আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া
আজকের প্রতিযোগিতামূলক ও বৈশ্বিক ঝুঁকিতে ভরা অর্থনীতিতে একটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্য, টিকে থাকা এবং টেকসই বিকাশ অনেকাংশেই নির্ভর করে তার আর্থিক ব্যবস্থাপনার ওপর। আধুনিক ব্যবসায়িক বাস্তবতায় অর্থ আর শুধু লেনদেনের বিষয় নয়; বরং এটি হয়ে উঠেছে একটি প্রতিষ্ঠানের রক্তসঞ্চালন ব্যবস্থার মতো-যেখানে প্রতিটি সিদ্ধান্তের পেছনে থাকে একটি আর্থিক দর্শন। দুর্বল আর্থিক ব্যবস্থাপনা একটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে, আর শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা তাকে সংকটেও স্থিতিশীল রাখতে পারে।
বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির গতিশীল প্রেক্ষাপটে ব্যক্তিগত উদ্যোগ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা সরকারি সংস্থার টিকে থাকা, বিকাশ এবং টেকসই উন্নয়ন অনেকাংশেই নির্ভর করে একটি শক্তিশালী আর্থিক ব্যবস্থাপনার ওপর। অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনে প্রতিষ্ঠানসমূহকে যেমন দক্ষ মানবসম্পদ, প্রযুক্তি কিংবা উদ্ভাবনক্ষমতা অর্জন করতে হয়, তেমনি তাদের আর্থিক কার্যক্রমকে হতে হয় স্বচ্ছ, পরিকল্পিত এবং কৌশলগত। কারণ অর্থ হলো একটি প্রতিষ্ঠানের রক্তসঞ্চালন ব্যবস্থা,এই ব্যবস্থায় সামান্য গড়বড়ও গোটা প্রতিষ্ঠানকে স্থবির করে দিতে পারে।
একটি কার্যকর আর্থিক ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের আয়ের উৎসগুলোকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করে এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস করে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটি শুধু লাভজনক হয়ে ওঠে না, বরং একটি স্থিতিশীল আর্থিক কাঠামো নির্মাণ করে। তা ছাড়া, নগদ প্রবাহের দক্ষ ব্যবস্থাপনা দৈনন্দিন কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনা করে, এবং বিনিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে। একটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্য বহুলাংশে নির্ভর করে তার বিনিয়োগ ব্যবস্থার ওপর। আর এই বিনিয়োগ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও কার্যকর করার পেছনে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে দক্ষ আর্থিক ব্যবস্থাপনা। এটি কেবল নিছক হিসাবরক্ষণ বা তহবিল ব্যবস্থাপনার বিষয় নয়, বরং এটি একটি সুদূরপ্রসারী কৌশল; যা ঝুঁকি হ্রাস করে, সম্পদ বৃদ্ধি করে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে।
অর্থনীতিতে অস্থিরতা বা প্রতিযোগিতার তীব্রতা, যে কোনো পরিস্থিতিতেই একটি প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকা এবং এগিয়ে যাওয়ার জন্য সুচিন্তিত আর্থিক পরিকল্পনা অপরিহার্য। দক্ষ আর্থিক ব্যবস্থাপনার প্রথম এবং প্রধান কাজ হলো তহবিলের সঠিক বরাদ্দ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা। কোথায় বিনিয়োগ করলে সর্বোচ্চ মুনাফা আসবে, কোন খাতে মূলধন সবচেয়ে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যাবে, এই সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণের জন্য সঠিক বিশ্লেষণ খুবই জরুরি। একটি সুচিন্তিত বাজেট প্রণয়ন এবং তার কঠোর অনুসরণ অপচয় রোধ করে, প্রতিটি বিনিয়োগ থেকে সর্বোচ্চ প্রতিদান নিশ্চিত করে।
আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল অর্থনীতিতে যে কোনো প্রতিষ্ঠান- হোক সরকারি বা বেসরকারি, এর শক্তিশালী আর্থিক ব্যবস্থাপনা ছাড়া সাফল্য কল্পনা করা কঠিন। এটি শুধু ব্যালান্সশিট ঠিক রাখার কাজ নয়; বরং একটি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যপূরণ, বাজারে অবস্থান ধরে রাখা এবং দীর্ঘমেয়াদে জনগণের আস্থা অর্জনের অন্যতম হাতিয়ার। এখন সময়- প্রতিটি প্রতিষ্ঠান, বিশেষত সরকারি সংস্থা এবং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি শক্ত ভিত গড়ে তোলার; যার মূল স্তম্ভ হবে দক্ষ ও আধুনিক আর্থিক ব্যবস্থাপনা। একই সঙ্গে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কর্মক্ষম মূলধনের সঠিক ব্যবস্থাপনা বিনিয়োগের জন্য অতিরিক্ত তহবিলকে মুক্ত করে, যা নতুন সুযোগ তৈরিতে সাহায্য করে। বিনিয়োগ মানেই ঝুঁকি, আর তাই ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা দক্ষ আর্থিক ব্যবস্থাপনার অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর্থিক ব্যবস্থাপকরা সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করেন। যেমন- বাজারের অস্থিরতা, সুদের হারের পরিবর্তন বা তারল্য সংকট। এরপর বৈচিত্র্যপূর্ণ বিনিয়োগের মাধ্যমে এই ঝুঁকিগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হয়; যাতে একটি নির্দিষ্ট খাতের মন্দা সামগ্রিক বিনিয়োগে বড় ধরনের ক্ষতি করতে না পারে। অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্য একটি সতর্কতামূলক তহবিল রাখা হয়; যা আকস্মিক বিপর্যয় থেকে প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করে।
সঠিক আর্থিক বিশ্লেষণ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে গৃহীত সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিনিয়োগের সাফল্যের অন্যতম মূলমন্ত্র। নির্ভুল ও সময়োপযোগী আর্থিক প্রতিবেদন প্রতিষ্ঠানের বর্তমান আর্থিক অবস্থা এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা সম্পর্কে স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে। দক্ষ আর্থিক ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগের কর্মক্ষমতা নিয়মিত বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করা হয়; যা দুর্বল পারফরম্যান্স চিহ্নিত করে সময়োপযোগী বাস্তব সম্মত সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। এই ধরনের ডেটানির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণ পদ্ধতি প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে সহায়তা করে। তারল্য ব্যবস্থাপনা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো একটি প্রতিষ্ঠানের নগদ অর্থের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা যেমন জরুরি, তেমনি অব্যবহৃত নগদ অর্থকে লাভজনক খাতে লগ্নি করাও গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষ আর্থিক ব্যবস্থাপনা নগদ প্রবাহের পূর্বাভাস করে, নগদ ঘাটতি বা উদ্বৃত্তের সম্ভাবনা মূল্যায়ন করে এবং অলস তহবিলকে উৎপাদনশীল কাজে লাগাতে ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া শক্তিশালী আর্থিক এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানের সকল আইন ও প্রবিধান মেনে চলা আইনি জটিলতা এড়াতে সাহায্য করে এবং আর্থিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বজায় রাখা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করে; যা নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণের হাতিয়ার হিসেবে কাজে আসে। সংক্ষেপে দক্ষ আর্থিক ব্যবস্থাপনা একটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ব্যবস্থার মেরুদণ্ড। এটি কেবল আর্থিক সুস্থিতিই নিশ্চিত করে না, বরং কৌশলগতভাবে ঝুঁকি মোকাবিলা করে, সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যে প্রতিষ্ঠান আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দেয়, তারাই বিনিয়োগের ময়দানে সাফল্যের পতাকা ওড়াতে সক্ষম হয়।
অর্থ শুধু আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়, একটি কৌশল: আর্থিক ব্যবস্থাপনা বলতে বোঝায় আয়-ব্যয়, বিনিয়োগ, ঝুঁকি বিশ্লেষণ, নগদ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ, বাজেট প্রণয়ন, আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি এবং সাশ্রয়ী ব্যয় কাঠামো গড়ে তোলা। সহজভাবে বললে, এটি হলো ব্যবসার লক্ষ্য পূরণে অর্থের ব্যবহার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের একটি সমন্বিত কৌশল। বিশ্ববিখ্যাত প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল কিংবা মাইক্রোসফট তাদের টেকসই বিকাশের অন্যতম গোপন রহস্য হলো দক্ষ আর্থিক নিয়ন্ত্রণ ও বিশ্লেষণ। করোনা মহামারির মতো বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ধাক্কাতেও এরা টিকে থেকেছে মূলত আর্থিক স্থিতিশীলতার কারণেই। অন্যদিকে, দুর্বল আর্থিক ব্যবস্থাপনার জন্য বহু সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠান অল্পদিনেই দেউলিয়া হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আর্থিক ব্যবস্থাপনার চিত্র: বাংলাদেশে আর্থিক ব্যবস্থাপনার চিত্রটি বৈচিত্র্যময় এবং এখনো বাংলাদেশে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে কেবল হিসাবরক্ষণের অনুষঙ্গ হিসেবে দেখে। এটিকে একটি গৌণ প্রশাসনিক কার্যক্রম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানের বাজেট প্রণয়ন, ব্যয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থিক তথ্য বিশ্লেষণে ঘাটতি দেখা যায়। অনেক সময় প্রকল্প গ্রহণ ও প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যথাযথ আর্থিক পরিকল্পনা ও বিশ্লেষণের অভাবে ভুল সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়; যার পরিণতিতে অপচয়সহ প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয় এবং কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। এই দুর্বলতা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে। তবে আশাব্যঞ্জকভাবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় এক ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। কর্পোরেট গভর্ন্যান্স জোরদার করা, অডিট প্রতিবেদন ওয়েবসাইটে প্রকাশ ও ডিভিসি নম্বর চালু করা, বাজেটকেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনা এবং এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং সফটওয়্যারের ব্যবহার বৃদ্ধি এসব উদ্যোগ আর্থিক প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, সংগঠিত ও কার্যকর করে তুলছে। এছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি-ভিত্তিক হিসাব ব্যবস্থা ও স্বয়ংক্রিয় আর্থিক প্রতিবেদনের প্রসার প্রতিষ্ঠানের আর্থিক নিয়ন্ত্রণে গতিশীলতা এনেছে। এসব উদ্যোগ সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনার একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলছে; যা ভবিষ্যতে টেকসই উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কর্পোরেট গভার্ন্যান্স, ঊজচ, বাজেটভিত্তিক পরিকল্পনা, অডিট সংস্কৃতি এবং আর্থিক অটোমেশন ব্যবস্থার প্রসারে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন এসেছে। এখন অবশ্য অনেক প্রতিষ্ঠান ঊজচ সফটওয়্যার, চঋগ কাঠামো এবং আইটি-নির্ভর হিসাব ব্যবস্থাপনা ব্যবহার করছে; যা ব্যবসাকে আরও কাঠামোবদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক করছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠানে শক্তিশালী আর্থিক ব্যবস্থাপনার প্রাসঙ্গিকতা: শুধু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নয়-একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বাস্থ্য, উন্নয়ন কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন ও জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করতে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাংকের মতে, সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা বা চঋগ হচ্ছে এমন একটি কাঠামো যা আর্থিক শৃঙ্খলা, নীতিগত লক্ষ্য পূরণে সম্পদের সঠিক বরাদ্দ, ও তহবিল ব্যবহারে দক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে বাজেট প্রণয়ন, বরাদ্দ ব্যবহার, বিল নিষ্পত্তি, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, নিরীক্ষা এবং আর্থিক প্রতিবেদন প্রণয়ন হলো আর্থিক ব্যবস্থাপনার মূল উপাদান। এই ব্যবস্থাগুলো সঠিকভাবে না থাকলে কেবল সম্পদের অপচয়ই বাড়ে না; বরং দুর্নীতি, সময়ক্ষেপণ এবং কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদানেও ব্যর্থতা দেখা দেয়।
উদাহরণ থেকে শিক্ষা আমরা বিশ্বের কাছ থেকে নিতে পারি। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে যেমন-ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, কানাডা-সরকারি খাতেও আধুনিক আর্থিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে নীতি-নির্ধারণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়। ইস্তোনিয়া নামে একটি ছোট দেশ, যেটি ডিজিটাল সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনায় দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে-যেখানে একটি ইনভয়েস বিল অনুমোদন হতে সময় লাগে মাত্র কয়েক সেকেন্ড!
কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন: শক্তিশালী আর্থিক ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের জন্য শুধুই প্রশাসনিক অনুশাসন নয়; বরং এটি কৌশলগত অপরিহার্যতা। এটি আয়ের উৎসগুলোকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে শেখায়, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস করে এবং প্রতিষ্ঠানকে একটি স্থিতিশীল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যায়। একটি প্রতিষ্ঠানের টেকসই উন্নয়ন তখনই সম্ভব যখন সে দৈনন্দিন নগদ প্রবাহ ঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে, ঝুঁকি নিরূপণ করে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেয় এবং আস্থাভাজন হয়ে ওঠে বিনিয়োগকারী ও অংশীদারদের কাছে। প্রতিষ্ঠানগুলো যে-সব বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে পারে সেগুলো হলো: প্রতিষ্ঠানে দক্ষ আর্থিক পেশাজীবী নিয়োগ,প্রযুক্তিনির্ভর ফাইনান্স সফটওয়্যার ব্যবহার ,ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন,স্বচ্ছ আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ,কর্মীদের আর্থিক প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি।
আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল অর্থনীতিতে যে কোনো প্রতিষ্ঠান হোক সরকারি বা বেসরকারি তার শক্তিশালী আর্থিক ব্যবস্থাপনা ছাড়া সাফল্য কল্পনা করা কঠিন। এটি শুধু ব্যালান্স শিট ঠিক রাখার কাজ নয়, বরং একটি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যপূরণ, বাজারে অবস্থান ধরে রাখা এবং দীর্ঘমেয়াদে জনগণের আস্থা অর্জনের অন্যতম হাতিয়ার। এখন সময়-প্রতিটি প্রতিষ্ঠান, বিশেষত সরকারি সংস্থা ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি শক্ত ভিত গড়ে তোলার; যার মূল স্তম্ভ হবে দক্ষ ও আধুনিক আর্থিক ব্যবস্থাপনা।
লেখক: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আর্থিক বিষয়ক বিশ্লেষক
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ