ঢাকা ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

শঙ্কার সময়ে কারখানায় শ্রমিকরা

  • আপডেট সময় : ০৩:০০:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ অগাস্ট ২০২১
  • ৯৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস ঠেকানোর কঠোর লকডাউনের মধ্যে নানা শঙ্কা মাথায় নিয়ে আগস্টের প্রথম দিন থেকে ঢাকার রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানাগুলো খুলেছে।
গতকাল রোববার প্রথম দিন শ্রমিকদের অনেকেই কাজে যোগ দিয়েছেন। আবার অনেকেই কর্মস্থলে ফিরতে ঢাকার বাইরে থেকে এখনও আসছেন। ঈদের আগের লকডাউনের বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি ছাড়া সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিল্পকারখানা চালু ছিল।
করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণ হারের কারণে কোরবানি ঈদের পরদিন ২৩ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউনে শিল্প কারখানা, সরকার-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের অফিস আদালত বন্ধ রাখা হয়। তবে রপ্তানিমুখী শিল্পের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় ১ অগাস্ট থেকে পোশাকসহ অন্যান্য রপ্তানিমুখী কারখানা খোলার অনুমতি দেয় সরকার।
ঈদের ছুটিতে কর্মস্থল ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া শ্রমিকদের ফিরে আসার সুবিধার্থে সাময়িক সময়ের জন্য দূরপাল্লার গণপরিবহনও চলাচলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
রোববার রাজধানীর ভেতরেও রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, মাইক্রোবাসের পাশাপাশি দুচারটি নগর পরিবহনও চলাচল করতে দেখা গেছে। কারখানা খোলার প্রথম দিন স্বাস্থ্যবিধি ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা দেখতে মিরপুর ও তেজগাঁও এলাকায় ঘুরলেও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ ভেতরের পরিস্থিতি দেখাতে রাজি হয়নি। তবে অনেক কারখানাকে বিজিএমইএর নির্দেশনা মেনে সংক্রমণ প্রতিরোধী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। কারখানা চালু করার পাশাপাশি সংক্রমণ প্রতিরোধে শনিবার রাতেই ১৫ দফা নির্দেশনা দিয়েছে মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। গতবছর মার্চে মহামারি প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর এই ধরনের হেলথ প্রটোকল বা নির্দেশনা প্রস্তুত করা হয়েছিল।
রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তেজগাঁও বেগুনবাড়ি এলাকায় নাশা গ্রুপের একটি কারখানার সামনে গেলেও পরিদর্শনের সুযোগ দেয়নি কর্তৃপক্ষ। প্রবেশমুখে ১০/১৫টি পানির কল থাকলেও ছিল না কোনো তাপমাত্রা মাপার মেশিন।
প্রধান ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রনজিৎ কুমার নামের একজন কর্মকর্তা জানান, কারখানায় কাজ শুরু হয়েছে, শ্রমিকরাও আসছে। তবে এই মুহূর্তে নিজস্ব লোকজন ছাড়া অন্য কাউকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি নেই।
‘আমি যোগাযোগ করে দেখেছি। প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি ছাড়া এখন পরিদর্শনের সুযোগ দেওয়া যবেনা,’ বলেন তিনি। এ সময় কারখানায় ঢুকতে যাওয়া একজন নারী শ্রমিক বলেন, ‘আমি মাত্রই গ্রামের বাড়ি থেকে আসলাম। প্রথম দিনের হাজিরা নিশ্চিত করতে কারখানায় চলে আসলাম।’
সকাল ১০টার দিকে মিরপুর-৭ নম্বর আবাসিক এলাকায় জিতা অ্যাপারেলস নামের কারখানায় দেখা যায়, প্রবেশ পথে পানির নল বসিয়ে ডিটারজেন্টের মিশ্রণ দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারখানায় প্রবেশপথে বসানো হয়েছে তাপমাত্রা মাপার মেশিন।
এখানে নিরাপত্তা কর্মকর্তা হারিছ মিয়া জানান, প্রায় দুই হাজার শ্রমিকের এই কারখানার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কর্মী চলে এসেছেন। প্রথম দিনে উৎপাদন শুরু না করে প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো সারবেন তারা।
‘বিকাল ৩টার মধ্যেই কারখানা ছুটি হয়ে যাবে। সাধারণত ওভার টাইমসহ সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কারখানা চলে। আমাদের কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনের সব ব্যবস্থাই রয়েছে। দুপুরে ক্যান্টিনে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। আশা করি তেমন অসুবিধা হবেনা,’ বলেন হারিছ। একই এলাকায় রিও ফ্যাশন নামের আরেকটি কারখানায় ঈদের ছুটির আগে প্রায় ১৪০০ শ্রমিক নিয়ে কাজ চলেছিল। রোববার প্রথম দিনে তাদের অধিকাংশই উপস্থিত হয়েছেন। এই কারখানার মানবসম্পদ ও কমপ্লায়েন্স বিভাগের প্রধান নাঈম শিকদার বলেন, ‘প্রথম দিনে ৩৪৬ জন শ্রমিক অনুপস্থিত। কিন্তু এটিই চূড়ান্ত হিসাব নয়; কমবেশি হতে পারে।
‘আমাদের অধিকাংশ শ্রমিকই কারখানার আশপাশে থাকেন। ফলে লকডাউনের কারণে অনুপস্থিতির হার খুব একটা বেশি নয়। স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনে যতটা সম্ভব আমরা ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছি। কারখানায় প্রচুর কাজের অর্ডার পড়ে আছে। তাই মালিক-শ্রমিক কেউই কাজ বন্ধ রাখার পক্ষে নন,’ বলেন নাঈম শিকদার। তিনি বলেন, ‘এটি একটি সচল কারখানা। গত দুই বছর ধরে এখানে নিয়মিত বেতন হতে দেখছি। এখানকার কর্মীরাও বেশ উদ্যোমী। মহামারির কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে জেনেও তারা কাজ করতে আগ্রহী।’ একই এলাকায় ব্রানারসন এক্সপোর্টের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসএইউ ফ্যাশনেও শ্রমিকদের আনাগোনা দেখা গেছে। সকাল ১০টা পর্যন্ত অসংখ্য শ্রমিক কারখানার নিচ তলায় অবস্থান নিলেও মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তারা তখনও আসেননি। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা জানান, ব্যবস্থাপনা পর্যায়ের কেউ না আসায় ভেতরের পরিবেশ দেখার মতো অবস্থা হয়নি।
পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ায় সংক্রমণ বাড়বে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী সরকারি সিদ্ধান্তে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হলেও তাতে যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়বে, তা স্বীকার করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল রোববার মহাখালীর বিসিপিএসে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। পাশাপাশি তিনি বলেন, সরকারকে জীবনের পাশাপাশি জীবিকার কথাও ভাবতে হয়। করোনাভাইরাস মহামারীর সবচেয়ে নাজুক অবস্থার মধ্যে চলমান লকডাউনে কারখানাও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। কিন্তু ব্যবসায়ীদের আহ্বানে আকস্মিকভাবে ১ আগস্ট থেকে রপ্তানিমুখী কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত জানালেও লকডাউন বহাল রাখা হয়। এতে হাজার হাজার শ্রমিক বিড়ম্বিত এক যাত্রায় ট্রাকে চেপে, ভেঙে ভেঙে ছোট গাড়িতে, কেউবা হেঁটে ঢাকার পথে রওনা হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তারা ফেরিতে গাদাগাদি করে এসেছে। তিল ধারণের জায়গা ছিল না। অবশ্যই এর মাধ্যমে সংক্রমণ কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। ‘আমরা স্বীকার করি আর না করি। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হয়নি। আমরা আশা করি আগামীতে এই ধরনের অবস্থা যেন না হয়।’ সেক্ষেত্রে কারখানা খোলার এই সিদ্ধান্ত কেন- তার ব্যাখ্যায় জাহিদ মালেক বলেন, ‘জীবনের জন্য জীবিকা দরকার, আবার জীবিকার জন্য জীবনও থাকতে হবে। এই দুটোর সমন্বয় আমাদের করতে হয়। সরকারের সব দিকেই ব্যালেন্স করে চলতে হয়।’
কারখানা খোলার প্রতিবাদে বামজোটের বিক্ষোভ : কারখানা খোলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘শ্রমিকদের যাতায়াত সুবিধাসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত চরম স্বেচ্ছাচারী। শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা নিয়ে কারও ছিনিমিনি খেলার অধিকার নেই।’ তারা এও বলেন, ‘শ্রমিকশ্রেণি মালিকদের মুনাফার বলি হতে পারে না।’ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বামনেতা সাইফুল হক, রাজেকুজ্জামান রতনসহ অনেকে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নতুন আপদ ‘মব সন্ত্রাস’, আতঙ্কে সারা দেশ

শঙ্কার সময়ে কারখানায় শ্রমিকরা

আপডেট সময় : ০৩:০০:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ অগাস্ট ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস ঠেকানোর কঠোর লকডাউনের মধ্যে নানা শঙ্কা মাথায় নিয়ে আগস্টের প্রথম দিন থেকে ঢাকার রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানাগুলো খুলেছে।
গতকাল রোববার প্রথম দিন শ্রমিকদের অনেকেই কাজে যোগ দিয়েছেন। আবার অনেকেই কর্মস্থলে ফিরতে ঢাকার বাইরে থেকে এখনও আসছেন। ঈদের আগের লকডাউনের বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি ছাড়া সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিল্পকারখানা চালু ছিল।
করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণ হারের কারণে কোরবানি ঈদের পরদিন ২৩ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউনে শিল্প কারখানা, সরকার-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের অফিস আদালত বন্ধ রাখা হয়। তবে রপ্তানিমুখী শিল্পের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় ১ অগাস্ট থেকে পোশাকসহ অন্যান্য রপ্তানিমুখী কারখানা খোলার অনুমতি দেয় সরকার।
ঈদের ছুটিতে কর্মস্থল ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া শ্রমিকদের ফিরে আসার সুবিধার্থে সাময়িক সময়ের জন্য দূরপাল্লার গণপরিবহনও চলাচলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
রোববার রাজধানীর ভেতরেও রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, মাইক্রোবাসের পাশাপাশি দুচারটি নগর পরিবহনও চলাচল করতে দেখা গেছে। কারখানা খোলার প্রথম দিন স্বাস্থ্যবিধি ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা দেখতে মিরপুর ও তেজগাঁও এলাকায় ঘুরলেও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ ভেতরের পরিস্থিতি দেখাতে রাজি হয়নি। তবে অনেক কারখানাকে বিজিএমইএর নির্দেশনা মেনে সংক্রমণ প্রতিরোধী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। কারখানা চালু করার পাশাপাশি সংক্রমণ প্রতিরোধে শনিবার রাতেই ১৫ দফা নির্দেশনা দিয়েছে মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। গতবছর মার্চে মহামারি প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর এই ধরনের হেলথ প্রটোকল বা নির্দেশনা প্রস্তুত করা হয়েছিল।
রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তেজগাঁও বেগুনবাড়ি এলাকায় নাশা গ্রুপের একটি কারখানার সামনে গেলেও পরিদর্শনের সুযোগ দেয়নি কর্তৃপক্ষ। প্রবেশমুখে ১০/১৫টি পানির কল থাকলেও ছিল না কোনো তাপমাত্রা মাপার মেশিন।
প্রধান ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রনজিৎ কুমার নামের একজন কর্মকর্তা জানান, কারখানায় কাজ শুরু হয়েছে, শ্রমিকরাও আসছে। তবে এই মুহূর্তে নিজস্ব লোকজন ছাড়া অন্য কাউকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি নেই।
‘আমি যোগাযোগ করে দেখেছি। প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি ছাড়া এখন পরিদর্শনের সুযোগ দেওয়া যবেনা,’ বলেন তিনি। এ সময় কারখানায় ঢুকতে যাওয়া একজন নারী শ্রমিক বলেন, ‘আমি মাত্রই গ্রামের বাড়ি থেকে আসলাম। প্রথম দিনের হাজিরা নিশ্চিত করতে কারখানায় চলে আসলাম।’
সকাল ১০টার দিকে মিরপুর-৭ নম্বর আবাসিক এলাকায় জিতা অ্যাপারেলস নামের কারখানায় দেখা যায়, প্রবেশ পথে পানির নল বসিয়ে ডিটারজেন্টের মিশ্রণ দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারখানায় প্রবেশপথে বসানো হয়েছে তাপমাত্রা মাপার মেশিন।
এখানে নিরাপত্তা কর্মকর্তা হারিছ মিয়া জানান, প্রায় দুই হাজার শ্রমিকের এই কারখানার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কর্মী চলে এসেছেন। প্রথম দিনে উৎপাদন শুরু না করে প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো সারবেন তারা।
‘বিকাল ৩টার মধ্যেই কারখানা ছুটি হয়ে যাবে। সাধারণত ওভার টাইমসহ সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কারখানা চলে। আমাদের কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনের সব ব্যবস্থাই রয়েছে। দুপুরে ক্যান্টিনে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। আশা করি তেমন অসুবিধা হবেনা,’ বলেন হারিছ। একই এলাকায় রিও ফ্যাশন নামের আরেকটি কারখানায় ঈদের ছুটির আগে প্রায় ১৪০০ শ্রমিক নিয়ে কাজ চলেছিল। রোববার প্রথম দিনে তাদের অধিকাংশই উপস্থিত হয়েছেন। এই কারখানার মানবসম্পদ ও কমপ্লায়েন্স বিভাগের প্রধান নাঈম শিকদার বলেন, ‘প্রথম দিনে ৩৪৬ জন শ্রমিক অনুপস্থিত। কিন্তু এটিই চূড়ান্ত হিসাব নয়; কমবেশি হতে পারে।
‘আমাদের অধিকাংশ শ্রমিকই কারখানার আশপাশে থাকেন। ফলে লকডাউনের কারণে অনুপস্থিতির হার খুব একটা বেশি নয়। স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনে যতটা সম্ভব আমরা ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছি। কারখানায় প্রচুর কাজের অর্ডার পড়ে আছে। তাই মালিক-শ্রমিক কেউই কাজ বন্ধ রাখার পক্ষে নন,’ বলেন নাঈম শিকদার। তিনি বলেন, ‘এটি একটি সচল কারখানা। গত দুই বছর ধরে এখানে নিয়মিত বেতন হতে দেখছি। এখানকার কর্মীরাও বেশ উদ্যোমী। মহামারির কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে জেনেও তারা কাজ করতে আগ্রহী।’ একই এলাকায় ব্রানারসন এক্সপোর্টের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসএইউ ফ্যাশনেও শ্রমিকদের আনাগোনা দেখা গেছে। সকাল ১০টা পর্যন্ত অসংখ্য শ্রমিক কারখানার নিচ তলায় অবস্থান নিলেও মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তারা তখনও আসেননি। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা জানান, ব্যবস্থাপনা পর্যায়ের কেউ না আসায় ভেতরের পরিবেশ দেখার মতো অবস্থা হয়নি।
পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ায় সংক্রমণ বাড়বে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী সরকারি সিদ্ধান্তে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হলেও তাতে যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়বে, তা স্বীকার করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল রোববার মহাখালীর বিসিপিএসে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। পাশাপাশি তিনি বলেন, সরকারকে জীবনের পাশাপাশি জীবিকার কথাও ভাবতে হয়। করোনাভাইরাস মহামারীর সবচেয়ে নাজুক অবস্থার মধ্যে চলমান লকডাউনে কারখানাও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। কিন্তু ব্যবসায়ীদের আহ্বানে আকস্মিকভাবে ১ আগস্ট থেকে রপ্তানিমুখী কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত জানালেও লকডাউন বহাল রাখা হয়। এতে হাজার হাজার শ্রমিক বিড়ম্বিত এক যাত্রায় ট্রাকে চেপে, ভেঙে ভেঙে ছোট গাড়িতে, কেউবা হেঁটে ঢাকার পথে রওনা হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তারা ফেরিতে গাদাগাদি করে এসেছে। তিল ধারণের জায়গা ছিল না। অবশ্যই এর মাধ্যমে সংক্রমণ কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। ‘আমরা স্বীকার করি আর না করি। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হয়নি। আমরা আশা করি আগামীতে এই ধরনের অবস্থা যেন না হয়।’ সেক্ষেত্রে কারখানা খোলার এই সিদ্ধান্ত কেন- তার ব্যাখ্যায় জাহিদ মালেক বলেন, ‘জীবনের জন্য জীবিকা দরকার, আবার জীবিকার জন্য জীবনও থাকতে হবে। এই দুটোর সমন্বয় আমাদের করতে হয়। সরকারের সব দিকেই ব্যালেন্স করে চলতে হয়।’
কারখানা খোলার প্রতিবাদে বামজোটের বিক্ষোভ : কারখানা খোলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘শ্রমিকদের যাতায়াত সুবিধাসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত চরম স্বেচ্ছাচারী। শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা নিয়ে কারও ছিনিমিনি খেলার অধিকার নেই।’ তারা এও বলেন, ‘শ্রমিকশ্রেণি মালিকদের মুনাফার বলি হতে পারে না।’ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বামনেতা সাইফুল হক, রাজেকুজ্জামান রতনসহ অনেকে।