লাকী বলেন, “২৬ কোটি টাকা নয়, তা হচ্ছে ২১ কোটি টাকা, তার মধ্যে আট কোটি টাকা ফেরত দিয়েছি। ১৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, তার মধ্যে দেড় কোটি টাকা ট্যাক্স ও ভ্যাট ইত্যাদি।
“এই ১২ কোটি টাকা আমাদের বেতন-বোনাস, বিদ্যুৎ বিল, পৌর কর। প্রত্যক সংস্থাকে ৩০ জুনের মধ্যে যত বিল থাকে তা পরিশোধ করতে হয়। ৩০ জুনের মধ্যে অনেক কিছু সমাপ্ত করতে হয়। আমাদের একটা দুর্ভাগ্য হল যে, আগে যে সচিব মহোদয় ছিলেন তিনি বিলের ২০০ নথি পেন্ডিং রেখে চলে গেছেন। যে নথিগুলো আমার গরীব মানুষগুলো যদি বেতন না দেই, তাদেরকে যদি ঈদ বোনাস না দেই তাহলে তো তারা না খেয়ে মরবে।”
লাকীর বিরুদ্ধে শিল্পকলা একাডেমির শিল্পী কলা-কুশলীদের বেতন-বোনাসের বাইরে বহু মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে অনিয়ম করে চেক ইস্যু করার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “একেবারেই না। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য মন্ত্রণালয়ের এক থেকে দেড় কোটি টাকার বিল পরিশোধ করতে হয়েছে।”
অভিযোগের বিষয়ে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, “শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সাহেবের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল, দুদকের বিধান মোতাবেক তথ্য-উপাত্ত চাওয়া হয়েছিল, সেগুলো ১১ জানুয়ারি তিনি দাখিল করেছেন। অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে মনে হয়েছে তার বক্তব্য শোনা দরকার। সেই মোতাবেক তিনি আজ এসেছিলেন, আইন মোতাবেক তার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে।
বক্তব্যে লাকী কী বলেছেন এমন প্রশ্নে দুদক সচিব বলেন, “অনুসন্ধান কর্মকর্তারা বিধি মোতাবেক তার বক্তব্য নিয়েছেন, এই ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না।”
কী কী অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে, এই বিষয়ে মাহবুব বলেন, “এ বিষয়টি এখানে বলার মতো না। যেসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজন মনে হয় সেগুলো অনুসন্ধান কার্যক্রম হয়ে থাকে। অনুসন্ধান শেষ হলেই বোঝা যাবে কোন কোন অভিযোগ প্রমাণ হয়, আর কোন অভিযোগ প্রমাণ হল না।”
অভিযোগ ‘অপপ্রচারের অংশ’ লাকীর এমন দাবির বিষয়ে দুদক সচিব বলেন, “আসলে আমাদের অনুসন্ধান বা অবস্থান কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে পরবর্তী ধাপ হল অনুসন্ধান করা। “অনুসন্ধান কার্যক্রমই চলছে, সেখানে পক্ষ-বিপক্ষ কোনো বিষয় নয়।”
সম্প্রতি শিল্পকলার একাডেমির বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ অনুসন্ধানে কমিশনের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়ার সমন্বয়ে একটি দল গঠন করেছে দুদক। তদারক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কমিশনের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।
‘শত কোটি টাকা’ দুর্নীতির অভিযোগকে ‘অপপ্রচার’ বললেন শিল্পকলার ডিজি
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ