নিজস্ব প্রতিবেদক : লোড শেডিংয়ের মতো সিদ্ধান্তের কারণে সরকারকে ক্ষমতা হারাতে হতে পারে বলে মন করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
তিনি বলেছেন, “বিদ্যুৎ খাতে কুইক রেন্টালের নামে এত চুরি করার পরেও যদি লোড শেডিং হয়, আমার তো মনে হয় এই লোড শেডিংই সরকারের ক্ষমতা ত্যাগের কারণ হতে পারে। এভাবে মানুষ কিন্তু অসহিষ্ণু হচ্ছে, সাধারণ মানুষ অসহিষ্ণু হচ্ছে।”
গতকাল সোমবার ঢাকার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে এক অনুষ্ঠানে মির্জা আব্বাস একথা বলেন। রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে জ্বালানি সঙ্কটে হিমশিম খাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশেও বিদ্যুতের লোড শেডিং দেওয়াসহ ডলার সাশ্রয়ে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মির্জা আব্বাস বলেন, “সরকার উন্নয়নের ট্যাবলেট খাওয়াচ্ছেন বাংলাদেশের মানুষকে। বিদ্যুতে লোডশেডিং করবেন আর উন্নয়নের কথা বলবেন। উন্নয়নের ট্যাবলেট বেশি দিন খাওয়ানো যাবে না। “উন্নয়নের ট্যাবলেট খাইতে খাইতে এখন শ্রীলঙ্কা বমি কইরা দিছে, শ্রীলঙ্কা কিন্তু এখন উন্নয়নের ট্যাবলেট খায় না। সেখানে খালি উন্নয়ন বলতে বলতে সব শেষ করে দিয়ে এখন চাকুরি-বাকুরি গোল কইরা দেশের রাষ্ট্রপতি ভাইগা চইলা গেছে সিঙ্গাপুরে। আপনাদের যাওয়ার জায়গা আছে অবশ্য। ঠিকানা বলতে হবে না, আপনার ঠিকানা আগেই করা আছে।”
বর্তমান সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের উৎপাদন কমাতে চাইলেও তা নিয়ে বিএনপি নেতাদের সমালোচনার অধিকার নেই বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন। কারণ বিএনপির শাসনামলে লোড শেডিং ছিল প্রতিদিনের ঘটনা, যুক্তি দেখাচ্ছেন তারা। ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, “ওই দিন বললেন যে, জনগণের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। কুইক রেন্টাল দিয়ে আপনারা বিদ্যুৎ দিয়েছেন, বিদ্যুতের আর অভাব নাই। এখন আবার বলছেন উল্টো কথা- লোড শেডিং করতে হবে। তাহলে এত টাকা দিয়ে কুইক রেন্টাল কেনো করলেন?
“ৃযারা কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিক, তারা কিন্তু বসে বসে টাকাটা পাবেন; বিদ্যুত থাকুক বা না থাকুক, বসে বসেই টাকা পাবে তারা। এখন আমাদের প্রশ্ন তাহলে এত টাকা নিয়ে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট কেন করা হলো? এত টাকা নিয়ে পরিবেশ নষ্ট করে কেনো সুন্দরবনের রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হচ্ছে?”
সিইসির বক্তব্যে ক্ষোভ : রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরুর দিনে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের ‘তলোয়ার-রাইফেল’ সংক্রান্ত বক্তব্যের সমালোচনা করেন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, “তলোয়ার-রাইফেল। আরে ভাই, তলোয়ার তো অনেক আগে চলে, সেই অটোম্যান সাম্রাজ্যের পরে তো আর তলোয়ার আসে নাই। আপনি তলোয়ার কোত্থেকে আবিষ্কার করলেন? রাইফেল হাতে নেবে কে? এটা উনাকে ঠিক করতে হবে। উনি কি রেফারির ভূমিকা পালন করতে পারবেন? সেটাও তো পারবেন না। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট- এরকম এই নির্বাচন কমিশন, এই ফালতু নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না।” কুমিল্লার সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাংসদ বাহারকে ভোটের সময় এলাকা থেকে বের করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ‘ব্যর্থতার’ সমালোচনাও করেন তিনি।
ডলার সঙ্কট প্রসঙ্গে : মির্জা আব্বাস বলেন, “এই আজকে বাংলাদেশে ডলারের ক্রাইসিস। আজকে বলা হচ্ছে যদি এখন বিদেশ থেকে কোনো কিছু আমদানি করতে হয়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে। আমি ব্যবসা করব, এটা আমার লিবার্টি। আমি এলসি খুলবো, আমার ডলার যাবে, মালামাল আসবে। আমার দেশে ডলার নাই। কেন নাই? “কারণ ট্রাঙ্কে ট্রাঙ্কে ভর্তি করে এই এয়ারপোর্ট দিয়ে বাংলাদেশের বহু ডলার বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। সেইদিন পত্রিকায় আসল যে, সুইস ব্যাংকে ৩/৪ হাজার কোটি ডলার রেগুলার জমা হচ্ছে। আমার দেশের ডলার যদি সুইস ব্যাংকে চলে যায়, এদেশের মানুষ বাঁচবে কীভাবে?”
‘আন্দোলনের সময় আসছে’ : মির্জা আব্বাস বলেন, “আজকের প্রধানমন্ত্রী জাতিকে বিভক্ত করে দেশের উন্নয়ন করছেন। এমন উন্নয়ন করছেন যে আমরা আজকে ছোট্ট একটা জায়গায় মিটিং করছি। আমাদেরকে বাইরে মিটিং করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। আজকে প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানের সাথে একটা কথা বলতে চাই, আমরা কিন্তু সামনের দিনগুলোত ঘর থেকে মিছিল নিয়ে রাস্তায় যাব। সমস্ত মিছিল যে কোনো একটা চৌরাস্তায় গিয়ে আমরা মিলিত হব। “এই মিছিল রমনা থেকে বের হবে, শাবাগ থেকে বেরুবে, শাহজাহানপুর থেকে বের হবে, ফরিকরাপুল থেকে বের হবে, মতিঝিল থেকে বের হবে। সব একসঙ্গে আমরা ওই বঙ্গভবন কিংবা সরকারের সচিবালয়ে ঘেরাও করব- মনে রাইখেন। সময় আসতেছে, গুলি করবে? অনেক গুলি কিনেছেন বিদেশ থেকে।”
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিজিবির জন্য সার্বিয়া থেকে কেনা মর্টার শেলবাহী ইউক্রেইনীয় উড়োজাহাজ গ্রিসের উত্তরাঞ্চলীয় শহর কাভালার কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা আব্বাস বলেন, “এই যে একটা বিমান বিধ্বস্ত হলো, আমি খুব দুঃখের সঙ্গে বলছি অস্ত্রসহ একটা প্লেন বিধ্বস্ত হলো। এই অস্ত্র কার জন্য ওরা আনতে গিয়েছিল? এ বিষয়ে একটা পরিষ্কার ব্যাখ্যা আমরা চাই।”
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের সেমিনার কক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির রমনা থানার ১৯ নম্বর ওয়ার্ড এবং শাহবাগ থানার ২১ নং ওয়ার্ডের সম্মেলন হয়।
মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক লিটন মাহমুদের সভাপতিত্বে এবং সদস্য এম এ হান্নানের পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহানগর দক্ষিনের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনুস মৃধা ও মোশাররফ হোসেন খোকন।
লোড শেডিংই সরকারের পতন আনতে পারে: মির্জা আব্বাস
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ