ঢাকা ০৪:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫

শক্তিশালী অর্থনীতির জন্য সক্ষম আমলাতন্ত্র কেন প্রয়োজন?

  • আপডেট সময় : ০৫:৩৫:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৩৮ বার পড়া হয়েছে

ড. মোহাম্মদ কামরুল হাসান : অর্থনৈতিক উন্নয়ন; যা আয়ের বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তরকে অন্তর্ভুক্ত করে; বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের শক্তি এবং দক্ষতার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আমলাতন্ত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

আমলাতন্ত্রের গুণমান এবং কাঠামো রাষ্ট্রের নীতি বাস্তবায়ন, সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে গভীর প্রভাব ফেলে। এই হাইপোথিসিসটি বিভিন্ন খ্যাতনামা গবেষকের তত্ত্ব ও প্রমাণের আলোকে আলোচনা করা যাক।
প্রথমেই দেখা যাক রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা তৈরিতে আমলাতন্ত্র কী ভূমিকা রাখাতে পারে। খ্যাতনামা রাষ্ট্র বিজ্ঞানী ঋঁশুঁধসধ-এর মতে, রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা বাযার মাধ্যমে সরকার কার্যকর নীতি প্রয়োগ এবং জনসাধারণের জন্য পণ্য ও সেবা সরবরাহ করতে পারে—অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি প্রধান ভিত্তি। একটি শক্তিশালী আমলাতন্ত্র রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপরিহার্য অংশ, কারণ এটি সরকারের অপারেশনাল অংশ হিসেবে কাজ করে। এর পাশাপাশি, ম্যাক্স ওয়েবার আমলাতন্ত্রকে প্রশাসনের সবচেয়ে যৌক্তিক রূপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন; যা আনুষ্ঠানিক নিয়ম, পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে বৃহৎ পরিসরের কাজগুলো কার্যকরভাবে সমন্বয় করে।

ঊাধহং ও জধঁপয (১৯৯৯)-এর প্রভাবশালী গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ডবনবৎরধহ আমলাতন্ত্র’ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্কযুক্ত। তাদের ক্রস ন্যাশনাল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মেধাবী এবং রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত আমলাতন্ত্র নীতির কার্যকর বাস্তবায়ন, দুর্নীতির হ্রাস ও জনগণের আস্থার উন্নয়নে সাহায্য করে; যা টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক গুণমান এবং অর্থনৈতিক সাফল্যের মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে।

 

অপবসড়মষঁ, ঔড়যহংড়হ ও জড়নরহংড়হ যুক্তি দিয়েছেন যে প্রতিষ্ঠানগুলো; যার মধ্যে আমলাতন্ত্রও রয়েছে, অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতার প্রধান নির্ধারক। তারা প্রমাণ করেছেন ওহপষঁংরাব প্রতিষ্ঠান প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে। কারণ তারা সম্পদ ও সুযোগের সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে। এই যুক্তি থেকে বোঝা যায় যে উন্নয়নশীল দেশে আমলাতন্ত্রের গুণমান অপরিহার্য; যেখানে শক্তিশালী আমলাতন্ত্র শুধু একটি শাসনযন্ত্র নয়, বরং এমন একটি মাধ্যম; যা অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ এবং সামাজিক সাম্যের উন্নতি ঘটায়। অধিকন্তু আমলাতান্ত্রিক স্বায়ত্তশাসন কার্যকর অর্থনৈতিক পরিকল্পনা জন্য অপরিহার্য।

আমলাতান্ত্রিক স্বায়ত্তশাসন; যার মাধ্যমে আমলাতন্ত্র রাজনৈতিক চাপে অতিরিক্ত প্রভাবিত না হয়ে কাজ করতে পারে—কার্যকর নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ- গবেষক ঔড়যহংড়হ জাপানের যুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক বিস্ময় নিয়ে তার গবেষণায়, গরহরংঃৎু ড়ভ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঞৎধফব ধহফ ওহফঁংঃৎু (গওঞও)-এর ভূমিকা তুলে ধরেছেন।

এটি একটি অত্যন্ত স্বায়ত্তশাসিত এবং দক্ষ আমলাতান্ত্রিক সংস্থা হিসেবে কাজ করেছে; যা জাপানের শিল্প নীতিমালা সমন্বয় এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন প্রচারে মূল ভূমিকা পালন করেছে। ঠিক একইভাবে অসংফবহ এবং ঈযধহম দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানের অর্থনৈতিক সাফল্যের ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসিত আমলাতন্ত্রের ভূমিকা তুলে ধরেছেন। এই রাষ্ট্রগুলো তাদের আমলাতান্ত্রিক যন্ত্র ব্যবহার করে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা, কৌশলগতভাবে সম্পদের বণ্টন, এবং শিল্প নীতিমালার বাস্তবায়ন করেছে; যা তাদের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে শিল্পশক্তিতে রূপান্তরিত করেছে।
এখন আসুন আমলাতন্ত্র ও উন্নয়ন সম্পর্ক এর দুটি বাস্তব দৃষ্টান্ত পর্যালোচনা করি। সিঙ্গাপুর একটি শক্তিশালী আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল হিসেবে কাজ করে। সিঙ্গাপুরের সিভিল সার্ভিস মেধা ভিত্তিক, প্রতিযোগিতামূলক বেতন, এবং দায়িত্বশীলতার সংস্কৃতি দ্বারা চিহ্নিত। এই বৈশিষ্ট্যগুলো সিঙ্গাপুরকে এমন নীতিমালা বাস্তবায়নে সক্ষম করেছে; যা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, এবং উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখতে সহায়ক।

বিশ্বব্যাংক সিঙ্গাপুরকে একটি ডেভেলপমেন্টাল স্টেট হিসেবে বর্ণনা করেছে, যেখানে আমলাতান্ত্রিক দক্ষতা অর্থনৈতিক সাফল্যের মূল ভিত্তি। এর পাশাপাশি রুয়ান্ডা আধুনিক আমলাতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার সাম্প্রতিক উদাহরণ।
গণহত্যার পর, রুয়ান্ডার সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠনের অগ্রাধিকার দেয়। কর্মক্ষমতা ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রবর্তনের মাধ্যমে রুয়ান্ডা প্রশাসনিক দক্ষতা এবং জনসেবার গুণমান উন্নত করেছে। এই সংস্কারগুলো বিগত দুই দশকে স্থায়ী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য হ্রাসে অবদান রেখেছে।

অন্যদিকে দুর্বল আমলাতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান প্রায়ই উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। চৎরঃপযবঃঃ, ডড়ড়ষপড়পশ ও অহফৎবংি-এর ‘পধঢ়ধনরষরঃু ঃৎধঢ়’ ধারণা দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে সরকারগুলো কার্যকর আমলাতন্ত্রের ছাপ তৈরি করলেও প্রকৃতপক্ষে কার্যক্ষমতা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়। উদাহরণস্বরূপ- সাব-সাহারান আফ্রিকার অনেক দেশে, দুর্বল আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতা জনপরিকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করে, যার ফলে ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রকল্প বিলম্ব ঘটে।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শক্তিশালী আমলাতন্ত্রের সম্পর্ক তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক- উভয় ক্ষেত্রেই দৃঢ়। আমলাতন্ত্র কার্যকর শাসন, নীতি বাস্তবায়ন ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি সরবরাহ করে। তবে অনেক উন্নয়নশীল দেশ শক্তিশালী আমলাতন্ত্র গড়ে তোলায় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার সফল উদাহরণগুলো প্রমাণ করে- সংস্কার সম্ভব এবং ফলপ্রসূ।
ঋঁশুঁধসধ-এর ভাষায়- ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা উন্নয়নশীল বিশ্বের একটি অনুপস্থিত লিংক।’ তাই আমলাতন্ত্র শক্তিশালী করা শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক প্রচেষ্টা নয় বরং টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি রূপান্তরমূলক কৌশল।

লেখক: লোকপ্রশাসন ও জননীতি গবেষক

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শক্তিশালী অর্থনীতির জন্য সক্ষম আমলাতন্ত্র কেন প্রয়োজন?

আপডেট সময় : ০৫:৩৫:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ড. মোহাম্মদ কামরুল হাসান : অর্থনৈতিক উন্নয়ন; যা আয়ের বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তরকে অন্তর্ভুক্ত করে; বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের শক্তি এবং দক্ষতার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আমলাতন্ত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

আমলাতন্ত্রের গুণমান এবং কাঠামো রাষ্ট্রের নীতি বাস্তবায়ন, সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে গভীর প্রভাব ফেলে। এই হাইপোথিসিসটি বিভিন্ন খ্যাতনামা গবেষকের তত্ত্ব ও প্রমাণের আলোকে আলোচনা করা যাক।
প্রথমেই দেখা যাক রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা তৈরিতে আমলাতন্ত্র কী ভূমিকা রাখাতে পারে। খ্যাতনামা রাষ্ট্র বিজ্ঞানী ঋঁশুঁধসধ-এর মতে, রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা বাযার মাধ্যমে সরকার কার্যকর নীতি প্রয়োগ এবং জনসাধারণের জন্য পণ্য ও সেবা সরবরাহ করতে পারে—অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি প্রধান ভিত্তি। একটি শক্তিশালী আমলাতন্ত্র রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপরিহার্য অংশ, কারণ এটি সরকারের অপারেশনাল অংশ হিসেবে কাজ করে। এর পাশাপাশি, ম্যাক্স ওয়েবার আমলাতন্ত্রকে প্রশাসনের সবচেয়ে যৌক্তিক রূপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন; যা আনুষ্ঠানিক নিয়ম, পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে বৃহৎ পরিসরের কাজগুলো কার্যকরভাবে সমন্বয় করে।

ঊাধহং ও জধঁপয (১৯৯৯)-এর প্রভাবশালী গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ডবনবৎরধহ আমলাতন্ত্র’ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্কযুক্ত। তাদের ক্রস ন্যাশনাল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মেধাবী এবং রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত আমলাতন্ত্র নীতির কার্যকর বাস্তবায়ন, দুর্নীতির হ্রাস ও জনগণের আস্থার উন্নয়নে সাহায্য করে; যা টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক গুণমান এবং অর্থনৈতিক সাফল্যের মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে।

 

অপবসড়মষঁ, ঔড়যহংড়হ ও জড়নরহংড়হ যুক্তি দিয়েছেন যে প্রতিষ্ঠানগুলো; যার মধ্যে আমলাতন্ত্রও রয়েছে, অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতার প্রধান নির্ধারক। তারা প্রমাণ করেছেন ওহপষঁংরাব প্রতিষ্ঠান প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে। কারণ তারা সম্পদ ও সুযোগের সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে। এই যুক্তি থেকে বোঝা যায় যে উন্নয়নশীল দেশে আমলাতন্ত্রের গুণমান অপরিহার্য; যেখানে শক্তিশালী আমলাতন্ত্র শুধু একটি শাসনযন্ত্র নয়, বরং এমন একটি মাধ্যম; যা অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ এবং সামাজিক সাম্যের উন্নতি ঘটায়। অধিকন্তু আমলাতান্ত্রিক স্বায়ত্তশাসন কার্যকর অর্থনৈতিক পরিকল্পনা জন্য অপরিহার্য।

আমলাতান্ত্রিক স্বায়ত্তশাসন; যার মাধ্যমে আমলাতন্ত্র রাজনৈতিক চাপে অতিরিক্ত প্রভাবিত না হয়ে কাজ করতে পারে—কার্যকর নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ- গবেষক ঔড়যহংড়হ জাপানের যুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক বিস্ময় নিয়ে তার গবেষণায়, গরহরংঃৎু ড়ভ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঞৎধফব ধহফ ওহফঁংঃৎু (গওঞও)-এর ভূমিকা তুলে ধরেছেন।

এটি একটি অত্যন্ত স্বায়ত্তশাসিত এবং দক্ষ আমলাতান্ত্রিক সংস্থা হিসেবে কাজ করেছে; যা জাপানের শিল্প নীতিমালা সমন্বয় এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন প্রচারে মূল ভূমিকা পালন করেছে। ঠিক একইভাবে অসংফবহ এবং ঈযধহম দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানের অর্থনৈতিক সাফল্যের ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসিত আমলাতন্ত্রের ভূমিকা তুলে ধরেছেন। এই রাষ্ট্রগুলো তাদের আমলাতান্ত্রিক যন্ত্র ব্যবহার করে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা, কৌশলগতভাবে সম্পদের বণ্টন, এবং শিল্প নীতিমালার বাস্তবায়ন করেছে; যা তাদের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে শিল্পশক্তিতে রূপান্তরিত করেছে।
এখন আসুন আমলাতন্ত্র ও উন্নয়ন সম্পর্ক এর দুটি বাস্তব দৃষ্টান্ত পর্যালোচনা করি। সিঙ্গাপুর একটি শক্তিশালী আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল হিসেবে কাজ করে। সিঙ্গাপুরের সিভিল সার্ভিস মেধা ভিত্তিক, প্রতিযোগিতামূলক বেতন, এবং দায়িত্বশীলতার সংস্কৃতি দ্বারা চিহ্নিত। এই বৈশিষ্ট্যগুলো সিঙ্গাপুরকে এমন নীতিমালা বাস্তবায়নে সক্ষম করেছে; যা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, এবং উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখতে সহায়ক।

বিশ্বব্যাংক সিঙ্গাপুরকে একটি ডেভেলপমেন্টাল স্টেট হিসেবে বর্ণনা করেছে, যেখানে আমলাতান্ত্রিক দক্ষতা অর্থনৈতিক সাফল্যের মূল ভিত্তি। এর পাশাপাশি রুয়ান্ডা আধুনিক আমলাতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার সাম্প্রতিক উদাহরণ।
গণহত্যার পর, রুয়ান্ডার সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠনের অগ্রাধিকার দেয়। কর্মক্ষমতা ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রবর্তনের মাধ্যমে রুয়ান্ডা প্রশাসনিক দক্ষতা এবং জনসেবার গুণমান উন্নত করেছে। এই সংস্কারগুলো বিগত দুই দশকে স্থায়ী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য হ্রাসে অবদান রেখেছে।

অন্যদিকে দুর্বল আমলাতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান প্রায়ই উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। চৎরঃপযবঃঃ, ডড়ড়ষপড়পশ ও অহফৎবংি-এর ‘পধঢ়ধনরষরঃু ঃৎধঢ়’ ধারণা দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে সরকারগুলো কার্যকর আমলাতন্ত্রের ছাপ তৈরি করলেও প্রকৃতপক্ষে কার্যক্ষমতা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়। উদাহরণস্বরূপ- সাব-সাহারান আফ্রিকার অনেক দেশে, দুর্বল আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতা জনপরিকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করে, যার ফলে ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রকল্প বিলম্ব ঘটে।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শক্তিশালী আমলাতন্ত্রের সম্পর্ক তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক- উভয় ক্ষেত্রেই দৃঢ়। আমলাতন্ত্র কার্যকর শাসন, নীতি বাস্তবায়ন ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি সরবরাহ করে। তবে অনেক উন্নয়নশীল দেশ শক্তিশালী আমলাতন্ত্র গড়ে তোলায় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার সফল উদাহরণগুলো প্রমাণ করে- সংস্কার সম্ভব এবং ফলপ্রসূ।
ঋঁশুঁধসধ-এর ভাষায়- ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা উন্নয়নশীল বিশ্বের একটি অনুপস্থিত লিংক।’ তাই আমলাতন্ত্র শক্তিশালী করা শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক প্রচেষ্টা নয় বরং টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি রূপান্তরমূলক কৌশল।

লেখক: লোকপ্রশাসন ও জননীতি গবেষক