বিশেষ সংবাদদাতা : হঠাৎ করেই রাজধানীসহ সারাদেশে লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি শিল্পকারখানায় উৎপাদনের ওপরও এর প্রভাব পড়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। তবে লোডশেডিংয়ের সমস্যা এ মাসেই শেষ হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র। দেশ বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর প্রথমবারের মতো লোডশেডিংয়ের সম্মুখীন হওয়ায় বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, দেশের উত্তরাঞ্চল রাজশাহী, রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় ছয় থেকে আট ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে প্রতিদিন তিন ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট। ঘাটতি থাকছে এক হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট। এখন পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার এক মেগাওয়াট। প্রয়োজনের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকার পরও কেন এত লোডশেডিং- জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকদিন ধরে দেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং অনেক বেড়ে গেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ তেল গ্যাস খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) বিদ্যুৎ উৎপাদনে চাহিদা অনুযায়ী পিডিবিকে গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে চাহিদার চেয়ে গড়ে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে না পারায় সারাদেশে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে দিনের একটি সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না কোম্পানিগুলো। ফলে সেসব এলাকায় ভোগান্তিও তীব্র হচ্ছে। পল্লীবিদ্যুতের রাজশাহী অফিসের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী লোডশেডিংয়ের কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, তার অধীনে থাকা পল্লীবিদ্যুতের ছয়টি সমিতির প্রতিটিতে ১০ থেকে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকছে। ফলে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। বিপিডিবি সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সারাদেশে দিনের বেলা বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ও সন্ধ্যায় ১৪ হাজার মেগাওয়াট। এর আগের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ১৩ হাজার ৭০ মেগাওয়াট, কিন্তু সেদিন সারাদেশে উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ১ মেগাওয়াট। সারাদেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল এক হাজার ৩৯৯ মেগাওয়াট। আর ঘাটতি বিদ্যুতের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দৈনিক চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। বিদ্যুতের চলমান লোডশেডিং বৈশ্বিক সমস্যা উল্লেখ করে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘সরকার বিপুল অংকের টাকা ভর্তুকি দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এখন যে সংকট, সেটা মোকাবেলা করতে পৃথিবীর অনেক দেশই হিমশিম খাচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের দেশীয় গ্যাসের যে জোগান সেখানে প্রেসার কমে গেছে। সেটা বাড়লে সংকট কিছুটা কমবে। এছাড়া তিন-চারগুন বেশি মূল্য দিয়ে এলএনজি কিনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। এজন্য অপেক্ষা করতে হবে আগস্টে শুরু হওয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের দিকে। কয়লাভিত্তিক প্রকল্প শুরু হলে এই সমস্যা সমাধান হবে। বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর হঠাৎ লোডশেডিংয়ের কারণ জানিয়ে পাওয়ার সেলের এই মহাপরিচালক বলেন, ‘সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র্র করে বিশ্ববাজারে জ্বালানির সংকট তৈরি হয়েছে। লোডশেডিং সমস্যায় পড়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও নেপালও।’ বিদ্যুৎ উন্নয়ন ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ২০২০ সালে সরকার ৪ থেকে ৬ মার্কিন ডলারে প্রতি ইউনিট দরে গ্যাস বিশ্ববাজার থেকে আমদানি করেছে। সেই একই গ্যাসের প্রতি ইউনিটের দাম বেড়েছে ৩৮ ডলার। আর স্পট মার্কেট থেকে বাংলাদেশ কিনছে ২৫ ডলারে। ফলে বিশাল এক ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে। এই হারে ভর্তুকি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অসম্ভব বলে মনে করছে সরকার।